এ পথ যদি না শেষ হয়,তবে......... আলহামদুলিল্লাহ, সমস্ত প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীনের যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিপালন করছেন। মহান আল্লাহ আমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবণ ব্যবস্থা। পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা মানে কি? আর এই জীবন ব্যবস্থা পরিবর্তন, পরিবর্ধণ পরিমার্জন, সংশোধন, সংযোজন এর দায়ীত্ব কী আল্লাহ পাক কাউকে দিয়েছেন কিনা?
আমরা অনেকেই না বুঝে শুনেই অনেক কিছুতে বিশ্বাস স্থাপন করে নেই যেগুলো আমাদের শিরক পর্যন্ত পৌছে দেয়। অথচ আমরা তা ভালো কিছু ভেবে করেই চলেছি। ভেবে দেখিনা যে আমরা যেটাকে ভালো পন্থা ভাবছি আল্লাহ কি সেটা অনুমোদন করেছেন কিনা !!! আমি আপনি কি আল্লাহর রাসুলুল্লাহ ( সাঃ), সাহাবাগণ, তাবেঈগণ, তাবে তাবেঈগণ থেকে বেশি ঈমানদার? নিশ্চই না।
সাহাবীদের থেকে নিশ্চই আমরা রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) এর অনুসারী বেশি হয়ে যাই নি।
বাস্তবিক জীবনের ছোট্ট একটা উদাহরণ এভাবে দেয়া যেতে পারে, কিছু লোক প্রচুর ঝাল খেয়ে অভ্যস্ত, যখন তাদের কাছে একটি আদর্শ খাবার যেটাতে লবণ, ঝাল সব স্বাভাবিক এবং পরিমান মত দেয়া আছে, পরিবেশন করা হয় তারা তাতে স্বাদ পায় না, তারা বলে যে এতে ঝালের পরিমান কম হয়েছে। পাঠক বুঝতে পারছেন বিষয়টা? অর্থাৎ অতিরিক্ত ইবাদত (বিদাতি ইবাদত) করতে করতে আসল ইবাদত (আল্লাহর নির্ধারিত এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিছছাল্লামের নির্দেশিত) তার কাছে কম মনে হয়।
তাবলীগ কি?
তাবলীগ হচ্ছে দাওয়াত, দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার নাম ই হচ্ছে তাবলীগ। মুসলমান হিসেবে ইসলামের দাওয়াত দেয়া সকলের উপর ফরযে আঈন।
অর্থাৎ আমাদের সকলের দাওয়াত দিতেই হবে। মানে হল ইসলামের প্রচার আমাদের সকলেরই করতেই হবে। না করলে গুনাহ হবে। তো আমাদের এই প্রচারটা কিরূপ হবে? আমাদের যটুকু জ্ঞান আছে ততটুকুই আমরা বলব। আমাদের বাবা মা, ভাই, বোন, বন্ধু প্রতিবেশি এদের কাছে আমাদের জ্ঞান অনুযাই আমরা বলব।
কিন্তু এই জ্ঞান হতে হবে সহিহ জ্ঞান। ভ্রান্ত, আজগুবি গল্প, যেসবের অস্তিত্ব কোরান হাদিস এ নেই ওইসব নয়।
আর মুসলমানদের মধ্য থেকে অবশ্যই এমন একটা দল হতে হবে যারা সব সময়ই দাওয়াতের কাজে নিয়োজিত থাকবেন। তাদের উপর এটা ফরযে ক্বেফায়া। এই দল যদি না থাকে তবে সকলের গুনাহগার হতে হবে।
এখন আসল আলোচনায় আসা যাক। আমরা যে তাবলীগ করব, কেমন তাবলীগ করব? বিদাতী তাবলীগ? ভ্রান্ত তাবলীগ? মানুষকে আসল পথ না দেখিয়ে ভ্রান্ত পথের দিকে নিয়ে যাওয়ার তাবলীগ? স্বপ্ন আর গল্প কাহিনীর তাবলীগ?
নাকি সেই তাবলীগ যা আল্লাহ আমাদের উপর দিয়েছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিছছাল্লামের ত্বরীকা অনুযাই।
বিদাত কি?
