হ্যানিম্যান
মানুষ সৃষ্টির সেরা বহুকোষী জীব। মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম Homo sapiens . মানুষের দেহ অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অতি আণুবীক্ষনিক কোষ দ্বারা গঠিত । প্রত্যেকটি কোষই সজীব । সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গার পর থেকে শুরু করে প্রতিনিয়ত আমরা কাজ করে যাই কিন্তু কাজ করতে দরকার শক্তির । সে শক্তি আমরা কোথায় হতে পাই ।
সেই রহস্যের কথাই আজ শুনাব । জীব দেহের গঠন ও কাজের একককে কোষ বলে । প্রত্যেকটি কোষই কিছু না কিছু কাজ করতে হয় আর তার জন্য দরকার শক্তির । একই উৎস থেকে একগুচ্ছ কোষ উৎপত্তি লাভ করে একটি নিদ্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে একটি নির্দ্দিষ্ট কাজে নিয়োজিত থাকলে সেই কোষ গুচ্ছ এবং তাদের নি:সৃত তরল পদার্থকে টিস্যু বা কলা বলে । এই টিস্যু বা কলা মানব দেহের যাবতীয় কাজ করে থাকে ।
কিন্তু কাজ করার জন্য চাই শক্তি । শক্তি উৎপন্নের প্রধান যন্ত্র হচ্ছে শ্বসনতন্ত্র । আর শ্বসন সংগঠিত হয় কোষের সাইটোপ্লাজম ও মাইটোকন্ড্রিয়ায় । প্রতি কোষে ৩০০-৪০০টি চূলা আছে যাদেরকে আমরা মাইটোকন্ড্রিয়া বলে থাকি । এখানেই কোষ পরিচালনার যাবতীয় শক্তি উৎপন্ন হয় ।
আমরা জানি তাপ এক প্রকার শক্তি । সেই তাপকে ব্যবহার করে পৃথিবীতে অনেক কাজ হচ্ছে । মানুষ তার কাজ করার যাবতীয় শক্তি পায় তাপ থেকে । আর তাপ উৎপাদনের জন্য দরকার দহন বিক্রিয়া । এবার জানা দরকার মানব দেহে দহন হয় কিভাবে ।
মানুষ সাধারনত আমিষ , শর্করা ও স্নেহ জাতীয় খাদ্য গ্রহন করে । মানুষ যখন খাদ্য খায় তখন সেই খাদ্য এসে প্রথমে পাকস্থলী জমা হয় । পাকস্থলীর ভেতরের গাত্র থেকে মিউসিন, হাইড্রোক্লোরিক এসিড ও পেপসিন এই তিন ধরনের রস নি:সৃত হয় । মিউসিন খাদ্য বস্তুকে পিচ্ছিল করে , হাইড্রোক্লোরিক এসিড খাদ্যের সাথে আগত জীবাণু ধ্বংশ করে এবং পেপসিন আমিষ জাতীয় খাদ্যকে বিশ্লিষ্ট করে পলিপেপটাইডে পরিনত করে । এই পলিপেপটাইড ডিওডেনামের উৎসেচক পদার্থ ট্রিপসিনের সাথে বিক্রিয়া করে অ্যামাইমো এসিড নামক খাদ্য সার তৈরি করে ।
শর্করা জাতীয় খাদ্যগুলো অ্যামাইলেজের উপস্থিতিতে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ নামক খাদ্য সারে পরিনত হয় । লাইপেজ নামক উৎসেচকের উপস্থিতিতে স্নেহ জাতীয় খাদ্যগুলো বিশ্লিষ্ট হয়ে গ্লিসারল ও ফ্যাটিএসিডে পরিনত হয় । এই খাদ্যসারগুলো ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলাই দ্বারা শোষিত হয়ে রক্তের লোহিত কণিকার মাধ্যমে প্রতিটি কোষের ৩০০-৪০০ টি চুলায় অর্থাৎ মাইটোকন্ড্রিয়ায় পৌচ্ছে । আর এই খাদ্যসার গুলোই হচ্ছে চুলার জ্বালানী । দহনের জন্য দুটি জিনিসের প্রয়োজন তার একটি হল জ্বালানী এবং অপরটি অক্সিজেন ।
তাহলে আমিষ , শর্করা ও স্নেহ জাতীয় খাদ্য থেকে চুলায় ( মাইটোকন্ড্রিয়ায়) খাদ্যসার নামক জ্বালানী পৌচ্ছল । এবার দহণের জন্য দরকার অক্সিজেন । কারণ অক্সিজেন নিজে জ্বলে না কিন্তু অপরকে জ্বালাতে সাহায্য করে । উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করার সময় উপজাত হিসাবে বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন ত্যাগ করে । আর সেই অক্সিজেন আমরা নি:শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করি ।
রক্তের লোহিত কণিকা অক্সিজেনকে বহন করে প্রতিটি কোষের চুলায় ( মাইটোকন্ড্রিয়া ) পৌচ্ছে দেয় । অত:পর কোষের প্রতিটি মাইটোকন্ড্রিয়ায় দহন কাজ শুরু হয় । দহনের ফলে একদিকে তাপ এবং অপর দিকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয় । তাপকে আমরা শক্তি হিসাবে ব্যবহার করে যাবতীয় কাজ করে থাকি । কার্বন-ডাই-অক্সাইড দেহের ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ তাই লোহিত রক্ত কণিকা কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে ফুসফুসে ফিরিয়ে নিয়ে আসে আর আমরা প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহ থেকে তা বায়ুমন্ডলে ছেড়ে দেই ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।