আমি এবং আরণ্যক ছাইরংয়া বধ্যভূমিতে দাড়িয়ে দেখছি শেষ সূর্যাস্ত কাউকে বোঝাতে পারছিনা অন্ত:ত এইবার জেনেবুঝে প্রতারণা করিনি, আমিতো অসাধারণ নইযে বুকে পিঠে শুদ্ধতার স্লোগান চেপে আপোষ করবোনা ভূলের সাথে । তবে অন্ধের মতো আকাশ দেখবার বাসনাটা অবান্তরতো কিছু নয়। আমার যে আমিকে ইদানিং বড় বেশি ঘৃণা করি, অহর্নিশী কানের কাছে ফিঁস ফিঁস করে বলে “অকারনে কষ্ট পাবার কোন মানে নেই”, এর চেয়ে বরং জানাশোনা চারপাশটা আবার দেখা যাক। চেনারাস্তা,লোকজন যানবাহন ,যানজট, রিকশা যদি কোথাও দৃশ্যকল্পের বিক্ষেপন খুঁজে পাওয়া যায়। আমি জানি কোন কিছুরই আসলে কোন মানে নেই শুধু স্বরুপটা বর্তমান, মানে নিজেকে বাঁচাতেই অবিরাম নিজেকে ঠকানো ।
আবিষ্কারের নেশাটা আমার মজ্জাগত, তবে ধরনটা আলাদা । এটাকে আবিষ্কার বলে কিনা জানিনা। আবিষ্কারের সাথে কল্যান কিংবা অকল্যানের সূক্ষ একটা যোগসাজস থাকাটা যদি জরুরী হয় , সেক্ষেত্রে আমার আবিষ্কারটা একেবারেই তাপর্য্যহীন । একটি ধ্রুবক দৃশ্যপটকে প্রতিদিন নতুন করে দেখা এই যা । যেমন রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে সামনে ঝোলানো কলা পাউরুটি দর্শন ।
কোনদিন হয়তো খেয়াল হলো সাগর কলার রংটা গাঢ় হলুদ নাকি বাদামী অথবা পাউরুটির ভেতর কাচপোঁকাদের শহর বানালে দৃশ্যকল্প কেমন হতে পারে। সেক্ষেত্রে অনেক গভীরে যাওয়া চায় অনেক বড় কিছু কে আস্তে আস্তে পাশ কাটিয়ে আনুবিক্ষণিক গর্তে প্রবেশ ।
শার্টের চতুষ্কোন দিয়ে ঢুকে পড়ে পৌষের বেহায়া বাতাস । গতকাল রাতে যেখানে আগুন ছিলো, সেখানে এখন প্রচন্ড তূষারপাত । জমে যাচ্ছে হৃদপিন্ড, হিমাংকের নিচে নেমে যাচ্ছে রক্তের উষ্ণতা ।
মস্তিষ্কের কারখানায় শ্রমিকেরা হাতুড়ি রেখে বৃত্তাকারে আগুন খুঁজছে । গর্তে ফিরতে হবে, অপেক্ষায় আছে পশমী কাপড়, গরম বিছানা, সুদীর্ঘ হাইবারনেশান । ফস করে একটা সিগারেট জালায়, দু’ঠোঁটের মাঝে উষ্ণতা চেপে গর্তাভিমুখে হেঁটে যায় সকালের বিষন্ন ফুটপাত ধরে। পথের দূরত্ব বাড়ে সেই সাথে আকাশচুম্বি হয় হাইবারনেশানের নেশাটা। যত্তসব অদ্ভুত দর্শণ, হাত দিয়ে পারদ ধরতে চাওয়া শৈশবের নেশাটা সময়ে রং বদলায়, মাথার ভেতর জগন্নাথ স্যারের ভাঙ্গা রেকর্ড অনবরত বাঁজতে থাকে “ পারদকে হাত দিয়ে স্পর্শ করা যায়না কেবলই স্পর্শকাতরতা বাড়ে” ।
তবে আমারই বা এতো কাতরতা কেন?
