আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেহিসেবি বাড়িভাড়ায় দিশেহারা মানুষ

বেপরোয়া বাড়িভাড়ায় দিশেহারা মানুষ। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের ছোট-বড় সব শহরে একই রকম ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বাড়িভাড়া আরোপে বাড়িওয়ালারা কোনো নিয়মনীতি মানছেন না। এমনকি বাসায় ওঠার সময় যে মৌখিক অথবা লিখিত চুক্তি হয় বাড়িওয়ালার সাথে, সেটাও তারা মানেন না। তেলের দাম বাড়লেও বাড়িভাড়া বৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী।

নিছক মানবতার খাতিরে কোনো বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়াতে না চাইলে প্রতিবেশীদের চাপে তারাও তা করতে বাধ্য হচ্ছেন । শুধু ঢাকা নয়, দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরে কয়েক বছর ধরে বাড়িভাড়া বেড়েছে বেপরোয়াভাবে। এটা যেন পাগলা ঘোড়া। এর লাগাম কেউ টেনে ধরতে পারছে না। পরিণামে ভাড়াটেরা পড়েছেন মহা সমস্যায়।

ব্যবসায়ীদের কোনো সমস্যা না হলেও চাকরিজীবীদের অবস'া শোচনীয় হয়ে পড়ে বর্ধিত ভাড়া দিতে দিতে। তার চেয়ে অনেক বেশি নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িওয়ালারা ভাড়া বাড়িয়ে। এরপর আছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। জানুয়ারি মাসে যে পণ্যের মূল্য ১০ টাকা থাকে, ডিসেম্বরে এসে তা হয়ে যাচ্ছে কমপক্ষে ১৫ টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ২০ থেকে ২৫ টাকায়ও উঠছে।

তেল, চাল, ডাল প্রভৃতির বাজার কোনো বছরেই সি'তিশীল থাকছে না। বছর শেষে দেখা যায় তেলে বেড়ে যাচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা, ডালে পাঁচ থেকে ১০ টাকা, চালে বাড়ছে দুই থেকে সাত টাকা। শাকসবজির দাম গ্রামে যে হারে বাড়ে শহরে বাড়ে তার চেয়ে তিন গুণ বেশি। এর ভুক্তভোগী সবাই। রামপুরার বনশ্রী আবাসিক এলাকার গৃহবধূ শাহনুর তাবাসসুম জানালেন, নতুন বছরে বাড়িওয়ালা তার মাত্র ৭০০ বর্গফুটের বাড়িতে ভাড়া এক হাজার টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন।

কোনো আবেদন-নিবেদনই কাজে লাগেনি। শাহনুর তাবাসসুম তার স্বামীর চাকরির অবস'া বাড়িওয়ালাকে বললেও কোনো কাজ হয়নি। বাড়িওয়ালা সাফ বলে দিয়েছেন, ‘আপনার সামর্থ্যে কুলালেই আপনি থাকবেন এ বাড়িতে। আমি বাড়ি ভাড়া দিয়েই সংসার চালাই। আবার ব্যাংকের কিস্তি শোধ করতে হয়।

’ ব্যাংকে তো প্রতি বছর সুদ বাড়ে না, তাহলে ভাড়া বাড়াবেন কেন- এ প্রশ্নের উত্তরে শাহনুরকে বাড়িওয়ালা জানালেন, ‘এত কথা বলবেন না। আপনি পারলে থাকবেন, না পারলে অন্য কোথাও দেখেন। ’ সিদ্ধেশ্বরীর আবুল হাসান তালুকদার এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, বাড়িওয়ালার সাথে দীর্ঘ বিতণ্ডা করেও ভাড়াবৃদ্ধি মওকুফ করতে পারলাম না। ভাড়া বাড়িয়ে না দিলে ফ্ল্যাটে থাকতে পারব না। প্রতি মাসেই ভাড়ার জন্য বিরক্ত করবে।

নিজের প্রয়োজন কাটছাঁট করে বর্ধিত ভাড়া দিতে হবে। তিনি জানান, আমার দুই মেয়ে ভিকারুননিসায় পড়ে। তাদের স্কুল থেকে বাসা কাছে। সে জন্য বেশি ভাড়া দিয়েও আমাকে এখানেই থাকতে হবে, তা বাড়িওয়ালা খুব ভালো করেই জানেন। আবিদ হোসেন ধানমন্ডির একজন ফ্ল্যাটের মালিক।

