প্রতিভা নাকি চাপা থাকেনা। আবার পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসুতি। এ দুটো নিয়ে আমার মাঝে চলছে কিছুটা দন্দ্ব।
'খাটি সরিষার তৈল' বিজ্ঞাপনের বুড়ো লোকটি নাকি জীবনেও অভিনয় করেননি। অকস্মাত কে তাকে সিলেক্ট করলো, হয়ে গেলেন জনপ্রিয় অভিনেতা।
আবার বহু অভিনেতা আছেন, জীবন পার করে দিলেন, আফসোস, আজীবন সাইড নায়কই থেকে গেলেন।
শিল্পী হায়দার হোসাইন ছিলেন সামরিক অফিসার, জীবনের শুরুতে মাঝেমধ্যে টুং টাং বাজাতেন। কার পরিবর্তে যেন গানে কণ্ঠ দিলেন- আর যায় কোথায়, সুপার হিট। আবার চারুকলার পাশে ঝুটিধারী কিছু গায়ক পাওয়া যাবে। পাটুয়াটুলি ঘুরতে ঘুরতে জুতার তলা ক্ষয়, কেউ তার একটি এ্যালবাম বের করেনা।
মাহমুদুর রহমান, সাবেক আলোড়ন সৃষ্টিকারী জ্বালানী উপদেষ্টা। বহুদিন বাংলা লেখেননা। জীবনেও পত্রিকায় লেখেননি। কোন্ এক সাংবাদিকের অনুরোধে লিখলেন, সুপার হিট। জরুরী অবস্থায় সবার লেখা যখন ফ্লপ, অল্প সময়েই তিনি পাঠক প্রিয়।
আবার কিছু লেখক আছেন যাদের চুল দাড়ি পেকেছে লিখতে লিখতে। কিন্তু আফসোস কেউ তার 'মূল্যায়ন' করতে পারলোনা। আমার পাশের বাসার অবসর প্রাপ্ত ভদ্রলোকটির কথাই ধরুন। অর্থনীতি-পরিসংখ্যান ইত্যাদি নিয়ে সদ্য একটি বই লিখেছেন। ইদানিং চেষ্টা করছি তাকে এড়িয়ে থাকার।
কেননা দেখলেই যা বেলতে চান- এই বই তো তোমাদেরই পড়তে হবে, তোমার বন্ধু বান্ধবদের বলবে, না বললে জানবে কি করে ওরা, খুবই গুরুত্বপূর্ণ এটি। ইত্যাদি ইত্যাদি।
সার কথা হচ্ছে - প্রতিভা চাপা থাকেনা। আপনি হয়তো আমার চেয়ে বেশি উদাহরণ দিতে পারবেন, আরো আকর্ষনীয়।
কিন্তু- - -
পরিকল্পনা করে পরিশ্রম করে অসাধ্যকে সাধন করেছেন- এমন উদাহরণ তো ভুরি ভুরি।
মাকড়সার জাল বোনা দেখে অষ্টম বারে যুদ্ধ জয়ের কাহিনী তো মশহুর। লাইট পোস্টের নিচে বই পড়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবার ইচ্ছাও তো পূরণ হয়েছে পরিশ্রমের জোড়ে।
সমস্যা হচ্ছে- আমার মাথায় সব সময়ই পরিশ্রমের পরিবর্তে 'প্রতিভা চাপা থাকেনা' এমন ফিলোসোফি প্রাধান্য পাচ্ছে। তাই দায়িত্ব নিয়ে পড়ালেখার চেয়ে যখন যা মন চায় তাই করার দিকে ঝোক বেশি। ভাবটা এমন- যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই।
এখন আমার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিভি জমা দেয়ার সময়। চাকরির ভাইভা দেয়ার সময়। কিন্তু মাথায় কাজ করে- আরে যোগ্যতা থাকলে চাকরি হবেই, এমন জায়গায় হবে যে সবাই তাকিয়ে থাকবে। দুচারজন এমন তো আছে যারা ছাত্র জীবনে আহামরী কিছূ ছিলেননা- পেশা জীবনে হিট। বন্ধুবান্ধবদের উস্কানিতে আরেক ডিগ্রি স্ফীত হই- 'দোস্ত তুমি যে কি আমরা জানি, তোমার দেখবা ভালো যায়গায় হবে।
' অথচ রেজাল্টের অবস্থা গয়া। গ্রুপে পড়তে হয়। গ্রুপের সবচেয়ে খারাপ রেজাল্ট আমার।
এই সব নিয়ে কেটে যায় দিন। রুটি রুজির ধান্ধা করতে ইচ্ছে হয়না।
ঐযে চিন্তা আছে মাথায়- যোগ্যতা থাকলে হবেই।
আমি কি লাইনে আছি না বেলাইনে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।