আমার এই ব্লগের কোনো লেখা বা লেখার কোনো অংশ আমার লিখিত অনুমতি ছাড়া যে কোনো প্রকার মিডিয়াতেই প্রকাশ করা যাবেনা। যদি তা করা হয়, তাহলে আমি আইনগত এবং অবস্থাভেদে ব্লগের আইন/প্রসিজিওর অনুযায়ী ব্যাবস্থা নিতে বাধ্য হব
পাঠক, আপনারা সকলেই অবগত রয়েছেন যে, বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সংঘটিত বর্বর গণহত্যার সাথে বাংলাদেশের যে সকল দালাল তথা রাজাকার-আলবদর-আলশামস এবং ইন্ডিভিজুয়াল যেসব ব্যাক্তি এই গণহত্যা এবং সেসময়ে এই যুদ্ধকালীন সময়ে বিভিন্ন অপরাধের সাথে যুক্ত ছিলো, তাদের বিচার বাংলাদেশ সরকার একটি নিরপেক্ষ ট্রাইবুনাল এর মাধ্যমে অত্যন্ত সুচারু ও সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রতিপত্তি মুক্ত রেখে শুরু করেছে। ২০১০ সালের ২৫ শে মার্চ একটি গ্যাজেট নোটিফিকেশানের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে ট্রাইবুনাল এবং ২৬ শে জুলাই ২০১০ সালে শুরু ট্রাইবুনালের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। এই ট্রাইবুনাল যেই আইনে পরিচালিত হবে, সেই আইনের নাম হচ্ছে- আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনাল) আইন-১৯৭৩।
বিচারিক বিভাগ
এই ট্রাইবুনালের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন বিচারপতি জনাব নিজামুল হক নাসিম( ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান), বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ জনাব এ কে এম জহির আহমেদ।
তদন্ত বিভাগঃ
ট্রাইবুনালের তদন্ত দলে নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন রয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি আব্দুর রহিম, সাবেক ডি আই জি কুতুবুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর এ এস এম শামসুল আরেফিন, সি আই ডি’র অতিরিক্ত ডি আই জি মীর শহীদুল ইসলাম, সি আই ডি ইন্সপেক্টর নুরুল ইসলাম এবং আব্দুর রাজ্জাক।
ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটরঃ
ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন যথাক্রমে এডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু(প্রধান প্রসিকিউটর), রানা দাশ গুপ্ত, সৈয়দ রেজাউর রহমান, সৈয়দ হায়দার আলী, জেয়াদ আল মালুম, মোহাম্মদ আলী, মুখলেসুর রাহমান বাদল, আবদুর রহমান হাওলাদার, আলতাফ উদ্দিন আহমেদ, এ কে এম সাইফুল ইসলাম, শাহিদুর রহমান, মোহাম্মদ সুলতান আহমেদ, নুরজাহান মুক্তা।
এডমিন বিভাগঃ
ট্রাইবুনালের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিযুক্ত হন জনাব মোঃ শাহীনূর ইসলাম।
উল্লেখ্য যে, ১৯৭৩ সালের আইনটির বিধিমালায় ২০১০ সালের ২৮ শে অক্টোবর প্রথম বারের মত ১৩ টি প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয় এবং ২০১১ সালের ৩ই জুলাই ২য়বারের মত আরো ২৩ টি সংশোধনী আনা হয়েছে উল্লেখ্য আইনটিতে। এ সকল সংশোধনীগুলো সুষ্ঠু বিচার ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো বলে দেশের ও বিদেশের বিশিষ্ট আইনবিদেরা জানান এবং এসব সংশোধনীর ফলে এই বিচার নিয়ে নিন্দুকদের মুখ বন্ধ হবে বলেও সকলে মনে করেন।
সংশোধনীর ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তি শর্তসাপেক্ষে জামিনে মুক্ত হতে পারবেন। চূড়ান্ত রায় দেয়ার আগে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রদত্ত আদেশ ট্রাইবু্নালেই রিভিউ করা যাবে। এছাড়া সাক্ষী ও ভিকটিম সুরক্ষা, তথ্য দলিল উন্মুক্তকরণ, আসামি পক্ষের আইনজীবীদের প্রস্তুতির সময় এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার সম্পর্কে কিছু সংশোধনও সন্নিবেশিত করা হয়েছে। সংশোধনী সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে এখানে দেখুন।
