এবার হবেই! লোরকের পাশে এবার আপনিও >> ০১৮৩৬৫৫৫৬৪০ "হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি ; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি ; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন। "
-- জীবানানন্দ দাশ
নাটরের নাম আসলেই বনলতা সেন এর কথা চলে আসে। অনেকে নাটোরে আসলে বনলতা সেনকে খুঁজতে চেষ্টা করেন। বনলতা সেনকে খুঁজে না পেলেও একজনকে খুঁজে পাবেন। তিনি হচ্ছে রানী ভবানি।
তার রাজত্বকালে নাটোর জমিদারি অর্ধেক বঙ্গ শাসন করত বলে তাকে বলা হতো অর্ধবঙ্গেশ্বরী। জানা যায়, পলাশী যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য সৈন্যও পাঠিয়েছিল রানী অর্ধবঙ্গেশ্বরী। কিন্তু সৈন্যরা পৌঁছার আগেই সিরাজের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায়। তবে আজ আমাদের আলোচনার বিষয় সিরাজ উদ্দোলা নয়। রানী ভবানী মিষ্টি অনেক পছন্দ করতেন।
তার রাজপ্রাসাদে নিয়মিত মিষ্টি সরবরাহ করতেন লালবাজারের মিষ্টি বিক্রেতা মধুসুধন পাল। একদিন মধুসুদন পালের ২০ জন কর্মচারীর সবাই অসুস্থ হয়ে গেলো। দোকানে ২ মণ ছানা রাখা ছিল। ছানাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে মধুসূদন ছানার উপর চিনির সিরা দিয়ে ভিজিয়ে দেন। এরপর এগুলো চেখে দেখেন এর স্বাদ হয়েছে অপূর্ব।
এদিকে রানী ভবানীর লোকেরা মিষ্টি নিতে আসলে তিনি সিরা দেয়া ছানাগুলো পাঠিয়ে দেন। রানী ভবানী এই মিষ্টি খেয়ে অনেক প্রশংসা করেন এবং এর নাম জানতে চান। মধুসূদন পাল তখন কাঁচা ছানা থেকে তৈরি বলে এর নাম দেন কাঁচা গোল্লা।
এই ছিল কাঁচা গোল্লার ইতিহাস। এই গল্প নাটোরের সবার মুখে মুখে ফিরে।
নাম গোল্লা হলেও এটি দেখতে গোল নয়। ছানা, চিনি ও এলাচ দিয়ে এই গোল্লা তৈরি করা হয়।
রানী ভবানীর শাসন আমলেই কাঁচাগোল্লার সুখ্যাতি দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। আজ থেকে ২৫০ বছর আগে কাঁচা গোল্লা আবিষ্কৃত হয়ে আজো তার সুনাম বজায় রেখেছে। নাটোরের বিয়ে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এই কাঁচা গোল্লা সরবরাহ করা হয়।
রাজা দ্বিজেন্দ্রনাথ রায় বাহাদুর এই কাঁচাগোল্লার প্রচন্ড ভক্ত ছিলেন। ১৮৪০ সালে দিঘাপতিয়ার রাজা প্রসন্ন নাথ রায় বাহাদুর, শ্রীকৃষ্ণের উৎসবে সাধারণ মানুষকে এই মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করতেন বলে জানা যায়। তখন প্রতিসের কাঁচা গোল্লার দাম ছিল তিন আনা, তবে এর দাম বর্তমানে সময় ভেদে২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠানামা করে।
ভেজালের ভীড়ে খাঁটি দুধের ছানায় তৈরী কাঁচাগোল্লা পেতে হলে আপনাকে লালবাজারের মধুসূদন পাল প্রতিষ্ঠিত জয়কালী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার দোকানে যেতে হবে। বাসে যাতায়াতকালীন আপনারা হয়তো অনেকেই দেখেছেন হকাররা গলা ফাটিয়ে কাঁচাগোল্লা বিক্রি করে, এসব কিনেছেন তো ঠকেছেন।
যারা কখনও এর স্বাদ নেননি অথবা দেখেন নি তাদের কাছে ধারণা হবে নেতিবাচক। তাই একটু কষ্ট করে লালবাজার দোকান হতেই কিনে নিন সাধের কাঁচা গোল্লা।
আমাদের ফেইসবুক পেইজে গিয়েও বাঙ্গালীদের রসনাভোজ এর অনেক খাবার সম্পর্কে জানতে পারবেন-
লোকসংস্কৃতি রক্ষা করি (লোরক) সোসাইটি ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।