আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুভূতি, চেতনা আর বিপ্লবের মেটামরফোসিস.........বাংলা ব্লগস্ফিয়ারের ভুমিকা।

একি আজব কারখানা........... আমি আসলে এমনটা ছিলাম না, যেমন টা এখন আছি। ভালো না খারাপ জানিনা, তবে পরিবর্তন এসেছে আমার চিন্তা চেতনা এবং কাজে। আসুন একটু ফ্লাশব্যাকে যাই। আমার লাইফ টা ডুবে ছিলো অনেক অন্ধকারে। মেডিকেল থেকে দুই বছর পড়ে বেরিয়ে যাওয়া হতাশ এক তরুন, চারিদিকে শুধুই যন্ত্রনা আর ডানাভাঙ্গা পাখির আর্তনাদ।

জানেন, অনেক কাছের মানুষ কে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখেছি। বাদ যায়নি নিকট আত্মীয়ও। -কিরে, কেমন আছিস ? -ভালো, তুই ? -এই তো, বেশ কেটে যাচ্ছে সময়। তোর ডাক্তারি আর কতদুর ? -নারে, মেডিকেল তো ছেড়ে দিয়েছি। -মানে? তুই না সরকারি মেডিকেলে পড়তি ? -হুম, সেখানে থাকলে স্পয়েল্ড হয়ে যেতাম।

ক্যান্সারে আক্রান্ত সমাজ আমাকে নষ্ট করে দিত। কিছুখন অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে সেই বন্ধু কিছুটা তাছিল্য আর কিছুটা বিজয়ী একটা লুক দিয়ে বলে -ও আচ্ছা আচ্ছা, যাই রে, কাজ আছে। কালকে আবার এক্সাম । আমার অনেক হাসি পায়...... কোন অনুভুতির প্রকাশ এই হাসি, আমি জানিনা। দামী গাড়িতে চড়া এই ছেলেকে আমি কেমন করে বুঝাবো এক তরুনের সম্ভাবনার মৃত্যতে কতটুকু সে নিজে দায়ী আর এই সমাজের দায় কতখানি ? আমার সেই অবস্থার আজ পরিবর্তন ঘটেছে।

সেই বন্ধুটি এখন আমার অফিসে আমার নিচের পোস্টে। আমার আবারো অনেক হাসি পায়...... শুনুন তবে ,পরিবর্তনের মেটামরফোসিস আজকে আমি কনফিডেন্টের সাথে বলতে পারি, আমি নৈতিকতার বলয়ে দৃপ্ত। আমি বিশ্বাস করি, দেশ কে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আমাদের একটা দর্শন ঠিক করতে হবে। একটা ভিশন ফিক্স করতে হবে। আজ থেকে ২০ বছর পর আমরা দেশটাকে কোথায় দেখতে চাই, তা ঠিক করে নিয়ে প্লান করতে হবে।

এগিয়ে আসতে হবে ইয়ুথ কে। আর সঠিকবভাবে ইয়ুথ মুভমেন্টের জন্য দরকার নৈতিক শিক্ষা এবং সচেতনতা। একটা ব্যাপার লক্ষ করুন,আজকে আমি এবং আমার মত আরো অনেক তরুন কিন্ত দেশ রাজনীতি নিয়ে সচেতন,যেটা তিন চার বছর আগেও এতটা ছিলোনা। আমি কনকো ফিলিপ্স চুক্তির বিপরীতে, আমি আমরা ৯৯% এর পক্ষে, আমি সোপা বিপার বিপক্ষে, আমি নারী ও শিশু অধিকারে অগ্রগামী, আমি ক্রিয়েটিভ কাজে আগ্রহী। সর্বোপরি আমি আজ ভারতীয় পন্য বর্জন করতে যেমন দ্বিধাবোধ করিনা, তেমনি নিজেদের প্রডাক্টিভিটি বৃদ্ধির মাধ্যমে অন্যদেশের প্রতি ভিক্ষার ঝুলি না রাখতেও বদ্ধ পরিকর।

