বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর শেখ মুজিবুর রহমান পাকিসত্দান থেকে বাংলাদেশে ফিরে এসে নতুন রাষ্ট্রের হাল ধরার পর আমার মধ্যে এমন একটি ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল যে জনগণের জন্য এবং ৰমতার প্রতি মোহের কারণে তিনি যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাতে তিনি চাইলেও জনগণ তাকে ৰমতা থেকে অবসর নিতে দেবে না। তিনিও অবসর না নিয়ে ৰমতায় থাকাকেই অধিক উপভোগ করবেন। সাৰাৎ মৃতু্যর হাত থেকে ফিরে এসেছেন তিনি। যদিও পাকিসত্দান কতর্ৃপৰ ব্যাখ্যা দিয়েছে যে শেখ মুজিবকে লায়ালপুর (বর্তমান ফয়সলাবাদ) কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল সেটি পাকিসত্দান-ভারত সীমানত্দ থেকে দেড়শ' মাইলের মধ্যে, ১৯৭১ সালে যখন দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ অনিবার্য মনে হচ্ছিল তখন ভারতের বিমান হামলা, এমনকি দূর পালস্নার মটর্ার হামলার আওতায় মধ্যে ছিল বলে কারাগারে কয়েদিদের নিরাপত্তার জন্য অনেক ট্রেঞ্চ বা পরিখা খনন করা হয়েছিল। কিন্তু পাকিসত্দানের যুক্তি আওয়ামী লীগের বিশ্বাস করার সঙ্গত কোন কারণ থাকতে পারে না।
শেখ মুজিবও পাকিসত্দানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর দেশীবিদেশী সাংবাদিকদেরকে বলেছেন যে তাকে যেখানে আটক রাখা হয়েছিল সেই সেলের পাশেই তার জন্য কবর খনন করা হয়েছিল। মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের, এমনকি তারা যদি হাই প্রোফাইল আসামীও হয়ে থাকে, তাদের মৃতু্যদন্ড কারাগারের অভ্যনত্দরে নির্দিষ্ট স্থানে কার্যকর করা হয় বটে, কিন্তু ফাঁসিতে বা অন্যভাবে কাউকে মৃতু্যদন্ড দেয়া হলেও কারাভ্যনত্দরে দাফন করা হয়েছে এমন কাহিনী শুনিনি। বাংলাদেশের অন্য কারাগারগুলোর কথা জানিনা। তবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাকিসত্দান জাতীয় পরিষদের স্পীকার এবং কিছুদিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকারী ফজলুল কাদের চৌধুরীর মৃতু্য ঘটেছে (পরিবারের অভিযোগ তাকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে), প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরম্নল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজুদ্দিন আহমদ এবং আরো দুই মন্ত্রী কামরম্নজ্জামান ও মনসুর আলীকে হত্যা করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলেও শেখ মুজিব হত্যার অভিযোগে মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য খেতাবধারী সেনা কর্মকর্তাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে।
কিন্তু একজনকেও কারাগারে কবরস্থ করা হয়নি। সেৰেত্রে শেখ মুজিবকে ফাঁসিতে ঝুলানোর আগেই কারাগারে কবর খোঁড়ার কাহিনী সৃষ্টিকারীদের মেধার প্রশংসা করতে হয়।