তার বাড়ির ভাড়া ছিল ৩৫ হাজার টাকা। তিনি মানবিক কারণে ভাড়া বাড়াননি। কিন' একই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে দুই হাজার বর্গফুটের বাসায় ৬০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। ভাড়া বাড়ানোর জন্য অন্য ফ্ল্যাটের মালিকেরা তাকে চাপ দিচ্ছেন। আবিদ হোসেন জানালেন, শেষ পর্যন্ত আমাকে ভাড়া ৬০ হাজার টাকায় বৃদ্ধি করতে হবে।

যদিও ভাড়া বাড়ানো প্রয়োজন, তবু এত টাকা বাড়াতে কষ্ট লাগছে। ঢাকার মধ্যবিত্ত অথবা নিম্নমধ্যবিত্ত এলাকার অবস'াও একই রকম। মুগদাপাড়া, কদমতলী, পূর্ববাড্ডা, শনির আখড়ার মতো এলাকায়ও ভাড়া বেড়েছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা। আহমদ আলী থাকেন মুগদাপাড়ায়। তার সাত হাজার টাকার ভাড়ার সাথে জানুয়ারিতে এক হাজার টাকা যোগ করে দেয়া হয়েছে।

আহমদ আলী জানান, দিতেই হবে বাড়তি ভাড়া, না দিলে থাকা যাবে না। শনির আখড়ার সেলিম জামান জানালেন, তার বাড়ি একেবারে গলির শেষ মাথায়। রিকশা যায় না সেখানে। তবু তাকে ৫০০ টাকা বাড়িয়ে দেয়ার নোটিশ দেয়া হয়েছে। ঢাকার সাথে পাল্লা দিয়ে বন্দর নগরী চট্টগ্রামেও বাড়িভাড়া বৃদ্ধি পাচ্ছে উচ্চহারে।

মো: শহীদুল ইসলাম থাকেন নেভি কলোনির কাছাকাছি। তিনি গত বছর যে বাড়িতে আট হাজার টাকায় উঠেছেন সেখানে নতুন বছরে তাকে দেড় হাজার টাকা বাড়ানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির একজন মাঝারিপর্যায়ের কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম। বুঝতে পারছেন না তিনি কী করবেন। একটা বাড়ি ছেড়ে আরেকটাতে উঠতে গেলেও পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ হয় বলে শহীদুল ইসলাম জানালেন।

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ এলাকায় থাকেন ব্যাংক কর্মকর্তা আবুল হাসেম। তার পাঁচ হাজার টাকা ভাড়ার সাথে আরো ৭০০ টাকা বাড়িয়ে দেয়ার নোটিশ দেয়া হয়েছে চলতি মাসে। আমাদের সিলেট অফিস জানিয়েছে, মালিকেরা বিভিন্ন সময় ভাড়া বাড়িয়ে থাকেন। দরগাহ মহল্লা, মিরের ময়দান এলাকা, উপশহর হাউজিং এলাকায় ভাড়া বেশি হারে বেড়েছে। অন্য এলাকার দুই রুমের একটি বাসায় ছয় হাজার টাকার ভাড়া পাইকারি হারে সাত হাজার টাকা করে দিচ্ছেন বাড়িওয়ালারা।

রংপুর অফিস জানিয়েছে. রংপুরে বাড়িভাড়া প্রতিনিয়ত বাড়ে। এক লাফে দুই-তিন গুণ বাড়ে। আদর্শপাড়া, মুলাটোল, জুম্মাপাড়া, থাপ, খলিফাপাড়া ও কলেজপাড়ায় গত কয়েক বছরে তিন গুণ ভাড়া বেড়েছে। মধ্যবিত্ত এলাকাগুলোর মধ্যে স্টেশনপাড়া, কামালকাসনা, মিস্ত্রিপাড়া- সেখানে দেড় থেকে দুই গুণ ভাড়া বেড়েছে। তিন বছর আগে যেখানে দুই হাজার টাকা ভাড়া ছিল এখন সেখানে সাড়ে চার হাজার টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে।

দেশের সব এলাকার মানুষের একই অভিমত, বাড়িভাড়া বাড়তেই পারে তবে এভাবে নয়। বাড়লে ১০০ থেকে ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না। সবাই সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, একটি নীতিমালা করে এর সঠিক বাস্তবায়ন করা। নয়া দিগন্ত ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।