আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাফর ইকবালের দুখের সীমা নাই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ভুলের জন্য নাকি তিনিই দায়ী!

অশুভ শক্তির মুখোশ উন্মোচনেই তৃপ্তি জাফর ইকবাল কাগুর দুখের সীমা নাই। হাইকোর্ট তারে সম্মান জানায়া ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা তদারকি করতে কইছিল, পরে আপিল বিভাগ সেই অধিকার কাইড়া লইছে। এইবার নতুন বোমা ফাটাইছে দৈনিক যুগান্তর। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে যে লেজেগুবড়ে অবস্থার তৈরি হইছে, তার জন্যে নাকি আমগোর জাফর ইকবাল কাগুই দায়ী! বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই তথ্য জানাইছেন। উল্লেখ্য, গত ১ জানুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার যে ফল প্রকাশ করেছে, গত সোমবার তা বাতিল করে সংশোধিত নতুন তালিকা প্রকাশ করা হয়।

উত্তরপত্র মূল্যায়নের দায়িত্বে ছিলেন জাফর ইকবালের নেতৃত্বে একটি টিম। তাদের অবহেলার কারণেই এত বড় একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তৈরি হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ভর্তি পরীক্ষার ফল নিয়ে অরাজকতা মুসতাক আহমদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে এবারও লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ১ জানুয়ারি প্রকাশিত ফলাফল সোমবার বাতিল করা হয়েছে। তার স্থলে প্রকাশ করা হয় সংশোধিত নতুন তালিকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভুলভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়নের কারণে ফল প্রণয়নে মারাÍক ত্র“টি ধরা পড়ে। আর এ কারণে কর্তৃপক্ষ আগের ফলাফলে সংশোধনী আনে। কিন্তু ইতিমধ্যে দেশের ৩১৫টি অনার্স কলেজে ২ লক্ষাধিক আসনের মধ্যে অন্তত ১ লাখ শিক্ষার্থী আগের ফলাফল অনুযায়ী ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেলেছে। এ নিয়ে ওইসব শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মাঝে উদ্বেগ ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে কলেজে কলেজে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে চরম অসন্তোষ ও তীব্র ক্ষোভ।

কলেজগুলোও নতুন তালিকায় ভর্তি করাতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে। অনেকে ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধও করে দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আজ সন্ধ্যায় জরুরি সভা ডেকেছে। গতবছরও একইভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। বারবার তালিকা প্রকাশের বাইরে মানবিক বিভাগে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের বিবিএ’র বিষয়ে মনোনয়ন প্রদানসহ নানা ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টি এবারও সেই ভুলের পথে পা বাড়িয়ে নতুন করে ভর্তি কেলেংকারির জš§ দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করে বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও সিনিয়র শিক্ষকরা জানান, চলতি বছর ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে নানা অসঙ্গতি রয়েছে। এর মধ্যে ইংরেজিতে ফেল করা বা অযোগ্য শিক্ষার্থীদের মনোনয়নসহ ইংরেজির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে অযোগ্যদের মনোনয়ন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। কলেজে কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্নকালে বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর তা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করা হলে তড়িঘড়ি করে ফলাফলে সংশোধনী আনা হয়।

রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সহসভাপতি মাসুমে রাব্বানী জানান, ভর্তি নির্দেশিকায় বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি বিষয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষায় ১২ আর মানবিক ও বিজনেস স্টাডিজের শিক্ষার্থীদের ১০ নম্বর পেতে হবে। কিন্তু ভর্তি করাতে গিয়ে দেখা যায়, এই শর্ত পূরণ করে না বা নিতান্তই অযোগ্য শিক্ষার্থীরা ইংরেজির জন্য মনোনয়ন পেয়েছে। এভাবে ফলাফলে আরও বেশ কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়লে বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তখন তারা এতে সংশোধনী দেয়। সে অনুযায়ী কলেজে কলেজে ৯ জানুয়ারি সংশোধিত ফলাফল যায়।

রাজধানীর একটি বিখ্যাত সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জানান, নতুন ফলাফলের কারণে ৯৯ ভাগ শিক্ষার্থীর মেধাক্রম পরিবর্তন হয়েছে। আর ৪ থেকে ৫ ভাগ শিক্ষার্থীর বিভাগ পরিবর্তন হয়েছে। জানা গেছে, এছাড়া ভর্তি পরীক্ষার আবেদনকালীন কিছু কলেজে বিষয়ের সংযোজন অথবা বিয়োজন, আসন সংখ্যার পরিবর্তন, ছাত্রছাত্রীদের কোটা সংশোধন, পছন্দক্রমের সংশোধন, এইচএসসি অথবা সমমান পরীক্ষার তথ্য সংশোধনের কারণে কিছু ছাত্রছাত্রীর ভর্তি নির্দেশিকার নিয়ম অনুযায়ী বিষয় পরিবর্তন করতে হয়েছে। এর ফলে কলেজে কলেজে মেধাতালিকায় যে পরিবর্তন এসেছে, তাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। কলেজগুলোও শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।