পাকিসত্দানে শেখ মুজিবকে আটকে রাখার ঘটনা চলিস্নশ বছর আগের। আমি তখন জীবিত ছিলাম এবং নিয়মিত পত্রপত্রিকা পাঠ ও দেশীবিদেশী রেডিও স্টেশনের খবর শোনার অভ্যাস ছিল আমার। আমি এমন কোন খবর পাঠ করিনি বা শুনিনি যে শেখ মুজিবের বিরম্নদ্ধে আনীত অভিযোগের মামলা নিস্পত্তি হয়ে গিয়েছিল, বিচারিক আদালত তাকে মৃতু্যদন্ড দিয়েছিল, উচ্চতর আদালতে দন্ডাদেশ বিবেচনার জন্য আপিল করা হয়েছিল, মৃতু্যদন্ড মওকুফের জন্য রীতিমাফিক প্রেসিডেন্টের কাছে তার পরিবারের পৰ থেকে মার্সি পিটিশন করা হয়েছিল এবং কবে তার মৃতু্যদন্ড কার্যকর করা হবে তা তার পরিবারকে জানানো হয়েছিল।
এসবের কিছুই হলো না, অথচ কারাগারে কবর প্রস্তুত! আলেকজান্ডার কি আর সাধে সেলুকাসকে বলেছিলেন, 'কি বিচিত্র এই দেশ!' পাকিসত্দান যেমন অসম্ভব একটি রাষ্ট্র, কোন যুক্তি আইন কানুনের উর্ধে, আওয়ামী লীগের কাছেও অনুরূপ সকল যুক্তিতর্ক অসার। শেখ মুজিব যেহেতু বলেছেন, অতএব কারাগারে তার সেলের পাশে তাকে দাফন করার জন্য একটি কবর যে অবশ্যই খনন করা হয়েছিল তা জাতিকে বিশ্বাস করতেই হবে। বাংলাদেশে কোরআনের বিরম্নদ্ধে কথা বলে, রসুলুলস্নাহকে (সা ধর্মনিরপেৰ ঘোষণা করে এবং মা দুর্গার আশির্বাদে উত্তম ফসল ফলেছে বলে দাবী করে বহাল তবিয়তে টিকে থাকা সম্ভব। কিন্তু শেখ মুজিব কিছু বলেছেন তা অবিশ্বাস করার কথা প্রকাশ্যে কেউ উচ্চারণ করবে? অসম্ভব ব্যাপার। গণপিটুনিতে অহরহই নিরপরাধ লোক মরছে।
কে সাহস করবে লগি বৈঠার তান্ডব মোকাবেলা করতে।
শেখ মুজিবের প্রতি আমার বিশ্বাস আওয়ামী লীগারদের মতোই। ছয় সাত বছর বয়স থেকে মানুষের স্মৃতিতে যা জমতে শুরম্ন করে তা শুধুমাত্র মতি বিভ্রমের মতো ব্যতিক্রম না ঘটলে অমস্নান থাকে। শৈশব থেকে যা বিশ্বাস করে এসেছি তা ভ্রানত্দ প্রমানিত হয়েছে। 'সদা সত্য কথা বলিবে', 'মিথ্যা বলা মহাপাপ', 'পরস্ব অপহরণ করিবে না', 'গুরম্নজনকে শ্রদ্ধা করিবে', এবং এমনি অসংখ্য আপ্ত বাক্য ছিল আমার বেড়ে উঠা জীবনের পাথেয়।
কিন্তু বাসত্দব জীবনে প্রবেশ করার পর দেখা গেল 'সকলই গরল ভেল'। এসব তত্ত্বকথা পাঠ করার জন্য, মুখস্থ করার জন্য, অন্যকে এসব নীতিবাক্য পালন করতে বলার জন্য। নিজে চর্চা করার জন্য নয়। মিথ্যাচার, পরের ধন লুণ্ঠন, গুরম্নজনকে হুমকি দান, মাদক যখন সহজলভ্য ছিল না তখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত মাদক সেবন, একাধিক মেয়ে বন্ধুর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন, প্রতিপৰ দলের ছাত্রদের খুন-জখমের মতো ঘটনায় জড়িতদের দেখলাম রাজনীতিতে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিৰক হতে। অনেকে সিভিল সার্ভিস এমনকি জুডিশিয়াল সার্ভিসে যোগ দিয়েছে নিয়োগকারীদের সকল শর্ত পূরণ করে।