এর পিছনে আছে অনেক কিছুর ভুমিকা। আমি শিক্ষা নিয়েছিলাম নিজের ভুল থেকে। বাবা-মার কাছে মাফ চাওয়ার আগে ভেবে দেখেছি, নিজেকে কি নিজেই মাফ করতে পারছি ? বার বার প্রশ্ন রেখেছি বিবেকের কাছে। প্রতিজ্ঞা করেছি, মনের গভীরে লালন করেছি সেই প্রতিজ্ঞা। আমি কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি, যাদের দ্বারা আমি মটিভেটেড।

এইখানে চলে আসে ব্লগের কথা। খুব গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করেছে বাংলা ব্লগস্ফিয়ার। পজেটিভলি মটিভেটেড হয়েছি এর মাধ্যমে। ব্যাক্তিগত জীবনে আমরা যতই কোলাহলে থাকি, দিন শেষে কিন্ত ভীষন একা। আমি অবাক হয়ে দেখলাম, এই ব্লগ আমাকে একা হতে দেয় না।

এখানে যদিও সবাই ভার্চুয়াল, তবে তারা কোন ভাবেই রিয়েল ফ্রেন্ড দের চেয়ে কম নয়। আগের পোস্টে আমি আমার শর্টফিল্ম টা আপলোড করার পর এতগুলা মানুষ দেখেছে। সবাই উৎসাহ দিয়েছে। আমি জানি, আমি এতটা পাওয়ার যোগ্য না। আমার কাজ টা এতটা ভালো হয় নি।

তার পরেও এত প্রশংসা, শুভকামনা। সমালোচনা গুলা পর্যন্ত অনেক আন্তরিক। সত্যি আমি ভীষন ভাবে কৃতজ্ঞ আপনাদের সবার প্রতি। এবার আসি আসল কথায়। যখন আমার কোন লেখায় একটা প্লাস পড়ে, কিংবা কেউ প্রিয়তে নেয়, অথবা নীরবে পড়ে চলে যায়, সবাই আসলে আমাকে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করে।

আমার কোন কিছুর প্রশংসা অথবা নিন্দা সবি আসলে আমি পজেটিভ মোটিভেশন হিসেবে নেই। এই মোটিভেশনই হয়তো ভবিষ্যতে ভালো কোন কাজের জন্ম দিবে। এই বোধ আমার মাঝে আগে ছিলো কিনা জানিনা, তবে ব্লগের কল্যানে এই চেতনা দৃড় হয়েছে আরো অনেক। আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ আপনাদের সবার প্রতি। আমার মাঝে অতীতের যেই অনুশোচনা, তাকে আপনারা নিয়ে এসেছেন সূর্যের আলোয়।

দুখ-কষ্ট, অপরাধবোধ, অভিমান, হতাশাকে শিল্প ও পজেটিভ কাজে রুপান্তর করা কিন্ত খুব গুরুত্বপুর্ন। জীবনের জটিলতাকে না হয় আমরা নিয়ন্ত্রন করতে পারিনা, কিন্ত নিয়ন্ত্রন করতে পারি ভবিষ্যত কে। আমার মত হাজারো তরুনের ঝরে যাওয়া হয়তো ঠেকিয়ে দিতে পারে এই এক্টুখানি উপলদ্ধি। আসুন দেখি উপলদ্ধির কি প্রয়োজন এবং সমাজ ব্যাবস্থা পরিবর্তনে কি কি উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখতে পারে ব্লগিং। আমরা এই ব্লগটাকে মেইন্সট্রিমের বিকল্প হিসেবে দাড়া করাতে খুব বেশি কষ্ট হবার কথা নয়।

কনকোফিলিপ্স, মেহেরজান, যুদ্ধপরাধীর বিচার, সম্প্রতি পরিমল ইস্যু, পারসোনা ইস্যু, বিএসএফ এর নিন্দা, ভারতীয় সিনেমা আমদানী, রুমানা মনজুর ইস্যু, টিপাইমুখ ইত্যাদি সব ব্যাপারেই বাংলা ব্লগস্ফিয়ারের সচেতন ব্লগারদের অগ্রগামী ভুমিকা লক্ষ করা গেছে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। আস্তে আস্তে ব্লগ থেকে প্রতিবাদী ভুমিকাকে নিয়ে আসতে হবে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে। অনেকেই মনে করেন, ব্লগে লাফালাফি করে কি লাভ, যা করার করতে হবে রাস্তায়। আপনাদের সাথে আংশিক একমত।

