#################
যেকোনো তন্ত্রের নীতিতে শেষকথা ব’লে কিছু আছে
===============================
রাজনৈতিক বক্তব্যের ওপর কোনো মন্তব্য চলে না। রাজতন্ত্রে, রাজ্যের সর্ব্বোচ্চ আসনটি রাজার। সব ভুল প্রজাদের। রাজার কোনো ভুল হতে পারে না। রাজার ভুল ধরতে চাওয়াটা রাজনীতিতে রাজদ্রোহিতা হিসেবে গণ্য।
কোনো প্রজা আত্মঘাতী হওয়ার মধ্যে বীরত্ব প্রদর্শনের গৌরব অনুভব করলে, তার জন্যে রাজদ্রোহী হওয়াটা অশোভনীয় নয়। রাজার রাজনৈতিক বক্তব্যকে শ্রদ্ধাভরে মেনে না-চলার দুঃসাহস, এমনকী রাজপরিবারেরও কেউ দেখাতে পারে না। রাজনীতিতে রাজদ্রোহিতা সর্ব্বোচ্চ শস্তিযোগ্য আপরাধ। কেবল রাজ্যের রাজাই পারে স্বেচ্ছায় অথবা রাজার বিশ্বস্তজনদের সুপারিশে যেকোনো অপরাধীকে ক্ষমা করে দিতে। রাজতন্ত্রে রাজাই এককভাবে রাজ্যের সকল ক্ষমতার মালিক এবং অভিভাবক।
সর্বাধিকারী হিসেবে ক্ষমা করার ক্ষমতা আছে রাজার, রাজা ক্ষমা না-করলে অন্য কেউ কোনো অপরাধীকে ক্ষমা করতে পারে না।
গণতন্ত্রে কোনো রাজনীতি নেই, আছে রাষ্ট্রনীতি। গণতন্ত্রে রাজদ্রোহী নেই, আছে রাষ্ট্রদ্রোহী। গণতন্ত্রে কোনো রাষ্ট্রদ্রোহীকে কোনো ব্যক্তি বা দল কারো একক ক্ষমতাবলে ক্ষমা করে ছেড়ে দিতে পারে না।
গণতন্ত্রে, কোনো রাজা বা প্রজা নেই।
যেখানে রাজা নেই, রাজত্ব নেই, রাজনীতি নেই, সেখানে কোনো বক্তব্যকেই রাজনৈতিক বক্তব্যের সম্মান দেওয়া যায় না। গণতন্ত্রের রাষ্ট্রনীতিতে কোনো ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারী বক্তব্যকে গণনৈতিক বা রাষ্ট্রনৈতিক বক্তব্য হিসেবেও গণ্য করা হয় না।
রাজতন্ত্রে, নীতিহীন কোনো রাজার রাজত্ব টেকসই হয় না। রাজ্যের নীতি বা নিয়ম বিষয়ক চূড়ান্ত কথা বা শেষ কথাটি রাজার কথা। রাজ্যনীতি বা রাজনীতিতে রাজার কথার নড়াচড়ায় রাজাগিরির ভিত নড়বড়ে হয়।
রাজাতন্ত্রের সফল রাজত্বে, চূড়ান্ত বা শেষকথাটি, একজন সফল রাজার রাজনীতি বিষয়ক কথা। পুরোনো রাজার কালশেষে নতুন রাজা আসন পেলে, মালিকানাসূত্রে নতুন রাজার কথাই সেখানে শেষ কথা।
‘রাজনীতিতে শেষকথা বলে কিছু নেই,’ এ ধরণের কোনো উদ্ভট বাক্য রাজার রাজত্বে কোনো সুস্থ প্রজার মুখে শোভনীয় নয়। মৃত রাজতন্ত্রে কিম্বা রাজার রাজত্বের বাইরে যে-কেউ বলতে চাইলে নিজেকে নিজে বলতে পারে- ‘রাজনীতিতে শেষকথা বলে কিছু নেই। ’
