বসে বসে টিভির খবর দেখছিলাম সম্ভবত (RTV খবর) হঠাৎ করেই দেখলাম, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষিকা রুমানার স্বামী সাইদ হাসান আত্মহত্যা করেছেন!"
ফুটেজে ছবি ভেসে উঠলো শশ্রুমন্ডিত একজন বয়স্ক লোক সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় তর্জনী উঁচিয়ে, তর্জনী সবার দিকে ঘুরিয়ে বলছিলেন, "রুমানা মনজুর ছিল আত্ম-স্বীকৃত ব্যভিচারিণী। আমার ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী মিডিয়া। আমি একজন পুরুষ মানুষ দেখিনি! আপনাদের মধ্যে কেউ পুরুষ নন! " এরপর আর কোন চ্যানেলে তাঁর ঐ সাক্ষাৎকারটি দেখতে পাইনি।
এরই মধ্যে সবাই জেনেছি, মঞ্জুরকে নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার সাইদ হাসান কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৫ই ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে মারা গেছেন। সাইদ মুখে পলিথিন পেঁচিয়ে কমোডের ভেতর মুখ চেপে ধরে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে জানিয়েছিল হাসপাতাল সূত্র।
এ সময় তার হাত বাঁধা অবস্থায় ছিল বলেও জানা যায়। কারা কর্তৃপক্ষ সাইদের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বললেও তার পরিবার এটিকে "পরিকল্পিত হত্যা" বলে অভিযোগ করেছে।
****
সাইদের অমানবিক নির্যাতনে রুমানা সারাজীবনের জন্য তার দু’টি চোখ হারান। দশ বছরের ছোট নাভেদ তাহের দীন নামক এক যুবকের সাথে সাথে রোমানার পরকীয়া ছিল বলে স্ত্রীর বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ তুলছিলেন । তথাকথিত নারীবাদী, মিডিয়া সহ অনেকেই রুমানার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে তর্জনী উঁচু করেছিল সাইদের দিকে!
নিঃসন্দেহে নিহত সাইদ হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগটি গুরুতর ছিল।
মামলাটিও বিচার প্রক্রিয়াধীন ছিল।
অথচ স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত সাইদকে মানসিক রোগাক্রান্ত বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে।
একজন স্ত্রী রোমানা কিম্বা তাঁর পরিবারের কেউ-ই ঘটনাটি ঘটবার আগ পর্যন্ত জানলো না, "সাইদ অপ্রকৃতিস্থ ছিল! তাহলে সাইদ কি গুণ্ডা ছিল? নারী ধর্ষণকারী, ব্যভিচারী? মাস্তান, মাতাল কিম্বা মদ্যপ?
কত সুন্দর কাহিনী বিন্যাস, কেউ-ই অভিযুক্তের কথা শুনল না! আমরা বিচারটি দেখতে পেলাম না।
****
সাইদের বাবা সাইদ আহমেদ কবির পরে সাংবাদিকদের আরো বলেছিলেন, "আপনারা মিস ইউজড হয়েছেন। তখন রোমানার বেশ কিছু ঘটনার তথ্য প্রমাণ নিয়ে আপনাদের কাছে গিয়েছিলাম।
কিন্তু আপনারা বলেছেন, আমি ক্রিমিনালের বাবা বড় ক্রিমিনাল। যখনই ছেলের জামিনের জন্য যেতাম, সেখানে কিছু নারী নেত্রী তার প্রতিবাদ করতেন। আর আপনারা তা সমর্থন করেন। ঘটনার নেপথ্যে কি ছিল তা আপনারা কখনো জানতে চাননি। তিনি গোয়েন্দা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, রোমানার বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রমাণ যে ক্যামেরায় ছিল ডিবি বাসা থেকে তা নিয়ে যায়।
রোমানার চোখ ঠিক আছে। শুধু মিডিয়ার সামনে গেলে সে কালো চশমা পরে যায়। "
****
তাঁদের একটি কন্যা শিশু রয়েছে। ট্রমায় আক্রান্ত। যদি বলি এই শিশুটির আজকের অবস্থার জন্য একমাত্র দায়ী আমাদের সমাজ তাহলে কি কেউ দায় নেবেন
নারী নির্যাতন, নারীর অসম্মানের বিরুদ্ধে আমরা সবাই সোচ্চার।
প্রচলিত আইনে তার বিচার হলে আমাদের কিছুই বলার থাকতো না।
ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা একটি দেশের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। আজকে সাইদকে হত্যার ইংগিত দেয়া হচ্ছে। কারাগারের প্রিজন সেলে দায়িত্ব-রতদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।
বলা হয়েছে যে ধরনের কমোডে মাথা ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করা হয়েছে তা আদৌ সম্ভব নয়।
পিছনে হাত বেঁধে রেখে একটি লোক আত্মহত্যা করলো, তাঁকে যেই চিকিৎসক চিকিৎসা করছিলেন তিনিও সাইদের মানসিক অসুস্থতার বিষয়টি টের পেলেন না?
****
যারা রোমানার পক্ষে সোচ্চার ছিলেন তারাও সাইদের অভিযোগটি আমলে নেননি, পরকীয়ার বিষয়টিও না। সাইদ সমাজের নিষ্ঠুর এবং একপেশে আচরণে কেমন ছিলেন সেটা তিনিই জানতেন।
সবাই চুপসে গেছেন। তথাকথিত নারীবাদীরাও চুপসে গেছেন।
****
দায়িত্ব পালনে প্রিজনারের ব্যর্থতা, কর্তব্যে অবহেলার জন্য তার অপসারণ হয়েছে বলেও শুনিনি।
দায়িত্ব-রত কারারক্ষীদের কর্তবে অবহেলার জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে এটাও না।
নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি? না হয়নি। রোমানা মঞ্জুর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ কেউ খতিয়ে দেখছেন কি?। ডিবি পুলিশ কর্তৃক জব্দ-কৃত ছবি এবং আলামত জনসমক্ষে প্রকাশিত হবে কি?
বড় হয়ে অনুশে কাকে জীবনের আদর্শ হিসেবে নিবে? রোমানা মঞ্জুর নাকি বাবা সাইদের???? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।