আমি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। মনে হয় না এর থেকে বেশী কিছু চাওয়ার আছে। ছেলেটির নাম অর্ক। সে এখন ধানমন্ডি স্টার কাবাবের সামনে দাড়িয়ে আছে। এই কড়া রোদের মধ্যেও সে নীল রং এর একটি পাঞ্জাবী পড়ে রোদে দাড়িয়ে আছে।
এই পাঞ্জাবীটি সে কালকেই কিনেছে। তার চেহারা মোটামুটি হলেও এই পাঞ্জাবীতে তাকে কেন জানি আজকেই বেকুব লাগছে।
সে অপেক্ষা করছে মিথিলার জন্য। এতক্ষণে তার চলে আসার সময় হলেও আজকে কেন জানি একটু দেরী করছে আসতে। অর্ক মনে মনে সবকথা গুছিয়ে নিয়েছে।
সে ঠিক করে নিয়েছে আজ সে মিথিলাকে তার মনের কথা সব বলেই ফেলবে। সে জানে মিথিলাও তাকে পছন্দ করে। সুতরাং খামাখা কথাগুলো ঝুলিয়ে রেখে কোন লাভ নেই। যদিও তাদের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। কিন্তু সে যে ওকে পছন্দ করে এই কথাটা এখনো বলাও হয়নি এবং তা বলতেও কোন সমস্যা নেই।
অনেকক্ষণ হয়ে গেল! ৪টার সময় মিথিলার আসার কথা। এখন বাজে ৬টা! এতক্ষণে তো চলে আসার কথা। ব্যাপারটা কি? মেয়েটা তো কোনদিন এত দেরী করে না! অর্ক অনেকবার ওর মোবাইলে কল দিতে লাগলো। কিন্তু মিথিলা ফোন ধরে না । অর্ক নিজের ভাগ্যকেই আজ দোষ দিলো।
বেছে বেছে আজকেই এই ঝামেলার কোন মানে হয়!!! সে সব কথা মিথিলাকে বলবে বলে আজ একরকম রেডি হয়েই এসেছিলো। শালার কপাল! আজকে আর মিথিলা আসবে না মনে হয়।
অর্ক আবার ফোন দিলো মিথিলার নাম্বারে। এইবার এক রিং না হতেই ওপাশ থেকে মিথিলা ফোন ধরে ফেললো।
“কই তুমি!!! কতক্ষণ আর দাঁড় করিয়ে রাখবে !”
মিথিলা : এই তো আমি ধানমন্ডি ২৭ এর কাছে আছি।
একটা ঝামেলায় আটকে গেছি। সরি ফোনে চার্জ ছিলো না। তোমাকে ফোন দিবো বলে আরেকজনের মোবাইলে আমার সিমটা একটু আগে ঢুকালাম। তুমি এখানে চলে এসো।
অর্ক : বাইরে থেকে ফোন করে একটু জানাতে পারলে না!! দাড়াও আমি আসছি।
অর্ক ধানমন্ডি ২৭ এর দিকে রওনা দিলো। আজ শুক্রবার হওয়ায় অনেক মানুষ এই এলাকায়। সে হাটতে হাটতে ২৭ নম্বরে চলে আসলো। হঠাৎ অর্ক লেকের কাছে মিথিলাকে দেখলো। প্রথমে অর্ক মনে করলো চোখের ভুল।
কিন্তু ভাল করে দেখে সে আবিষ্কার করলো এ মিথিলাই এবং সাথে সাথে অর্ক থমকে গেল। কারণ মিথিলার সাথে আরেকটি ছেলে বসে আছে এবং সে মিথিলার হাত ধরে আছে !!!!
অর্ক দৌড়ে সেখানে গেল এবং মিথিলাকে বললো: তুমি!! তোমার সাথে এই ছেলেটি কে? এর হাত ধরে বসে আছো কেন ??
মেয়েটি প্রথমে একটু থতমত খেলেও সাথে সাথে নিজেকে সামলে নিল।
‘আজব তো! কে আপনি? আপনাকে আমি আমার সারাজীবনে কোনদিন দেখেছি বলে মনে হয় না!’
‘তুমি এখন আমাকে চিনতে পারছো না!!! তুমি আমার সাথে আস। তোমার সাথে আমার কথা আছে। ’
সাথে ছেলেটি মিথিলাকে বললো: ‘তুমি কি ওনাকে চিন?’
