আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আধুনিক সমাজে দাস প্রথার সরূপ উন্মোচন !!!

আমি আগা গোড়ায় মোড়ানো পুরোপুরি একজন মুক্তমনা মানুষ। দাসত্ব (ইংরেজি ভাষায়: Slavery বা Thralldom) বলতে বোঝায় কোনো মানুষকে জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা, এবং এক্ষেত্রে কোনো মানুষকে অন্য মানুষের অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। কাউকে তার ইচ্ছার পরিবর্তে দাস করা যেতে পারে। এটি হতে পারে তার আটক, জন্ম, ক্রয় করা সময় থেকে। দাসদের অনুমতি ব্যতিরেকে স্থান বা মালিককে ত্যাগ করা, কাজ না করার, বা শ্রমের মজুরী পাবার অধিকার নেই।

কিছু সমাজে নিজের দাসকে হত্যা করা আইসঙ্গত, এবং অন্যান্য স্থানে এটি একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। এটা শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি যে আমাদের এই আধুনিক এবং সভ্য সমাজে এখনো দাস প্রথার প্রচলন কমেনি। অনেকাংশে বলা যায় শুধুমাত্র এর ধরন পরিবর্তন হয়েছে। আর এই দাস প্রথার সংখ্যা শেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১২ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ২৭ মিলিয়নে দাড়িয়েছে যদিও দাস প্রথাকে পৃথিবীর অনেক দেশেই আইনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। দাসত্ববিরোধ আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যান্টি-স্ল্যাভেরি ইন্টারন্যাশনাল দাসত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে একে ‘জোরপূর্বক শ্রম দেওয়া’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে এখনো ২ কোটি ৭০ লক্ষ দাস রয়েছে। এই সংখ্যা ইতিহাসের যে-কোনো সময়কার দাসের সংখ্যার তুলনায় বেশি। এমন কী প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাসে আফ্রিকা থেকে আমেরিকায় আনা আফ্রিকান দাসের মোট সংখ্যাও এর প্রায় অর্ধেক । the International Labour Organization এর তথ্য অনুযায়ী ১২.৩ মিলিয়ন মানুষ এখনো জোরপুর্বক শ্রম দাসত্বের স্বীকার। ধন্যবাদ জানাতে হয় SAP-FL (ILO Special Action Programme to Combat Forced Labour ) কে যারা আধুনিক সময়ের বিভিন্ন প্রকার দাসত্বের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছেন।

সর্বদা চেষ্টা করছে যাতে আমাদের প্রতিটি মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করা যায় একজন মানুষ হিসেবেই, কোন দাস হিসেবে নয়। এই প্রোগ্রামটি আধুনিক জোরপুর্বক শ্রম দাসত্বের বিরুদ্ধে জনমত তৈরী সাথে রাস্ট্রগুলোকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়া থেকে শুরু করে এর বিরুদ্ধে সঠিক আইন প্রনয়ন এবং কার্যত পদক্ষেপ কর্মসুচী নিয়ে কাজ করে থাকে। এই দাসের বেশির ভাগই ঋণ শোধের জন্য দাসে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী মহাজনদের কাছ থেকে অর্থ ধার নিয়ে পরবর্তী অর্থ শোধ দিতে না পারায় দাসে পরিণত হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু আছে যারা কয়েক প্রজন্মের জন্য দাস।

মানুষ পরিবহন মূলত হয়ে থাকেনারী ও শিশুদের যৌন ব্যবসায় ব্যবসায় খাটানোর জন্য। এটিকে বর্ণনা করা হয় ‘ইতিহাসের সর্ববৃহৎ দাস বাণিজ্য’ হিসেবে। অবৈধ মাদকদ্রব্য পরিবহনে ব্যবহার করার কারণে একই সাথে এটি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অপরাধ ক্ষেত্র। তাই মানবতাহীন এক জঘন্য অপরাধ হিসেবে এই দাস প্রথা এখন আমাদের উন্নত সমাজে বিদ্যমান আছে যা মানব্জাতির জন্য ভীষন লজ্জাকর। সিদ্ধার্থ কারা (Siddharth Kara)’ র তথ্য অনুযায়ী ২০০৬ এর শেষোর্ধ পর্যন্ত তিন ধরনের সর্বমোট ২৮.৪ মিলিয়ন দাসত্ব এখনো আমাদের সভ্য সমাজে বহাল তবিয়তে আছে ।

Bonded labor/Debt bondage এর সংখ্যা (২৮.১ মিলিয়ন), Forced labour এর সংখ্যা (৭.৬ মিলিয়ন), আর Trafficked slaves এর সংখ্যা (২.৭ মিলিয়ন). সিদ্ধার্থ কারা (Siddharth Kara) একটি আধুনিক মডেলের দ্বারা প্রমান করে দেখিয়েছেন যে এই সংখ্যাটা ২০০৯ এর শেষে দাড়িয়েছে ২৯.২ মিলিয়ন। মধ্য প্রাচ্যর ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় সুদানে দাসত্ব প্রথার সংখ্যাটা অনেক বেশী। ২০০৭ সালের জুন জুলাই মাসে চীনের সানজি (Shanxi )এবং হেনান ( Henan ) প্রদেশে ইটের ভাটায় কাজ করা এ’রকম ৫৭০ জোরপুর্বক বাধ্যকরা শ্রম দাসকে মুক্তি দেয় চীন সরকার। আর এই মুক্তিপ্রাপ্তদের মাঝে ৫৯ জনই শিশু ছিলো। যদিও চীনে দাসত্ব প্রথা কে অফিসিয়ালি আইনের মাধোমে ২০১০ সালে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয় তবুও এখনো চীনের অনেক প্রদেশেই এই দাস প্রথা ভয়ংকর ভাবে স্থান দখল করে আছে।

আর এ থেকে স্পস্ট বোঝা যায় আধুনিক সমাজেও দাস প্রথা এখনো বহাল তবিয়তে শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে ভিন্ন পরিচয়ে সমাজকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। নেপালের সরকার ২০০৮ সালে হালিয়া ( Haliya - is an agricultural bonded laborer who works on another person's land. The literal meaning of Haliya is 'one who ploughs'. Haliyas can be found throughout Nepal. But the Haliya system in the far western hilly part of Nepal is considered a bonded labor system ) জোরপুর্বক বাধ্য করা শ্রমের নিয়ম থেকে প্রায় ২০,০০০ মানুষকে মুক্তি প্রদান করে। নেপাল সরকার ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এক আইনে মাধ্যমে হালিয়া প্রথাটি নিষিদ্ধ করে দেয়। কিন্তু এর পরেও এখনো নেপালে এইরকম দাসত্ব প্রথার প্রচলন রয়েছে। আনুমানিক ৪০ মিলিয়ন মানুষ এখনো ভারতে বিভিন্ন প্রকারের দাস প্রথা ভিতরে জীবন অতিবাহিত করছে।

এরা অনেকেই তাদের জীবন দশায় এই দাসত্বের চক্র থেকে বের হতে পারে না। ফলে এদের পরবর্তী প্রজন্মও কোন উপায় এবং সমাজের সহায়তা না পেয়ে পুর্ববর্তী বংশধরদের পুরনো দাসত্বের শিকলকেই পায়ে জড়িয়ে নেয়। ব্রাজিল সরকার তার নিজস্ব আইন প্রয়োগ করে সহায়তার মাধ্যমে ২০০৮ সালে প্রায় ৫,০০০ এরও অধিক মানুষকে দাস প্রথা মে,মুক্ত করে ফিরিয়ে আনে। তবুও এই সংখ্যাটা দাসত্বের পুরো সংখ্যা থেকে নেহায়েতই অনেক অনেক কম। এরকম আরো অনেক তথ্য দেয়া যাবে এই দাস প্রথার বর্তমান পরিসংখ্যান নিয়ে।

এইখানে আরো কিছু তথ্য দেয়া হলো – লন্ডন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২৪ জন দাস। খোদ ব্রিটেনে দাস ব্যবসার সন্ধান মেলায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে নানা মহলে। ব্রিটিশ পুলিশ উত্তর লন্ডনের পর্যটন স্থল ‘গ্রিন একর ট্রাভেলার স সাইট’ থেকে এদেরকে উদ্ধার করে। লন্ডনের ‘দি টেলিগ্রাফ’ পত্রিকা জানায়, অত্যন্ত দারিদ্র্য এবং নোংরা পরিবেশে বেশ কয়েকজন দাস থাকত শহরের অনতিদূরেই। খবর পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা রবিবার সকালে ওই খামার বাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলে ২৪ জনকে উদ্ধার করে।

তাদের মধ্যে কয়েকজন ব্রিটিশ নাগরিক রয়েছে। বাকিরা পূর্ব ইউরোপের। পুলিশের অনুমান অন্তত দেড় দশক ধরে সেখানে দাসপ্রথা চালানো হচ্ছে। “In Mauritania, the last country to abolish slavery (in 1981),it is estimated that up to 600,000 men, women and children, or 20% of the population, are enslaved with many used as bonded labour. Slavery in Mauritania was criminalized in August 2007. In Niger, slavery is also a current phenomenon. A Nigerien study has found that more than 800,000 people are enslaved, almost 8% of the population. Many pygmies in the Republic of Congo and Democratic Republic of Congo belong from birth to Bantus in a system of slavery. Some tribal sheiks in Iraq still keep blacks, called Abd, which means servant or slave in Arabic, as slaves. Child slavery has commonly been used in the production of cash crops and mining. According to the U.S. Department of State, more than 109,000 children were working on cocoa farms alone in Côte d'Ivoire (Ivory Coast) in "the worst forms of child labor" in 2002. Poverty has forced at least 225,000 Haitian children to work as restavecs (unpaid household servants); the United Nations considers this to be a modern-day form of slavery.” শারীরিক কিংবা কায়িক দাসত্তের সংখ্যাটাও কিন্তু আমাদের এই আধুনিক যুগে ভাবনার এবং চিন্তার বিষয়। মানবিক মুল্যবোধের বিপরীত অমানবিক এই সব প্রথা কিংবা নিয়ম আমাদের সমাজকে অন্ধকার থেকে আন্ধকারে নিয়ে যাচ্ছে।

