আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ : লিভার

যে ব্যথা দেয়,তারও তো ব্যথা থাকতে পারে-মাটির ময়না লিভারকে এক কথায় একটা কারখানা বলা চলে যেখানে প্রতিনিয়ত হাজার রকমের রাসায়নিক বিক্রিয়া চলছে। লিভারের প্রধান কাজ হল , শরীরে প্রোটিন অর্থাৎ albumin , coagulation factor এবং কিছু হরমোন তৈরি করা এবং শরীরের সঞ্চিত পুস্টিকে গ্লুকোজে পরিণত করে মস্তিষ্ক ও লোহিত রক্তকণিকাকে সরবরাহ করা। এছাড়া গ্লুকোজ থেকে গ্লাইকোজেন ও ফ্যাট জমানোর কাজও এখানে চলে। প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করাও এর কাজের মধ্যে পড়ে। এছাড়া এটি শরীরের যাবতীয় ক্ষতিকারক পদার্থকে পিত্ত ও কিডনি দিয়ে শরীরের বাইরে বের করে দেয়।

মজার ব্যাপার হল, লিভার এমনই জিনিস যে এটির অর্ধেকটা যদি বাদও দেওয়া হয় তাহলে বাকী লিভার কয়েক সপ্তাহ থেকে মাসের মধ্যেই তার স্বাভাবিক আকারে ফিরে আসে কোষ বিভাজনের মাধ্যমে। স্বাভাবিক কর্মক্ষমতাও ফিরে পায় ৬ মাসের মধ্যে। সাধারনত রক্ত পরীক্ষা করলেই কেউ লিভারের রোগে আক্রান্ত কিনা তা বোঝা যায়। রক্তে কোন ভাইরাস থেকে হেপাটাইটিস (A,B,C,D,E) হয়েছে তা জানার জন্যও পরীক্ষা রয়েছে। রক্তে Albumin এবং Prothrmbin Time পরীক্ষা করে বোঝা যায় রোগ কতটা মারাত্মক।

আপার জি১ , এন্ডোসকপি ও পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে জানা যায় রোগটা কোন পর্যায়ে আছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেটের সিটিস্ক্যান এবং লিভার বায়োপসিরও দরকার পড়তে পারে। লিভারের রোগ বলতে আমরা সাধারনত দুই ধরনের রোগকে বুঝি , ক্ষণস্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী (৬ মাসের বেশি)। ভাইরাল হেপাটাইটিস এই ক্ষণস্থায়ী গ্রুপের প্রধান। হেপাটাইটিস .'E' এবং'A' ছড়ায় দূষিত পানি ও খাবার থেকে।

এই ভাইরাসগুলো মূলত লিভারে বাসা বাধে এবং সরাসরি লিভারের কোষের ক্ষতিসাধন করে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এই ভাইরাসগুলোকে দূর করে দেয়। কেউ লিভারের রোগে আক্রান্ত কিনা তা যাচাই করার জন্য কতগুলো লক্ষণের কথা বলা যেতে পারে। যেমন , জন্ডিস , ওজন কমে যাওয়া , পেটের ডানদিকে ব্যথা , ক্ষুধা কমে যাওয়া , জ্বর , হাত-পা চুলকানো ইত্যাদি । জন্ডিস আসলে কোন রোগ নয় , রোগের উপসর্গমাত্র।

রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে সারা শরীর হলুদ হয়ে গেলে তাকে বলে জন্ডিস। রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রার সাথে লিভারের রোগের পরিনতির যোগাযোগ নেই বললেই চলে। সবচেয়ে কমন হল হেপাটাইটিস 'E' ভাইরাসের মাধ্যমে হওয়া হেপাটাইটিস। 'A' ভাইরাসের ইনফেকশন হয় মূলত বাচ্চাদের। অবশ্য এই ভাইরাস বয়স্কদের আক্রমন করলেও তা মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে।

ক্ষণস্থায়ী হেপাটাইটিস বি হলে ৫ শতাংশ রোগী দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগেন। আর হেপাটাইটিস সি এর ক্ষেত্রে ৭০%-৮০% রোগীর রোগটা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে দাড়ায়। যাদের বি এবং সি ভাইরাস থেকে দীর্ঘস্থায়ী রোগ হয় তাদের মধ্যে ২০% এর সিরোসিস হয়ে যায়। সিরোসিসের প্রধান কারনগুলো হল , হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস ইনফেকশন , মদ্যপান , অটো ইমিউন হেপাটাইটিস ইত্যাদি। সিরোসিস হলে খাদ্যনালীর শিরা ফুলে ওঠে (ভ্যারিসেস) যেগুলো ফেটে রক্তপাত হতে পারে , পেটে পানি জমতে পারে (অ্যাসাইটিস) , আরো বাড়লে জন্ডিস হতে পারে , রোগী অজ্ঞান হতে পারে।

এছাড়া শ্বাসকস্ট দেখা দিতে পারে এবং কিডনিও ঠিকমত কাজ করতে চায় না । এসব রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের প্রধান শর্তই হল অ্যালকোহল ও ধুমপান বর্জন করা , পরিমিত পানি ও স্বল্প লবন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন , শাকসবজি ও ফল বেশি পরিমাণে খাওয়া। এগুলোতে ভিটামিন , জিংক , অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা লিভারের কাজ বাড়িয়ে দেয়। শেষ কথা হল , রোগ সচেতনতা বাড়াতে হবে। হেপাটাইটিস বি এর ভ্যাকসিন নিতে হবে সবাইকে।

এসব করলেই ভালো থাকবেন। অযথা ভয় পাবার কোন কারন নেই। চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন অনেক উন্নত।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.