উপরে সূচনা বক্তব্যে আমি চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের মাটিতে শুরু হওয়া ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইবুনালের একটি সংক্ষিপ্ত ধারনা দেবার জন্য।
আসলে এই লেখাটির মূল কারন হচ্ছে বর্তমানে চলা এই ট্রাইবুনালের বিরুদ্ধে চলা কিছু শস্তা ও মিথ্যে প্রোপাগান্ডার যথাযথ যৌক্তিক ও আইনগত উত্তর দেবার প্রয়োজন রয়েছে, এমনটি মনে করার কারনে। এর আগে আমি আমার বিভিন্ন লেখায় এই ট্রাইবুনাল সম্পর্কে বিভিন্ন দেশী,বিদেশী ও নানান জামাতী ছাগুদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি আইনের বিভিন্ন ধারা ও যুক্তি ব্যবহার করে। যার উত্তর এখন পর্যন্ত কোনো জামাতী ছাগু কিংবা বি এন পি’র ছাগুরা দিতে পারেন নি।
এই পর্যন্ত আমি কার কার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিঃ
১) তথাকথিত জামাতী আইনজীবি স্টিভেন কে কিউ সি’র মিথ্যাচারের সকল উত্তর (পর্ব ১ থেকে ৪)
২) জামাতী বিচারপতি আব্দুর রউফ, বি এন পি পন্থী আইঞ্জীবি খন্দকার মাহবুব হোসেনের সকল মিথ্যাচারের জবাব।
(লিঙ্কে গেলে আপনি যেসব প্রোপাগান্ডার উত্তর দেখতে পাবেন, এসব সব উত্তরই মূলত জামাত-বি এন পি’র অন্যসব আইনজীবিদের প্রশ্নকে উত্তর দিতে সক্ষম।
কেননা ওদের প্রশ্ন কিংবা অভিযোগ গুলো মূলত একই রকম। উদাহরন স্বরূপ বলা যেতে পারে বিম্পির আইঞ্জীবি ব্যারিস্টার মোওদুদ, টবি ক্যাডম্যান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, টি এইচ খান, তাজুল ইসলাম সহ সকলের। )
কিন্তু উপরের সেসব প্রশ্নগুলো ছিলো জামাত ও বি এন পি’র আইনজীবিদের কাছ থেকে আসা ট্রাইবুনালের আইন নিয়ে ধারা নির্দিষ্ট করে প্রশ্ন কিংবা আইনী প্রশ্ন। কিন্তু এসবের পরেও কথা থেকে যায়। থেকে যায় প্রশ্ন।
বি এন পি-জামাতের ছাগুদের প্রশ্নের আর প্রোপাগান্ডার কোনো শেষ নেই। এরা ট্রাইবুনালের আইন বিষয়ক প্রশ্ন রেখে রাজনৈতিক কিংবা এই ট্রাইবুনালের বিচারের ১০০ মাইল দূরেও সম্পর্ক নেই এমন সব অদ্ভুত প্রশ্ন করে যাচ্ছে প্রতি নিয়ত।
সেসব প্রশ্ন গুলো কেমন? আসুন একটু দেখে নেই-
১) আওয়ামীলীগের ভেতর যুদ্ধাপরাধী রয়েছে। ( যেমন শেখ সেলিমের বেয়াই নুলা মুসা এবং হাসিনার বেয়াই খন্দকার মোশাররফ) এদের ধরা হয়নি সুতরাং বর্তমানে ধৃত এবং মানবতা বিরোধী কর্মকান্ড, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত নিজামী, সাঈদী, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, সাকা, আব্দুল আলীম প্রমুখেরা যুদ্ধাপরাধী নয় তারা নিষ্পাপ, সেক্ষেত্রে কারোই বিচার করা যাবে না।
২)নিজামী, সাঈদী, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, সাকা, আব্দুল আলীমদের ধরা হয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য।
এটা রাজনৈতিক প্রহসন।
৩) ১৯৯৬ সালে জামাতে ইসলামী আওয়ামীলীগের সাথে তত্ত্বাবাধায়ক সরকারের আন্দোলনে যুগপৎ আন্দোলন করেছিলো। আর এখন তারা হয়েছে যুদ্ধাপরাধী??? এইটা হারাম, এইটা নাউজুবিল্লাহ মিন জালেক, এইটা আস্তাগফিরুল্লাহ টাইপ কাজ হচ্ছে।
৪) ১৯৭৩ সালের আইনে লেখা আছে “আন্তর্জাতিক”। কিন্তু ট্রাইবুনাল কেন বিদেশে হচ্ছে না? কেন আন্তর্জাতিক আইনের মত কিংবা আন্তর্জাতিক আদালতে হচ্ছে না? সর্বপোরি এই আইন আন্তর্জাতিক মানের নয়।
৫) অভিযুক্তদের এডভোকেসি করবার জন্য বিদেশী আইনজীবি এসেছিলো। কিন্তু তাদের দেশে ঢুকতে দেয়া হয় নি। তাদের আইনজীবি হিসেবে সব “উল্টিয়ে ফেলবার” সুযোগ দেয়া হয় নি। এটা অন্যায়। অথচ, শেখ হাসিনার মামলা লড়বার জন্য তত্ত্বাবাধায়ক আমলে ইংল্যান্ডের আইনজীবি ব্যারিস্টার চেরী ব্লেয়ারকে দেশে আসতে দেয়া হয়েছিলো।
কেনু কেনু কেনু ?
