যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে লন্ডনে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে সেখানে এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সরকারের কোনো তৎপরতা নেই। এছাড়াও ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাটম্যানের নেতৃত্বে ২১ জন ব্যারিস্টার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের গোটা বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছেন। তাদের ই-মেইলে পাঠানো সওয়ালজবাব আদালতে উপস্থাপন করছেন যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত আইনজীবীরা।
সম্প্রতি দু’জন মন্ত্রী লন্ডন থেকে ফিরে সরকারের ওপর মহলে এসব তথ্য জানিয়েছেন বলে উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা মানবকণ্ঠকে জানিয়েছেন।
সরকারি কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করার জন্য জামায়াতের নেতৃত্বে একটি গোষ্ঠী অপতৎরতা চালাচ্ছে। এরা বাংলাদেশ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করাসহ এর বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছে। লন্ডস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এসব জেনেও এর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে প্রবাসীদের মধ্যে অভিযোগ রয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সরকারি সফরে লন্ডন যান। ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন।
প্রটোকলের একজন কর্মকর্তা ছাড়া দূতাবাসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার তার সঙ্গে তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না। সাবেক স্বরাষ্ট্র ও বর্তমান ডাক ও তারমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লন্ডন সফর করেন। তার বেলায়ও একই ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্কিত করতে জামায়াতের একটি সংগঠন লন্ডনে অপপ্রচার চালাচ্ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে।
এর সঙ্গে বিএনপির কিছু চিহ্নিত নেতার যোগসাজশ রয়েছে। ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের নামে ইস্ট লন্ডন ইসলামিক সেন্টার গড়ে তুলেছে জামায়াত। এ প্রতিষ্ঠানের জেনারেল সেক্রেটারি হলেন ’৭১-এর বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী চৌধুরী মঈনউদ্দিন। তার নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করা এবং সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। সমাজসেবার নামে ধর্মীয় চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হয়ে সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
তার এ প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন হাজার হাজার পাউন্ড জমা পড়ছে। তারা এ অর্থ ব্যয় করছে সেখানের ১০-১২টি পত্রিকা ও ৬-৮টি টেলিভিশন চ্যানেলের পেছনে। এসব সংবাদমাধ্যমে থেকে প্রতিনিয়ত যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে টেলিভিশনের আলোচনা ও টকশোগুলোতে জামায়াতের টাকায় পড়ানো ব্যারিস্টারসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা আলোচক হিসেবে যোগ দিচ্ছেন। তারা যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বিষোদগার করছেন।
হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিত করা, লুটপাট, দেশত্যাগে বাধ্যকরাসহ নানা ধরনের অভিযোগে একজন বিএনপি নেতাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৫টি, বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে ৭টি, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ৬টি, মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৭টি, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৩টি এবং আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে ১৭টি অভিযোগ আনা হয়েছে। মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত কাজ চলছে।
এসব যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগে ব্যর্থ হয়ে জামায়াত লন্ডনে ২১ সদস্যের একটি ব্যারিস্টার প্যানেল করেছে। ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাট ম্যানের নেতৃত্বে এ প্যানেল কাজ করছে।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলা বিচারের সওয়ালজবাব লন্ডন থেকে লিখে ই-মেইলে তাদের আইনজীবীদের কাছে পাঠাচ্ছেন। ওই যুক্তি ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরা হচ্ছে। এসব কাজে জামায়াত দু’হাতে অর্থ ব্যয় করছে।
কমিউনিটির নেতা হিসেবে চৌধুরী মঈনউদ্দিন ব্রিটিশ মন্ত্রীসহ হাউস অব কমন্সের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ করছেন। তাদের একটি গ্র“প আছে যারা প্রভাবশালী কারো না কারো সাক্ষাৎ করছেন।
তাদের চ্যানেল ও পত্রিকাগুলো ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তা প্রচার করছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে সরকার। তাদের কোনো তৎপরতা নেই।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে আমেরিকায় মীর কাসেম আলী ২৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করেছেন। এর সিংহভাগ গেছে লন্ডন থেকে।
লন্ডন সফর করে আসা একজন সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অপপ্রচার চালিয়ে এর বিপক্ষে সারা দুনিয়ায় জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করছে জামায়াত। অথচ এর বিরুদ্ধে ব্যাপক জনসমর্থন থাকার পরেও বিশ্বের ‘বুদ্ধিভিত্তিক রাজধানী’ লন্ডনে সরকারের পক্ষে এর জবাব দেয়ার মতো কেউ নেই! বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা এর খোঁজ-খবরও রাখেন না। জামায়াতি প্রপাগান্ডার জবাব না দিলে এক সময়ে সরকারকে বড় ধরনের খেসারত দিতে হতে পারে বলে বললেন ওই কর্মকর্তা।
লন্ডন সফরের কার্যক্রম তুলে ধরে একজন মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি লিখিত সার-সংক্ষেপ পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়, আমরা যদি বর্তমান সরকারের অর্জিত সাফল্য ও চলমান অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সংসদ ও জাতীয় নির্বাচনসহ গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের নীতির প্রতি সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করি, আমি মনে করি এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধের সমর্থকদের বিভিন্ন প্রচারণা, লবিং ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র প্রতিহত হবে।
যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ প্রবাসীদের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কে আস্থা, ঐক্য ও সমর্থ বৃদ্ধি পাবে এবং সর্বোপরি বিশ্ব জনমত আরো সুদৃঢ় হবে। এছাড়া যুক্তরাজ্যে পালিয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে।
এতে আরো বলা হয়, স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের সহযোগীদের অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সমম্বিত বুদ্ধিবৃত্তিক, আইনগত, ও কূটনীতিক তৎপরতা জোরদার করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও কেবিনেটে বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম মন্ত্রী, এমপি, লর্ড, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, সাংবাদিক বা মিডিয়া ও ব্রিটেনে অধ্যয়নরত তরুণ প্রজšে§র মধ্যে আরো নিবিড় সমঝোতা ও সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। সেখানে সুশৃঙ্খল, পরিকল্পিত ও সুসমম্বিত কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ এবং এর বাস্তবায়ন ও প্রচারণা অতি জরুরি।
এ ক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মধ্যে সমম্বয় জোরদার করার তাগিদ দেয়া হয়। তথ্যসূত্র ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।