বিদআত শব্দের আভিধানিক অর্থ হল: اَلشَّيْءُ الْمُخْتَرَعُ عَلٰى غَيْرِ مِثَالٍ سَابِقٍ অর্থাৎ পূর্ববর্তী কোন নমুনা ছাড়াই নতুন আবিষকৃত বিষয়। [ আন-নিহায়াহ, পৃঃ ৬৯, কাওয়ায়েদ মা’রিফাতিল বিদআ’হ, পৃঃ ১৭] আর শরীয়তের পরিভাষায়- مَا أُحْدِثَ فِى دِيْنِ اللهِ وَلَيْسَ لَهُ أَصْلٌ عَامٌ وَلاَخَاصٌّ يَدُلُّ عَلَيْهِ অর্থাৎ আল্লাহ্র দ্বীনের মধ্যে নতুন করে যার প্রচলন করা হয়েছে এবং এর পক্ষে শরীয়তের কোন ব্যাপক ও সাধারণ কিংবা খাস ও সুনির্দিষ্ট দলীল নেই। [ কাওয়ায়েদ মা’রিফাতিল বিদআ’হ, পৃঃ ২৪]
এ সংজ্ঞাটিতে তিনটি বিষয় লক্ষণীয় :
নতুনভাবে প্রচলন অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম ও সাহাবায়ে কিরামের যুগে এর কোন প্রচলন ছিল না এবং এর কোন নমুনাও ছিল না।
এ নব প্রচলিত বিষয়টিকে দ্বীনের মধ্যে সংযোজন করা এবং ধারণা করা যে, এটি দ্বীনের অংশ।
নব প্রচলিত এ বিষয়টি শরীয়তের কোন ‘আম বা খাস দলীল ছাড়াই চালু ও উদ্ভাবন করা।
সংজ্ঞার এ তিনটি বিষয়ের একত্রিত রূপ হল বিদআত, যা থেকে বিরত থাকার কঠোর নির্দেশ শরীয়তে এসেছে। কঠোর নিষেধাজ্ঞার এ বিষয়টি হাদীসে বারবার উচ্চারিত হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম বলেছেন,
وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ) رواه أبو داود والترمذى وقال حديث حسن صحيح
“তোমরা (দ্বীনের) নব প্রচলিত বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাক।
কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয় বিদআ‘ত এবং প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা”। [সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯৯১ ও সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭৬, তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন। ]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম তাঁর এক খুতবায় বলেছেন:
إِنَّ أَصْدَقَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللهِ وَأَحْسَنَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِي النَّارِ. رواه مسلم والنسائى واللفظ للنسائى
“নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহ্র কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।
সুত্রঃ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩৫ ও সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৬০, হাদীসের শব্দ চয়ন নাসায়ী থেকে।
বিদাত হচ্ছে সেই সব আমল যার অনুমতি আল্লাহ দেননি, রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) করেননি, করতে বলেন নি, সাহাবারা করেন নি করতে বলেন নি, ত্বাবেঈগণ করেন নি করতে বলেন নি। অনেকে বিদাত কে বিদাত মনে করেন না, ভাল কাজ মনে করেন। রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) বলেন, ধর্মের নামে নতুন সকল কিছুই বিদাত। অতএব ইসলামে বিদাতের কোনো প্রকার ভেদ নেই, ভাল বিদাত বা খারাপ বিদাত বলে কিছু নেই।
নতুন সব কিছু যা ধর্মের নামে করা হয় তাই বিদাত।
আল্লাহর রাসুলুল্লাহ ( সাঃ), সাহাবা গণ, তাবেঈগণ, তাবেতাবেঈগণ থেকে বেশি ঈমানদার হয়ে গেছি কি আমরা?
আল্লাহ বলেন,
মানব মধ্যে কতক এমন আছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী, মূলত ওরা বিশ্বাসী নয়। ধোকা দেয় ওরা আল্লাহ ও বিশ্বাসীদের অথচ ওরা স্বীয় আত্নাকেই ধোকা দেয়, ওরা বোঝে না। ওদের অন্তরে রোগ, সুতরাং আল্লাহ ওদের রোগ আরও বৃদ্ধি করে দেন, তাদের জন্য আছে কঠোর শাস্তি, মিথ্যাচারের জন্য। সূরা বাক্বারা ৯-১০.
