আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিপদগামী টিনএজঃ=====>টিনএজারদের ফ্যাশন===>বিরূপ সমালোচনা

আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি টিনএজারদের ফ্যাশনঃ বিরূপ সমালোচনা বর্তমান সময়ের টিনএজারদের বিরুদ্ধে একটি বড় অভিযোগ-তা হলো পোশাকের শালীনতা। টিনএজাররা বিভিন্ন মিডিয়ার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেদের পোশাক নির্বাচনে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। সামাজিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় অনুভূতি, আবহাওয়া কিংবা শারীরিক গঠনশৈলী ইত্যাদি বিষয় বিচার না করে, যাচ্ছে তাই ভেবে এ কাজটি তারা করছে। ফলে টিনএজাররা বিরূপ সমালোচনার মুখে পড়ছে। এমন কি যারা মেয়েদের অধিকার নিয়ে সহানুভূতিশীল তাদের কাছেও আস্থা হারাচ্ছে।

আমাদের দাদী নানীদের মুখের কথা-এই সেদিন মাত্র বারো তেরো বছর বয়সেই গায়ে জড়িয়ে ছিল শাড়ি জুবুথুবু অবস্থা কিছুদিন। তারপর ওটাই অনিবার্য। ওটাই ফ্যাশন। ওটাই স্বাচ্ছ্যন্দ্য। শাড়িতে নানা রঙের নানা ