আমি একজন বেকুব। খালি ধরা খাই। আমার পরিবারের লোকজন আমাকে ভাদাইম্যা বলে ডাকে। মোটরসাইকেল দেখলেই আমার জিবে জল এসে যেত। আর খালি মনে হতো, ইশ্, আমি যদি একটু চালাতে পারতাম! রাস্তায় আমার ডান-বাম দিয়ে যখন আমার মতো ছেলেরা মোটরসাইকেল নিয়ে ভোঁ ভোঁ করে চলত, তখন আমার ইচ্ছে হতো ভাইয়াকে খুন করে ফেলি।
কারণ আমাদের জলজ্যান্ত একটা মোটরসাইকেল আছে, আমি চালাতেও পারি, কিন্তু ওই মুখপোড়া ভাইয়া আমাকে চালাতে দেবে না, আমি নাকি অ্যাকসিডেন্ট করব। আর নিজে যে সেদিন রাস্তায় একটা আস্ত মুরগি মেরে এল তার খবর কে রাখে! ওই মুখপোড়ার জন্য জীবনের সব স্বাদ-আহ্লাদ অপূর্ণ রইল। সবুর করো, যখন চাকরি করব না! সুজুকি ১০০ কিনে মুখপোড়ার সামন দিয়ে ভোঁ ভোঁ করে যাব, দেখব তখন কে আটকায়। সেদিন স্কুল থেকে বাসায় ফিরছিলাম। রাস্তায় ভাইয়ার সঙ্গে দেখা, রিকশায় করে বাজারে যাচ্ছিল।
আমি তো না দেখার ভান করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ও আমাকে ডাক দিল আর মোটরসাইকেলের চাবিটা হাতে দিয়ে বলল, বাসায় মোটরসাইকেলটা আছে। আমি যেন বাজারে নিয়ে আসি। আকাশের চাঁদ যেন হাতে পেলাম। ভাইয়া আমাকে মোটরসাইকেলের চাবি দিল।
সূর্য, আজ কোন দিকে উদয় হয়েছ? তারপর হেঁটে নয়, ১০ টাকা খরচ করে রিকশায় বাসায় গেলাম। গিয়ে মোটরসাইকেলটা দুই নয়নজুড়ে দেখে নিলাম। ইশ! কত দিন চালাই না!’ বুদ্ধি করলাম, বাজারে আমি যাব ঠিকই। তবে সোজা রাস্তা দিয়ে নয়। জীবনে সুযোগ বারবার আসে না।
বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে একটু ভাবটাব নিয়ে অবশেষে সুমিদের বাসার সামনে একটা চক্কর দিয়ে তারপর বাজারে যাব। তাই আর দেরি নয়। তড়িঘড়ি করে গোসল সেরে ইস্ত্রি করা প্যান্ট-শার্ট পরে ভাইয়ার সানগ্লাসটা নিয়ে একদম জন এব্রাহাম সেজে গেলাম।
তারপর আস্তে আস্তে মোটরসাইকেলটা বের করলাম। নাহ্, আর কোনো কথা নয়, দিলাম লাথি, হলো না।
আবার দিলাম। তাও হলো না। ও বুঝেছি, শীতের দিন তো, তাই স্টার্ট নিতে দেরি হচ্ছে। নো প্রবলেম, আবার লাথি দিলাম। একি, স্টার্ট নিচ্ছে না কেন? তারপর কমপক্ষে ৭০ বার লাথি দেওয়ার পরও আমি যখন থামছি না, তখন ভাবি এসে বলল, বোকা ছেলে! লাথি মেরে লাভ নেই।
ওটা তো স্টার্ট নেবে না। ওটাতে তেল নেই।
মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে গেলাম আমি।
মো. আবু বকর সিদ্দিক
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।