৬)
(ক) শেখ মুজিবর রহমান যেহেতু একবার যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করে দিয়েছেম ১৯৭৩ সালের ৩০ শে নভেম্বর, সেহেতু এটা একটা মিমাংশিত বিষয়। এই একই বিচার নিয়ে আর সেক্ষেত্রে বিচার হতেই পারে না।
(খ)১৯৫ জন পাকিস্তানী হানাদার সেনা কর্মকর্তাই ছিলো মূল যুদ্ধাপরাধী। এদের বিচার বাদ দিয়ে দেশীয়দের বিচার করা হলে তা হবে প্রহসন।
(গ) যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবার উদ্যোগ এবং এর অন্তর্নিহিত কারন হচ্ছে ৪০ বছর পর দেশকে বিভক্ত করা
৭) সরকার প্রথমে বলেছে যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে, এখন তারা বলছে যে বিচার হবে মানবতা বিরোধী অপরাধের।
কেনু কেনু কেনু?
৮) ১৯৭৩ সালের আইনে মানবতা বিরোধী অপরাধের সঙ্গা নেই।
৯)চার্জ ছাড়াই ১৯৭১ সালের অপরাধ কর্মকান্ডের দায়ে অভিযুক্তদের কেন গ্রেফতার করা হোলো? এটা সঠিক নয়।
১০) ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান নিজেই একবার আলোচ্য অভিযুক্তদের বিপক্ষে তদন্ত করেছিলেন এবং রিপোর্ট দিয়েছিলেন। তার এই পদে থাকা একটি কন্ট্রাডিকশান এবং অনৈতিক।
১১) দেশে এত সমস্যা।
পানি নাই, বিদ্যুত নাই, ভারতের আগ্রাসন, বাথ্রুমে যাওয়ার টিস্যু নাই, রাস্তা নাই, ছাগুদের কোরবানি দেয়ার একটা চত্ত্বর নাই...ইত্যাদি ইত্যাদি...এত কিছু ফেলে এই মহূর্তে বিচার করাটার দরকার কি?
উপরে উল্লেখ করা সকল ছাগুময় প্রশ্ন ছাড়াও আরো অনেক প্রশ্ন রয়েছে যার মুখোমুখি সব সময়ই ব্লগে, ফেসবুকে ও বিভিন্ন সামাজিক সাইটে সকাল সন্ধ্যাই হতে হয়। এসকল ছাগুময় প্রশ্নের একটা যৌক্তিক ও আইনগত ব্যখ্যা থাকাটা খুব জরুরী বলেই আমি মনে করি। এতে করে ভবিষ্যতে ছাগুরা যখনই এই ধরনের প্রশ্ন করবে তখনই তাদের মুখের উপর উত্তরগুলো ছুঁড়ে দেয়া যাবে এবং ব্লগ, ফেসবুক সহ সকল সামাজিক সাইটগুলোতে ছাগুদের উৎপাত ও প্রোপাগান্ডা বন্ধ হবে বলে আমি মনে করি।
এই পর্বে আমি একটি ধারনা দেবার চেষ্টা করলাম যে কি কি প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেয়া হবে। প্রশ্নগুলোর উত্তর পরবর্তী পর্ব থেকে ধারাবাহিক দেয়ার চেষ্টা করব আমি।
তবে প্রিয় পাঠক, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল নিয়ে যদি এমন কোনো ছাগুময় প্রশ্নের সম্মুখীন আপনারা কখনো হয়ে থাকেন যা উপরের ১১ টি প্রশ্নের মধ্যে নেই, তাহলে দয়া করে আপনারা তা এই পোস্টে শেয়ার করুন। আসুন ছাগুদের প্রোপাগান্ডা রুখে দেই। এদের সামাজিক সকল সাইট থেকে লেখা ও যৌক্তিক উত্তরের মাধ্যমে চিরতরে নির্মুল করি।
চলবে-
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।