নিচে এর কিছু তথ্য দেয়া হলো। "Annually, according to U.S. Government-sponsored research completed in 2006, approximately 800,000 people are trafficked across national borders, which does not include millions trafficked within their own countries. Approximately 80 percent of transnational victims are women and girls and up to 50 percent are minors," reports the U.S. Department of State in a 2008 study. While the majority of victims are women, and sometimes children, who are forced into prostitution (in which case the practice is called sex trafficking), victims also include men, women and children who are forced into manual labor. Due to the illegal nature of human trafficking, its exact extent is unknown. A U.S. Government report published in 2005, estimates that 600,000 to 800,000 people worldwide are trafficked across borders each year. This figure does not include those who are trafficked internally.[168] Another research effort revealed that between 1.5 million and 1.8 million individuals are trafficked either internally or internationally each year, 500,000 to 600,000 of whom are sex trafficking victims. এই লিঙ্কটিতে গেলে দেখতে পাবেন পরিচিত দাসদের বার্নানুক্রমিক নাম আমাদের মতো অনুন্নত দেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার নাম করে উন্নত দেশগুলো কিছু দাস সংগ্রহ করে যাদেরকে দিয়ে অমানুষিক এবং অমানবিক পরিশ্রম করিয়ে নামমাত্র পারিশ্রমিক দেয়া হয় শুধুমাত্র জীবনটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। উন্নত দেশগুলো বাংলাদেশ তথা আশেপাশের দেশ থেকে অদক্ষ শ্রমিক সংগ্রহ করে। প্রত্যেক শ্রমিকের সংগে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চুক্তি থাকে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে আসার পর শ্রমিকরা দেখতে পায় তাদের করা চুক্তি অনুযায়ী কাজ করানো হচ্ছে না , এমনকি চুক্তি অনুযায়ী তাদের বেতনটাও দেয়া হচ্ছে না।

বিভিন্ন ধরনের লেভির (levy) নাম করে অর্থ আদায় করা হয় শ্রমিকদের কাছ থেকে। চুক্তিতে হয়ত প্রতিদিন ৪০ ডলার করে দেয়া হবে, প্রকৃত অর্থে দেয় ১৫ ডলার। আবার এখান থেকে প্রতিবছর পাশ নবায়নের কথা বলে কাটা হয় কিছু অর্থ। অনেক কর্মক্ষেত্রে অমানুষিক পরিশ্রম করানো হয় এদেরকে দিয়ে। এদের রাতে থাকার ব্যবাস্থা যদি কেউ দেখেন, তাহলে বলবেন এখানে মানুষ না কোন ইঁদুর বিড়াল থাকে! ১৫ স্কায়ার ফুটের এক কামড়ায় থাকে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক।

নাই কোন গোসলের ব্যবস্থা। একটা টয়লেট থাকে নামকায়াস্তে। হয়ত বেসিনের উপর দাড়িয়ে কোন মতে কাকছিটা করে গোসল সারতে হয় এই ১৫-২০ জন মানুষকে। এদেরকে জোড় করেই রাখা হয় নির্দিষ্ট কোম্পানিতে। কেউ চাইলেও চুক্তির আগে কোথাও যেতে পারবে না।

অন্ধকারের যুগেও যেমন দাসরা মালিককে ছেড়ে যেতে পাড়ত না, তেমনি এসব আধুনিক শ্রমিক নামক দাসরাও অন্য কোথাও যেতে পারে না। এখন বলুন এটা কি দাস প্রথার নতুন সংস্করন না অন্য কিছু? আমরা এখন সভ্য সমাজে বাস করি। আমরা সভ্য বলে নিজেদের দাবী করি কারন অসভ্যকে আমরা সঙ্গায়িত করতে পেরেছি। আর তাই যে প্রথা আমাদেরকে অমানবিক এবং পৈশাচিকতার চুড়ান্ত সীমায় পৌছে দেয় সেই রকম প্রথাকে বাতিল করে দিয়ে এক অসাম্য এবং মানবিক পৃথিবী গড়ে তোলা আমাদের সবার দায়িত্ব। ধন্যবাদ সবাইকে।

সূত্র : Click This Link http://prothom-aloblog.com/posts/16/78801 Click This Link http://en.wikipedia.org/wiki/List_of_slaves Click This Link লেখায় সংযুক্ত ইমেজগুলো ভিবিন্ন ওয়েব থেকে সংকলিত। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।