মেন্টাল উন্ডস নট হিলিং লাইফ'স আ বিটার শেইম আই এম গোইং অফ দ্যা রেইলস অন আ ক্রেজি ট্রেইন !! মেডিসন স্কয়ার, ১৯৭১ সাল। কনসার্ট ফর বাংলাদেশ। "বাংলাদেশ" কি সেটা? কোন দেশ? কেউ জানে না। সবাই জানে পাকিস্তান নামে দেশটির একটা অংশ আলাদা হয়ে যেতে চাচ্ছে। সেখানে 'যুদ্ধ' হচ্ছে।
যেখানে যুদ্ধ হচ্ছে তারা নিজেদের ভূখন্ডের নাম দিয়েছে বংলাদেশ। বিটেলস তারকা জর্জ হ্যারিসন। তার ঝাকড়া চুল দুলিয়ে একটা সাধারন, খুব সাধারন গান গাইলেন। কোন শব্দের মাধুর্য নাই, কারও দোহাই নাই, কোন চতুরতা নাই। খুব গম্ভীর গলায় শুধু বলে গেলেন।
"সেখানে অনেক মানুষ মরে যাচ্ছে। বন্ধু তুমি কি তাদের সাহায্য করবে না?" চারিদিকে সাড়া পরে গেল। যে দেশের সরকার যুদ্ধের রসদ দিচ্ছে পাকিস্তানকে সেই দেশের মানুষ ঝাপিয়ে পরল সহযোগিতা করতে।
মানুষের কল্যানের জন্য টাকা কমবেশি সবসমই সংগ্রহ করা হয়। অমিত নামের একটা একটা ছেলেকে আমাদের দেশের মানুষ প্রায় বুক দিয়ে রক্ষা করেছিল।
১৯৯৮-র বন্যার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রীতিমত লেখাপড়া বাদ দিয়ে বন্যা দূর্গতদের সেবায় লেগে গিয়েছিল। রুটি বানিয়ে, স্যালাইন বানিয়ে, টাকা তুলে, যার যেভাবে সম্ভব। এই ধরনের উদ্যোগ সবসময় প্রশংসিত হয়। হয়তো গরীব দেশ বলে আমরা খুব ভাল করে জানি একজন মানুষ কখনও দূরাবস্থায় অন্য জনের হাত ছেড়ে দিতে পারে না।
সম্প্রতি একটা সংগঠন যারা পথ শিশুদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে এবং সুবিধা বঞ্চিত সেই সব ছেলেমেয়েদের শিক্ষার ব্যাবস্থা করে নিয়ে ব্লগ এবং ফেসবুকে খুব হাউকাউ পরে গেল।
তারা পুরা ঢাকাকে হলুদ করে ফেলল। রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে যেখানে কিনা সেই সব পথ শিশুরা একটা ফুল কি পেপার বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে সেখানে দাঁড়িয়ে গেল। তাদের সুদৃশ্য অনুষ্ঠানের ছবি ফেসবুকে ছেয়ে গেল। প্রশ্ন উঠল কাদের জন্য এই অনুষ্ঠান? এই অনুষ্ঠান কি আদৌ পথ শিশুদের কল্যানে আসে? নাকি অতিরিক্ত সুবিধায় প্রায় ভেসে যাওয়া সুদর্শন শিশুদের মনরঞ্জন আর ঝুলিতে একটা সার্টিফিকেটে প্রাপ্তির জন্য?
