আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার মেডিকেল বেলা (ডাঃ ফয়েজ চ্যাপ্টার) !

আমি সত্যের এবং সুন্দরের পুজারী। কজন মানুষের সাথে হাসিমুখে মিষ্টি ভাষায় যারা কথা বলে তাদের প্রতি আমার অপরিসীম শ্রদ্ধা । আর যারা নিজেদের অনেক বড় ভাবে, তাদের প্রতি আমার রয়েছে করুণা । ডাঃ ফয়েজ, এম বি বি এস, এফ সি পি এস (বাংলাদেশ), এফ সি পি এস (পাকিস্তান),এম ডি,, এম পি এইচ (নিপসম); অতি দ্রুত গতিতে শ্বাস ফেলছেন। প্রতি শ্বাস এর সাথে সাথে তাঁর ভুরি টা কেঁপে কেঁপে উঠছে।

বিস্ময়ে চোখ দুটা এত বড় হয়ে গেছে যে আমার ভয় হচ্ছে চোখ দুইটা যেকোন মুহূর্তে বের হয়ে যেতে পারে। ঘটনার স্থান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, দ্বিতীয় তলা, মেডিসিন ওয়ার্ড, সময়: সকাল সাড়ে দশটা। স্যার এর সামনে দাঁড়িয়ে রীতিমত নার্ভাস ফিল করছি। একটু একটু ঘামছি। ফ্যান তো ঠিক ই চলছে, এত ঘামছি কেন কে জানে! একটু দূর থেকে উঁকি দিচ্ছে সহপাঠীরা।

মেডিকেল লাইফ এর এত ছোট্ট একটা পরীক্ষায় এভাবে হেনস্থা হতে হবে ভাবি নাই। তাও আবার ওয়ার্ডে রোগীদের সামনে, সহপাঠীদের সামনে, সিনিয়র জুনিয়র সবার সামনে। বার বার আল্লাহ কে স্মরণ করছি। স্যার মনে হয় উত্তেজনাকে দমন করতে সমর্থ হলেন। দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসে পড়লেন।

ওয়ার্ড এর ব্রাদার সবুজ ভাই স্যার এর হাতে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিয়ে গেলেন। কয়েকটা চুমুক দিয়ে স্যার গ্লাস টেবিল এ রাখলেন। জলদ গম্ভীর স্বরে আবার নির্দেশ দিলেন, “আরেকবার এক্সামিন করেন তো পেশেন্ট কে, আর লিভার টা পালপেট করেন প্রথম থেকে”। মনে মনে সাহস সঞ্চ্য় করে রোগীর অনুমতি নিয়ে আবার পুরা প্রসিডিউর করলাম। একজামিনেশন শেষ করে আশা নিয়ে স্যার এর দিকে তাকালাম।

আড়চোখে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম রোগীর মুখে অনাবিল হাসি। সে আমার দুর্দশায় যেন প্রচন্ড রকম খুশি। স্যার কিছুই বলছেন না। আমি ও দাঁড়িয়ে আছে উদাস ভাবে। স্যার বসে থাকায়, স্যার এর পুরা টাক টা আমার দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে।

আচ্ছা, এত পড়াশুনা করে মাথায় টাক বানিয়ে লাভ আছে! পুরা টাকটাকে আমার কাছে একটা স্টেডিয়াম এর মত মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে ফ্লাডলাইটের আলোয় আলোকিত বিশাল একটা স্টেডিয়াম। স্যার এর টাক টার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার মুগ্ধতার মাত্রা যখন আস্তে আস্তে বেড়েই চলেছে, হঠাত সে সময় স্যার বলে উঠলেন কিডনী একজামিন করেন। কিছুটা অন্যমনস্ক থাকায় স্যার এর নির্দেশটা অস্পষ্ট শুনতে পেলাম। নিশ্চিত হবার জন্য স্যার এর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম, কেননা আর কিছু একজামিন করতে বলার কথা না।

স্যার আবার বললেন, কিডনী এবং স্পলীন (মনে হলো, আগের বার কিডনী বলেছিলেন শুধু) এক্সামিন করতে। বুঝতে পারলাম, আজ কপালে দু;খ আছে। বই এ পড়ে আসা স্টেপ গুলা স্মরণ করলাম, প্র্যাক্টিস করে আসা উপায়ে যথাসম্ভব পুংখানুপুংখভাবে একজামিন করতে শুরু করলাম। এক্সামিন শেষ করে উঠে দাঁড়াতেই দেখতে পেলাম স্যার এর মুখে মৃদু হাসি। বিপদসংকেত টের পেতে দেরি হলো না।

চোখ বন্ধ করে মনে মনে প্রমাদ গুণলাম , “হে ধরণী, দ্বিধা হও! তোমার ভেতরে আমাকে আড়াল নেয়ার সুযোগ দাও”। চোখ খুলে দেখলাম, ধরণী দ্বিধা হয় নাই। আমিও অদৃশ্য হতে পারি নাই। স্যার বললেন, "এটা কি মেথড? এঁ!" আমি চুপ থাকাকেই সমীচীন মনে করলাম। স্যার উতসাহ হারালেন না।

বললেন, “আপনার নাম কি ?” নাম বললাম, “স্যার, আনিস”। স্যার: “আচ্ছা আনিস, তো এটা কি আনিস’স মেথড নাকি! এঁ! আপনার তো নতুন বই লেখা উচিত। বই এর নাম হবে “দ্য আনিস’ মেথড” ! আমরা সবাই সেই বই পড়ব। নতুন নতুন নিয়ম শিখব। বলেন, ঠিক কিনা!” এ প্রশ্নের জবাব হতে পারে না! চুপ করে থাকলাম।

স্যার আবার বললেন, বলেন, ঠিক কিনা! বিড়বিড় করে বলতে চেষ্টা করলাম, “জ্বিনা স্যার”। আর বেশি সময় ব্যয় করলেন না স্যার। আইটেম কার্ড বের করলেন। নাম্বার বসিয়ে সাইন করলেন। আইটেম কার্ড হাতে পেয়ে খুলে দেখার সাহস হলো না।

১০ এর পরীক্ষায় ৬ এ পাশ। পাশ নাম্বার পেয়েছি বলে মনে হলো না। উদাসীন মুখে তাকালাম আমার পরের রোল সুহাস এর দিকে। আমার দিকে চিন্তিত মুখে তাকিয়ে আছে। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সুহাস ফিসফিস করে বলল, ক্যান্টিনে থাক, আসতেছি।

পিছে ফিরে দেখি ওর দিকে তাকিয়ে আছেন স্যার। ও এগিয়ে যাচ্ছে স্যার এর দিকে, স্যার এর চোখ চকচক করছে নতুন শিকার এর অপেক্ষায়। জীবনের এ পর্যায়ে এসে মেডিকেল লাইফ এর যত স্যার এর কথা বেশি করে মনে পড়ে, যাদের কাছে আমি ঋণী, তাদের মাঝে একজন হলেন এই ফয়েজ স্যার। উনার মত জ্ঞান পিপাসু লোক খুব কম ই দেখছি। আজকের বিদেশের মাটিতে এসে বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতকার্য হবার সময় উনাদের কথা অনেক মনে পড়ে।

যত সময় যায়, ততই বিস্মিত হই যখন বুঝতে পারি ইনভেস্টিগেশন কত কম করে ক্লিনিকালি ওরা কিভাবে কত রোগ ধরে ফেলেন। আর আমাদের উপর করা অত্যাচার এর পেছনে আসলে ছিল কত স্নেহ, শেখানোর কতটা প্রচন্ড ইচ্ছা।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.