শেয়ারবাজারের টানা দরপতনের সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা। যখনই বাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটছে, তখনই উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার কেনার ঘোষণা বাড়ছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) বিধান অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে সব সময় নিজ কোম্পানির ৩০ শতাংশ এবং এককভাবে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাম্প্রতিক এক হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি-গুলোর প্রায় দেড় হাজার পরিচালকের হাতে ২ শতাংশের কম শেয়ার রয়েছে। এসব পরিচালককে নিজ পদে থাকতে হলে বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনতে হবে।
সাম্প্রতিক বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ন্যূনতম শেয়ার ধারণের শর্ত পরিপালনে যখনই স্বাভাবিক বাজারে কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক শেয়ার কেনার ঘোষণা দেন, তখনই ওই কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে। এ অবস্থায় অনেক পরিচালক ঘোষণা দিয়ে শেয়ার কেনার পরিবর্তে নিকটজনদের কাছ থেকে শেয়ার উপহার বা গ্রহণ করছেন। আবার যখনই বাজারে দরপতন ঘটছে, তখনই পরিচালকদের ঘোষণা দিয়ে শেয়ার কেনার প্রবণতা বাড়ছে।
ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন কার্যদিবসে (১৮, ১৯ ও ২২ জানুয়ারি) তালিকাভুক্ত ১২ কোম্পানির ১৩ উদ্যোক্তা-পরিচালক প্রায় ৩৭ লাখ ৩৪ হাজারের বেশি শেয়ার কেনার ঘোষণা দিয়েছেন।
এর মধ্যে ১৯ জানুয়ারি ইউনাইটেড এয়ার ও রিপাবলিক ইনস্যুরেন্সের দুই পরিচালক মিলে নিজ নিজ কোম্পানির মোট এক লাখ ৪৮ হাজার শেয়ার কেনার ঘোষণা দেন।
১৯ জানুয়ারি ডিএসইতে মূল্যসূচক বেড়েছিল। সেদিন ওই দুই পরিচালকের শেয়ার কেনার ঘোষণা বাজারে আসে।
আর ১৮ ও ২২ জানুয়ারি বাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটলে এই দুই দিনে ১০ কোম্পানির ১১ পরিচালকের কাছ থেকে প্রায় ৩৫ লাখ ৮৬ হাজারের বেশি শেয়ার কেনার ঘোষণা আসে। কোম্পানিগুলো হলো: যমুনা ব্যাংক, বিএসআরএম, ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স, তাকাফুল ইনস্যুরেন্স, ইসলামিক ফিন্যান্স, প্রভাতী ইনস্যুরেন্স, সিটি ব্যাংক, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, প্রাইম ব্যাংক ও গ্রিনডেল্টা ইনস্যুরেন্স।
এ কারণে বাজারের বিদ্যমান অস্থিরতার সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের বাধ্যতামূলক শেয়ার কেনার বিষয়টির যোগসূত্র থাকতে পারে বলে কেউ কেউ ধারণা করছেন।
যোগাযোগ করা হলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মোহাম্মদ মূসা প্রথম আলোকে বলেন, ‘যত দিন পর্যন্ত উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার কেনার বাধ্যবাধকতার মেয়াদ শেষ হচ্ছে না, তত দিন পর্যন্ত বাজার পুরোপুরি স্থিতিশীল হবে বলে আমি মনে করি না। কোনো না কোনোভাবে বাজারে অস্থিরতা থাকবে। ’
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘যাঁদের শেয়ার কিনতে হবে, তাঁরা সব সময়ই চাইবেন শেয়ারের দাম যেন খুব বেশি বেড়ে না যায়। এ জন্য প্রয়োজন হলে তাঁরা তাঁদের হাতে কোম্পানির যেসব মূল্য সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে, সেগুলোকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করবেন। খারাপ ঘোষণা দিয়ে কোম্পানির শেয়ারের দামকে একটি পর্যায়ে ধরে রাখার চেষ্টা করবেন, এটাই স্বাভাবিক।
পরিচালকদের বেলায়ও এর ব্যত্যয় ঘটবে বলে আমি মনে করি না। তাই এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে খুবই সজাগ থাকতে হবে, যাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন। ’
সব শেষে মোহাম্মদ মূসা বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণের বিষয়ে এসইসি যে বিধান করেছে, তার সুফল স্বল্প মেয়াদে পাওয়া না গেলেও দীর্ঘ মেয়াদে বাজারের জন্য এটি ভালো ফল বয়ে আনবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।