আমি শুনতে পাই লক্ষ কোটি ফিলিস্তিনীর আর্তনাদ...হাহাকার যেদিন সাইদ হাসানের মৃত্যু সংবাদ দেখলাম মাথার মধ্যে অনেক কিছু, অনেক চিন্তা ভাবনা ঘুরপাক খেতে লাগল। পুলিশের ধোঁয়াটে বক্তব্য শুনে আর তার পরিবাররের বক্তব্য শুনে আমার মনে হয়েছে সাইদ আত্নহত্যা করেনি। কেননা জেলের ভিতরে বাংলা সিনেমা টাইপ আত্মহত্যা করাটা সহজ ব্যাপার না!!
তারপর রোমানা মঞ্জুরের সাথে ইরানী যুবকের ছবি/মেইল পড়লাম। সমস্ত কিছু (ইরানী যুবকের ছবি, মেইল, সাইদের মৃত্যু সংবাদ) পড়ে আমার মনে কিছু ভাবনার জন্ম নিয়েছে, সগুলোই ব্লগে লিখছি।
১।
সাইদ অবশ্যই খারাপ কাজ করেছে, এতে কোনই সন্দেহ নেই। কিন্তু আমার আপত্তি এখানে যে “সুশীল” মিডিয়া আর তথাকথিত নারীবাদিরা ব্যাপারটাকে নিয়ে “খেলাধুলা” করেছে, তাদের সংগঠনের ফায়দার জন্য।
সাইদ হয়ত ইরানী যুবকের মেইল ও ছবি দেখে ফেলেছিল। এ নিয়ে সংসারে অশান্তি শুরু হয়েছিল। এটা স্বাভাবিক, কেননা ১১ বছরের দাম্পত্য জীবন ও এক সন্তানের সংসারে এধরনের ছবি যত আধুনিক মনা হোক না কেন, মেনে নেয়া সম্ভব না।
এবং একপর্যায়ে ঝগড়া চরম পর্যায়ে চলে যায়, এবং সাইদ ক্ষিপ্ত হয়ে রোমানা মঞ্জুরকে আক্রমন করে। এখানেই সাইদের অপরাধ। তার উচিৎ ছিল রোমানা মঞ্জুরকে ডিভোর্স দেয়া। কিন্তু আমাদের সমাজে ডিভোর্স বিষয়টা কিন্তু এত সহজ নয়। পশ্চিমা বিশ্বে ডিভোর্স ব্যাপারটা অনেকটা “রাস্তা থেকে ঝালমুড়ি কিনে খাওয়ার” মতই সহজ ব্যাপার।
কিন্তু আমাদের সমাজে ব্যাপারটা সহজ ভাবে নেয়া হয় না। তাই খেয়াল করে দেখবেন আমাদের সমাজে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করা হয়। হয়ত সাইদ রোমানার ব্যাপারটাও তাই হয়েছে। এবং এক পর্যায়ে সাইদ রাগে উন্মাদ হয়ে রোমানাকে আক্রমন করে এবং দুঃখজনক ব্যাপারটি ঘটে যায়। যেকোন স্বামীই এসব ছবি সহ্য করতে পারবে না, অসম্ভব।
সাইদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা “Extreme” পর্যায়ে চলে যায়।
২। সাইদের আক্রমন করে চোখ নষ্ট করে দেয়ার ঘটনা কিন্তু আমাদের সমাজে বিরল নয়। “দুই গ্রামবাসীর ঝগড়ায় ২ জন নিহত”, “বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন”, “চাচাতো ভাইকে ঝগড়ার এক পর্যায়ে কুপিয়ে হত্যা”। সাইদ-রুমানার ঘটনা কিন্তু এরকমই ছিল।
শুধু পার্থক্য হচ্ছে এই ঘটনা নিয়ে তথাকথিত সুশীল সমাজ “খেলাধুলা” করেছিল। যা করা হয়নি “পরিমল” কান্ডের সময়।
৩। রুমানা মঞ্জুরের উচিৎ ছিল, ইরানী যুবকের সাথে সম্পর্ক/বন্ধুত্ব একদম চুকিয়ে ফেলা। কেননা তার ১১ বছরের সংসারে এই ধরনের বন্ধুত্ব অস্বাভাবিক এবং অগ্রহনযোগ্য।
৪। সাইদের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে মানবাধিকার সংস্থা, একদম চুপ!! কিন্তু কেন??
