আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবার দরপতনের ধারায় শেয়ারবাজার



আবারও দরপতনের ধারায় দেশের শেয়ারবাজার। আবারও ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ, অবরোধ ও ভাঙচুর। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের গত মঙ্গলবারের বক্তব্যে কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছিলেন বিনিয়োগকারী। এতে দরপতনের ধারার বিপরীতে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দেওয়া অর্থ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান আ হ ম মুস্তাফা কামালের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দুই স্টক এক্সচেঞ্জেই মূল্যসূচক কমেছে।

আর এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা গতকাল বুধবার আবারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তাঁরা বাজার পতনের জন্য মুস্তাফা কামালকে দায়ী করে স্লোগান দেন। বিনিয়োগকারীরা বলেন, গত দুই বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মুস্তাফা কামাল বাজারকে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর নিজের মালিকানাধীন কোম্পানি সিএমসি কামালের শেয়ারের দাম ৫৭ টাকা (১০০ টাকা অভিহিত মূল্য হিসেবে) বাড়িয়ে সর্বোচ্চ প্রায় ২৯০ টাকা পর্যন্ত (১০ টাকা অভিহিত মূল্য হিসেবে) নেওয়া হয়। তার মানে এ সময় এই কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫০ গুণেরও বেশি।

অথচ তিনিই আবার বলছেন সূচক তিন-চার হাজারে নেমে না আসা পর্যন্ত কেউ না কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও ডিএসইর সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আহমেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সূচক ওই পর্যায়ে না নামলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন—সেটা মুস্তাফা কামাল কীভাবে বললেন তা আমার বোধগম্য নয়। সাধারণ সূচক বাড়ে-কমে তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন, ভিত্তি সূচক, শেয়ারের দামের ওঠানামা বা নতুন কোম্পানির শেয়ারের অন্তর্ভুক্তি বা পুরোনো কোম্পানির শেয়ারের বিযুক্তি। সেই হিসেবে বলা যায়, গত কয়েক বছরে প্রচুর নতুন কোম্পানির শেয়ার, রাইট-বোনাস শেয়ার বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

ফলে স্বাভাবিকভাবে মূল্যসূচক আগের জায়গায় থাকার কথা নয়। ’ সালাহউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, ‘২০০৫ সালে ডিএসইর সূচক এক হাজার ৮০০ হয়েছিল। সে সময় বাজারের গড় মূল্য আয় অনুপাত বা পিই ছিল ১৮। সেখান থেকেও তো আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। ’ ডিএসই সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে সমাপ্ত বছরের নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী বর্তমান বাজারের গড় পিই ২৩ দশমিক ৭৭।

কিন্তু ২০১০ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী গড় পিই ১৬ দশমিক ৮৭। বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করেন, একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশের পুঁজিবাজারের ১৫ থেকে ২০ পিই সহনীয় বলেই মনে করেন। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীও ২৩-২৪ পিইও সহনীয় বলে মত দেন। বাজার পরিস্থিতি: গতকাল লেনদেন শুরুর পাঁচ মিনিটের মাথায় ডিএসইর সাধারণ সূচক ১০০ পয়েন্টের বেশি বেড়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার সূচক প্রায় ৭০ পয়েন্ট নেমে যায়।

এর পর সূচক আবার বাড়তে থাকে। তবে দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটের পর থেকে সূচকের পতন শুরু হয়। দিনশেষে ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ১৪৯ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ৬৭৩ পয়েন্টে নেমে আসে। ডিএসইতে গতকাল ২৫৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৭টির, কমেছে ২১৪টির ও অপরিবর্তিত ছিল আটটির দাম।

এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হয়েছে ৬৭৩ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকা কম। বিক্ষোভ: চাঙাভাবের মধ্য দিয়েই গতকাল দিনের লেনদেন শুরু হয়। কিন্তু দিনশেষে সূচক কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। বেলা তিনটার দিকে তাঁরা মতিঝিলে শাপলা চত্বর থেকে ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত ডিএসইর সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। এ সময় তাঁরা সড়কে খড়-কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে রাখেন।

এতদিন বিনিয়োগকারীরা অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এসইসির চেয়ারম্যান, ডিএসইর প্রেসিডেন্টের প্রতি ক্ষোভ দেখালেও গতকাল তাঁদের সব ক্ষোভ গিয়ে জমা হয় মুস্তাফা কামালের ওপর। বিক্ষোভের সময় রাস্তায় যান চলাচল ছিল বন্ধ। বিকেল চারটার দিকে পুলিশ এসে বিনিয়োগকারীদের সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। উৎস: প্রথমআলো

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.