আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৌসুমী দেশপ্রেমিকের আবজাবনামা...

আমি একজন ই-পীর আজ রাতে দাওয়াত ছিলো এক মামীর বাপের বাড়ী। উনি ছেলেকে ইংলিশ মিডিয়াম ইসলামিক ক্যাডেট মাদ্রাসায় দেবেন বলে হন্যে হয়ে আছেন কয়েকমাস, তবে মন মতন কিছু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসা খোঁজার কারন, তাতে দ্বীনও হবে আবার দুনিয়াও হবে। গত হপ্তায় উনাকে নেভীর "এংকরেজ" স্কুলের নম্বর দিয়েছিলাম, ওটা ইংলিশ মিডিয়াম বলে জানতাম। আজ সে ব্যাপারে কতদূর কি করলেন জানতে চাইলে যা যা জানলাম তা হলো, ১।

ওটা আসলে বাংলা মিডিয়ামেরই ইংলিশ ভার্শান, এবং ওটা ব্রিটিশ কাউন্সিলের নিয়মের চাইতে আলাদা। ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রচলিত ও-লেভেল এ-লেভেল স্টাইলের পড়া নাকি অনেক সহজ, তার চাইতে এই বোর্ড ভার্শন পড়া অনেক কঠিন। ২। ছেলে স্ট্যান্ডার্ড ফোর এর স্টুডেন্ট (এখন যেখানে আছে)। ইংলিশ মিডিয়াম হলেও বাংলা বই পড়ানো হয় পাঠ্য (সাবজেক্ট) হিসাবে।

সাথে জেনারেল সাইন্স, সোসালজি থেকে হিষ্ট্রি, মায় রিলিজিয়ন পর্যন্ত। তবে বেশীর ভাগ বই ভারতীয়, হিস্ট্রি মানে ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি , সেখানে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। এবারে আমার নিজের কথায় আসি, এই ছেলের ভোর হয় টিচারের আগমনে, তারপর স্কুল, তারপর ঘরে ফিরে ডোরেমন হিন্দি এডিশন, ভারতীয় সিরিয়াল (মা - পোলা দুইজনেই), ভারতীয় সিনেমা, ভারতীয় সিনেমার গান, ক্রিকেট, টিচার, আবার টিচার, ঘুম। একটা বাংলা মিডিয়াম স্টুডেন্টের লাইফও ইদানিং সেইম, তফাৎ শুধু একটাই, সে প্রতি ক্লাসে ১৯৭১ এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বাংলা আর ইতিহাস বইতে দুটো আর্টিকেল পায়, সেখানে কোনো এক হানাদার বাহিনীর সাথে বাংলাদেশের যুদ্ধের কথা আছে, রাজাকার শব্দটা আছে মোটে বার কয়েক, কেন হয়েছিলো এই যুদ্ধ, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কোনো গুরুত্ব নিয়ে কোনো কথা সেভাবে পায় না, পাকি আর্মীকে সহায়তাকারী রাজাকার এবং বাকি আল-বদর, আল-শামশ, শান্তি কমিটির কোনো পরিচয় তুলে ধরা হয় না সেখানে, বুদ্ধিজীবি হত্যা অনুপস্থিত। এই ইতিহাসও আবার বদলায় পাঁচবছর আওয়ামী আর বিএনপি শাসন আমলে, তাদের প্রোপাগন্ডামূলক কাস্টমাইজড ইতিহাস হিসেবে।

মাওলানা ভাসানী আর এম এ জি ওসমানী আড়ালেই রয়ে যান সবসময়। এই ছেলেরা যখন ক্রিকেটে পাকিস্তানের ফ্যান হয়ে বসে, পাকিদের ভাই ডাকে, সে দায় আসলে কার? ওদের? আমার মামাতোভাইটা সাইদী রাজাকারের ছেলে শামীম সাইদীকে খুব পছন্দ করে, দোষটা ওকে দেই কিভাবে যখন আমরাই পুষে রাখি রাজাকারকে খাইয়ে দাইয়ে নিরাপত্তা দিয়ে ধর্মীয় নেতা হিসাবে? ওদের ইতিহাসটা না জানালে ইতিহাস কি ওদের মাথায় উড়ে এসে জুড়ে বসবে পাতিহাস কিংবা বালিহাসের মতন? না, এ দায় আমাদের। আমরা মুজিব চিনি, আমরা জিয়া চিনি, আমরা হিন্দু মুসলমান চিনি, আমরা এসব দলে ভাগ হয়ে লড়তে কোনো দ্বিধাবোধ করি না। আমাদের যত আলসেমী সব জাতীয়তাবোধের বেলায়, নিজের পরিচয়টা খুঁজে বের করার বেলায়। আমরা স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে ন্যায়-নীতিবোধ-মূল্যবোধ-জাতীয়তা নিয়ে জ্ঞানগর্ভ রচনা লিখতে পারি, আবার সমাজে তাকেই কাছে টেনে নেই, তারই বশ্যতা স্বীকার করি যে সফল অবৈধ উপায়ে, কালোটাকায়।

যাক, এসব বাদ দেই এবার, ঠুনকো দেশ প্রেম দেখানো আর কত? আরেকটা ছোটো গল্প দিয়ে শেষ করি। জামাল অল্প বয়সী একটা ছেলে, চায়ের দোকান চালায়। সারদিন কাজ চা-সিগারেট বিক্রী আর মোবাইলে বলিউড ছবির গান দেখা, তাতে গলা মেলানো। বিএনপির রোডমার্চে নিজামীর মুক্তি চেয়ে ফেস্টুন কম ছিলো না, মামুন তার একটা ঝুলিয়ে ছিলো দেওয়ালে। মাথায় টুপি, মুখে দাড়ী, ইসলামী নেতা, আলেম মওলানা।

"রাজাকারের ছবি দেওয়ালে ক্যান জামাল ভাই?" - আমার গলায় অসোন্তোষ গোপন থাকে না। "ঐটা রাজাকার!? লেখা তো মাওলানা!" - সরল জবাব। পাশের এক মাঝবয়সী লোক এবারে শুরু করে, কিভাবে ওরা ঘুমন্ত মানুষ খুন করেছিলো কালোরাতে, কিভাবে বাচ্চাদের পর্যন্ত উপরে ছুঁড়ে দিয়ে বেয়নেটে গাঁথা হয়েছিলো। কার ছিলো সেই পাকি বেজন্মাদের পথ দেখানোর লোক। ধর্মের নামে অধর্ম তারা ধর্ম দিয়ে কিভাবে জায়েজ করতো।

চা শেষ করে আমি উঠে আসি। পরদিন নিজামীর ছবিটা পাইনি ঐ দেওয়ালে। (নিজের সাইট এবং ফেসবুকে পূর্বপ্রকাশিত) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।