প্রভাষক ও সমন্বয়ক, আইন বিভগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়; আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট; যুক্তরাজ্যের লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং অধিকার শ্রমিক, আইন ও অধিকার বিষয়ক গবেষক, ব্লগার ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৭ (১) (খ) অনুচ্ছেদের বিধানুযায়ী সংসদের অনুমতি না নিয়ে একাদিক্রমে নব্বই বৈঠক দিবস অনুপস্থিত থাকলে সংসদ সদস্যের পদ (আসন) শূন্য (ঠধপধঃব) হবে। নব্বই বৈঠক দিবস যতই ঘনিয়ে আসছিল বিএনপি আইনসভায় যোগ দিতে ততই মরিয়া হয়ে উঠছিল এবং অবশেষে সংসদে যোগ দিয়েছে। এখন তারা আগের সব দাবি-দাওয়া ভুলতে বসেছে। যেন সরকার তাদের সব দাবি মেনে নিয়েছে নতুবা গোবেচারা জনগণের জন্য তাদের দরদ উথলে পড়ছে।
তাই তারা গড়িমসি করে সংসদের পানে ছুটছে।
অথচ প্রথমদিকে বিএনপির দাবি ছিল সংসদের প্রথম সারিতে তাদের জন্য আসন সংখ্যা বাড়ানো। কত নগণ্য কারণে সংসদ বর্জন করা যেতে পারে জাতীয়তাবাদী দলটি এ কাজের মাধ্যমে তার নজির স্থাপন করেছিল। পরবর্তীতে যোগ হলো তারেক-কোকোর মামলা প্রত্যাহার, বাড়ি ইস্যু এবং সর্বোপরি সংসদে কথা না বলতে দেয়ার অজুহাত। কী অদ্ভুত! কত ঠুনকো কারণে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো সংসদকে অবজ্ঞা করতে পারে।
জনগণকে এখন তারা না হয় বুঝাবেন যে, যাদের ভোটে তারা নির্বাচিত, তাদের অধিকার রৰায় সরকারের বাধা (যেনতেন নয়, হিমালয় সমান) সত্ত্বেও তারা গণতন্ত্র চর্চার পথ সুগম করতে সংসদের পথে ধাবিত হচ্ছেন। কিন্তু যে সাংসদের কাছ থেকে তারা পদত্যাগপত্র আদায় করেছিলেন, তাদের কী বলে প্রবোধ মানাবেন? তারা তো আমজনতার ন্যায় গ-মূর্খ নন, যে তাদের যেভাবেই সান্তনা দেয়া হবে তাতেই তারা প্রীত হবেন। আমাদের রাজনীতিবিদরা ভোটারদের চৰু, বর্ণ, মসত্মিষ্কহীন মনে করেন। না হলে হরতাল শেষ হবার পর একদল বলত না জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছে এবং অন্যদল গাইত না জনগণ হরতাল উদ্যাপনের মাধ্যমে সরকারের প্রতি ঘৃণা জানিয়েছে। আসলে কী হয়েছে প্রযুক্তির কল্যাণে দেশের আনাচে-কানাচে প্রতিঘণ্টায়ই সে খবর পেঁৗছে গিয়েছে এবং জনগণও সে বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিফহাল হয়েছে।
গত ১ ডিসেম্বর যেখানে বিরোধীদলীয় নেত্রী দলের স্থায়ী কমিটির সভায় সংসদে না যাবার ব্যাপারে অনড় ছিলেন। এখন সেখানে তার কণ্ঠে জনগণের কাছে কথা বলার নিমিত্তে মিঠেসুর ধ্বনিত হচ্ছে। আর দলগুলোও ব্যক্তিপ্রধান হবার কারণে এবং সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ ঘাড়ের ওপর খড়গ হয়ে ঝোলার কারণে ইচ্ছা থাকলেও সাংসদরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংসদে যোগ দিতে কিংবা ভোট দিতে পারেন না।
অবশ্য এ ক্ষেত্রে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী উজ্জ্বল (!) ব্যতিক্রম। দলীয় সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করেই সংসদের চলতি অধিবেশনে যোগ দিতে তিনি আগ্রহী ছিলেন।
সাকা চৌধুরী তার আশা পূরণার্থে স্পীকারের নিকট তার আরজি পেশ করেছেন এবং দলের চীফ হুইপ সে বার্তা পেঁৗছেও দিয়েছেন। তবে জনাব চৌধুরী পূর্ববতর্ী অধিবেশনগুলোতে তার এই প্রবল উৎসাহ কেন দমিয়ে রেখেছিলেন তা বোধগম্য নয়। তিনি এখন এতটাই আগ্রহী যে, সরকার যেন তাকে অনত্মত প্যারোলে মুক্তি দিয়ে হলেও সংসদে যোগদানের সুযোগ করে দেয়। তার এই শুভবুদ্ধি কিছুকাল আগে উদয় হলে এবং তিনি তা তার নেত্রীকে বুঝাতে পারলে দেশের গণতন্ত্র উপকৃত হতো। যুদ্ধাপরাধের বা মানবতার বিরম্নদ্ধে অপরাধের বিচারের হাত থেকে বাঁচতে সংসদকে আশ্রয় করতে মরিয়া তিনি ও তাঁর দল।
