আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২০১২ সালে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আসর অলিম্পিক বসছে লন্ডনে। লন্ডন অলিম্পিকের স্মারক মুদ্রা নকশার কৃতিত্ব এবার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ছাত্র সাইমন মিয়ার ঝুলিতে।

শিল্পের সঙ্গে সখ্য তাঁর সেই স্কুলবেলা থেকেই। আগ্রহটা দানা বাঁধে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়। যত দিন যায়, বাড়তে থাকে আগ্রহ। মা-বাবা ভর্তি করিয়ে দেন লন্ডনের বর্নভিল স্কুল অব আর্টে। আর্ট ফাউন্ডেশন কোর্স শেষে তাঁকে পেয়ে বসে স্থাপত্যের নেশা।

সাইমন এখন স্থাপত্যবিদ্যার ছাত্র। মাস্টার্স করছেন লন্ডনের বার্মিংহাম স্কুল অব আর্কিটেকচার থেকে। তবে এই পাঠ না চুকাতেই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাইমন মিয়া পেয়ে গেছেন তাঁর সৃষ্টিশীলতার পুরস্কার। ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠেয় অলিম্পিক গেমসের স্মারক মুদ্রার জন্য মনোনীত হয়েছে তাঁর করা নকশা। শিগগিরই এই মুদ্রা পেঁৗছে যাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অলিম্পিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে।

স্মারক মুদ্রার এক চিমটি ১৯৫২ সালে অলিম্পিকের হেলসিংকি আসরে স্মারক মুদ্রার প্রচলন হয়। ২০১২ সালে অলিম্পিক বসছে লন্ডনে। ২৭ জুলাই শুরু হয়ে চলবে ১২ আগস্ট পর্যন্ত। তৃতীয়বারের মতো অলিম্পিকের আয়োজক হচ্ছে ব্রিটেন। শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতিও চলছে পুরোদমে।

এরই অংশ হিসেবে করা হয়েছে ক্রীড়াযজ্ঞের স্মারক হিসেবে পাঁচ পাউন্ড সমমানের মুদ্রার নকশা। এর আগে অবশ্য অলিম্পিকের স্মারক মুদ্রার নকশা করতেন বিখ্যাত কোনো শিল্পী বা স্থপতি। কিন্তু এবারই প্রথম স্মারক মুদ্রার নকশাকার নির্বাচনের জন্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় ইংল্যান্ডে, যার আয়োজন করে 'দ্য রয়েল মিন্ট'। এই ফাঁকে আয়োজক সম্পর্কে এক চিমটি জেনে নিই। যুক্তরাজ্যের মুদ্রা অনুমোদনকারী সংস্থা দ্য রয়েল মিন্ট।

এক হাজার বছরেরও আগে প্রতিষ্ঠিত হয় দ্য রয়েল মিন্ট। ইংল্যান্ডের বিভিন্ন জাতীয় ইভেন্টের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে রয়েল মিন্টের হাজার বছরের ইতিহাস। সংস্থাটি ২৪ বছর বয়সী সাইমনকে অভিনন্দন জানিয়েছে তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে। লন্ডনের দ্য টেলিগ্রাফ, বিবিসি, দ্য সান, ইয়র্কশায়ার পোস্ট, বার্মিংহাম মেইল, মেট্রোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ফলাও করে প্রচার করেছে তাঁর সাফল্যগাথা। পাঁচ পাউন্ডের নকশায় পাঁচ হাজার পাউন্ড যুক্তরাজ্যের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল এই প্রতিযোগিতা।

আয়োজক শহর লন্ডনের ভূমিকা নকশায় সুচারুভাবে ফুটিয়ে তোলাই ছিল প্রতিযোগীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সাইমন সে কাজটি করেছেন ঠিক ঠিক মত। আর এ কারণেই বিচারকদের দৃষ্টিতে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন সেরাদের সেরা। পাঁচ পাউন্ড মূল্যমানের এ মুদ্রার নকশার জন্য পুরস্কার হিসেবে সাইমন পেয়েছেন পাঁচ হাজার পাউন্ড। অনেকটা কৌতূহলের বশেই অংশ নিয়েছিলেন প্রতিযোগিতায়।

