আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গুরু জেমস এর - মান্নান মিয়ার তিতাস মলম (আপডেটেড)

এই পোস্টের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এ কে ফয়সাল আলম এর কাছ থেকে জানা গেল। এই পোস্টটি তাই তাকে উৎসর্গীত। গান নিয়ে আমি কিছুই জানি না। গান ভালো লাগে তাই শুনি। বাংলা গান শোনা হয়েছে অনেক, মেজ ভাইয়ের কল্যাণে।

সে শোনা পর্যন্তই, গান নিয়ে অ্যানালাইসিস করার চেষ্টা করা হয়নি কখনো। গানের লিরিক যে সময়ের সাথে পাল্টেছে এবং এই লিরিকই অনেক ঘরানার গানকে বিশ্ববিখ্যাত করে তুলেছে সেই তথ্য গান শোনার তুলনায় নতুন। জেমস এর গান ভালো লাগে তার অন্যতম কারণ ছিল সে যে সকল গান গায় তার অনেকগুলোই ইউনিভার্সাল - শুধু প্রেম নিয়ে কচলাকচলি নয়। বিশেষ করে তার গানের 'বন্ধু' শব্দটি একটা অন্যরকম ভালোলাগা তৈরীতে সাহায্য করেছে। মান্নান মিয়ার তিতাস মলম গানটা নব্বইয়ের দশকে মুক্তি পায়।

'নগর বাউল' অ্যালবামের প্রথম গান ছিল এটি। অ্যালবামের আরও গানের মধ্যে আমি এক নগর বাউল', 'তারায় তারায় রটিয়ে দিবো', 'নাগ নাগিনীর খেলা' গানগুলো জনপ্রিয়। যখন মুক্তি পায় তখন তিতাস মলম গানটা খুব একটা পছন্দ হয়নি, পরে শুনেছিলাম। সম্প্রতি এই মান্নান মিয়ার তিতাস মলম গানটির আরও দুটো ভার্সন পেলাম ইউটিউবে। সময়ের ব্যবধানে জেমস এর কন্ঠ হয়েছে আরও ভরাট, ম্যাচিওরড।

পাশাপাশি অপেরা শিল্পী ও হারমোনিয়াম এবং বাশী ও ভায়োলিন এর ফিউশনে গানটি নতুন রূপে আরও অসাধারণভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। মান্নান মিয়ার তিতাস মলম - মূল গান (অডিও) [yt|v=OXM3AybgP4I বাশী ও ভায়োলিন ফিচারড অপেরা শিল্পী ও হারমোনিয়াম ফিচারড এই গানের লিরিকটা খেয়াল করার মত। প্রথম কারণ এই গানটায় একজন ব্যক্তি 'মান্নান মিয়া' এবং তার জীবিকার অবলম্বন 'তিতাস মলম' নিয়ে বলা হয়েছে। এই তিতাস মলমের সাথে যুক্ত করা হয়েছে সব মানুষের মন যন্ত্রনাকে। ফলে সাধারণ মান্নান মিয়া আর তিতাস মলম হয়ে উঠেছে সার্বজনীন।

গানটি লিখেছেন লতিফুল ইসলাম শিবলী। গুনী এই গান রচয়িতা হঠাৎই কোন কারণে সংগীতের এই দুনিয়া থেকে ডুব দিয়েছেন। তারজন্য মান্নান মিয়ার একটি তিতাস মলম জরুরী। তার গুনপনা নিয়ে জানতে ইশতিয়াক ভাইয়ের এই পোস্টা দেখা উচিত। এই গানের রচনার ইতিহাস এ. কে ফয়সাল আলমের কাছ থেকে জানা গেল।

মূলত এটি একটি কবিতা। গানের শুরুতে "ব্যাপারিয়ার হাট" এর কথা বলা হয় যা আসলে সঠিক উচ্চারণে "তেবাড়িয়ার হাট"। যিনি লিরিকটা কম্পিউটারে কম্পোজ করেছিলেন তিনি গান শুনে তারপর লিরিকটা লিখেছিলেন। তাই ঐ টাইপম্যানের কারণে আমাদের এই ভুল শোনা। গানটা গীতিকারের দেখা জীবন থেকে নেয়া।

প্রতি রবিবারে নাটোরের তেবাড়িয়ায় এই হাট বসতো । এটা উত্তর বঙ্গের বড় কয়েকটি হাটের মধ্যে এটা ছিল অন্যতম এবং এখনও আছে। এই গানের গীতিকার শিবলীর বাড়ি ছিল ঐ হাট থেকে প্রায় ১কি.মি দুরে। প্রতি রবিবার উনি সেই বাড়ি থেকেই ঐ হাটের মান্নান মিঞার মলমের প্রচার শুনতে পেতেন। সকাল বেলা ঘুমটাই ভাংতো ঐ মাইকের আওয়াজে।

একই জায়গায় বসে ২৫ বছর ধরে এই মলম বিক্রী করছে এটা বছরের পর বছর চলে যেত কিন্তু তার কথাতে কোন পরিবর্তন হত না। সব সময় ২৫ বছর-ই ছিল। তিনি ঐ হাটে বড় এক তেতুল গাছের তলায় তার এই ব্যবসা চালাতেন। এই মান্নান মিয়াকে নিয়েই গান। কেন তিতাস মলম? এক জায়গায় বসে একটা লোক যদি ২৫ বছর একই মলম বিক্রী করে বুঝতে হবে সেই মলমে কিছু হলেও কাজ হয়।