ব্লগে দেখলাম সাইদের পক্ষ নিয়ে রোমানা মঞ্জুরকে গালাগালি দেয়া হচ্ছে, অনেকে বলছেন সাইদ ঠিকই করেছে!!। আসলে এই ব্যাপারটা কে আমার মনে হয়েছে আসল ব্যাপারটাকে আমরা গুরুত্ত্ব না দিয়ে মিডিয়া যা বলে তাই নিয়ে নাচতে থাকি। একজনের পক্ষ নিয়ে আরেক পক্ষকে গালাগাল করতে থাকি। কিন্তু এখানে আসল ব্যাপারটাও খেয়াল করিনা।
এখানে আসল ব্যপার হচ্ছে-
১। পরকীয়া
২। ফ্রি-মিক্সিং
৩। সামাজিক অসহিষ্ণুতা
৪। অনৈতিক সম্পর্ক
৫।
পারিবারিক নির্যাতন
আমাদের উচিত এই সবকিছুর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করা, এর বিরুদ্ধে গনসচেনতা তৈরী করা। কারন রুমানা/সাইদ ঘটনার মূলে কিন্তু এই কয়েকটি কারন। কিন্তু তথাকথিত সুশীলদের মত পশ্চিমা নোংরা কালচার আহবান করে আমাদের সর্বনাশ আমরা নিজেরাই করছি।
আর আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা মেইন্সট্রিম মিডিয়ার উপর দারুন ভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। এ থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।
কারন মিডিয়াতে আসল সমস্যা তুলে ধরার চেয়ে এমন জিনিষ নিয়ে তোলপাড় করা হয় যাতে নিজেদের পত্রিকা/চ্যানেলের কাটতি বাড়ে। “পরিমল”, “পারসোনা” কান্ডে মিডিয়ার আসল রুপ উন্মোচিত হয়ে গেছে।
আমাদের উপরিউক্ত ৫ টি সমস্যার উপর সমান ভাবে গুরুত্ত্ব দিতে হবে। এর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু একটি বা দুটি নিয়ে কিছুদিন পর পর সেমিনার করলে কিছুই হবে না।
আমরা ক্রমশ পারিবারিক বন্ধনের ব্যাপারগুলো থেকে দূরে সরে যাচ্ছি, এর অন্যতম একটা কারন তথাকথিত সুশীল সমাজ ও নারীবাদিরদের পশ্চিমা নোংরা কালচারে উৎসাহ দেয়া।
আমি কামনা করি, রুমানা সাইদের সন্তান যেন একটা সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশে বড় হয়। আর সাইদের রহস্যময় মৃত্যুর যেন অবশ্যই সুষ্ঠু তদন্ত হয়, তা না হলে এইরকম মৃত্যু ভবিষ্যতে আরও বেড়ে যাবে।
পরিশেষে বলতে চাই, আসুন, আমরা মিডিয়া হুযুগে না মেতে আসল সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাই, না হলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম নোংরা সংস্কৃতির ছোবলে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবে।
(ব্লগার একলা বগের পোস্টে দেখলাম কিছু ব্লগার “রাইসুল জুহালাকে” কুৎসিত ভাষায় গালাগাল দিচ্ছেন!! আমার অনুরোধ আপনাদের কোন বক্তব্য থাকলে গালাগাল না দিয়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট সমালোনা করুন, কিন্তু প্লিজ কাউকে গালি দেবেন না।
মনে রাখবেন এটা ব্লগ, কো পর্ণ সাইট না!!)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।