আ মা র আ মি
এক.
মধুর ক্যান্টিনের চা কোনএক সময়ে অসহ্য লাগা শুরু করছিলো আমাদের। অরুন দা রে আর কতো বলা যায়! বলেই বা কি! ওতো আর ওর লাভ ছাড়ে না, খাঁটি ব্যবসায়ীর মতো খালি লাভই বাড়াতে চাইতো, এখনো যেমন চায়। যাইহোক, এমন অনেক কারনেই আমরা কিছু মানুষ একটা জায়গা খুঁজছিলাম, একটু দম ফেলবার, অন্য কোথাও, অন্য কোনখানে।
মধুর ক্যান্টিন আর মসজিদের মাঝের জায়গাটাতে সেলিমের চায়ের দোকান। ঝোপঝারের পাশে।
সামনে খানিকটা জায়গায় ঘাস, গাছ বেশকিছু। স্টাফ ব্যচেলর কোয়ার্টাররে কেউ বোধহয় ক্ষেত করেছে পাশে, সেখানে সব্জি হয়। আমরা বসতে শুরু করলাম সেলিমের চায়ের দোকান কে কেন্দ্র করে, গাছের ছায়ায়। আস্তে আস্তে বসতে শুরু করলো আরও অনেকে। সেলিমের দোকানটার বিক্রি বাড়তে শুরু করলো, পাশে দোকান হলো আরও।
খিচুরী যুক্ত হলো নতুন দোকানে। আমরা যারা রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলাম তারা বসতাম, যারা যুক্তছিলোনা কিন্তু ফ্রিল্যান্স পজিটিভ রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলো তারা বসতো। আস্তে আস্তে সেলিমের দোকানটা ঘিড়ে গড়ে উঠেছিলো সবধরনের মানুষের এক মিলন মেলায়। যেকোন রাজনৈতিক মুভমেন্টে সেলিম চত্বরের মানুষগুলো ভূমিকা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।
সেলিম চত্বরকে ভালোবেসে নানা মানুষ নানা নামে ডাকতো।
কেউ বলতো পরহেজগার চত্বর, কেউ শালিক চত্বর। দেয়াশলাইয়ের গ্রুপটা বসতো, বসতো ঘাসফড়িংয়ের দল। গাছের ছায়ায় ঘাসে বসে, সেলিম বা মোর্শেদের বানানো চায়ে চুমুক, নানা আলোচনা, কাজের শেয়ারিং, যে কোন পজেটিভ মুভমেন্টে একসাথে এগিয়ে চলা, কি করিনি আমরা! অথবা দীর্ঘ বন্ধ্যা সময়ে শ্রেফ চুপ চাপ বসে সান্ত্বনা খোঁজা। দিন কেটেছে অসংখ্য, অসংখ্য স্মৃতিরা!
তারপর একদিন নতুন টেন্ডারে নতুন দোকান বসলো ওখানে। দলীয় চামচারা পেল সে টেন্ডার।
বার্গার আর পিজা পাওয়া শুরু হলো নতুল দোকানে, সাথে কফি। আমরা চা খাই, সেলিমে। জানিনা কার ইশারায় একদিন অবৈধ উচ্ছেদের নামে তুলে দেয়া হলো সেলিমের দোকান, আমি তখন চাকরিতে ব্যস্ত। তবুও আড্ডাটা ছিলো, মাঝে মাঝে গিয়ে দেখতাম এখনো আড্ডা বসে, হয়তো কফির কাপে। তবুও তো কেউ ছিলো মিলন মেলায়!
দুই.
জুনের শেষ ওয়ার্কিং ডে।
রাত প্রায় দশ। দম ফেলার সময় নেই মোটে। হাবিব ফোন দিলো আমারে। অল্প কিছু কথার মাঝে আমারে জানালো সেলিমের দোকানের আশপাশের সব গাছ কেটে ফেলেছে। ওখানে নাকি কি এক ভবন পাতাবে।
আমি চোখ বন্ধ করলাম, গাছ ছাড়া সেলিম চত্বর একবার মনে মনে চিন্তা করলাম। চিৎকার করে বলে উঠলাম, 'কি বালের রাজনীতি করে পোলাপাইন এখন!' মৃত্যুর কোন সান্ত্বনা হয়না, মৃত্যুর কোন সান্ত্বনা নেই।
তিন.
আমি আমার প্রিয় আড্ডার ছায়া খুঁজতে যাইনি ওখানে আর। অধিকার ছেড়ে দিয়ে অধিকার ধরে রাখিনি, পারিনি। আমিতো বন্দী এখন সময়ের আবর্তে।
প্রিয়ের লাশ দেখে সহ্যও করতে পারিনা, তাকে বাঁচিয়েও রাখতেও পারিনা। আমি একটা বাল, খালি চিল্লাইতে পারি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।