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- কেয়ামতের দিন আমার সাহাবাদের একটি দল আমার কাছে উপনীত হবে এবং তাদেরকে হাউয থেকে পানি আহরণ করতে বাধা দেয়া হবে।
আমি তখন বলব, “ইয়া রব! তারা আমার সহচরবৃন্দ। ” আল্লাহ্ বলবেন, “নিশ্চয়ই তোমার পর তারা ধর্মের মধ্যে যে নতুন প্রথার প্রবর্তন করেছে, সে বিষয়ে তোমার জানা নেই। তোমার পরে তারা পিছু ফিরে মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল। ”
বুখারী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) বলেছেন- তোমাদের পূর্বেই আমি কাওসার নামক নির্ঝরনির কাছে উপনীত হব।
অবশ্যই আমি একদল লোকের সাথে বিতর্ক করব এবং তাদের উপর বিজয়ী হব। অতঃপর আমি বলব, “হে রব! আমার সহচর, আমার সহচর। ” আমাকে তখন বলা হবে, “আপনি জানেন না আপনার পরে এরা কি সব বিদ’আতী কাজ করছে। ”
মুসনাদে আহমদ, বুখারী ও মুসলিমে হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে ও ইবনে শাইবায় আবূ হুযাইফা (রা) থেকে সংগৃহিত।
আল্লাহ বলেন,
সুপথ প্রকাশিত হবার পর যে রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) এর বিরুদ্ধাচরন করে এবং বিপরীত পথে অনুগামী হয় তবে সে যাতে অভিনিবিষ্ট আমি তাকে তাতেই প্রত্যাবর্তিত করব ও তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব এবং ওটা নিকৃস্টতর প্রত্যাবর্তন স্থল।
সূরা নিসা ১১৫।
চিল্লাঃ
চিল্লা আমাদের দেশের এমন একটি কাজ যা অনেক মানুষ ইবাদতের মাপকাঠি হিসেবে মনে করেন। ভাই আপনি কয় চিল্লা দিছেন? এখনো দেন নাই। দিয়ে দেন দিয়ে দেন। অনেকটা এমন ব্যপার যে ভাই হজ্জ্ব করেন নি এখনো এটাতো ফরয।
চিল্লা কবে ফরয হল ভাই? আপনারা তো চিল্লাকে ফরযের গুরুত্ব দিয়ে ফেলছেন। এত গুরুত্বের দলিল দেখান।
অনেক মানুষ অসুস্থ মা বাবা ভাই বোন স্ত্রী রেখে চিল্লায় যান। চিল্লা করার (৭ দিন , ১০ দিন, ১৫ দিন ৩০ দিন, ৪০ দিন, ৮০ দিন যত দিনই হোক) একটা প্রমান বের করে দেখান কোরআন বা সহিহ হাদিস থেকে। আমরা মেনে নিব।
একমাত্র রমজান মাসের এতেকাফ ছাড়া (১০ দিন) আর কোনো প্রমান বা দলিল নাই। এতেকাফ আর চিল্লা কি এক হল?
চিল্লার লোকেরা বলেন চিল্লায় গেলে কদমে কদমে সওয়াব। পাইলেন কোথায় এটা? ফযরের নামাজে মসজিদে গেলে, জুম্মা বারে জুম্মার নামাজে গেলে ইত্যাদি ক্ষেত্রে কদমে কদমে ক্ষমা ও মর্তবা উঁচু হবার হাদিস রয়েছে। চিল্লার হাদিস দেখান তো ভাই !!! মা বাবার সেবা করা ফরয চিল্লা কি ফরয? আর এই চিল্লা পাইলেন কোথা থেকে? মাত্র ১টা প্রমান দেন রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) বা সাহাবী আজমাঈন, তাবেঈ তাবে তাবেঈন গন বা এমনকি ইমামগন থেকে। মাত্র ১টা প্রমান ৪০ দিনের।
আরো মজার ব্যপার হল চিল্লায় বেশি বেশি পড়ানো হয় ইলিয়াস সাহেবের ফাজায়েলে বই সমুহ। কোথায় কোরআনের সঠিক তাফসীর পড়বে কোরআন জানবে নাআআআআআআ বিদাতেই মজা বেশি!!!