যারা ব্যবসা করতে গেছে তারাও শনৈ শনৈই তরক্কি করেছে। আমার আশৈশব লালিত বিশ্বাসের প্রাচীর ভেঙ্গে গেছে। ৰুদ্র সামর্থে যাকে উপকার করতে চেষ্টা করেছি তিনি চেয়েছেন আমি তার আরো উপকার করছি না কেন? আমার তো উচিত তার জন্যে আমার জীবন দিয়ে দেওয়া। একজন উপকার পেয়ে দশজনকে বলেছে, কিন্তু ক'জন লোকের পৰে সম্ভব সারিবদ্ধ উপকার প্রার্থীর কল্যাণে কিছু করা। একজন মানুষ তো একটি প্রতিষ্ঠান নয়।
ব্যক্তিরও তো সীমাবদ্ধতা থাকে। কিন্তু আজন্ম বুভুৰুর দেশটিতে দশ দফা উপকারভোগী যখন একাদশ দফায় উপকার পেতে ব্যর্থ হয়, তখন প্রাপ্ত উপকারের দীর্ঘ তালিকা বিস্মৃত হয়। শিৰা যা অর্জন করেছি সে তো শৈশবেই, এরপরের অর্জন শুধু অভিজ্ঞতা। তিক্ত, ক্লেদাক্ত ও বমনোদ্রেককারী অভিজ্ঞতা। এখন আমার শৈশবে ফিরে গিয়ে যা শিখেছিলাম তার উল্টোগুলো শিখতে ইচ্ছা হয়।
প্রাকৃতিক নিয়মে তা যেহেতু অসম্ভব ব্যাপার, অতএব আমি আমার আচরিত বিশ্বাসগুলোকে পাল্টে ফেলার সিদ্ধানত্দ নিয়েছি। 'যষ্মিন দেশে যদাচার,'। এখন আমি সবকিছু বিশ্বাস করি। 'রাজনীতিতে শত্রম্ন মিত্র বলে কিছু নেই,' বলে শুনে এসেছি। আমার মতো অনেকেই এই সুন্দর বাক্যটি শুনে থাকবেন।
কিন্তু বাংলাদেশের চলিস্নশ বছরের রাজনীতি কি তা বলে? বাংলাদেশের প্রেৰাপটে শত্রম্নতাই রাজনীতির মূলমন্ত্র। কিন্তু শেখ মুজিবের ৰমতার মোহের প্রতি আমার বিশ্বাসে কখনোই চিড় ধরেনি। বাংলাদশে ৰমতায় তিনি থাকবেন এটাই স্বতঃসিদ্ধ। ব্যাপারটি আমার দীর্ঘদিনের সহকর্মী বড়ভাই তূল্য দৈনিক নয়াদিগনত্দের নির্বাহী সম্পাদক সালাহউদ্দিন বাবর ভাই এর হোমিওপ্যাথিতে বিশ্বাসের মতো। সকল শারীরিক সমস্যায় বাবর ভাই হোমিও দাওয়াই সেবন করে এসেছেন।
তার কাছে হোমিওপ্যাথি একেবারে ধন্বনত্দরী, নিদান। কিন্তু যে হোমিওপ্যাথিতে কখনো আমার বিশ্বাস ছিল না, সে বিশ্বাসেও বড়সড় ফাটল ধরেছে। আমি এখন 'বিশ্বাসে পাবি রে তারে তর্কে বহুদূর' এর দলে। কারণ আমি তো আমার যুক্তি দিয়ে কাউকে বুঝাতে পারিনি যে, ঢাকার নাম করা সব হোমিও চিকিৎসক গুরম্নতর কিছুতে আক্রানত্দ হলেই নিজের ওষুধ সেবন বর্জন করে 'চাচা আপন বাঁচা' বলে ভর্তি হন আধুনিক হাসপাতালে, যেখানে তার চিকিৎসা হয় আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রের বিধান অনুযায়ী। অর্থ্যাৎ যারা নিজেরা অন্যদের হোমিও ওষুধ দিয়ে ব্যাধি নিরাময়ের গ্যারান্টি দেন, তারা নিজেদের চিকিৎসার ৰেত্রে হোমিও চিকিৎসা নেন না।
বাবর ভাই এর বাইপাস সাজর্ারি হয়েছে। শুনে কষ্ট পেয়েছি। হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন জানার পর অনেকবার ফোন করেছি তার মুখে এটুকু শুনতে যে তিনি সুস্থ্য আছেন। কিন্তু তার ফোন বন্ধ পেয়ে অবশেষে হারম্নণকে বলেছি তাকে আমার উৎকণ্ঠার কথা জানাতে। দীর্ঘ চৌত্রিশ বছরের পরিচয় আমাদের।
