ধরুন রাজধানীর গুলশানের ফ্ল্যাটে বসে দুই ভাবি কথা বলছেন। যেহেতু ভাতের চিন্তা করা লাগে না,স্বামীও যেভাবেই হোক মাসে লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করেন(ইংরেজিতে এর একটি সুন্দর বাগধারা আছে,যাকে বলে by hook or by crook) সেই সুবাদে এনারা খুবই সৃজনশীল,মননশীল(!) সামাজিক প্রাণী!!
এবার তাদের কথোপকথনে আসি,
মীতা ভাবিঃ ভাবি জানেন তো নুসরাত ফতেহ আলি খান সাহেব ঢাকায় আসছেন। আর আপনি তো যানেনই আমি তার গানের কি ভক্ত!!(আর মনে মনে বলছেন হয়ত “উহহু কখনও নাম শুনেছিস উনার?? আমার মত কি আর দুনিয়ার সব খবর রাখিস???” )
রীতা ভাবিঃও হ্যাঁ হ্যাঁ ডেইলি ষ্টার পত্রিকায় পড়লাম তো। (ইংরেজী পত্রিকার কথা বলা শুধুই নিজেকে প্রতিযোগীতায় এগিয়ে রাখার খাতিরে)!!! ভাবি ঈদের কেনাকাটা কিছু করেছেন নাকি??(উনি আবার বলছেন হয়ত “ইইইইহহ তুই কি গান শুনিস তা আমি জানি,যাবি ত শুধু দেড় লাখ টাকার শাড়ী দেখানোর জন্য!!ভাব মারিস ফকিরনী!!!”
বিঃদ্রঃ(তারা এখন অভিজাত শ্রেনীর মানুষ পারসোনাতে যায়,ঈদের সময় রাষ্ট্রপতি ভবনে যায়,শাহরুখ খানের নাচ দেখতে যান, তাই শিক্ষাগত(পড়ুন “সুশিক্ষাগত”) যোগ্যতা কিংবা অতীত ইতিহাস ভুলে যান...ওসব জিজ্ঞাসা করা দণ্ডযোগ্য অপরাধও বটে। )
মীতা ভাবিঃনা ভাবি তেমন কিছু আর কই কিনতে পারলাম এই শাড়ীটাই যা একটু(!!) খরচ পড়ল।
দূর্ভাগ্যক্রমে এমন আরও ৩ জন মীতা ভাবী অনুষ্ঠানের দিন উপস্থিত হলেন। আর কথায় আছে “when great minds(!!) meet good things happen”.আর হলও তাই। অনুষ্ঠানে ফাতেহ আলী খান আসেননি,তার ছোট ভাই দল সহ এসেছেন। ব্যাপারটা আয়োজকদের ধৃষ্টতার কারনেও হতে পারে। শিল্পী গান শুরু করার আগেই মীতা ভাবী তার মীতাদের নিয়ে হৈচৈ শুরু করে দিলেন,ভাবটা স্বভাবের বশবর্তী হয়ে গ্রাম্য ঝগড়ার মত হল,মুহুর্তেই পুরো রুমে হৈচৈ।
শিল্পী কি করবেন বুঝতে পারছেন না। তিনি বোধহয় ঘোরের মধ্যে আছেন।
এক ঘন্টা পরঃশিল্পী কোন গান না গেয়েই বিদায় নিয়েছেন,ভাবি আবার বেচারার চেহারা দেখে খুশি হলেন। কিছু হলেও টাকা উশুল হল। তার মত মননশীল শ্রোতার এত বড় অপমান!!!
আয়োজকদের অপরাধ আছে মানলাম।
কিন্তু আগেই বলেছি যে কথা গুলো গুরুত্বপূর্ন নয় তা-ই বলছি, একটা বিদেশী শিল্পী কোন দেশে এসে গান না গেয়েই এভাবে বিদায় নেয়াটা আমাদের জন্যে কতটুকু সম্মানের ছিল?? আয়োজকদের সাথে পরে সব মিমাংসা নিশ্চই করা যেত...। । কিন্তু ওসব কে ভাবে??মীতা ভাবী যে রূপ দেখালেন তারপর এই শিল্পী আর কোনও দিনও এদেশে আসার সাহস পাবেন না। আর আমাদের মধ্যে বোধহয় এমন মননশীল মানুষই বেশি।
হায়রে টাকা দিয়েতো সবই হয় কিন্তু মনের দৈন্যতা দূর হবে কি দিয়ে???তাই স্বভাবও আর বদলায় নাহ্।
গুলশান থেকে একটা বস্তির দুরত্ব কত হবে?? ২ কিঃমিঃ ????কারও বাসা ভাড়া ৩০,০০০ আর ২ কিঃমিঃ দূরে ভাড়া ৬০০ টাকা,কিন্তু দুরত্বটা কয়েক হাজার আলোক বর্ষের!!!যে ৫০০ টাকা দিয়ে পারসোনাতে পা ঘষে আসি তা দিয়ে কয়জন লোককে খাওয়ানো যেত???এই চিন্তা কখনও মাথায় আসেও না,আর এই চিন্তা নিজ থেকে না আসলে স্বয়ং করুনাময়ও তা করে দিতে পারবেন না।
(ঘটনাটা সত্যি আর সুত্রঃসময় টেলিভিশন এর রিপোর্ট)
আর রীতা ভাবী তার বাসার কাজের মেয়েকে শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন না কিন্তু কাজের মেয়েকে প্রতিদিনই “শিক্ষা” দেন। এই মেয়েই এক সপ্তাহ পর বাসার ছাদ দিয়ে পালাতে গিয়ে নিচে পড়ে মারা যায়,সৎ মাকে নগদ ২ লাখ টাকা দিয়ে এ যাত্রায় বাঁচলেন। ভাবছেন মেয়ের সৎ মা না থাকলে তো বিপদ হত???হ্যাঁ,ঠিকই ধরেছেন কারন পুলিশকে তো দিতে হত ৭/৮ লাখ টাকা!!!পাঠকরা ভেবেছিলেন আমি বিপদ বলতে শাস্তির কথা বুঝিয়েছি,কিন্তু নাহ্ শাস্তি-আইন এগুলো সবার জন্য না।
আর কি??তারা বেশ ভালই আছেন,স্বামী কালো হোক সাদা হোক যে কোন টাকা দিয়েই হোক তাদের লক্ষাধিক টাকার শাড়ির আবদার মেটান।
দুঃখ একটাই-তাদের সন্তান গুলো কেন জানি বখে যায়,এক ঘুমে কখনোই রাত পার করতে পারেন না,কেন জানি মাঝ রাতে শুধু ঘুম ভাঙ্গে,হজ্জ্ব-নামাজের পরও মনে কেন জানি একটা পাপ বোধ থেকে যায়-এই কাজগুলো কেন যে টাকা-আভিজাত্য দিয়ে করা যায় নাহ্????কে জানে????
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।