Shams
বুকের রক্ত দিয়ে নিজেকে দেশের জন্য উৎসর্গ করেছেন আমাদেরই মতো অসীম সাহসী কিছু মানুষ। ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বরে সরকারি গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগ ও অদম্য সাহসিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতির সেরা বীর সন্তানদের রাষ্ট্রীয় সম্মান ও উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাদের মধ্যে মরণোত্তর সাতজনকে সর্বশ্রেষ্ঠ উপাধি 'বীরশ্রেষ্ঠ' খেতাবে ভূষিত করা হয়। তারা আমাদের গৌরবের অহংকার।
এ সাত বীরশ্রেষ্ঠর স্মৃতিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহিমান্বিত করে রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাদের নিজ নিজ সমাধি ক্ষেত্রে এক অভিন্ন আকার ও ডিজাইনে ভিন্ন ভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে যে ডিজাইনটি নির্বাচিত হয়, তার নান্দনিক স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য সত্যিই অসাধারণ, দেশ ও জাতির এক চমৎকার প্রতীকী উপস্থাপনা। দেখলেই কেমন করে ওঠে বুক_ শ্রদ্ধায় বিষাদে অহংকারে। এ ছাড়াও তাদের নিজ গ্রামে নির্মিত হয়েছে স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগার।
দেশমাতৃকার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়া আমাদের এ আত্মত্যাগী বীরদের স্মৃতি আছে দেশের বিভিন্ন স্থানে, তা জানার আগে আসুন আমরা আরেকবার অবনত চিত্তে শ্রদ্ধা জানাই তাদের জীবন ও বীরোচিত গৌরবগাথাকে গর্ব ভরে স্মরণ করে :
বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর
৮ মার্চ ১৯৪৯ সালে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার আগরপুর ইউনিয়নের রহিমগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোতালেব হাওলাদার, মা সাফিয়া খাতুন।
১৯৬৮ সালে জুন মাসে ইঞ্জিনিয়ার্স কোরে কমিশন লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে ১৭৩ নম্বর ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন । মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে তিন সহকর্মীর সঙ্গে তিনি গোপনে কর্মস্থল ত্যাগ করেন এবং দুর্গম পার্বত্য এলাকা অতিক্রম করে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার মেহেদিপুরে মুক্তিবাহিনী ক্যাম্পে পেঁৗছান। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী রণক্ষেত্র থেকে কলকাতায় এসেছিলেন এ চার বীরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর দায়িত্ব গ্রহণের পর পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কয়েকটি সফল অভিযানে পরিচালনার মাধ্যমে অসাধারণ রণনৈপুণ্য ও সাহসিকতার পরিচয় দেন।
ডিসেম্বর মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ দখলের জন্য তাকে একটি মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃত্ব দেয়া হয়। তিনি ১০ ডিসেম্বর জনা পঞ্চাশেক মুক্তিযোদ্ধাসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পশ্চিমে বারঘরিয়া নামক স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেন। ১৪ ডিসেম্বর প্রত্যুষে তারা রেহাইচরের মধ্য দিয়ে নৌকাযোগে মহানন্দা নদী পার হন এবং অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে শত্রুর কয়েকটি ট্রেঞ্চ দখল করে নেন। দুপক্ষে তুমুল সংঘর্ষের একপর্যায়ে শত্রুপক্ষের একটি গুলি মহিউদ্দীনের কপালে আঘাত করে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি মারা যান। এতে হতোদ্যম না হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর অবস্থানের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়।
পাকসেনারা শেষ পর্যন্ত পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পরের দিন ১৫ ডিসেম্বর হাজারও মুক্তিযোদ্ধার অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরকে তার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী সমাহিত করা হয় ঐতিহাসিক ছোট সোনামসজিদ চত্বরে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের রেহাইচরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের শাহাদত স্থলে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ।
বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামের নাম আগে ছিল তার দাদার নাম অনুসারে। এখন তার নামানুসারে জাহাঙ্গীরনগর।
গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সন্ধ্যা নদী। নদীর ওপর সড়ক ও জনপথ বিভাগ 'জাহাঙ্গীর সেতু' নির্মাণ করেছে। সেতু পেরিয়ে সবুজের মাঝখান দিয়ে সড়ক গেছে বাটাজোর বাজারে। বাটাজোর থেকে অল্প দূরেই জাহাঙ্গীরনগর। সেখানে তার নামে স্কুল ও জাদুঘর রয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।