আল্লাহ বলেন,
আর এমন লোকও রয়েছে যে বিনা জ্ঞানে, বিনা দলিলে ও বিনা স্পস্ট কিতাবে আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে। আল্লাহর রাস্তা হতে লোকদের ভ্রষ্ট করার জন্য, তার জন্য দুনিয়াতে আছে লাঞ্ছনা এবং কিয়ামতে আমি তাকে দহন আজাব ভোগ করাব। সূরা আল হাজ্ব ৮।
দেলোয়ার হোসাই সাঈদীর রেকর্ড করা ওয়াজ থেকে আমি নিজ কানে শুনলাম, চীনে যাওয়ার হাদিস, মায়ের মুখ দেখলে কবুল হজ্জ্বের সওয়াব, শহীদের রক্তের চেয়ে কলমের কালির শক্তি বেশি, ফাতেমা (র) কে নিয়ে কবরের ঘোষনা ইত্যাদি জাল, ভুয়া, মিথ্যা হাদিস।
এগুলো কোথায় পেলেন উনি তা কি জানেন? একটা বই আছে জাল হাদিসের উপরে লেখা ঐ বই থেকে পড়ে উনি আমাদের শুনিয়ে দিলেন !! কি আশ্চর্য ওই গুলো জাল এটা মানুষকে না জানিয়ে হাদিস হিসেবে পেশ করে দিলেন উনি? প্রিয় মুসলিম ভাই, আমিও সাঈদি সাহেবের খুব ভক্ত ছিলাম। কিন্তু ঐ ভক্তি রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) থেকে কখনো বেশি ছিল না তাই উনার মিথ্যা বর্ননার প্রতিবাদ করছি।
মাওলানা হাবীবুর রহামন যুক্তিবাদীর ওয়াজ ইন্টারনেটে শুনতে পাবেন, উনি বলছেন এক বুজুর্গ বলেছেন, হযরত ওমর (র) এর নাম বাংলায় বা আরবীতে বুকে লিখে ঘুমালে শয়তান আসবেনা। ইংরেজীতে লিখলে হবে না। সুতরাং সকলে এটা করবেন।
এটা কি শিরক নয়??
মাওলানা তূফাজ্জল হোসাইন বক্তব্যে বলেছেন কবর ঘুরে যাওয়ার কাহিনী, এক আলেমের কথায় আরেক মৃত আলেম কবর থেকে পা বের করে দিয়েছেন এবং ওই পা এখনো বের হয়েইই আছে !!! মাজার জিয়ারতের আহবান করছেন উনি। মাজার তো শিরক। এগুলো কী ইসলামিক ওয়াজ।
আল্লাহ বলেন,
ওদের দেবতারা দ্বীনের এমন বিধান ওদের দিয়েছে আল্লাহ যার অনুমতি দেন নাই, কিয়ামত ঘোষণা না থাকলে ওদের মাঝে বিচার মীমাংসা হয়ে যেত। যারা পাপাচারী তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে।
সূরা শূরা ২১।
তাবলীগী জামাআত ইলীয়াসি জামাত , ফাযায়েলে আমল সু স্পষ্ট বিদাত এবং শিরক দ্বারা পরিপূর্ন ।
জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে উপদেশ, যদি আমরা জ্ঞানী হই। কতটা গাফেল কতটা নির্বুদ্ধিতা আমাদের আছে যে উদ্ভট কিচ্ছা কাহিনী আমরা বিশ্বাস করে নিচ্ছি।
ইসলাম কি কিচ্ছা কাহিনী থেকে এসেছে? ইসলাম কি স্বপ্ন থেকে এসেছে? কোনো কিছু না চিন্তা করেই আমরা অন্ধের মত মেনে নিচ্ছি ফাযায়েলে আমল বইয়ের কিচ্ছা কাহিনী, স্বপ্ন।
ইসলাম অন্ধ বিশ্বাসের নাম নয়।
তাবলীগ জামাআতের বই ফাযায়েলে আমল বইয়ে কোরান হাদিছ এর যেমন আলোচনা রয়েছে তেমনি রয়েছে শিরক বিদাতের আলোচনা। এই ফাযায়েলে আমল হচ্ছে স্বপ্নের ধর্মের কিতাব। এখানে রয়েছে শুধু স্বপ্ন আর স্বপ্ন।
এই কিতাবের বিভিন্ন কিচ্ছায় রয়েছে যে রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) স্বপ্ন যোগে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন এবং ইলীয়াস সাহেব তদানুযাই আমল করেছেন।
এটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে কিভাবে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে উনি রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) কেই দেখেছেন। আর রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) ওই সব উদ্ভট কাজ করতে বলেছেন। যাদের বুঝার সামান্য জ্ঞান রয়েছে তারা সহজেই বুঝতে পারে কত বড় শিরক আর বিদাতি কথা বার্তা ওগুলো।
রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) কে স্বপ্নে দেখার ভুল ব্যখ্যা
রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) এর সাহাবাগণ ছাড়া আর কেউ ১০০ ভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারেন না যে তিনি রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) কে দেখেছেন। কারন সাহাবাগণ রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) সামনা সামনি দেখেছেন, এখন উনারা যদি স্বপ্নে রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) কে দেখেন তবে সত্যই দেখেছেন কেননা শয়তান রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) আকৃতি নিতে পারে না।
ইলীয়াস সাহেব কিভাবে প্রমান করবেন যে তিনি সত্যই রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) কে স্বপ্নে দেখেছেন? উনি ত বাস্তবে রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) কে দেখেন নাই, এখন শয়তান যদি সুন্দর কোনো মানুষের রূপে এসে বলে আমিই রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) তবে কি তা বিশ্বাস করা যাবে? উনি কিভাবে জানলেন স্বপ্নযোগে দেখা ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ ( সাঃ)? কারন রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) সুন্দর ছিলেন কিন্তু কতটুকু তা তো আপনি জানেন না। কতটুকু লম্বা ছিলেন আপনি জানেন না। তো কিভাবে বুঝলেন স্বপ্নে দেখা মানুষটি রাসুলুল্লাহ ( সাঃ)? তবে হতে পারে সত্যই দেখেছেন, কিন্তু নিশ্চই রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) কোনো মানুষকে নতুন ইবাদতের শিক্ষা স্বপ্নের মাধ্যমে দিবেন না। কারন ইসলাম তো পরিপূর্ণ। নতুন করে আসার কিছু নেই।
ইলীয়াস সাহেব তার কিচ্ছা কাহিনীতে যেভাবে বলেছেন যে রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) স্বপ্নে বলেছে এই করতে ওই করতে এটা কি বিশ্বাস যোগ্য নাকি ভ্রান্ত?
এই তাবলীগ জামাত শুরু হয়েছে গত ৪০ কি ৫০ বছর থেকে। তবে আপনি কি মনে করেন এটা নতুন নয়? আল্লাহর রাসুলুল্লাহ ( সাঃ), সাহাবা গণ, তাবেঈগণ, তাবে তাবেঈগণ থেকে এমন কোনো প্রমান আছে যে তাঁরা ৩ দিনের ৭ দিনের ৪০ দিনের চিল্লায় গিয়েছেন? প্রমান কোথায়? এটাকি স্পষ্ট বিদাত নয়? আমল করছেন ভালো মনে করে, আপনার মন দিয়ে কি ইসলাম হবে?
আল্লাহ বলেন,
আর এমন লোকও রয়েছে যে বিনা জ্ঞানে, বিনা দলিলে ও বিনা স্পস্ট কিতাবে আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে। আল্লাহর রাস্তা হতে লোকদের ভ্রষ্ট করার জন্য, তার জন্য দুনিয়াতে আছে লাঞ্ছনা এবং কিয়ামতে আমি তাকে দহন আজাব ভোগ করাব। সূরা আল হাজ্ব ৮।
কোরান কে অস্বীকার করতে চান আপনি? কোথায় প্রমান আছে এই সব আমলের আল্লাহর রাসুলুল্লাহ ( সাঃ), সাহাবা গণ, তাবেঈগণ, তাবে তাবেঈগণ থেকে? যদি না থাকে তবে কি মানা যাবে? আপনিই চিন্তা করুন।
কোরান স্পষ্ট, সহিহ হাদিস স্পষ্ট এবং এগুলোর বাংলা তাফসীর ও তরজমা রয়েছে, দ্বীনের সকল বিষয় স্পষ্ট, এখানে নতুন কোনো কিছুরই প্রবেশের পথ বন্ধ।
আল্লাহ আমাদের জন্য ইসলামকে পরিপূর্ণ করেদিয়েছেন রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) জীবিত থাকতেই। নতুন করে ইলীয়াস সাহেবদের স্বপ্নে পাওয়া আজগুবি কথা ইসলাম নয়।
ইসলাম এসেছে মক্কা মদীনা থেকে। পারস্য কিংবা ভারত পাকিস্তান থেকে নয়।
মক্কা মদীনায় আছে চিল্লা? ফাযায়েলে আমল আর ওই সব কিচ্ছা কাহিনী?