পথে যেতে যেতে অনেক কিছুই চোখে পড়ে কোনটা ইচ্ছে অনিচ্ছার তোয়াক্কা না করে জোঁকের মতো ঝুলে খাকে চোখের কার্নিশ ধরে । এক বয়স্কা প্রবীনকে দেখলাম শতচ্ছিন্ন পোশাকে কুয়াশার বুকে হেঁটে ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে বাস কাউন্টারে দাঁড়ানো যাত্রী লাইনের এ মাথা ও মাথা করে ভিক্ষে চাইছে, খবরের কাগজ হাতে একজন ৯-১০ বছরের কিশোর কিছুক্ষণ পর পরই আকাশ পানে তাকিয়ে দেখছে সূর্য ওঠার কতটা সময় বাকি? এসব সাদামাটা বিচ্ছিন্ন দৃশ্যপট, আজকাল আঁচড় বসায় না বিবেকের সফেদ চোয়ালে । বুকের ভেতর তামাকের ধোয়া চেপে ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় নামি। পৌষের তীব্র বাতাস, বেরসিক গাড়ির শব্দ হাঙ্গরের মতো গিলে খায় আমার সাত সকালের স্তব্ধতা। একটি বাসকে এগিয়ে আসতে দেখি, ইচ্ছে হয়না সরে দাঁড়াতে ।
খাঁক আমাকে গিলে খাঁক, দেখি যদি গন্তব্যের দূরত্বটা কমানো যায় । পা থেকে মাথা অবধি জ্বলে পুড়ে যায় অদৃশ্য উষ্ণতায় । বুকের পাঁজড় গুড়ো হয়ে যায়, থেতলে যায় মাংসপিন্ড ।
শব্দেরা পলাতক, শিল্পীর সুনিপুন হাতে কেউ একজন এঁকে দিয়েছে দৃশ্যপট । জনমানবহীন পথে একা একা হাঁটতে হাঁটতে মনে হলো এর সমস্ত কিছুতেই আমার একার মালিকানা ।
ধবধবে সাদা আকাশের এককোনায় জ্বলজ্বল করছে গোলাপী রংয়ের সূর্যটা । সূর্যের রংটা গোলাপী কেন হলো? এ নিয়ে মনে একবার প্রশ্নের উদয় হয়নি । বড় অদ্ভুত!দৃশ্যটা একেবারেই সিনেমাটিক হয়ে যাচ্ছে, দুর থেকে ভেসে আসা সমুদ্রের গর্জণ ঢেকে দিচ্ছে একটি রিনরিনে কাঁসার ঘন্টাধ্বনি । ঠিক আমার শৈশবের ক্লাস শুরুর ঘন্টা । ভেতরটা ছটফট করে উঠলো ,হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলাম ।
আমাকে পৌছতে হবে, পথ ফুরোবার সময় হলো বুঝি । কিন্তু পায়ের তলাটা এমন পুড়ে যাচ্ছে কেন? বুকের ভেতরটাও কেমন জ্বলে যাচ্ছে। একের পর এক টানা কয়েকটি মুখের পর্যায়ক্রমিক উপরিপাতনে উচ্ছাস্বের বদলে জমছে স্মৃতিকাতরতা । অনধিকার চর্চার সময়তো এটা নয়, পার হয়ে আসা বহুপথের দৌরাত্বে আনন্দ থাকার কথা ছিলো, কথা ছিলো সুবিনয় বাতাসের অষ্টক জুড়ে ঝড় তুলবে ফিরে আসবার সিম্ফনি ।
দু’আঙ্গুলের ফাঁকে আগুন লেগেছে বোধহয়, পোড়া মাংসের গন্ধ পাই ।
টিফিন পিরিয়ডে ঘন্টা পড়লে স্কুল মাঠে এক দঙ্গল কিশোরের হৈ চৈ , ছোটাছুটি উপেক্ষা করে মাঠের পশ্চিমপার্শ্বের চেনা বটের নিচে চয়নিকা হাতে বসে থাকা এক কিশোরের মুখায়ব দেখে চমকে উঠি । পোড়া মাংসের পরিধি বাড়ে, দু’চোখে ধোঁয়ার বৃত্ত্ব দেখি, আহ্ কোথাও কোন শূন্যস্থান নেই ।
দ্রুত সিগারেটটা হাত থেকে ফেলে চায়ের দোকান থেকে উঠে দাড়ায়, আজকাল প্রতিনিয়তই এরকম অপহৃত হচ্ছি । আমার গর্তে ফেরা হয়না ।
২০.১২.২০১১ অফিস (বনানী)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।