আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সামু ব্লগার্স পিকনিক ২০১২। অন্যরকম একটি দিন, অসাধারন কিছু মানুষের সাথে পরিচয়।

আমি শুনতে পাই লক্ষ কোটি ফিলিস্তিনীর আর্তনাদ...হাহাকার জিশান ভাই বলেছিলেন একদম সাড়ে আটটায় বাস ছাড়বে, আমি একদম আটটা বেজে ১০ মিনিটে গিয়ে হাজির হই। অনেক গুলো বাস দাঁড়িয়ে আছে পিকনিকে যাবার জন্য। কিন্তু আমি আমাদের বাস খুজে পেলাম না! জিশান ভাইকে ফোন করে জানলাম জাদুঘরের গেইটের সামনে রাজধানী এক্সপ্রেস। প্রথমেই কিছুটা অস্বস্তি লাগছিল, কেননা এই পিকনিক নিয়ে অনেকে বহুত পানিঘোলা করেছে, সেটাকে এমন একটা রুপ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল যাতে মনে হয় “পিকনিকের বাসে ক্রুজ মিসাইল মারা হবে” এমন একটা!!! যাইহোক, আমি দেখলাম বাসে একজন রয়েছেন, জিজ্ঞাসা করলাম, এটাই সামুর বাস কিনা, উনি বললেন জ্বি, গাজিপুর যাবে। আমি হাসিমুখে আমার পরিচয় দিলাম, নিক জানালাম, উনি বলেন “আপনি কি বললেন বুঝতে পারলাম না।

“ আমি মনে করলাম উনি বুঝি শুনতে পাননি, এবার আমি জোরে বললাম, “আমি সবুজ ভীমরুল নামে ব্লগিং করি, আপনার নিক কোনটা?” উনি কোন কথা না বলে মুচকি হেসে ডানে বামে মাথা নাড়ালেন, আমি ভাবলাম উনি বুঝি কোন বড় ব্লগার, এমন কিছু লেখালেখি করেন যেটা অন্যের পছন্দ না, হয়ত কোন নাস্তিক ব্লগার, কোন আশঙ্কার কারনে ব্লগ নিক প্রকাশ করলেন না!!! আমিও একটু সঙ্কিত হলাম। মন খারাপ করে বাসের বাইরে বের হয়ে দেখলাম ধীর পায়ে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন বাসের দিকে এগিয়ে আসছেন!! আমিতো মনে করলাম আজকে ক্যাচাল একটা হবেই। কিন্তু উনি কাছে আসার পর বুঝা গেল উনি আসিফ মহিউদ্দিন না। আস্তে আস্তে সবাই আসতে লাগলেন। ব্লগার নিমচাঁদ ভাই, নিমচাঁদ ভাইয়ের ছেলে, নষ্ট কবি, আল মনসুর, ছোট মির্জা, নোমান নমি (যাকে আমি আসিফ মহিউদ্দিন মনে করেছিলাম, কারন তার চুলের কাটিং অনেকটা আসিফ মহিউদ্দিনের মত), স্বর্নমৃগ, ধুসরধ্রুব, নিশাচর ভবঘুরে, আশকারি, পুশকিন ভাই মোজেম ভাই আশাকারির বাবা এবং আরো অনেকের সাথে পরিচিত হলাম।

কয়েক মিনিটের মধ্যে সবার সাথে আলাপ পরিচয় হয়ে আড্ডা শুরু হয়ে গেল। শুনে মজা লাগল একজন নাকি জেনারেল হয়েছে, আরেকজন ব্যান খেয়েছেন। নিমচাঁদ ভাই বয়সে অনেক সিনিয়ার হয়েও সবার সাথে মিশতে পারেন। এই পিকনিক প্রানবন্ত করে তোলার পেছনে উনার দারুন ভূমিকা ছিল । আমার সমস্ত শঙ্কা দূর হয়ে গেল।

আর সেই ব্যক্তি যাকে নাস্তিক ব্লগার ভেবেছিলাম উনি দেখি ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসেছেন, মানে উনি কোন ব্লগার নন আমাদের বাসের ড্রাইভার। (আমার কথা শুনে উনি নিশ্চই ভাবছিলেন “পাগলে কি কয়!!) ইতোমধ্যে দেখি কিছু আপু ব্লগারাও এসে হাজির। খানিক পরে দেখলাম শিপু ভাই, ভাবি ও তাদের পিচ্চি সহ হাজির, এবং শিপু ভাইয়ের হাতে বিশাল এক প্লাস্টিকের পাইপ সেখানে অনেক হাওয়াই মিঠাই লাগানো। আশপাশের পিকনিক পার্টিগুলো হা করে শিপুভাইয়ের হাতের মিঠাই গুলো তাকিয়ে দেখছে। এরপর সি..এন.জি করে জিশান ভাইও হাজির, সাথে সকালের নাস্তা।

