রিজওয়ানুল ইসলাম রুদ্র ১.
নিজের ব্যক্তিগত একটি ঘটনা দিয়ে শুরু করছি।
মন খুবই বিষণ্ন সেদিন। ছোটমামার জন্য সিগারেট কিনতে গিয়ে নিজে সিগারেট প্যাকেট থেকে একটা রেখে দিলাম। বাসায় এসে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগলাম। ঘর ধোঁয়াশায় পূর্ণ।
তামাকের কড়া গন্ধ। দরজা খুলতেই দেখি মা ওপাশে। তিনি অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে ঘরের ভেতর ঢুকলেন এবং সিগারেটের কড়া গন্ধ পেলেন। মা-বাবার বয়সটা পার করে এসেছি তাই যতটুকু সম্ভব রাগী গলায় বললেন, এসব কী ধরণের অভদ্রতা? তুমি কোন সাহসে সিগারেট ধরাও? তাও আবার বাসার ভেতরে? তোমার ভেতরের ভালো-মন্দ বিবেচনা বোধ কী নেই? এ কথা বলেই মার চোখ অশ্রুভেজা হয়ে উঠলো। ছোটমামা ব্যাপারটা জানতে পেরে আমাকে সিগারেট কিনতে আর পাঠাবেন না বললেন আর আমাকে কড়া ধমক দিলেন।
আমি কিছুই বললাম না। তীব্র অপমানিত বোধ, লজ্জিত হয়ে মানুষ কিছুই বলতে পারে না। তবে হ্যাঁ, জীবনে সেদিনই প্রথম সিগারেট টেনেছিলাম। এর পরেও সেই সুযোগ এসেছে তবে সিগারেট-আসক্তি আমার কোনোদিনই হয় নি। মার শাসন এর পেছনে উল্লেখযোগ্য ক্যাটালিস্ট (প্রভাবক) হিসেবে কাজ করেছে।
২.
তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়াকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন হিসেবে তাকে সবাই চেনে। অনেকেই হয়তো জানেন না, তার ডাক নাম পিনু। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে কী বলতে হবে সেটা সঠিকভাবে কেউই জানে না, তবে এটাও সত্য বাংলাদেশে রাজনীতি করতে নাকি শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই! কারণ অশিক্ষিতরাই রাজনীতিতে যায় বেশি। ৪৬ বছর বয়সের এই প্রৌঢ় "খোকাবাবু" তারেক জিয়া জোট সরকারের আমলে দক্ষ রাজনীতিবিদ হিসেবে সুনাম অর্জন করেছিলেন।
২০০২ সালে তিনি ছিলেন বিএনপির জয়েন্ট সেক্রেটারি। সে সময় গোপালগঞ্জ এর টুঙ্গিপাড়াতে এক সফরে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কবর জিয়ারতও করেছিলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে, রাজনৈতিক সহনশীলতা দেখাতে। সবমিলিয়ে তারেক অনেকের কাছেই জনপ্রিয় ছিলেন একটা সময়ে।
ক্ষমতার লালসা কঠিন লালসা। তারেকের ভেতরের ফ্র্যাংকেনস্টাইন বেরিয়ে আসতে সময় লাগেনি।
দুর্নীতির সাথে তার জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায় ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। ৭ মার্চ, ২০০৭ তারেককে গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে যখন তিনি কিছু উগ্রবাদীর সাথে মিটিং করছিলেন। এরপর শুধু তারেক নয়, তার মা বেগম খালেদা জিয়া এবং ছোটভাই আরাফাত রহমান কোকোকেও গ্রেপ্তার করা হয় সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখে। সবার বিরুদ্ধে কড়া দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিলো এখনও তা বহাল আছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে যেগুলো দুর্নীতি ও অবৈধ দখলকেন্দ্রিক।
নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা না পাওয়া গেলেও তারেককে রিমান্ডে নিয়ে যে নির্যাতন করা হয়, এটা আমজনতা ঠিকই বুঝতে পারে। রিমান্ডে পুলিশ বাপকেও ছাড়ে না। রিমান্ড মানেই নিষ্ঠুর কিছু পুলিশী টর্চার। হোক সে রাজনীতিবিদ বা সরকারদলীয় কেউ।
