আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিজয়ের চল্লিশ বছর...... (পর্ব ১)

...............................................................................................................................................................। আজ থেকে চল্লিশ বছর পূর্বে এক অভূতপূর্ব বিজয় অর্জনের মধ্যে দিয়ে বাঙ্গালীরা বীরের জাতি হিসেবে নিজেদের প্রমান করে দেখিয়েছে। আমরা পেয়েছিলাম লাল সবুজের পতাকা। পেয়েছিলাম এক স্বাধীন ভূখন্ড। আজ সে বিজয়ের চল্লিশ বছর পূর্ন হয়ে একচল্লিশে পা দিল।

যে স্বপ্ন আশা প্রত্যাশা নিয়ে নিয়ে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের এক গৌরবগাথা বিজয়ভোর উপহার দিয়েছেন,সে স্বপ্নের,আশার,প্রত্যাশার প্রতিফলনের কতদুর আমরা এগিয়েছি আমরা??তারা বিজয়ভোর আমাদের উপহার দিয়ে একটি সুন্দর দিনের প্রত্যাশা করেছিলেন আমাদের কাছ থেকে। আমরা যে তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছি এতে কোন সন্দেহ নেই। অথচ আমরা যখন নিজস্ব ভূখন্ডের জন্য,নিজেদের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য মরিয়া ছিলাম,আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম,আমরা বিশ্বাস করেছিলাম আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা তা পারবে এবং পেরেছেনও বটে। তারা স্বাধীন ভূখন্ড উপহার দিয়ে আমাদের স্বপ্ন পুরন করেছেন,কিন্তু তাদের স্বপ্ন আমরা পুরন করতে ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু এ ব্যর্থতার দায়ভার কার?এর জন্য দায়ী কারা???এর উত্তর আমরা কখনো খুজতে যাই না।

কিন্তু আমার প্রায়ই প্রচন্ড রকম ঘৃনা বোধ হয় আমাদের সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সকল শাসকদের প্রতি। তারাই আমাদের সোনার ভূখন্ডটিকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছেন। এখনো মাঝে মাঝে গর্ববোধ হয় যখন মনে পড়ে আমাদের প্রারম্ভিক যাত্রাকালে আমরা একটি শক্তিশালী সংবিধান নিয়ে যাত্রা শুরু করেছি। আমরা ভঙ্গুর দেশ হয়েও একটি মানসমপন্ন সংবিধান নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। সাম্প্রদায়িকতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে সব ধর্মের সবাইকে একইভূত করে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে দেশ গড়ার প্রত্যয়ে হাটা শুরু করেছিলাম।

কিন্তু এর শেষ পরিনতি নিয়ে আর মুখ খুলতে ইচ্ছে করেনা। নিরব মনে শুধু এক গাধা ঘৃনার বোঝা নিক্ষেপ করি সেই সব শাসকদের প্রতি,যারা ক্ষমতা হাতে পেয়ে দেশকে(মুখের ভেতরে মিষ্টি রসগোল্লা ছিবিয়ে খাওয়ার মত করে অনেক আনন্দে,স্বাদে,তৃপ্তি সহকারে) ছিবিয়ে খেয়েছে। আমি প্রায়শই বলি আমার মাঝে মাঝে ঘৃনা জন্মে জীবিত মুক্তিযোদ্ধা এবং আমাদের বুদ্ধিজীবীদের প্রতি। যারা বর্তমানে থাকাকালেও ইতিহাস নিয়ে শাসকেরা ফুটবল খেলেছে এবং খেলে যাচ্ছে। এখন না হয় জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা কম(যদিও অবৈধ মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা ক্রমশই বেড়ে চলেছে)।

কিন্তু সত্তর দশক থেকেই যখন দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলছিল তখন আপনারা কোথায় ছিলেন?তখন কেন স্বাধীনতা যুদ্ধের মত দেশগড়ার জন্য দেশীয় শোষকদের দমনের জন্য তাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামেননি??কেন নিরবে সয়ে গেলেন?আপনারা বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন,স্বাধীন ভূখন্ড উপহার দিয়েছেন,সুতরাং এদেশের উপর আপনাদের অধিকার সবচেয়ে বেশি,আমাদের নয়,শোষকদের নয়,শাসকদের নয়। স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরেও কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কথা বলতে হয়,এতবছর কিভাবে তারা বাংলার মাটিতে স্বাধীন ভাবে বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করেছে?আজ কেন দেশটা বঙ্গোপসাগরে তলিয়ে যাওয়ার পুর্ব মুহুর্তে আমাদের হাহাকার,আর্তনাদ করতে হচ্ছে। নিরাপদে যাওয়ার জন্য,বাচার জন্য প্রতিদিন বাচতে চাই ,বাচতে চাই বলে চিৎকার করতে হচ্ছে। ভয়,সংকার মধ্যে আমাদের থাকতে হচ্ছে। বর্তমান তরুন প্রজন্মের কাছে পুরো দেশটা এখন এক টুকরা কয়লার মত।

দেশ নিয়ে অবিরত স্বপ্ন দেখা স্বত্তেও,নতুন করে দেশ সাজানোর তীব্র ইচ্ছা বুকে থাকা স্বত্তেও হতাশার মাঝে থাকতে হয়। এ কয়লা কে ধুয়ে ময়লা বের করে তার প্রকৃত রুপ কিংবা নতুন সুন্দর রুপ দেয়া যে এখন বড় কষ্ট সাধ্য হয়ে দাড়িয়েছে। প্রতিটি বিজয় দিবসে আমাদের শোষকেরা(শাসকেরা নয়) স্মৃতিসোধে ফুল দিয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানায়। বিজয় মেতে উঠে সবখানে। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে উঠে বেতার টেলিভিশন এবং খবরের কাগজগুলো।

আমরা তরুন প্রজন্ম তাদের বিজয় উল্লাস দেখে না হেসে পারিনা। সবখানে ছরিয়ে ছিটিয়ে উড়তে থাকা জাতীয় পতাকার দিকে যখন দৃষ্টি পড়ে ঠুকরে কেদে উঠে মন। মনে হয় মাঝে লাল সূর্যটা বোধহয় ঠিকমত আলো ছড়াচ্ছেনা না হয় তার চারপাশে ঘিরে সবুজ যেন তার নিজস্বতা হারিয়ে অন্য রঙ্গে পরিনত হচ্ছে। তবুও অসীম আকাশ পানে তাকিয়ে তরুন প্রজন্ম যেন নতুন সূর্যকে ফিরে পাবার অপেক্ষায়। বিজয়ের একচল্লিশ বছরে পদার্পনের আজকের দিনেও তাই অন্য সকল তরুনদের মত আমিও উল্লসিত নই।

আমরা উল্লসিত হব সেদিন যেদিন বাংলার আকাশে আমাদের জাতীয় পতাকাকে উড়তে দেখে চোখ মন সব কিছু একসাথে হেসে উঠবে, নতুন বাংলাদেশের ছোয়া হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.