কিছু ফটোসেশনও হল। তারপর তুমুল করতালির মধ্যদিয়ে শুরু হল আমাদের যাত্রা। বাসে একটু পরে নাস্তা বিতরন করা হলো। এক প্যাকেট টিফিন বিস্কিট, একটা কমলা ও পানি। ব্লগার নষ্ট কবি দারুন মাউথ অর্গান বাজাতে পারেন, সাথে ছিল শাহেদ ভাইয়ের গিটার আর আমাদের খোলা গলায় গান।

দারুন উপভোগ করেছিলাম। নিশাচর ভবঘুরে ভাই দারুন আলাপি মানুষ, উনি অনেক বিষয়ে জ্ঞান রাখেন, বিশেষ করে আপুদের ব্যাপারে উনার জ্ঞান একটু বেশী। হঠাৎ শোরগোল শুনলাম “লুল, লুল, লুল, লুল..................” কি ব্যাপার? ছোট মির্জা বাসের সামনের দিকে গিয়েছিলেন, আর আপুরা বাসের সামনে বসেছিল, সেজন্যই পেছন থেকে এই শোরগোল। ছোট মির্জা আবার শিপু ভাইয়ের মাফলার দিয়ে টাই বেঁধে ডেসটিনি ভাব ধরলেন। একটু পরে ছোট মির্জা ও তার সাগরেদ আশকারি মিলে বাসের সবার কাছ থেকে ভাড়া তুলল,তাকে একদম অরিজিনাল কন্টাক্ট্রের মতই মনে হয়েছিল।

লাগল। যাত্রার মাঝখনে ব্লগার জাহিদ ভাই, রায়হান মাহী, পানকৌড়ি উঠলেন। ভাওয়াল বনে পৌছে জিশান ভাই এক অনৈতিহাসিক বক্তব্য দিলেন। ছাইরাস হেলাল ভাইয়ের সাথে দেখা হবার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু জিশান ভাই বললেন উনার স্ত্রীর অপারেশন হয়েছে, তাই উনি আসেন নি। আর আল্লাহর ইচ্ছায় অপারেশন সাক্সেসফুল হয়েছে, সাইরাস ভাই সবাইকে পিকনিকের শুভেচ্ছে জানিয়েছেন।

সবাই নিজেদের পরিচিতি দিল। এর পরে চার দলে ভাগ হয়ে ক্রিকেট খেলা হল। জাহিদ ভাই, আর ব্লগার নিমচাঁদ ছিলেন আম্পায়ার, অন্য সবাই প্লেয়ার। আমি নিজেকে এই ক্রিকেট দূর রাখলাম, কেননা এর আগে এক পিকনিকে ক্রিকেট খেতে গিয়ে ব্যাট ভেঙ্গে ফেলেছিলাম। এরই ফাঁকে শাহেদ ভাই গিটারে সুন্দর সুর তুলে সবাইকে মাতিয়ে রাখলেন।

ব্লগিয় ক্যচালের মধ্যে ক্রিকেটেও কিছুটা ক্যাচাল লাগল, এবং এটি আরো উসকে দিয়ে ব্লগার পানকৌড়ি মজা অনেক বাড়িয়ে দিলেন। একবার খেলার মাঝখানে আউট হওয়া নিয়ে তর্কের সময় উনি “আউট, আউট” বলে চিল্লাতে চিল্লাতে সেখেনে চলে গেলেন, অথচ তিনি জানেনই না সেখানে কি হয়েছে। আড়াইটা বাজলে সবার পেটা হাতি ঘোড়া লাফালাফি করতে লাগল, কিন্তু শিপু ভাই আর জিশান ভাইয়ের তখনও দেখা নেই। ব্লগার অপরিনীতা একটু পরে জালালেন উনারা খাবার নিয়ে আসছেন, সবাইকে কে প্লেট হাতে নিতে বলেছেন। আমরা সবাই থালা হাতে নিয়ে বসে পড়লাম।

কিন্তু উনারা তো আসেন না, তাই প্লাস্টিকের থালা হাতে ছবি তোলা হলো। একটু পরে তারা এসে হাজির। সবাই কাচ্চি খেতে বসে পড়লাম। কাচ্চির সাথে ছিল পেপসি, সেভেন-আপ। শিপু ভাই আর জিশান ভাই তদারকি করলেন।

কাচ্চিটা আসলেই দারুন হয়েছিল। খাওয়ার পরে মেয়েদের পিলো পাসিং খেলা হলো, আশকারির বাবার রেফারিং এ দারুন এক খেলা শেষে চ্যাম্পিয়ান হলেন জাহিদ ভাইয়ের স্ত্রী। এর আগে ক্রিকেট ফাইনাল খেলা হয়েছিল, সেখনে ক্যাঁচাল লাগিয়ে একটা টিম জয় পেল। তবে এই বিজয়ের মধ্যে অনেক ক্যাচাল ছিলও, ক্যাচালের মধ্যে মনে হল একাধিক ব্যাক্তি জড়িত। এরই মধ্যে ব্লগার নীল_পরী ইট দিয়ে চুলা বানিয়ে ফেললেন, ব্লগার পানকৌড়ি গেলেন লাকড়ি খুঁজতে।