ফাযায়েলে আমল বইয়ের কিচ্ছায় লেখা আছে ইলীয়াস সাহেবের কবিতা শুনে রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) এর হাত মুবারক কবর থেকে বের হয়ে এসেছিল এবং নব্বই হাজার মানুষ তা দেখেছে। কত বড় মিথ্যা কথা হতে পারে এটা !!!! আপনি বিশ্বাস করছেন এটা ??? কোন কিতাবে আছে? ওই নব্বই হাজার মানুষ থেকে আর কেউ কি এই কথা মানুষ কে জানালো না? তাও কবিতা শুনেই রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) এর হাত বেরিয়ে আসে? তাহলে তো কোরান শুনে হাদিস শুনেও রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) হাত বের হওয়া উচিত। কবিতা উত্তম না কোরান হাদিস ?
রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) এর স্ত্রী ছিলেন, কত সাহাবী ছিলেন, হাসান হোসেন ছিলেন তাদের জন্য রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) এর হাত বের হল না আর বের হল কিনা বিদাতি ইলীয়াস সাহেবের কবিতা শুনেই? ইসলামে কি কবিতা আছে নাকি?
ইলীয়াস সাহেবে এই বইয়ে লিখেছেন, হে আল্লাহর নবী আপনি মেহেরবানী পূর্বক একটু দয়া ও রহমের দৃষ্টি নিক্ষেপ করুন।
এটা কি শিরক হল কি হল না? আপনি কার কাছে চাবেন? নবীর কাছে নাকি আল্লাহর কাছে? নবী নিয়ে বাড়াবারি করা হয়েছে ঈসা (আঃ) কে নিয়ে এখন আমাদের মাঝেও তার শুরু করা হয়েছে।
ফাযায়েলে হাজ্জ বইয়ে কিচ্ছা নং ৪ ও ১০ কিচ্ছা এখানে ব্যখ্যা করবনা।
পাঠক গণ পড়লেই বুঝবেন কতবড় অনৈসলামিক কথা ওগূলো। ফাজায়েলে আমল দুরুদ হজ্জ্ব বইয়ে ''ফায়দা' নামে মানুষকে বিভ্রান্ত আর বিদাত কুফরির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।
স্পষ্ট কথা কোরানে, সহিহ হাদিছে যা নেই তা মানা আমার আপনার জন্য জরুরী নয়। আল্লাহ জবাব নেবেন কোরান এবং সহিহ হাদিছ থেকে (দূর্বল, জাল মিথ্যা হাদিছ নয়), বাকি যত বড় আলেমের যত বড় কিতাবই লিখেন না কেন কোরান হাদিছের অনুকূলে না হলে তা বাতিল।
ইলীয়াসী তাবলীগী ভাইয়েরা ফাযায়েলে আমল পড়েন কিন্তু তাদের দেখা যায় না কোরানের তরজমা পড়তে, সহিহ বুখারী সহিহ মুসলিম পড়তে।
আল্লাহ কি ফাযায়েলে আমল নির্ধারণ করেছেন নাকি? সহজ কথা বুঝে আসে না অনেকেরই। ভাই ফাজায়েলে আমল পড়েন কিন্তু শিরকি বিদাতি গুলো বাদ দিয়ে পড়েন।
ভাইয়েরা হক কথা বুঝার তওফিক্ব আল্লাহ আমাদের দেন। আমীন।
সুত্রঃ (All Praise Belongs to Allah সকল প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহ'র ) ফেসবুক গ্রুপ থেকে নেওয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।