যে আইনসভার প্রস্তুতকৃত আইনের আওতায় তিনি এখন বিচারাধীন সেই আইনসভার তিনিও যে একজন গর্বিত সদস্য। তাই আইনের ফাঁক গলতে, নতুন আইনের সহায়তা পেতে তিনি হয়ত আজ আইনসভার দ্বারস্থ হতে চাইছেন।
সংবিধান অবশ্য জনাব সাকার ৰেত্রে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নীরব রয়েছে। কারণ বিধানানুযায়ী দুই বছর বা তার অধিক দ-প্রাপ্ত হলে সংসদের আসন শূন্য হবে (দেখুন : অনুচ্ছেদ ৬৭ (১) (ঘ) এবং এইচ এম এরশাদ বনাম আবদুল মুক্তাদির চৌধুরী, ৫৩ ডিএলআর ৫৬৯)। কিন্তু, কোন অভিযোগে আটক থাকাকালীন অবস্থায় যদি সংসদে অনুপস্থিতির মেয়াদ ৯০ কার্যদিবস অতিক্রম করে যায়, সে ৰেত্রে।
কি হবে সে বিষয়ে কিছু বলা নেই।
সমস্যা হলো যেহেতু তার বিরম্নদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বা সাজার প্রশ্ন এখনও আসেনি তাই উপযুক্ত বিধান অকার্যকর; আবার আটক থাকার দরম্নণ ৯০ দিনের সীমাবদ্ধতাও অতিক্রানত্ম হচ্ছে, তাই সংসদকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধানত্ম নিতে হবে। সরকার পরিস্থিতি সামলাতে কী ধরনের পদৰেপ নেয় তাও দেখার বিষয়।
আমাদের দেশে এমনিতেই সাংসদরা সংসদের অধিবেশনে বিশেষ পরিস্থিতি ব্যতীত যোগদানে অনীহা দেখান। এমনকি অনেক ৰেত্রেই প্রধানমন্ত্রী বা দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের উপস্থিতির হারও আশাব্যঞ্জক নয়।
সেখানে দলীয় মদদে সাংসদদের অনুপস্থিত থাকতে উৎসাহিত করা হলে গণতন্ত্র চর্চা বাধাগ্রসত্ম হতে বাধ্য। আবার কেবল সদস্যপদ, রৰার্থে নামকাওয়াসত্মে সংসদে যোগদানও কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, আমাদের সাংসদরা সংসদে না গেলেও সংসদ থেকে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিতে দ্বিধাবোধ করেন না।
উভয় দলই নির্বাচনের পূর্বে হেরে গেলেও কার্যকর সংসদ গঠনের বুলি আওড়ায়। কিন্তু নির্বাচনের পর যা হবার তাই হয়।
এখনকার ৰমতাসীন দল বিরোধী দলে থাকাকালীন বা ৰমতা হারালে একই নাটকের পুনর্স্থাপন ঘটাবে, একথা নির্দ্ধিধায় বলে দেয়া যায়। কিন্তু এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না।
বিএনপি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সংসদে অনুপস্থিতির মেয়াদ নব্বই দিন থেকে ত্রিশ দিনে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিল। কিন্তু কই? তারা তো সংসদে এ ব্যাপারে টুঁ শব্দটিও উচ্চারণ করল না। সরকারী দলে তো সংসদে এ ব্যাপারে কোন কথা বলল না, বললো না কারণ অনুপস্থিতির পরিসংখ্যান উপস্থাপন করলে (বিরোধী দলে থাকাকালীন) প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তারাও কম যাবে না।
আইনসভাকে বলা হয়, গণতন্ত্র চর্চার সূতিকাগার, আর আমাদের দেশের আইনসভা বছরের পর বছর বিরোধী দলবিহীন সরকারের স্তুুতিকাগার হয়ে পড়ে থাকে। কেবল আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে নয়, মানসিকতার বদলের মাধ্যমে আসল রৰার্থে সংসদে হাজিরা দেবার সংস্কৃতি পরিহার করা দরকার। না হলে জনগণ ঠিকই তার মুক্তির পথ খুঁজে নেবে। কারণ অপসংস্কৃতি মুক্তির আলো রোধ কের বেশিৰণ টিকতে পারে না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।