তোমাকে ভাবাবোই
সংসদের সার্বভৌমত্ব এবং সংসদের কাছে বিচারকদের জবাবদিহিতা নিয়ে প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেছেন, বিচারকরা বিচার বিভাগের ওপর 'অন্য কাউকে' শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করতে দেবেন না। এবং কারো বলা উচিত নয় যে তারা শ্রেষ্ঠ এবং তাদের কাছে আমরা জবাবদিহি করতে বাধ্য। বিচার বিভাগ কারো ওপর তার শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করছে না। তাই আমরাও অন্য কাউকে বিচার বিভাগের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করতে দেব না। প্রধান বিচারপতি বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ- আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ একে অপরের পরিপূরক।
কেউ কারো ওপরে নয়। শনিবার সকালে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
এ বিষয়ে উপমা দিতে প্রধান বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতা পাঠ করেন, রথযাত্রা লোকারণ্য মহা ধুমধাম, ভক্তরা লুটায় পথে করিতে প্রণাম, পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি, মূর্তি ভাবে আমি দেব, হাসেন অন্তর্যামী। তাই কেউ কারো ওপরে নয়। শ্রেষ্ঠত্ব বা সার্বভৌমত্বের মালিক বাংলাদেশের জনগণ, উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা বাংলাদেশের জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য।
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের মতো আমাদের সংবিধানও 'আমরা, বাংলাদেশের জনগণ' শব্দগুলো দিয়ে শুরু হয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কীভাবে এসেছে, এর পাঁচশ বছরের ইতিহাস রয়েছে।
তিনি আরেকটি একটি উপমা দিয়ে বলেন, স্মরণ রাখতে হবে, আমাদের কারোই স্বাধীন ক্ষমতা নেই। যেমন চাঁদের নিজের কোনো আলো নেই। এটি সূর্যের আলোয় আলোকিত।
তেমনি আমাদের নিজেদের কোনো ক্ষমতা নেই। যদি সংবিধান অন্য কোনো কিছু ক্ষমতা না দেয়। সংবিধান জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন। আমাদের ক্ষমতা জনগণ থেকে পাওয়া। তাদের ক্ষমতাই প্রকৃত ক্ষমতা।
অন্য কোনো ক্ষমতা আমাদের নেই।
সংসদের ক্ষমতা জনগণের ক্ষমতা থেকে উতসারিত। নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা জনগণের ক্ষমতা থেকে পাওয়া। তেমনি চাঁদ যেমন সূর্যের আলোয় আলোকিত তেমনি বিচার বিভাগের ক্ষমতা জনগণ থেকে উতসারিত। আমাদের অন্য কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের জনগণের ক্ষমতা থেকে আমাদের ক্ষমতা পাওয়া। তিনি বলেন বলেন, কারো বলা উচিত নয় আমরা শ্রেষ্ঠ এবং তাদের কাছে আমরা জবাবদিহি করতে বাধ্য। আমরা সবাই জগণের কাছে জবাবদিতি করতে বাধ্য। বিচার বিভাগের তাদের নিজেদের মতো জবাবদিহিতা রয়েছে। বিচার বিভাগের জবাবদিহিতা অন্যদের জবাবদিহিতার মতো নয়।
বিচার বিভাগের জবাবদিহিতা নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহিতার মতো নয়। আমরা জনগণের কাছে অবশ্যই জবাবদিহি করতে বাধ্য। তবে ভিন্নভাবে। প্রধান বিচারপতি জানান, জবাবদিহিতা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে আলাদা হয়। কবির জবাবদিহিতা তার পাঠকের কাছে।
বিচারকদের জবাবদিহিতা রায়ের যুক্তির মধ্যে।
আমরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বর ও জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। আমরা অবশ্যই জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। তবে ভিন্নভাবে।
'বিচার বিভাগের দুর্নীতি' নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সা¤প্রতিক জরিপ ও তা পর্যালোচনায় সুপ্রিম কোর্টের কমিটি প্রসঙ্গেও কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।
তিনি বলেন, "স¤প্রতি টিআইবি বিচার বিভাগের প্রতি কলঙ্কের আঘাত করেছে। এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের সনাক্ত করা। এ বিষয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাই না।
গত ২০ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সাংবাদিকদের জানান, সংসদীয় কমিটি চাইলে যে কোনো সরকারি চাকরিজীবীকে (বিচারকদের ইংগীত করে) সংসদীয় কমিটির সামনে হাজির হতে হবে- এমন একটি আইনের খসড়া তৈরি করেছে আইন মন্ত্রণালয়।
এর পরদিন (২১ ডিসেম্বর) কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচার বিভাগ কার কাছে জবাবদিহি করবে সে বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও বিচার বিভাগের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
এর পর গত ৩ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভায় হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা তাদের মত প্রকাশ করেন। সভায় বলা হয়, বাংলাদেশের সংসদ সার্বভৌম নয়। তাই সংসদীয় কমিটির কাছে জবাবদিহি করতে সুপ্রিম কোর্ট বাধ্য নয়।
এর পরদিন (৪ জানুয়ারি) আইন মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, বাংলাদেশের সংসদ সার্বভৌম এবং সংসদের কাছে জবাবদিহি করতে সবাই বাধ্য।
বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ বলেছিলেন, `৭২ সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করে সংসদকে বিচারকদের ইমপিচ করার ক্ষমতা দিলেই বিচারকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যাবে।
ঢাকা, জানুয়ারি ১৫ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।