অনেক সুখ ও দুঃখের স্মৃতি। শারীরিক সুস্থ্যতা বজায় রাখতে যোগ ব্যায়াম করেন, ডালের মধ্যে শুধু মুগ ডাল খান। শিং মাছ তার অতি প্রিয়। মাংস এড়িয়ে চলেন। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ থেকে পঞ্চম জাতীয় সংসদ পর্যনত্দ অধিবেশনগুলো আমরা দু'জন একসাথে কভার করেছি।
একত্রে আমরা অনেক রাজনৈতিক ঘটনা ও দুর্ঘটনার সাৰী। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে প্রবীণ এক সংসদ সদস্য, যিনি পাকিসত্দানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন, জনৈক নবীন সংসদ সদস্য লবিতে তাকে চপেটাঘাত করার পর সংসদে উদ্ভুত পরিস্থিতি এখনো স্মৃতিতে উজ্জ্বল। সংসদ অধিবেশন চলাকালে বায়তুল মোকাররমের সামনে খন্দকার মুশতাকের সভায় সাপ ছেড়ে দেয়া ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় আমাদের চীফ রিপোর্টার মানান ভাইসহ (বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক) বেশ কিছু সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনা, ছয় জন স্বতন্ত্র সদস্যকে জাতীয় পার্টিতে ভিড়ানোর জন্য ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্সের তখনকার মহাপরিচালক মেজর জেনারেল লতিফ ও তার অধীনস্থদের তৎপরতা, সংসদ থেকে জামায়াতের ১০ সদস্যের পদত্যাগ ও প্রেসিডেন্ট এরশাদ কতর্ৃক সংসদ ভেঙ্গে দেয়াসহ আরো অনেক নাটকের প্রত্যৰদর্শী আমরা। জাতীয় সংসদ ভবন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে এখনকার ভবনে স্থানানত্দরিত হওয়ার পর আমাদের জন্য সুবিধা হয়েছিল কিছু সময় ধরে হাঁটার। মাগরিবের বিরতির পুনরায় অধিবেশন শুরম্ন হতো বিলম্বে।
কারণ নির্ধারিত সময়ে কোরাম হতো না। নামাজ শেষ করে আমরা ফিফথ লেবেলে লম্বা পা ফেলে হাঁটতাম। মূল অধিবেশন কৰ ঘিরে টানা হাঁটার সুবিধা ছিল থার্ড, ফিফথ ও এইটথ লেবেলে। থার্ড লেবেল মন্ত্রী, এমপি, তদবীরবাজ ও নিরাপত্তা রৰীদের ভিড়ে সদাব্যসত্দ থাকতো বলে আমরা ফিফথ লেভেলেই হাঁতটাম। যতদূর মনে পড়ে এক চক্কর সাত থেকে আট মিনিট লাগতো।
সংসদের বিকেলের অধিবেশনে পাঁচ থেকে ছয় চক্কর দিতে পারলেই বেশ ঝরঝরে অনুভব করতাম। বিগত কয়েকটি বছর নয়াদিগনত্দ নিয়ে যে ব্যসত্দতা ও চাপের মধ্যে কাটাতে হয়েছে তাতে নিশ্চয়ই বাবর ভাই এর আগের নিয়মগুলো পালনে বাত্যয় ঘটেছে এবং ব্যাধি তার দেহে আশ্রয় নিতে সৰম হয়েছে। বাইপাস সার্জারি আজকাল অহরহই হচ্ছে, লোকজন সুস্থ্য হয়ে স্বাভাবিক কাজে ফিরে যাচ্ছেন। আলস্নাহ বাবর ভাইকে দ্রম্নত নিরাময় দান করম্নন, তিনি পুনরায় তার বিশ্বাস অনুযায়ী হোমিও ওষুধ সেবনে ও পূর্বে আচরিত শরীর চর্চায় ফিরে যান এই কামনা করি।
শেখ মুজিব নিয়ে আমার আলোচনার শুরম্ন।