উনি ফিরে এলেন, সরু দুইটা ডাল নিয়ে, উনি বললেন “বাংলা সিনেমার নায়কেরা এত লাকড়ি পায় কেমনে, আমি তো কিছুই পেলাম না”। এরপর চুলা জ্বালিয়ে পানি গরম করা হলো। খবরের কাগজ, শুকনো পাতা দিয়ে চুলা জ্বালানো হয়েছিল। নষ্ট কবি দেখলাম জ্বলন্ত গাছের ডাল দিয়ে ফটোগ্রাফি করতে। এই চুলা জ্বালিয়ে পানি গরম করার ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ মজা লেগেছিল, আমি কিছু শুকনো পাতা চুলার তলে দিয়ে ফু দিতেই এক রাশ ধোয়া আমার নাকে মুখে লেগে এক বিচ্ছিরি অবস্থা।

এরপর রাফেল ড্র হলো, পুরষ্কার বিতরনী হল, ব্লগার নীল_পরী দেখলাম চুলা বানার জন্য কালিমাখা পাতিল উপহার পেয়েছেন। গো-আযমের গ্রেপ্তার উপলক্ষে মিষ্টি খাওয়া হলো আর সবার সাথে গ্রুপ ছবি তোলা হলো। দারুন একদিন কাটিয়ে বাসে উঠলাম ঢাকার উদ্যেশ্যে। তবে বাসে উঠেও মজা শেষ হয় নি, আমাদের মধ্যে এক ব্লগার লক্ষ্য করলেন কলতলায় হাত ধোয়ার সাবান পড়ে আছে। উনি “সাবান, সাবান” বলে চেঁচিয়ে উঠলেন, ব্লগার নিশাচর ভবঘুরে আমাদের কে বনের মধ্যে বাঘ আর সিংহ দেখাতে চেষ্টা করলেন।

বুঝলাম পিকনিকের মজা এখনই শেষ নয়। বাসের সামনের দিকে পুরো পথ শাহেদ ভাই গিটার বাজিয়ে মাতিয়ে রাখলেন, এর মধ্যে শিপু ভাই আমাদের সবাইকে ব্যাক্তিগত ভাবে ধন্যবাদ জানালেন পিকনিকে আসার জন্য। সন্ধার পরে বাসের পেছন দিকে মনসুর ভাই, নোমান নমি, স্বর্নমৃগ, ছোট মির্জা, শিপু ভাই, নিশাচর ভবঘুরে, পুশকিন, রিয়াল রিফাত, ধুসরধ্রুব, পুশকিন সবাই মিলে দারুন সব ১৮+ কৌতুকের আসর বসল। বিশেষ করে শিপু ভাইয়ের "গান্ধী ও কুইন ভিক্টোরিয়ার", “ আই ইউজড মাই হেড” শুনে সবাই হাসিতে গড়িয়ে পড়েছিলাম। সেই কৌতুক দেখলাম আশকারি শুনে খ্যা খ্যা করে আসছে।

(শিপু ভাই, আশকারির এই কৌতুক শোনা উচিৎ হয়নি, পুলাডা এই বয়সে বেশি পাইকা গ্যাসে”। ) এরপর আশকারিকে সামনে পাঠিয়ে দিয়ে আরও দারুন ১৮+ কৌতুক শোনা হল। উত্তরাতে অনেকে নেমে গেলেন। ফার্মগেইটের কাছাকাছি আসতে আশকারি, ছোটমির্জা, নিশাচরসহ অনেকেই নেমে গেলেন, ছোট মির্জা নামার সময় আমরা সবাই তাকে “লুল ডেস্টিনি” বলে বিদায় সম্ভাষন জানালাম। বাস শাহবাগে যাদুঘরের সামনে এসে থামল, জিশান ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার উদ্যেশ্যে রওনা হলাম।

পুরো দিনটা মনে হল এক নিমিষে শেষ হয়ে গেল। আগে কাওকে দেখিনি শুধু ব্লগেই তাদের লেখা পড়েছি, কিন্তু এই কয়েক ঘন্টায় কেন যেন সবাই আপন হয়ে গেল, মনে হয়েছিল অনেক দিনের পরিচয়। আমি সবাইকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই পিকনিকে থাকার জন্য, সবার আন্তরিকতার কারনেই আমি এমন একটি চমৎকার দিন কাটালাম। আশা করছি সামনের কোন আড্ডায় আমার সবার সাথে দেখা হবে। সবাইকে আবারো ধন্যবাদ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.