কথাগুলো হয়তো এভাবে আসত না। কারণ সাহায্যের নাম করে তোলা অর্থ নিয়ে আত্মস্বার্থ সিদ্ধ করা নতুন কিছু না।
যা নতুন তা হচ্ছে এই টাকা কোন খাতে ব্যাবহার হয় জাতীয় প্রশ্ন করলে খুব আক্রমনাতক ব্যাঙ্গার্থক জবাব। সাথে সাথে সগৌরবে এমন সব ছবি দেখানো যা বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থার সাথে পুরাই বেমানান।
আমার একটি এবং একটি মাত্র কথা হচ্ছে। আপনি কি কোনদিন পথে দাঁড়ানো চুলঅলা নোংরা ছেড়া জামার ছেলেটাকে বা মেয়েটাকে কোনদিন ২টা টাকার বেশি দিয়েছেন? পপকর্ণঅলা বাচ্চাটার কাছ থেকে পপকর্ণ কেনার পর ২০ টাকার নোট দিয়ে বলেছেন বাকি টাকাটা তোমার? কখনও কি জ্যাম ছেড়ে দেবার ফলে বাচ্চাটাকে জীবনের ঝুকি নিয়ে দৌড় দিতে মানা করেছেন? উত্তর হচ্ছে করেননি। আপনি কোনদিন জানারও চেষ্টা করেননি সে আদৌ 'জাগো' নামের কোন স্কুলে যায় কি না।
ওর ৩ বেলা খাওয়া হয় কি না। ওর আয় করা টাকা সবটুকু ওর কাজে আসে কি না। ও কোথায় ঘুমায় কোথায় খায়। প্রশ্ন হিসাবে তো নাই উক্তি হিসাবেও এই কথাগুলো কখনও আমাদের মুখে আসেনি। অথচ ফিটফাট পরিস্কার জামা আর পরিস্কার রঙের একটা বাচ্চার হাতে আমরা টাকা তুলে দিয়েছি বিনা প্রশ্নে।
আমি হলপ করে বলতে পারি যেদিন জাগোর ছেলে মেয়েরা সিগনালে দাঁড়ায় সেদিন ছেড়া মলিন অভুক্ত সত্যি দরিদ্র বাচ্চাটার আয় কম হয়। কারণ সেই আদি ও অকৃতিম 'ব্রান্ডিং' এর অভাব।
লেখার শেষ পর্যায় এসে পড়েছি। এখন বলি এত পুরাতন বিষয় নিয়ে কথা বলার নতুন কারণ কী? সম্প্রতি কানাডাতে অর্থ সংগ্রহের জন্য Arabian Nights নামে একটি পার্টির আয়োজন করেছে। বলা হচ্ছে, সেখানে সীসা থাকবে, বেইলি ড্যান্স থাকবে এবং রাত ১০:৩০ এর পর ১৮ বছরের নিচে কেউ থাকতে পারবে না।
কারন ১০:৩০ এর পর শুরু হবে আসল পার্টি। ১৫ ডলারের বিনিময়ে সেখানে যাওয়া যাবে এবং বাড়তি আরও ৩ ডলার দিলে আরও কিছু পাওয়া যাবে। বেইলি ড্যান্স যাকে আমরা আরবীয় বাইজি নাচ হিসাবে জানি তা কানাডাতে খুব খারাপ চোখে দেখা হয় না। এটা দেখতে যতই যৌন উদ্দীপক হোক না কেন এটা সেখানে শিল্পের একটা মাধ্যম। আর ১৮ বছরের উপরে কেউ এ্যাডাল্ট পার্টিতে যেতেই পারে।
আনন্দ ফুর্তির জন্য কি কি ব্যবস্থা থাকছে, একটু দেখে নেয়া যাক-
Live Bellydancing Performance
Man Auction
Shisha & Food Available ALL NIGHT LONG
Happy Hour Drinks are ONLY $3
বেলি ড্যান্সিং নিয়ে আমার কোনোই আপত্তি নেই! বেলি হোক আর ভুড়ি হোক – আমার কি?
এরপরেই পয়েন্ট আসে যেটা সেটা বিস্তৃত করলে যা অর্থ দাঁড়ায় তা হলো – “A chance for women to buy a man get him to do whatever you would like”
এর মানে আমি করতে চাইনা, ইচ্ছাও নাই।
আবার লেখার শুরুর প্রসঙ্গে চলে যাই। কনসার্ট আর টাকা সংগ্রহ। আমেরিকায় হাই স্কুলে টাকা তোলার একটা খুব প্রচলিত উপায় ক্লাসে একজন সুন্দরী নির্বাচন করে দেয়া, এরপর সুন্দরী একটা বুথ তৈরি করে বসে পরে বুথের অন্য পাশে ছেলেরা লাইন ধরে তাকে চুমু দেবার বিনিময় এক বা দুই ডলার দেয়। এবং নিঃসন্দেহে সেই টাকা খুব মহৎ উদ্দেশে ব্যবহৃত হয়।
কিন্তু টাকা তোলার decent উপায় অবশ্যই আছে। আমাদের মত দেশের জন্য তো আরও বেশি। যার জন্য আমরা ব্যাঙের ঠ্যাং এর মত লাভজনক পন্য তৈরি বা রফতানি করতে পারি না। আমাদের চিংড়ি মাছেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। আমাদের 'ব্যাকওয়ার্ড' সংস্কৃতি রক্ষার জন্য কি সেই decent উপায়গুলো প্রোমোট করা যায় না? তাদের উদ্দাম জীবনধারন পদ্ধতি, টাকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে 'ক্লাস' দেখিয়ে দেয়াই কি প্রমান করে না তাদের উদ্দেশ্য আর বিধেয় এক না?
এরাবিয়ান নাইট নিয়ে আরেকটি লেখা পাবেন এখানে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।