মান্নান মিয়া বিভিন্ন দেশীয় লতা পাতা, নির্যাস ইত্যাদি দিয়ে তার মলম বানিয়ে বিক্রী করতো। এই মলম এমনই কার্যকরী যে তা মনের ক্ষতও সারাতে পারে। সত্যিকার মলম এই ক্ষত সারাতে পারে কিনা সেটা সন্দেহ আছে, তবে এই দাবী যে মানসিকভাবে খুব শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করে তাতে সন্দেহ নেই। যেই মান্নান মিয়াকে নিয়ে এই গান তিনি কিছুদিন আগে মারা গেছেন। এই গানটা যখন রিলিজ হল তখন মান্নান মিয়া জীবিত।

আর জেমস্ তখন তুমুল জনপ্রিয়। স্বভাবতই জেমসের যারা ভক্ত এবং যারা গান শোনে তারা দলে দলে পেবারিয়ার হাটের সেই জীবন্ত কিংবদন্তীকে দেখতে যাওয়া শুরু করলো। তো মান্নান মিয়া তখন বেশ নড়েচড়ে বসলো। মান্নান মিয়ার ইচ্ছে ছিল এর গীতিকারের সাথে দেখা করার, কিন্তু নানা কারনে এটা আর সম্ভব হয়নি। নগরবাউল এ্যালবাম প্রকাশের কিছুদিন পরেই আর্মি স্টেডিয়ামে প্রথম কর্নসাটে মান্নান মিয়ার তিতাস মলম গানটি জেমস পরিবেশন করেন ।

এটা ছিল ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামের প্রথম কনর্সাট এবং পুরো স্টেডিয়াম ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ তৎকালীন সময়ে প্রায় ২৫০০০ লোক সমাগম হয়েছিল ঐ কর্নসাটে। ঐ কর্নসাটে গীতিকার শিবলী দর্শকের পিছনের সারিতে ছিলেন এবং তিনি উপভোগ করেছিলেন যে একটা অজো পাড়া গাঁ এর মান্নান মিঞা কে কিভাবে আধুনিক ঢাকার তরুণেরা নিজ কন্ঠে কন্ঠ মেলাচ্ছে। প্রত্যেকটা গানের পেছনে এরকম একটা ইতিহাস পাওয়া যায় - বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই ইতিহাসটা আর জানা যায় না। মান্নান মিয়ার তিতাস মলমের কাহিনীটা যেমন জানা গেল তেমনি যদি সব গানের কাহিনীই জানা যায় তবে কেমন হতো? আমার কল্পনা শক্তির সীমাব্ধতা এখানেই উন্মোচিত হয়। মূল লিরিক: মন্নান মিঞার তিতাস মলম লতিফুল ইসলাম শিবলী প্রতি রোববারে তেবাড়িয়া হাটের তেঁতুলতলায় ২৫ বছর ধরে এক জায়গায় বসে দাউদ বিখাউজ আর চুলকানি ঘায়ের দিয়ে গেছে আরাম উপশম মন্নান মিঞার তিতাস মলম।

তিতাসের তীরে জন্ম যে তার নাম দিয়েছে তাই তিতাস দুটাকা মূল্যের এই মহৌষধ করে চুলকানি পচরার বিনাশ। গোপন ফর্মুলা আছে একটা দেশীয় লতাপাতা নির্যাস বহু শ্রমে সাধনায় কত দিন গেছে তার বনবাস। কোনো স্বপ্নে পাওয়া নয় নয় কোনো উত্তরাধিকার মন্নান মিঞার নিজের আবিষ্কার মন্নান মিঞার নিজের আবিষ্কার। বিনয়ী লোকটার আছে একটা অহংকার আর গরিমা উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করে তার মলমের যত মহিমা। মনের কোনে লুকিয়ে রাখা ইচ্ছেটা তার বড় অম্লান ভালোবেসে সাবাই তাকে ডাকুক ‘ডাক্তার মন্নান’।

নিজের বুকের ক্ষত লুকিয়ে রেখে সারিয়ে তোলে অন্যের ক্ষত কোনো দিনও কেউ জানবে না হায় মন্নান মিঞার যাতনা কত। বইয়ের নাম: 'তুমি আমার কষ্টগুলো সবুজ করে দাও না' লতিফুল ইসলাম শিবলী বইটি বসুন্ধরা সিটির বেস্টি মিউজিকে পাওয়া যাবে দোকান ২৩-২৪, লেভেল-৬, ব্লক - ডি, ঢাকা কৃতজ্ঞতার বাধেন আরও বাধেলন ফয়সাল ভাই। এই পোস্টটি গীতিকার কবি লতিফুল ইসলাম শিবলী'র চোখে পড়েছে, তিনিই শুধরে দিলেন ভুলগুলো। মূল লিরিক তারই সহযোগিতায় পাওয়া গেল। ফেসবুকে দারাশিকো'র ব্লগের সাথেই থাকুন ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।