আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি।
কিস্তি ৬৩::
ট্যুরিস্ট সোসাইটির সদস্য মানে ট্যুর। এ জন্যই আমাদের এখানে আসা। ডাটস থেকে আমাদের প্রথম ট্যুর ছিল শেরপুরের গজনীতে।
আমি ও বাবু এই ট্যুরে এটেন্ড করলাম। আগের দিন রাতে আমরা শেরপুর স্টেডিয়ামে ছিলাম। সন্ধ্যার দিকে পৌছানোর পরে সবাই কয়েকটি কক্ষে গণহারে অবস্থান নেবার পর, খোলা মাঠে বেরিয়ে আসলাম । একটু শীত শীতে আবহাওয়া ছিল। মাঠেল বিভিন্ন প্রান্তে আমাদের অগ্রজরা আড্ডা জমালেন।
আমরা নতুন, কিন্তু এখানে এসে তেমনটা মনে হলোনা। শারমীন আপার সাথে আমার অল্প দিনে খাতির জমে উঠেছিল। শাহানা আপার সাথেও। তানু আপার কথা আগেই বলেছিলাম। সবাই সঙ্গ দিয়েছেন।
আমরা আনন্দ করেছি।
গজনী যাবার পথটা অসাধারণ। দুপাথে সবুজ ঘাস- আমাদের মত গ্রামের পুলাপাইনকে আকৃষ্ট করে না, কিন্তু দুপাশে গাছের সারি অসাধারণ। গজনী যাবার পথে কয়েক কিলোমিটার এলাকজুড়ে বন। সবুজ-শ্যামল ঘন বনায়ন পেরিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম গজনী।
সে সময় সেখানে কৃত্রিম ছোঁয়া লাগেনি। টানেলের মুখে বাঘের মুখটা বানানো হয়েছে আরো পরে।
আমরা সারা দিন ঘুরে বেড়ালাম, সীমান্তে যাওয়ারও চেষ্টা করলাম। পুরো গ্রাম ঘুরে এলাম। দুপুরের খাবারের পর সেখানে একটা ছোট্ট ঝরণা আছে, সেখানে ভিজলাম।
ওয়াচ টাওয়ারে চড়লাম। সবাইকে নিয়ে অনেক মজা ও আনন্দ শেষে আমরা ফিরে এলাম শহরে।
শহীদ ভাইয়ের আমলের ট্যুরগুলোতে আমি খুবই মজা করেছি। শহীদ ভাই আমাকে স্নেহ করতেন। ভালো মানুষ বলতে যা বোঝায় তিনি তেমন একজন মানুষ।
বরিশাল বাড়ি হলেও সেখানকার নেতিবাচক চরিত্রের সাথে কোনোভাবেই তাকে মেলানো সম্ভব হবে না।
ট্যুরে আমাদের সাথে সবচেয়ে বেশি মিশেছেন তানিম ভাই। আমাদের ডিপার্টমেন্ট, পল সায়েন্সের বড় ভাই তিনি। কিন্তু কোনোভাবেই বড় ভাই সুলভ আচরণ তার ছিল না। বন্ধুর মত সহযোগি ছিলেন।
আমার আর বাবুর সিট পড়েছিল তানিম ভাইয়ের দুই সিট পেছনে ।
গজনী থেকে ফেরার পথে আমাদের হাতে যথেষ্ট সময়। কী করা যায়? জানতে চাইলেন সবাই। অনেকে অনেক রকম প্রস্তাব করলেন। আমি বললাম সিনেমা দেখা যায়।
বাংলা সিনেমা। সবাই তাতেই রাজি । শহরের একটি বিপনি বিতানের পাশে আমরা একটি সিনেমা হলের দোতলায় উঠে এলাম। ড্রেস সার্কেল বা ডিসি বলা সেটাকে। সে সময় অশ্লীল সিনেমার জোয়ার চলছে।
ওই হলে চলছিল মুনমুনের একটি সিনেমা। নাম মনে নেই। তবে সিনেমায় নায়িকা পলাশপুর নামের এক জায়গায় যান। সেখানে নানা অপকর্ম ঘটে। সে সব নিয়ে সেই রকম সিনেমা।
আমরা ছেলে-মেয়ে মিলে জনা পঞ্চাশেক একসাথে সিনেমা দেখছি। কিন্তু এখানে এত অশ্লীলতা থাকবে সেটি কারো জানা ছিল না। তাই অনেকে একটু বিব্রত। তবে ঢুকে যেহেতু পড়েছি, বের কেউ-ই হলেন না। সিনেমা দেখা শেষে আমরা বের হলাম।
পুরো রাস্তাজুড়ে আমাদের স্লোগান ছিল-‘ নেক্সট ট্যুর পলাশপুর। ’ সম্ভবত স্লোগানটা শুরু করেছিলেন তানিম ভাই। আমরা এটাকে টেনে ঢাকা পর্যন্ত নিয়ে এসেছিলাম। অনেক মজার এ ট্যুরটি ছিল ২০০০ সালের দিকের ঘটনা।
সিনেমা দেখা শেষে আমরা ঢাকা ফিরছিলাম।
হঠাৎ করে আমার চোখে পড়লো একটা সাইন বোর্ড। । চোখ ছানা পড়া। ডাক্তারের নাম যিয়ূস হাগিদগ। সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম সাইন বোর্ডের দিকে।
। হেসেই খুন আমরা। সেই ট্যুর থেকে আমরা এ দুটো জিনিস নিয়ে ফিরলাম। সেই সাথে প্রথম গ্রুপ ট্যুরের অভিজ্ঞতা। এত বড় গ্রুপ নিয়ে আমি এর আগে কখনো ট্যুরে যাইনি।
এর বড় কারণ আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা গ্রামে। সেখানে আমরা বন্ধুরা মিলে বিভিন্ন স্থানে ট্যুরে গেলেও এতবড় গ্রুপে ট্যুরে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। ডাটসের সুবাধে আমার সেই সুযোগি হয়েছিল। গজনী দিয়ে শুরু হওয়া ডাটসের প্রায় সব ট্যুরেই আমি অংশ নিয়েছিলাম। এ দেশের বন, প্রকৃতি, নদী হাওর, বিল, নদী, সাগর ও পাহাড় আমাকে প্রচণ্ড রকমের টানে।
এখনো টানে। সমান রকমেই টানে। আমি ছুটি, তাই অবিরত। ।
সামনের পর্বে সীতাকুণ্ড ট্যুরের গল্প শোনাবো।
পাঠক এখানে অনেকের নাম বার বার আসছে বলে অনেকে বিরক্ত হবেন। কিন্তু আমার জীবনের সাথে যে সব নাম জড়িয়ে গেছে সে সব ত্যাগ করাটা আমার পক্ষে অসম্ভব। তাই আপনারা এ বিরক্তিটুকু আশা করি মেনে নিবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।