ওদিকে সংশোধিত নতুন মেধাতালিকার কারণে শিক্ষার্থী অভিভাবকদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বদরুননেসা সরকারি মহিলা কলেজে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস লিজা। তিনি বলেন, তিনি ইতিমধ্যে তো ভর্তি হয়ে গেছেন। তার এখন কি হবে। তিনি আরও বলেন, যদি ভুলের ঘটনা উদঘাটিত হয় আর নতুন তালিকার কারণে তাদের মেধাক্রম ও বিভাগ পরিবর্তন হয়, তাহলে এর দায় তো তাদের নয়।

টঙ্গী সরকারি কলেজে ভর্তিচ্ছু ফাহিম হোসেন বলেন, প্রথম ফলাফলে তিনি অর্থনীতি বিষয়ে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু সোমবারের সংশোধিত ফলাফলে তাকে হিসাববিজ্ঞান দেয়া হয়েছে। একই কলেজের রাকিবুল হাসান জানান, তিনি ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর সংশোধিত ফলাফলে তিনি হিসাববিজ্ঞান পেয়েছেন। তার প্রশ্ন এখন তার কি হবে। এভাবে সারাদেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর এখন মাথায় হাত।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তারা কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। আর কলেজগুলোও কোন সমাধান দিতে পারছে না। তিতুমীর সরকারি কলেজের একজন শিক্ষক জানান, এসব কারণে সোমবারই তারা ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়েছেন। এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন। আর টঙ্গী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আফাজউদ্দিন বলেছেন, সংশোধিত ফলাফলের কারণে যেসব জটিলতা তৈরি হয়েছে, তা সুরাহা না হলে বাকি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা সম্ভব নয়।

অভিভাবক নাজমুন নাহার লিপি বলেন, তিনি তার বোনকে ভর্তি করাতে গিয়ে দেখেন আগের মেধাক্রমে আরেকজন ভর্তি হয়ে গেছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভুল করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, আর খেসারত দিতে হয় শিক্ষার্থী ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মালেক সরকার এ ব্যাপারে বলেন, একটি সমস্যা হয়েছে। সংশোধিত ফলাফলও ইতিমধ্যে কলেজে কলেজে পাঠানো হয়েছে। সার্বিক ব্যাপার নিয়ে আগামীকাল (আজ) সন্ধ্যায় মিটিং ডাকা হয়েছে।

তার আগে বিস্তারিত কিছু বলা যাবে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ চৌধুরী বলেন, সমস্যাটির কারণে পুরো ফলাফলেই প্রভাব পড়েছে। কিন্তু আসলে কি ঘটেছে, কতজন শিক্ষার্থীর বিভাগ বা মেধাক্রম পরিবর্তন ঘটেছে, কতজনই মেধাতালিকার বাইরে ছিটকে পড়েছেন, তা এ মুহূর্তে বলা যাবে না। এজন্য ফলাফলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে বৈঠক করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। উল্লেখ্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সারাদেশে ৩১৫টি সরকারি-বেসরকারি কলেজে মোট ২৯টি বিষয়ে অনার্স চালু রয়েছে।

মোট আসন রয়েছে প্রায় ২ লাখ ৬ হাজার। ভুলটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় : নাম প্রকাশ না করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রায় ১ কোটি টাকা দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে তারা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে ফলাফলটি করিয়েছেন। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ওই টিমের লিডার। তাই ওই ভুলটি তাদের (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের) নয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এত টাকা খরচের পরও ফলাফলে এরকম ঘটনা জাতীয় পর্যায়ে অগ্রহণযোগ্য ও বেমানান।

তারা স্বচ্ছ, নির্ভুল ও সুন্দর ফলাফল আশা করেছিলেন। তিনি জানান, ইংরেজির কোডে ভুল থাকার কারণে সর্বনিু নম্বরের বাধ্যবাধকতা যাচাই করা ‘বিষয় নির্ধারণকারী সফটওয়্যার’র পক্ষে সম্ভব হয়নি। এর ফলে সমস্যাটি দেখা দেয়। ভর্তি পরীক্ষা কমিটির একজন সদস্য জানান, উল্লিখিত ত্র“টির কারণে ছাত্রছাত্রীর পছন্দের ক্রমানুসারে ব্যাপক সংশোধন এসেছে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.