অবশ্যই রাস্তায় নামতে হবে, তবে তার আগে জানতে হবে কেন আমরা প্রতিবাদ করছি। আমাদের চেতনার জায়গাটা কোথায়। না বুঝে প্রতিবাদ করায় কোন মাহত্ম নেই। মার্ক্স ও কিন্ত সমাজ পরিবর্তনে বলে গেছেন কনশাসনেস এবং শিক্ষার কথা। নিজের নলেজ কে করতে হবে সমৃদ্ধ।

এবং অনেক ক্ষেত্রেই এই গুরুদায়িত্বই কিন্ত পালন করে যাচ্ছে ব্লগার রা। দেশ ও রাষ্ট্রের ইতিহাস জানতে হবে সঠিক ভাবে। আমাদের সঠিক ইতিহাস এবং তথ্য জানানোর দায়িত্ব যাদের হাতে,সেই মুরুব্বি গোষ্ঠি কিন্ত সবসময় দায়িত্ব পালন করছেন না। তাহলে আমরা যারা ব্লগার, যারা লেখি, আমরা যারা জানি, তারা কেন এই দায়িত্ব নেই না ? আজকালকার ডিজুস ছেলেপেলেকে দেখে ভ্রু কুচকাতেই বয়োজোষ্ঠরা বেশি আগ্রহী। জেনারেশন গ্যাপের ব্যাপারটি তারা ধরতে পারছেন না।

আধুনিকতা মানেই কিন্ত গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়া নয়। একটু এভাবে চিন্তা করুন, একজন তরুন হেটে যাচ্ছে, হাতে সিগারেট, কানে হেডফোন। হটাৎ একজন বৃদ্ধকে দেখে যদি সে রাস্তা পার হতে সাহায্য করে, তাহলে তার ড্রেসআপ- গেটআপ কি এতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়? নাকি ফোকাস করার বিষয় এখানে মানবতা ও শুভবুদ্ধি ? জেমস যখন হিন্দিতে গান গায়, আর হাজারো ইন্ডিয়ান তার প্রশংসা করে, এবং এতে যদি বাঙ্গালী হিসেবে আমাদের বুক গর্বে ফুলে উঠে, সেটা কি দেশপ্রেম নয় ? অথবা টানা দশ ম্যাচ হারার পরে যদি বাংলাদেশ এক ম্যাচ জিতে, এবং তাতে আমরা উল্লাস করে বিজয় মিছিল বের করি, তাহলে তাকি খুব বড় ভুল ? তাহলে আগে নিজের ভিতরের ভালো সত্তাটিকে আগে জাগ্রত করতে হবে। আমাদের পরের জেনারেশনের জন্য এই সত্তাকে আসলে আমরা ব্লগাররা জাগিয়ে তুলতে পারি। তাদের সাথে শেয়ার করতে পারি আমাদের ভুলগুলি, আমাদের নৈতিকতার যায়গা টি।

সবাইকে নিজের জায়গায় শক্ত হয়ে দাড়াতে হবে। আমরা যে যেই সেক্টরে পড়াশোনা করছি, যে যেই সেক্টরে কাজ করছি, সেখান থেকেই শুরু করতে হবে পরিবর্তন। কবি সাহিত্যিক রা তাদের লেখার মাধ্যমে, এক্টিভিস্ট রা কাজের মাধ্যমে, সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রদানের মাধ্যমে, মিডিয়া কর্মিরা তাদের ক্রিয়েটিভ ফিল্ডের মাধ্যমে গনজাগরন তৈরি করতে হবে। সুশিলতার লেবাস আর ধর্মান্ধতা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে উঠে দাড়াতে হবে বাস্তবতার সমীক্ষে। দূর্নিতীকে ব্লক করে দিতে হবে এই প্রজন্ম থেকেই।

আমি সিন্ডিকেট ব্লগিং এর সমর্থক নই। তবে একে পজেটিভ লি ব্যাবহার করার সূযোগ রয়েছে। কিভাবে ? আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে একটা বিপ্লবের খুব প্রয়োজন। যেই বিপ্লব শুধুমাত্র পেশিশক্তির বিপ্লব নয়। বিপ্লব হতে হবে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সকল ধরনের।