‘জীবনে আজ প্রথমবার ওনাকে দেখলাম।
চিনা তো দূরের কথা। ’
অর্ক সারাজীবন খুব ভদ্র ছিলো। কিন্তু মিথিলার কথা শুনে আজ হঠাৎ করে ওর মাথাটাই গরম হয়ে গেলো। কথা নেই-বার্তা নেই হঠাৎ অর্ক ছেলেটির কলার ধরে ছেলেটিকে থাপ্পর দিয়ে দিলো।
গন্ডগোল এর শব্দ শুনে আশেপাশের মানুষজন এগিয়ে এসে কি হয়েছে!! জানতে চাইল।
অর্ক: ভাই আপনারা যানতো। এটা আমাদের ব্যাপার।
মিথিলা: ভাইয়ারা দেখেন আমি এবং আমার ফ্রেন্ড এখানে বসে ছিলাম। উনি হঠাৎ করে এসে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করে। আমার ফ্রেন্ডকে মারধোর করে।
অর্ক: ‘এই মেয়েটির সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। ওকে আমি আগে থেকেই চিনি। যার সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে তাকে যদি পার্কে আরেকজনের সাথে বসে থাকতে দেখেন, তখন আপনার কেমন লাগবে বলেন ??
‘'একদম মিথ্যা কথা। ওনাকে আমি চিনি না। বিয়ের তো প্রশ্নই আসে না।
'’
জনরোষ হঠাৎ করেই মিথিলার পক্ষে চলে গেলো এবং অর্ককে ছিনতাইকারী এবং বখাটে মনে করে কিছু উত্তম-মধ্যম দিতে লাগলো। শেষ পযর্ন্ত মিথিলা ও সাথে থাকা ছেলেটির কারণেই ও ছাড়া পেল।
মুখে রক্তের দাগ নিয়ে এবং শরীরে ব্যাথা নিয়ে অর্ক বাসায় যাচ্ছে। বাসায় মারের দাগের কি জবাব দিবে? তার থেকে তার কাছে আজব লাগছে মিথিলার আচরণ। সে কিছুই বুঝতে পারছে না, কেন মিথিলা এমন করলো ?
পরেরদিন বিকাল ৫টা।
অর্ক মিথিলার জন্য ধানমন্ডি ৪/এ তে দাড়িয়ে আছে। রাতে মিথিলার সাথে তার অনেকক্ষণ কথা হয়েছে। মিথিলা নাকি বিপদে পড়েই একরকম বাধ্য হয়ে তার সাথে এমন আচরণ করেছে কালকে। আজ নাকি সে সব অর্ককে খুলে বলবে। এখন সব অর্কর কাছে সব আস্তে আস্তে সব পরিস্কার হয়েছে।
কালকে মিথিলার এমন আচরণের ব্যাখ্যা তো পাওয়া গেল। মিথিলা বাধ্য হয়েই তাহলে ওর সাথে এমন করেছে!!! কিন্তু তারপরও অর্কর মনে কি যেন খটকা এখনো আছে। কিন্তু কালকে কিছু না বুঝেই সবার সামনে ওইরকম পাগলামীটার জন্য মনে মনে সে বেশ লজ্জাই পেতে লাগলো এখন। অর্ক কিছুটা খুশিমনেই এখন মিথিলার জন্য দাড়িয়ে আছে।
বলতেই ভুলে গেছি।
২বছর আগের একটি ঘটনা শুনেছিলাম এক বন্ধুর কাছ থেকে। একটি ছেলে তার খুব প্রিয় একটি মানুষ জন্য বিকেলে ঢাকার কোন এক জায়গায় অপেক্ষা করছিলো। কিন্তু সেদিন মেয়েটি আসে নি। খবর আসে মেয়েটি তার সাথে দেখা করার জন্য বের হবার পর অ্যাক্সিডেন্ট করে। কিছুক্ষণ পরেই মারা যায়।
এরপর থেকে কেমন যেন হয়ে যায় ছেলেটি!!!
তারপরের খবর আমি আর জানি না। শুনেছি ধানমন্ডির দিকে প্রায়ই নাকি রাস্তায় দাড়িয়ে কার জন্য নাকি অপেক্ষা করতে দেখা যায় একটি ছেলেকে। মোবাইলে কার সাথে জানি কথা বলে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। অনেকের দাবী মোবাইলের অপরপ্রান্তে নাকি কেউ থাকে না। প্রায়ই নাকি তাকে তার সম্পূর্ণ অপরিচিত কেন মেয়েদের সাথে হঠাৎ হঠাৎ উপরোক্ত ঘটনার মতো ঝগড়া করতে দেখা যায়।
এই ছেলেটি অর্ক নাকি জানি না। হতেও পারে।
গল্পটি ২বছর আগে সামুতে লিখেছিলাম। পরে লজ্জায় মুছে ফেলি। এখন অনেক ঘষামাজা করে আবার দিলাম।
চরম ন্যাকামীতে ভরা গল্পগুলোর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।