যেখানে জনসাধারণ সমন্বিতভাবে রাষ্ট্রের মালিক এবং অভিভাবক, সেখানে কোনো উন্মাদ বক্তা যদি রাজা সেজে নিজের বক্তব্যকে রাজনৈতিক বক্তব্য বলতে চায়, তা’ সে বলতেই পারে গণতন্ত্রে তার ব্যক্তিক বাক-স্বাধীনতার অধিকারে, কিম্বা আহাম্মক শ্রোতারা নিজেদেরকে প্রজা ভেবে নিয়ে ঐ বক্তার সেই বক্তব্য শুনতে চাইলে, তা’ তারা শুনতেই পারে তাদের শ্রবণ-স্বাধীনতার আধিকারে, -তাতে গণতন্ত্রের বিশালত্বে কোনো আঁচড় পড়ে না।
গণতন্ত্রে গণমালিকের চাওয়াটাই চূড়ান্ত চাওয়া, জনসাধারণ যখন যেভাবে চায়, রাষ্ট্রের সকল নিয়ম-নীতি সেভাবেই চলতে বাধ্য। অমান্যকারী বা রাষ্ট্রদ্রোহীদের জন্য ক্ষমা পাওয়া রাজতন্ত্রের মতো সহজ নয়। বেশিরভাগ গণমালিক গণভোটের মাধ্যমে তাকে ক্ষমা না-করলে, গণতন্ত্রে, রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে প্রমাণিত কোনো ব্যক্তি কোনো একজন বা কিছুসংখ্যক জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ক্ষমা পেতে পারে না। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কারো মাধ্যমে কেউ পুরস্কার পেতে পারে, কিন্তু কখনোই কেউ কোনো মাধ্যমের মাধ্যমে ক্ষমা পেতে পারে না।
রাষ্ট্রদ্রোহিতার শাস্তি থেকে গণতন্ত্রে ক্ষমা পাওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ নয় জন্যে চরম কোনো শাস্তির বিধানও রাখা হয় না রাষ্ট্রদ্রোহীদের বরাদ্দে, বরং, রাষ্ট্রের অধিবাসী যেকোনো ব্যক্তি, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও তার ব্যক্তিক অধিকার নিয়ে অভিযোগকারী হতে পারে, প্রত্যেকেই বিচার চাইতে পারে সম-অধিকারে।
গণতন্ত্রে, গণমালিক জনসাধারণ তাদের রাষ্ট্রের বিচার বিভাগটিকে সর্ব্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে, যাদের মাধ্যমে নিয়ম নীতি বিধান রচনা করিয়ে নেয়, সেই রচনাকারীরাও রাষ্ট্রীয় আদালত বা বিচার বিভাগের ওপর কোনো ধরণের ব্যক্তিক বা দলীয় প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা পায় না বৈধভাবে। রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা রাষ্ট্রের সর্ব-সমকালীন সমন্বিত জনসাধারণের, রাষ্ট্রের জনগণের।
জনগণের মালিকানার অধীনস্থ রাষ্ট্রের বিচার বিভাগটি, সমকালীন জনসাধারণের চাওয়ার প্রতিফলনে চলতে এবং জনগণের কাছে জবাবদিহিতায় আবদ্ধ থাকতে বাধ্য।
রাজার অধীনস্থ রাজ্যের বিচার বিভাগটি, রাজার স্বেচ্ছাচারে চলতে এবং রাজার করুণার ছায়ায় বন্দি থাকতে বাধ্য।
গণতন্ত্রের রাষ্ট্রনীতিতে, সমকালীন সমন্বিত জনসাধারণের কথাই যেমন শেষকথা, তেমনিভাবে রাজতন্ত্রের রাজনীতিতেও, সর্বাধিকারী রাজাটির কথাই শেষকথা।
গণকরণিক : আখতার২৩৯ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।