দেশের জন্যে, মায়ের জন্যে...। দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার মধ্যে সংলাপ চেয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনার মধ্যেই একটি রুল জারি করেছে হাই কোর্ট।
অবাধ ও স্বচ্ছভাবে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং তাদের নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যে সংসদের ভিতরে-বাইরে রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠানের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে এই রুলে।
এক আইনজীবীর করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি নিজামুল হক ও বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চ বুধবার এই আদেশ দেয়।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং স্বরাষ্ট্র সচিবসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রাজনৈতিক অধিকার ও কার্যক্রমের নামে বোমা ও ককটেল নিক্ষেপ, গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ‘অবৈধ কার্যক্রম’ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিবকে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ গত ১৪ মার্চ এই রিট আবেদন করেন। বুধবার তিনি নিজেই শুনানি করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান।
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাও আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন।
এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত রায় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
শুনানিতে ব্যারিস্টার নাজমুর হুদা বলেন, হরতাল একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু এই অধিকার দিয়ে গাড়ি ভাংচুর, নির্দোষ মানুষের উপর আক্রমণ বৈধতা পেতে পারে না।
“হরতালের মানে তো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ। কিন্তু এখন এর মাধ্যমে ১৬কোটি মানুষ জিম্মি হয়ে গেছে।
এটা থেকে উদ্ধার পেতে হলে আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে। আপনাদের হাত অনেক লম্বা। আপনারা এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন এবং এ ধরনের কাজ প্রতিরোধ করতে পারেন। ”
এ সময় আদালত বলেন, “আমরাতো তাদের বসার জন্য বাধ্য করতে পারি কি-না। ”
উত্তরে নাজমুল হুদা বলেন, “রিটে সক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তাকে চ্যালেঞ্জ করা যায়।
দুই নেত্রীর কার্যকলাপ দেশের বারোটা বাজাচ্ছে। আর তারা নিষ্ক্রিয় থেকে আলোচনায় বসছেন না। সুতরাং আপনারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আদেশ দিতে পারেন। ”
“আমরাতো বেশি কিছু চাইছি না। আমরা কেবল একটা রুল চাইছি।
তাদের আপনি রুল দিন। তারাই এসে বলুক, তারা কেন বসবেন বা বসবেন না। রুল শুনানির পর্যায়ে এখতিয়ারের বিষয়ে বিস্তারিত শুনানির সুযোগ রয়েছে। সেখানে প্রয়োজনে শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীদের বলবেন, তারা অ্যামিকাস কিউরি হিসাবে আসবেন। ”
শুনানিতে এম কে রহমান বলেন, দুই জোটের কোনো নিবন্ধন নেই।
তাই এদের বিবাদী করা যায় না। নির্বাচন কমিশন জোটভুক্ত নিবন্ধিত দলগুলোকে সংলাপের জন্য ডেকেছিল। কিন্তু বিএনপিসহ অনেকেই তাতে সাড়া দেয়নি।
“এটি এমন একটি রাজনৈতিক বিষয়, যাতে রুল দিলে কে তা বাস্তবায়ন করবে- তা স্পষ্ট নয়। আর বাস্তবায়ন অযোগ্য বিষয়ে আদালত কোনো আদেশ দিতে পারে না।
”
এর আগে গত ১৯ মার্চ এই রিটের ওপর প্রথম দিনের শুনানিতে ইউনুস আলী আকন্দ বলেন, “সাম্প্রতিক দিনগুলোতে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দেশের মানুষের স্বার্থে এবং আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ, শান্তিপূর্ণ স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মুখোমুখি অবস্থান ত্যাগ করে দুই নেত্রীকে নিয়ে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করতে নির্দেশনা প্রয়োজন। ”
আদালত এ সময় বলে, সংলাপ ও নির্বাচন নিয়ে তো সংবিধানেই বলা আছে।
জবাবে আবেদনকারী বলেন, বর্তমানে দুই প্রধান দলের মধ্যে বিদ্বেষপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় আদালতের নির্দেশনা প্রয়োজন।
বুধবার প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালতের আদেশে বলা হয়, বেঞ্জ রিট আবেদনকারী ড. ইউনুস আলী আকন্দ, আবেদনকারী পক্ষে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এবং অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমানের বক্তব্য শুনেছে।
তাদের বক্তব্য শুনে, আবেদন পড়ে এবং আবেদনের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে আদালত বর্তমান পরিস্থিতিকে বিচারিক নজরে নিয়ে রুল জারি করছে।
‘রাজনৈতিক সংকট’ কাটাতে এবং আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য নির্দেশনা দিতে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মুখোমুখি অবস্থান ত্যাগ করে দুই নেত্রীকে নিয়ে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করতে কেন র্নিদশনা দেওয়া হবে না- তা জানতে রুল চাওয়া হয় ইউনুস আলীর রিটে।
ডেইলি মর্নিং পোস্টের সম্পাদক ও প্রকাশক হাবিবুল বাশার ১৮ মার্চ একই বিষয়ে আরেকটি রিট আবেদন করেন। তার রিটেও একই ধরনের রুল চাওয়া হয়।
গত ১৯ মার্চ প্রাথমিক শুনানি হলেও আদালত ওই রিটের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার পর থেকেই বিএনপি সমমনা দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে আসছে।
এই পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচন নিয়ে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মতপার্থক্য অবসানে কূটনীতিক ও ব্যবসায়ীরাও দুই নেত্রীকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সম্প্রতি বলেন, সংলাপে তার দলের আপত্তি নেই, তবে বিএনপিকে আলোচনায় আসতে হবে শর্ত ছাড়া।
অন্যদিকে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে সরকার পতনের আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন।
ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের এই পাল্টাপাল্টির বক্তব্যের মধ্যে গত ৯ মার্চ নাজমুল হুদা বলেন, কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই আগামী নির্বাচন নিয়ে বড় দুই দলের আলোচনায় বসা উচিৎ।
বিএনপিতে থাকার সময়েও দুই নেত্রীকে এক মঞ্চে আনার পক্ষে কথা বলে দলের ভিতরে বাইরে আলোচিত-সমালোচিত হন হুদা।
পরে বিএনপি থেকে বেরিয়ে গিয়ে নতুন দল করলেও সম্প্রতি সেখান থেকেও বহিষ্কৃত হন এই আইনজীবী। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।