ই-মেইলের ভাষা বেশ কড়া। বিসিবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর উদ্দেশে কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন বিপিএলের খেলোয়াড়দের এক এজেন্ট। যার সারমর্ম—বিশ্বজুড়ে আবারও হইচই শুরু হয়ে যাওয়ার আগেই কি বিসিবি জরুরিভিত্তিতে বিপিএলের পাওনা টাকা খেলোয়াড়দের পরিশোধ করবে? ব্যাপারটা নিয়ে কি আদৌ তারা কথা বলবে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে?
বিপিএলের দেনা-পাওনাসংক্রান্ত আলোচনা কখনোই থেমে না গেলেও বিদেশি খেলোয়াড়দের টাকা মোটামুটি সময়মতো শোধ হচ্ছে—এমন ধারণা দিয়ে আসছিল বিসিবি ও ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। কিন্তু বিসিবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী বরাবর ওই খেলোয়াড়-এজেন্টের গত মাসে পাঠানো ই-মেইলটাই বলে দিচ্ছে, বিসিবি আর ফ্র্যাঞ্চাইজিরা যুগপৎ ব্যর্থ এখানেও। গত ১৯ মে তৃতীয় কিস্তির টাকা পরিশোধের সময় পেরিয়ে গেলেও বেশির ভাগ বিদেশি খেলোয়াড়ই এখনো কেবল প্রথম কিস্তির টাকা নিয়েই ‘সন্তুষ্ট’ আছেন।
বিসিবিকে দেওয়া ই-মেইলেও একই দাবি করেছেন ওই এজেন্ট। খেলোয়াড়দের চতুর্থ ও শেষ কিস্তির টাকা দেওয়ার সময় শেষ হবে অগামী ১৯ আগস্ট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বিদেশি খেলোয়াড়-এজেন্ট প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ‘খেলোয়াড়দের বকেয়া টাকার ব্যাপারে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল, বিসিবি এবং ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। এখন তো তারা কোনো রকম সাড়া দেওয়ার সৌজন্যটুকুও দেখাচ্ছে না। বিসিবি ফ্র্যাঞ্চাইজিদের দোষ দেয়।
আর ফ্র্যাঞ্চাইজিরা কিছুই বলে না। ’
তিন কিস্তির সময় পেরিয়ে গেলেও বিদেশিদের কেউ কেউ বড় জোর দ্বিতীয় কিস্তির টাকাই পেয়েছেন এখনো পর্যন্ত। বেশির ভাগ বিদেশি ২৫ শতাংশের বেশি পাননি। সিলেট রয়্যালসের দুই জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটার হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও এলটন চিগুম্বুরা তেমনই দুজন। ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক পক্ষের একজন আতিকুর রহমান ব্যর্থতা স্বীকার করে কাল টেলিফোনে বলেছেন, ‘আমার জানামতে, বিদেশি খেলোয়াড়দের ২৫ শতাংশ অর্থ দেওয়া হয়েছে।
বাকিটা দেওয়ার জন্য আমরা বিসিবির কাছে সময় চেয়েছি। ’
বরিশাল বার্নার্স আজহার মেহমুদ ও ব্র্যাড হজকে অর্ধেক টাকা দিয়ে দিলেও দ্বিতীয় বিপিএলে তাদের হয়ে খেলা বাকি প্রায় সব বিদেশিই এখন পর্যন্ত পেয়েছেন মাত্র ২৫ শতাংশ অর্থ। স্থানীয় ক্রিকেটারদের পাওনা মেটানোর ব্যাপারেও এই ফ্র্যাঞ্চাইজির অবস্থা বেশ করুণ। মাত্র সাতজন স্থানীয় ক্রিকেটার নাকি পেয়েছেন ২৫ শতাংশ অর্থ। পাঁচজন পাননি একটি টাকাও! তবে ফ্র্যাঞ্চাইজির পরিচালক তুহিন রেজার দাবি, ‘স্থানীয় সবাইকেই আমরা ২৫ শতাংশ টাকা দিয়ে দিয়েছি।
বিদেশিরাও মোটামুটি ভালো অঙ্কের টাকা পেয়েছেন। আমাদের বিরুদ্ধে কোনো খেলোয়াড়ই অভিযোগ করতে পারবে না। ’