সাইমন ভাবতেও পারেননি, এমন একটি তকমা ঝুলবে নিজের গলায়। 'আমার এক শিক্ষক ই-মেইলে প্রতিযোগিতার বিষয়টি আমাকে জানান। আমার মনে হয়েছিল, এটি ব্রিটেন ও অলিম্পিকের ইতিহাসের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করার একটি অপূর্ব সুযোগ। ' মুদ্রাটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হবে এবং অলিম্পিকসংশ্লিষ্ট হাজার হাজার মানুষ তা সংগ্রহ করবে বলে আশা করছে রয়েল মিন্ট। সাইমনের পাশাপাশি প্যারা অলিম্পিকের জন্য পাঁচ পাউন্ড মূল্যমানের আরেকটি স্মারক মুদ্রা ছাড়া হচ্ছে।

এতে নির্বাচিত হয়েছে ব্রিটিশ তরুণী পিপা স্যান্ডারসনের নকশা। সম্মান বয়ে আনল যে নকশা দক্ষিণ বার্মিংহামের মজলির বাসিন্দা সাইমন কেবল নিজের জন্য নয়, সম্মান বয়ে এনেছেন বাংলাদেশের মানুষের জন্যও। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ছাত্র নকশায় ক্ষুদ্র পরিসরেও ফুটিয়ে তুলেছেন ব্রিটেনের নান্দনিক স্থাপত্যকর্ম বিগ বেন, লন্ডন আই, ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে ও সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল। ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী এসব স্থাপনার প্রতিচ্ছবি আবার ফুটে উঠেছে টেমস নদীর জলে। এরই সঙ্গে তাঁর নকশায় উঠে এসেছে অলিম্পিকের হরেক ক্রীড়ার ছবি।

নকশার আইডিয়া পাওয়ার পেছনে আছে একটি মজার ঘটনা। একদিন মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় সাইমনের। তখনই নকশার ভাবনাটি তাঁর মাথায় আসে। ঠিক সে সময়ই পেনসিলের আঁচড়ে এঁকে ফেলেছিলেন নকশার খসড়া। রয়েল মিন্টের একজন কর্মকর্তা যখন ফোন করে জানালেন সুখবর, সাইমনের বিশ্বাসই হচ্ছিল না, 'অবিশ্বাস্য, এ এক অন্য রকম অনুভূতি।

আমার নকশা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের হাত স্পর্শ করবে, এটা আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানের। ' জন্ম-ঠিকুজি সাইমনের জন্ম ইংল্যান্ডে। বেড়ে ওঠা সেখানেই। বাংলাদেশে এসেছিলেন মোটে একবার। সেটি ১০ বছর আগের কথা।

তখন বয়স সবে ১৪ বছর। খুব বেশি বাংলা বলতে পারেন না। টেলিফোনে কথা বলার সময় সাইমন অবলীলায় স্বীকার করে নিলেন, 'বাংলায় আমি ভালা না। ' সাইমনের সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ অবশ্য ই-মেইলে। অভিনন্দন জানিয়ে আমার পাঠানো ই-মেইলের উত্তরে তিনি লিখেছেন, 'এ রকম একটি সম্মানজনক নকশা প্রতিযোগিতায় এত বড় একটি অর্জন বাংলাদেশিদের জন্য গৌরবের।

বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য এ রকম একটি সুখবর বয়ে আনতে পেরে আমি খুশি। ' ঠিকঠাক বাংলা বলতে না পারলেও বাংলাদেশি খাবার কিন্তু তাঁর খুবই পছন্দ। 'সব ধরনের খাবারই খাই, তবে সবচেয়ে প্রিয় মায়ের হাতের রান্না। ' সুত্র : কালের কন্ঠ  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.