কেট মিডলটন ১৯৮২ সালের ৯ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের বার্কশায়ারে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১১ সালের ২৯ এপ্রিল তিনি ব্রিটিশ রাজপুত্র প্রিন্স উইলিয়ামকে বিয়ে করেন। কেট ২০০৫ সালে স্কটল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রুস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘হিস্ট্রি অব আর্ট’ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল ম্যানচেস্টারে অ্যাকশন অন অ্যাডিকশনের এক অনুষ্ঠানে এই বক্তব্য দেন।
সবাইকে ধন্যবাদ।
এমন একটি অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা। আমাদের জীবনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ দেখা দেয়। কখনো কখনো সেই দুর্যোগ আমরা নিজেরা সৃষ্টি করি। আমাদের সৃষ্ট সেই দুর্যোগে আমাদের পরিবার, সমাজ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মাদকাসক্তি মানুষের জীবনে এমনই একটি দুর্যোগের নাম।
এই জটিল ও ভয়ানক সমস্যা শুধু একজন মানুষের জীবনকেই নষ্ট করে না, সঙ্গে তার পরিবার, বন্ধুদেরও বিপর্যস্ত করে তোলে। মাদকাসক্তি থেকে সহজেই পরিত্রাণ করা সম্ভব নয়। তার পরও পরিশ্রম, ধৈর্য ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই খারাপ অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা যায়। আমি আমার আশপাশে এমনই বেশ কজন মানুষকে চিনি, যাঁরা এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। তাঁরা মাদকাসক্তি থেকে ফিরে এসেছেন স্বাভাবিক জীবনে।
জয় করেছেন নতুন জীবনকে। আমি সত্যিই তাঁদের দেখে নিজেকে বেশ ভাগ্যবান বলে মনে করি। তাঁরা আমাকে বেশ উৎসাহ দেন। তাঁদের দেখে মনে হয়, যেকোনো বাধা জয় করা সম্ভব। মাদকাসক্তিকে পরাস্ত করা সম্ভব।
যাঁরা নেশার জগতে জড়িয়ে পড়েন, তাঁরা শুধু একা নিজের ক্ষতি করেন না। তাঁদের সন্তান, তাঁদের পরিবারও নেশার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নেশার কবলে ধ্বংস হয়ে যায় সেই পরিবার। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় সেই পরিবারের অবুঝ শিশুরা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, যাঁরা মাদকে আসক্ত, তাঁদের চেয়েও তাঁদের পরিবারের সন্তানেরা সাত গুণ বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
নেশার প্রভাবে তাদেরও মানসিক সমস্যা, শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় সর্বক্ষণ ভুগতে থাকে কোমলমতি সেই প্রাণগুলো। এই শিশুগুলো এমন একটি পরিবারে বড় হতে থাকে, যেখানে তারা সর্বদা ভয়, কোলাহল, ঝগড়া-বিবাদ দেখে দেখে বড় হয়। ছোটবেলা থেকেই তারা পরিবারের মাদকাসক্ত ব্যক্তির প্রভাবে অস্থির মানসিক অবস্থা নিয়ে বড় হতে থাকে, যা তাদের জন্য শুধুই নয়, সমাজের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। সেই শিশুরা একসময় নিজেরাই মাদকের জগতে পা রাখে।
রুক্ষ মেজাজ, রাগী স্বভাবের হয়ে ওঠে এই শিশুরা। গত বছর থেকে আমি এসব শিশুর জন্য কিছু করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবছিলাম। উইলিয়াম ও হ্যারির সঙ্গে আমি আমার চিন্তার কথা ভাগ করি। আমি শিশুদের জন্য কিছু করতে চাই বলে জানাই।
যেসব পরিবারে মাদকাসক্ত বা নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি আছেন, তাঁদের পরিবারের সন্তানদের জন্য পরামর্শ দেওয়ার জন্য কাজ করা শুরু করি।
পরিবারের শিশুদের যেন মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি না দেখা দেয়, সে জন্য কী করা যায়, তার উপায় বের করি। সেই সব শিশু যেন নিজেরা মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে তাদের পরামর্শ দেওয়ার ব্যবস্থা নিই। শিশুরা যেন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত না হয়, তার জন্য তাদের স্কুলেও পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করি। শিশুর মাধ্যমে যেন তার পরিবারের সদস্যরা পরিবর্তিত হয়, সেদিকেও আমার খেয়াল আছে। শিশুরাই তো আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।
তাদের ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকে আমাদের সবার নিরন্তর খেয়াল রাখতে হবে। শিশুরা যেন মাদক ও নেশামুক্ত এক পৃথিবীতে বড় হয়ে উঠতে পারে, সে জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমাদের সামান্য উদ্যোগ আমাদের আগামী দিনের নাগরিকদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
মাদকাসক্তির চক্র থেকে বড়দের বেরিয়ে আসার জন্য অনেক সংগ্রাম করতে হয়। পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসকদের পরামর্শের মাধ্যমে ব্যক্তিকে অনেক কষ্ট করে নিজের ওপর ভরসা রেখে মাদককে জীবন থেকে দূরে ঝেড়ে ফেলতে হয়। শিশুদের মাদকে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। শিশুরা সেই জীবনের প্রত্যাশা করে না। একটি সুন্দর, নির্মল পরিবার ও সমাজ প্রতিটি শিশু প্রত্যাশা করে। আমাদের সবার উচিত শিশুদের এই প্রত্যাশাকে বাস্তবে পরিণত করা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।