রংপুর রাইডার্সের মালিক মুস্তফা রফিকুল ইসলামের বক্তব্য অনুযায়ী প্রথম দুই কিস্তির টাকা (৫০ শতাংশ) পেয়ে গেছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির সব বিদেশি খেলোয়াড়ই, ‘আমরা সেকেন্ড পেমেন্ট করে ফেলেছি। পরের পেমেন্টও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করার চেষ্টা করব। ’ তাঁর কথা, বিপিএল থেকে লাভ না হওয়ায় ফ্র্যাঞ্চাইজিরা গেম অন ও বিসিবির পাওনা থেকে কিছু ছাড় চান, যদিও খেলোয়াড়দের টাকা পুরোটাই দেওয়া হবে, ‘... খেলোয়াড়দের পাওনা থেকে আমরা কোনো ছাড় চাচ্ছি না।
তাঁরা আমাদের হয়ে খেলেছেন। দেরিতে হলেও প্রতিশ্রুত টাকা তাঁরা অবশ্যই পাবেন। ’
মালিকপক্ষ এমন প্রতিশ্রুতি দিলেও বিপিএল নিয়ে হতাশা ঝরেছে রংপুর রাইডার্সের ক্রিকেটার ফিদেল এডওয়ার্ডসের কণ্ঠে। একটি মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে এডওয়ার্ডস বলেছেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক যে এত দিন ধরে আমাদের পাওনা টাকার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের অন্তত ছয় সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো তৃতীয় কিস্তির টাকা পাইনি।
এই টুর্নামেন্টের জন্য বাংলাদেশে এক মাস থেকেছি এবং উপভোগও করেছি। কাজেই টাকা-পয়সা সময়মতো পাওয়ার আশা করতেই পারি। ’
ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের মালিক সেলিম চৌধুরীর দাবি, বিদেশিদের সব টাকাই পরিশোধ করে ফেলেছেন, ‘বিদেশিদের প্রথম কিস্তির টাকা বোর্ডের মাধ্যমে ও দ্বিতীয় কিস্তির টাকা সরাসরি দিয়ে দিয়েছি। বিসিবির কাছে আমাদেরও কিছু টাকা পাওনা আছে। সেসব হিসাব করলে বিদেশিদের সব টাকাই দিয়ে দিয়েছি বলতে পারেন।
’ এখন পর্যন্ত তিন কিস্তির টাকা পরিশোধ করেছেন বলে জানালেন চিটাগং কিংসের কর্ণধার সামির কাদের চৌধুরী। আর দুরন্ত রাজশাহীর মালিক মুশফিকুর রহমান বলেছেন, ‘প্রথম দুটি পেমেন্ট করেছি। তৃতীয় পেমেন্টও শিগগিরই করে দেব। ’ খুলনা রয়েল বেঙ্গলসের পাওনা সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি ফ্র্যাঞ্চাইজির মিডিয়া ম্যানেজার চৌধুরী খালেদ মাসুদ। তবে একটি সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় কিস্তির টাকা বাকি আছে তাঁদেরও।
প্রথম বিপিএলের তিক্ত অভিজ্ঞতার পর অর্থপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিয়েই দ্বিতীয় বিপিএলে খেলোয়াড়দের এনেছিল বিসিবি। ফ্র্যাঞ্চাইজি না দিলে টাকা দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিল নিজেরাই। সেই বিসিবিও যখন প্রতিশ্রুতি পূরণে আপাতত ব্যর্থ, বিদেশি ক্রিকেটারদের কাছে ভাবমূর্তির সংকটে পড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটই। অবশ্য বিসিবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহীর কথা শুনে নতুন করে আশার জাল বুনতে পারেন এডওয়ার্ডস-মাসাকাদজরা। ‘এ ব্যাপারে গত বোর্ড সভায়ও আলোচনা হয়েছে।
দেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, এমন কিছুই হতে দেব না আমরা’—আশ্বাস নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।