কথার পিঠে কথা এসে যায় বলে প্রসঙ্গ বহির্ভূত কিছু কথা বলতে হলো। আশা করি পাঠক এতে বিরক্তি বোধ করবেন না। আমার মতো তারাও জানেন যে বাংলাদেশ মিথ্যাচারের কল্পরাজ্য নয় বরং স্বর্গ। মিথ্যা কথনে যিনি যেেতা পারঙ্গম, তার সাফল্য ততো বেশী এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে মিথ্যাচার যেন রাজনৈতিক কৌশলের অংশে পরিণত হয়েছে। যারা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে শিখেননি অথর্্যাৎ মিথ্যার মোকাবেলা মিথ্যা দিয়ে করতে পারেননি তারা রাজনীতিতে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছেন।
এৰেত্রে শেখ মুজিব আমার প্রাতঃনমস্য ব্যক্তি। চলিস্নশের দশকেই তিনি জানতেন যে কি করে পূর্ব বাংলার মুসলমানদের হিন্দুদের শাসন শোষণ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য 'লড়কে লেঙ্গে পাকিসত্দান' বলাতে হবে। আবার পশ্চিম পাকিসত্দানের বিরম্নদ্ধে রম্নখে দাঁড়িয়ে পূর্ব পাকিসত্দানকে স্বাধীন বাংলাদেশে পরিণত করতে জনগণকে শাসক গোষ্ঠীর বিরম্নদ্ধে ৰেপিয়ে তুলতে হবে। এসব সম্ভব হয়েছে শুধু তার কথার যাদুতে। তার কথায় সত্য মিথ্যা উভয়ই ছিল, কিন্তু কোন কিছু একবার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে কেউ আর সত্য মিথ্যা ফারাক করে না।
তার 'লড়কে লেঙ্গে পাকিসত্দান' সঠিক ছিল, তার অনুপস্থিত নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম সঠিক ছিল, এমনকি তার দ্বিতীয় বিপস্নব বাকশাল প্রতিষ্ঠাও সঠিক ছিল। যার জীবনে কোন ভুল নেই, তিনি কিভাবে শ্রদ্ধাভাজন না হয়ে পারেন? এমন সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন ব্যক্তি আমৃতু্য ৰমতায় থাকবেন সেটিই স্বাভাবিক। আমার নিজের বিশ্বাসের ভিতটিও মজবুত ছিল যে তাকে ৰমতা থেকে কেউ হটাতে পারবে না। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও কেউ কেউ গুণীর কদর বুঝে নি। তারা তাকে হত্যা করে ৰমতা ও পৃথিবী থেকে বিদায় দিয়েছে।
কিন্তু তাতে কোন সমস্যা হয়নি। তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে ৰমতার মসনদে আসীন হয়েছেন তার কন্যা। শেখ মুজিবের অবর্তমানে তার কাজগুলোকে ভুল প্রমাণ করতে যারা উঠেপড়ে লেগেছিল, শেখ হাসিনা তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন যে তার পিতার সকল সিদ্ধানত্দ সঠিক ছিল। তবে সময়াভাবে সিদ্ধানত্দগুলো বাসত্দবায়ন করে যেতে পারেননি। সেসব তিনি বাসত্দবায়নে নেমেছেন।
তিনি তার আরাধ্য কর্মে সফল হোন এই কামনা করি। তার সাফল্যের কতোটুকু মসৃণ হবে, দেশ বা জনগণের কি হবে না হবে তা নিয়ে তিনি কতটা ভাবার সুযোগ পাচ্ছেন তা জানার মতো অনত্দর্যামী না হলেও এটুকু উপলব্ধি করতে পারি যে তিনি শেখ মুজিব নন, তার কন্যা। ভারতের জওয়াহের লাল নেহরম্ন যা করতে পেরেছিলেন, তার কন্যা ইন্দিরা গান্ধী তা পারেননি। তদুপরি রাজনীতি শেখ হাসিনাকে তৈরী করেনি, তাকে তৈরী করেছে ৰমতা। তিনি জনগণের ভাষায় কথা বলেন না, তার কণ্ঠে ৰমতার দম্ভ।
এ অহমিকা থেকে তিনি মুক্ত হতে পারলে দেশের আরো মঙ্গল হলেও হতে পারতো। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।