সকল আগ্রাসনের বিপক্ষে যেই বিপ্লব কথা বলবে। রেভুলিউশন আসবে আমাদের এই তরুনদের হাত ধরে, টেকনোলজির সহায়তায়। আজকে ফেসবুকে কিংবা ব্লগে কোন ভাল লেখা, দরকারি তথ্য সবাই শেয়ার করছি। সবাই জানছি ঘটনার আড়ালের ঘটনা। ব্লগ মিডিয়া কালের কন্ঠ অথবা প্রথম আলোর কামড়া-কামড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে অনেক আগেই, এখন সবাই ইনফরমেটিভ।

দরকার শুধু এই ট্রেন্ড কে ধরে রাখা এবং তাকে ভার্চুয়াল থেকে রিয়েলিটিতে নিয়ে আসা। যে সকল রাজাকার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা দেশপ্রেমের জন্য হুমকি স্বরুপ, তাদের ম্যানুপুলেট করার সুযোগ নষ্ট করে দেয়া। আপনার একটা মোবাইল টেকস্ট হতে পারে বারুদের সলতের আগুন। যা ঘটাবে বিশাল বিষ্ফোরন, ছোট্ট একটা পাথর, যা নামাবে বিশাল ধস। অলরেডি আমরা যার প্রমান পেয়েছি জাতীয় ইস্যুতে এবং আন্তর্যাতিক প্রাঙ্গনে।

যারা অলরেডি দুর্নিতিগ্রস্ত, তাদের না হয় পরিবর্তন করা গেলোনা। তবে যারা এখনো শিশু কিশোর, তাদের মধ্যে দেশপ্রেম এবং বিবেকের সিলমোহর কি এটে দিতে পারিনা ? আমরা যদি ঘুনে ধরা সমাজে পরিবর্তন আনতে না পারি, অন্তত ইনিশিয়েটিভ কি নিতে পারিনা ? সফলতা আসবে হয়তো দশ বিশ বা ত্রিশ বছর পরে। হয়তো তখন আমরা থাকবোনা সেই পরিবর্তন দেখার জন্য। তবে মনে রাখবেন, আপনার ছোট্ট একটু ভুমিকাই কিন্ত সূচনা করে দিয়ে গেল। আপ্নার নাম থাকবে আমাদের দেশের ইতিহাসে, বাংলাদেশের ইতিহাসে।

থাকবে ভবিষ্যত প্রজন্মের হৃদয়ে। আমি বিশ্বাস করি, বৃথা যেতে পারেনা লক্ষ শহীদের রক্ত। বৃথা যেতে পারেনা শহীদ জননী জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি। বৃথা যেতে পারেনা রাজনৈতিক কোন্দলে পড়ে মরে যাওয়া সেই শিশুটির আর্তনাদ। ভবিষ্যত প্রজন্মের একটা শিশুর জন্য বাসযোগ্য দেশ ও পৃথিবী তৈরি করে যাওয়ার দায়ভার কি আমাদের উপরি বর্তায় না ? যদি না পারি তবে আস্তিকদের বলছি, কি জবাব দেবেন আপনার স্রস্টাকে ? নাস্তিক দের বলি, কি জবাব দেবেন আপনার বিবেক কে ? আসুন প্রতিজ্ঞা করি, আর কোন দালালী নয়।

না পাকিস্তানের, না ভারতের, না আওয়ামীলিগের, না বিএনপির। আমরা সুস্থ সুন্দর একটি ব্লগ চাই, আমরা বাড়াতে চাই নিজেদের সচেতনতা, আমরা সাহিত্য সংস্কৃতির সৃষ্টিশীল বিকাশ চাই। আমরা কি তা পারবোনা ? অবশ্যই পারবো। আমরাই পারবো। আমাদের পারতেই হবে।

আমি প্রতিজ্ঞা করছি, আপনিও করুন। ধন্যবাদ নৈতিকতা ও দেশপ্রেমের প্রশ্নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সকল ব্লগার কে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।