এরপর? উচ্চশ্রেণীর অপরাধীরা হাজতে বেশিদিন থাকে না।
তারেক রহমান জামিনে ছাড়া পেয়ে সরাসরি লন্ডন চলে যান উন্নত চিকিৎসার জন্য। আমাদের দেশে দরিদ্র মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে মারা যায়। তারেক রহমান রাজনীতিবিদ। রাজনীতিবিদ মানেই দেশের সেরা সন্তান (!)। তাই তার জন্য লন্ডনের সেইন্ট জন'স উড।
তার জন্য বিলাসি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। যে অপরাধ তারেক ও তার পরিবার করেছে, দেশের মানুষের কোটি টাকা মেরে দিয়ে, দুর্নীতি করে, তার শাস্তিটাও হয়তো বা এরকমই হবে, কারণ তারা রাজনৈতিক পরিবার। তাদের জোটে আছে যুদ্ধাপরাধী, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামি ও তার ছাত্রসংগঠন ইসলামি ছাত্রশিবির। বর্তমানে দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তারাও উচ্চশ্রেণীর অপরাধী।
তাই তাদের বিচারও হচ্ছে ধীরে ধীরে। কেবল শুনানি শুরু হয়েছে। নিম্নশ্রেণীর একটা চোর বা ডাকাতের বিচার সাথে সাথে হয়ে যায়। তাকে পুলিশ মেরে ফেলে বা জনতা পিটিয়ে মেরে ফেলে। নিজামী, গোলাম আযম, সাঈদী, কামরুজ্জামান লাখো মানুষকে ১৯৭১ সালে হত্যা-ধর্ষণ করেও এখনো মুক্তির স্বপ্ন দেখছে, হয়তো বা এটাই বাংলাদেশ এর চিরাচরিত নিয়ম!
সম্প্রতি এফবিআই কর্মকর্তারা তদন্ত করে দেখেছে তারেক রহমানের দুর্নীতি।
তার দুর্নীতির টাকা তিনি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খরচ করে ফেলেছেন! বিএনপি এটাকে বলছে "ভাড়া করা" লোক দিয়ে সরকার এসব তথ্য দিচ্ছে। আসলেই কী? সত্যি বলতে দোষ কথায়? মিথ্যা আওয়ামীলীগও বলে কিন্তু বিএনপি কী পারে না এই ক্ষেত্রে সত্য বলতে?
৩.
বিএনপির গুলশান অফিসে ১৯ নভেম্বর রাত ১২টা এক মিনিটে (২০ নভেম্বর) ৪৬ পাউন্ডের কেক কেটে তারেক জিয়ার "হ্যাপি বার্থডে" উদযাপন করলেন তার মা বেগম খালেদা জিয়া। দুর্নীতিবাজ ছেলেকে শাসন নয়, আদর করে আরও প্রশ্রয় দিলেন। খোকাবাবু বা যুবরাজ খোকাবাবুই রয়ে গেল! অবশ্য তিনি ১৫ আগস্ট শোকদিবসেও নিজের জন্মদিন কেক কেটেই পালন করেন! যেখানে একজন মা হিসেবে নিজের সন্তানকে শাসন করার কথা, সেখানে এই দেশের একজন সাবেক নারী প্রধানমন্ত্রী, সর্বোপরি একজন মা তার বড় ছেলেকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন আরো দুর্নীতি করার? ছবি সেরকম কথাই বলে!
ব্যাপারটা ব্যক্তিগত নয়, সবাইকে দেখিয়েই করা হয়েছে জন্মদিন। ছবি পত্রিকায় এসেছে।
নির্লজ্জের মতো কেক কাটা হচ্ছে। ঐ কেক এর একটা পিস কী না খেয়ে থাকা রাস্তার একটা শিশুর পেটে যাবে? অবশ্যই না। সেটা নেতা-নেত্রীরাই খেয়ে শেষ করে ফেলেছে হয়তো। দরিদ্র মানুষের জন্য নেত্রী কেন চিন্তা করবেন? তাকে তো প্রৌঢ় ছেলের জন্মদিন পালন করতে হবে, তাকে লাই দিয়ে মাথায় তুলে প্রশ্রয় দিতে হবে আরো খারাপ কাজ করার জন্য!
বেগম খালেদা জিয়া, একজন মা হিসেবে আপনার উচিত আপনার সন্তানকে শাসন করা। অবশ্যই তার জন্মদিন আপনি পালন করবেন, তবে সেটা হবে জন্মদিবস নয়, "পরিশুদ্ধি দিবস"।
তাদের আপনি শুদ্ধ করে তুলুন। ভবিষ্যত রাজনীতিতে আমরা দুর্নীতি চাই না আর। যুদ্ধাপরাধীদের বর্জন করুন। আপনারা দু'বার বাংলাদেশ সরকার পরিচালনা করেছেন। পরবর্তীতে যেন আপনাদের দ্বারা দুর্নীতি না হয় সে প্রত্যাশা আমরা রাখি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।