অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা মানুষ তার মৌলবিশ্বাসের সমষ্টি, বিশ্বাসগুলো কখনও ঐক্যতানিক কখনও সাংঘর্ষিক। সাংঘর্ষিক বিশ্বাসগুলো মানুষের দার্শণিক দৃঢ়তার অসারতার এক ধরণের প্রতিফলন হলেও মানুষ সব সময়ই বিভিন্ন ধরণের আবেগ, পরিস্থিতি,বাস্তবতাবোধতাড়িত হয়ে এক ধরণের বিশ্বাসের মোজাইক তৈরি করে নেয় নিজের ভেতরে। সেই বিশ্বাসগুলো মানুষকে তৈরি করে, সেই মানুষগুলোই বিশ্বাসের উপরে আস্থা স্থাপন করে নিজেকে সমর্পন করে বিশ্বাসের ভেতরে। অধিকাংশ সময়ই সমাজবদ্ধ মানুষ সামষ্টিক কল্যানকামীতাকে প্রাধান্য দিয়ে এইসব সাংঘর্ষিক বিশ্বাসকে নিজের ভেতরে স্থান দিয়েছে, কিন্তু এইসব বিশ্বাসের সাথে সব সময়ই যে ব্যক্তির নাগরিকত্ব পরিচয় কিংবা রাষ্ট্রীয় আনুগত্য সাংঘর্ষিক এমনটা সত্য না। সম্ভবত অধিকাংশ সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষের ক্ষেত্রেই বিষয়টা এক ধরণের বাস্তবতা।
এরপরও মানুষ কল্যানের লক্ষ্যে নিজেকে পরিচালিত করে, নিজের বিশ্বাসকে ধারণ করে এমন সব কর্মকান্ডে লিপ্ত হয় যার তেমন কোনো কল্যানকর প্রতিক্রিয়া উপলব্ধি করা অসম্ভব। তারা শান্তিপ্রতিষ্ঠার নামে হত্যার আয়োজন করে, তারা শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে নৈরাজ্যের জন্ম দেয়, প্রত্যেকের ব্যক্তিস্বার্থ, ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং রাজনৈতিক বিশ্বাস এইসব বিষয়ে এমনভাবে জড়িয়ে আছে বিশ্বাসের পরত খুলে খুলে সাংঘর্ষিক বিশ্বাসগুলোকে আলাদা করে খতিয়ে দেখা সাধারণের পক্ষে সব সময় সম্ভব হয় না।
আদালতের রায়ে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান প্রতিষ্ঠার বাধ্যবাধকতা তৈরি হওয়ার পরে আসলে তেমনভাবে সংবিধান দেখা হয় নি, আমি যে মুহূর্তে সংবিধান দেখেছিলাম শেষ বার সে সময়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উপরে আল্লাহর সর্বময় কতৃত্ব ছিলো। সে সংবিধান অনেক ধরণের আভ্যন্তরীণ বৈপিরীত্ব নিয়ে বিদ্যমান থাকলেও সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন তাতে খুব বেশী আক্রান্ত হয় নি, কারণ আমাদের সাংবিধানিক অধিকার সম্পর্কে আমাদের অধিকাংশ জনগণই তেমন ওয়াকিবহাল নয়, তারা রাষ্ট্রের সামগ্রীক অবহেলায় নিত্যদিন জীবনযাপন করছে, তাদের পক্ষে দাঁড়ানোর মানুষ নেই বলে কিংবা তাদের এসব অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলার মানুষ নেই বলে তারা নিজেরা সংগঠিত নয় এবং অসংগঠিত দুর্বল মানুষ প্রতিনিয়তই প্রতিষ্ঠানের কাছে পরাজিত হয়, সে প্রতিষ্ঠানও কোনো না কোনো বিশ্বাসে পরিচালিত হয়, স্পষ্ট কিংবা অস্পষ্ট এইসব বিশ্বাস সামগ্রীকভাবে প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রের চরিত্র নির্ধারণ করে কিন্তু একটা বিষয় সব সময়ই সত্য, বিদ্যমান ক্ষমতাকাঠামো কিংবা রাষ্ট্র, রাজ্যের বিভিন্ন পর্যায়ে যারা ক্ষমতার অংশীদারিত্বে থাকেন তারা সব সময়ই নিশর্ত আনুগত্য চায়। তাদের সম্মোহিত করে রাখতে চায়, তারা সমষ্টিকে অনবহিত রাখতে চায়।
এই ধারাটা সব সময়ই অনুসরণ করছে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্র বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
সভ্যতার অগ্রগতি মূলত বিভিন্ন ধরণের মৌল বিশ্বাস আর মৌল সংস্কারের সংঘর্ষের ধারাবাহিকতা। সেখানে পরিস্থিতি অ প্রয়োজনে কোনো একটা বিশ্বাস কিংবা সংস্কার অপরাপর সংস্কার ও বিশ্বাসগুলোর চেয়ে বেশী প্রাধান্য পায়, অধিকাংশ মানুষই সেই প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাসের চাপে আত্মসমর্পন করে। যারা অন্য বিশ্বাস ও সংস্কারকে হৃদয়ে ধারণ করে সেটাকেই প্রামাণ্য মেনে নেয় তারা আত্মসমর্পন না করে ভিন্ন ভাবে নিজেদের বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সুতরাং রাষ্ট্র, সমাজ, প্রতিষ্ঠানের ভেতরে সব সময়ই এক ধরণের বিশ্বাসের সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে।
সেই বিশ্বাসগুলো নিছকই বিশ্বাস বিজ্ঞানের প্রামাণ্য পরীক্ষণলব্ধ বাস্তবজ্ঞান নয়। এসবের উপকারিতা কিংবা প্রয়োজনীয়তা তেমন না থাকলেও সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিনের অভ্যাসে বিশ্বাস করে কিংবা ধারণা করে এসব আসলেই প্রয়োজনীয়।
মানুষের নিজস্ব ধারণাগুলো প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়, বিভিন্ন বয়েসে বিভিন্ন ধরণের ভাবনা মানুষের ভেতরে দানা বাধে, এইসব ধারণা, ভাবনা এবং বিশ্বাসগুলো নিজের ভেতরে গ্রহন করে মানুষ একজন সামাজিক মানুষ হয়ে উঠতে চায়, কিন্তু বিশ্বাসের ভেতরেও ঘুণপোকা থাকে, সেই ঘুণপোকা শুভবোধের শেকড় কুঁড়ে কুঁড়ে খায়, ফলে সামষ্টিক শুভবোধের অপরিহার্যতা কিংবা সে সংক্রান্ত কোনো বিবেচনাবোধ মানুষের ভেতরে কাজ করে না। এই ধরণের ঘুণপোকা আসলে বিশ্বাসের মৌলবাদিতা, মৌলবাদী বিশ্বাস মূলতঃ নিজেই নিজেকে হত্যা করতে চায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।