জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পার !
চেয়ারম্যান সাহেব আমার কানের কাছে মুখ এনে গলা নামিয়ে বললেন, একটা মেয়ে এনেছি ;
আমি চমকায়ে উঠলাম !
আরেকটু গলা নামিয়ে বললেন, মেয়েটাকে ১ মাস আগে ছিনতাইকারি ধরে নিয়ে গিয়েছিল । ৫ দিন আগে মেয়েটাকে উদ্ধার করেছি । এখন তার অনেক পেট ব্যাথা আর মাথা ঘুরানো ভাব । আপনি একটু পরীক্ষা করে দেখেন ।
হাফ ছেড়ে বাচলাম !
একটু অপেক্ষা করতে বলে আমি আমার হাতের রোগীটি দেখলাম।
তারপর মেয়েটাকে সরাসরি দোতালার লেবার রুমে নিয়ে গেলাম ।
ওর মুখোমুখি বসে কথা বলা শুরু করলাম । ছোট্ট একটা মেয়ে , খুব মিষ্টি চেহারা। প্রথমেই সান্ত্বনা দিলাম; বললাম সব ই শুনেছি তোমার কথা । আমাকে খুলে বল তোমার এখন কি কি সমস্যা ।
প্রথমে লজ্জা পেলেও আস্তে আস্তে সে আড়ষ্টতা কাটিয়ে বলা শুরু করল , “ওর সাথে আমার পরিচয় বেশিদিনের না । “ এখানেই গল্পের শুরু ……
“ ফোন এ কথা বলতাম, তখন ই দুর্বল হয়ে পরেছিলাম । তারপর একদিন পাশের শহরে গেলাম দেখা করতে । ফেরার সময় আমাকে বাস এ তুলে বলল চল, তোমাকে বাড়ী পৌঁছে দিয়ে আসি । কিন্তু নিয়ে গেল খুলনা ।
তখন রাত হয়ে গেছে । আমি ভয় পেয়ে গেলাম। বাড়িতে কি জবাব দিব ! অনেক রাগ করলাম। কিন্তু কিছু করার ও নাই, ফেরার বাস নাই আর। তার সাথেই হোটেলে রাত কাটালাম।
বাড়িতে কিছু না জানিয়ে । “
“পরদিনও বাড়ী ফেরা হয় না। বাসা ভাড়া নিয়ে আমরা একসাথে থাকা শুরু করি। “
জিজ্ঞেস করি, বিয়ে করনি ?
“নাহ, আমাদের ধর্ম আলাদা । বিয়ে করার জন্য আমি কোর্টে গিয়ে ধর্ম বদল করি ।
তারপর কাজি অফিসে গেলে কাজি আমাদের বিয়ে পরাতে অস্বীকার করেন, আমার বয়স হয়নি বলে । “
আর শারীরিক সম্পর্ক ?
‘হুম’ বলে মেয়েটা মাথা নিচু করে ।
কোনও ব্যাবস্থা নিয়েছিলে ?
মাথা নিচু রেখেই জবাব দেয়, না ।
“ছেলের আগে বিয়ে আছে না ?” আন্দাজে ঢিল মারি……
মেয়েটা একটু চমকে যায়। চোখের দিকে তাকায়, বলে, “ হ্যা, আমি আরেকজনের কাছে শুনেছি।
পরে ওকে জিজ্ঞেস করার পর সে স্বীকার করেছে। ওই ঘরে বাচ্চাও আছে ।
ও আরো একটা মেয়ের সাথে থাকত(লিভ টুগেদার !) । ২ মাস পর সেই মেয়ে ওকে ছেড়ে চলে গেছে । “
এটাও সে আরেকজনের মুখে শুনেছে।
আমি বললাম, তাহলে সে কেমন ছেলে যে তোমাকে এসব কথা লুকিয়েছে ?
মেয়েটি কৈফিয়ত দিল, ও আমাকে বলেছে, ও আগে অনেক খারাপ ছিল, কিন্তু আমাকে পেলে আর কোন খারাপ কাজ করবে না।
মনে মনে বললাম, কঠিন ধোঁকায় পড়েছ হে বালিকা !
আমি সরাসরি জানতে চাইলাম, তুমি এখন কি চাও ?
আমি ওকে ছাড়া বাঁচব না, আমি ওর কাছে যাব ।
আমি দীর্ঘশ্বাস লুকালাম । উত্তরটা আগেই জানতাম ! এই হচ্ছে মেয়ে জাতি ! বসেই থাকে ক্ষমা করার জন্য !
এরমধ্যেই মেয়েটার মায়ের মোবাইল এ একটা কল আসে। মেয়েটা আমার দিকে তাকায়ে হাসে, বলে, “ও কল দিছে ।
আমাকে নিয়ে যেতে আসছে । “
আমি পুঁথিগত ব্যাখ্যা খুঁজতে থাকি। একে কি বলে ? কম বয়সের আবেগ ? মোহ ? নাকি ভালবাসা?
আমি আর জটিলতায় ঢুকি না। তারাতারি ওর চিকিৎসা দিয়ে বিদায় করে দেই । আর উপদেশ দেই,
পেটে যদি বাচ্চা আসে তাহলে , বাচ্চাটা রেখো না
সামনের বছর এস এস সি পরীক্ষা দাও।
অন্তত এইচ এস সি পর্যন্ত পড় । বয়সটা আঠার হোক ।
তারপর তুমি নাহয় এই ছেলেকেই বিয়ে কোরো
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।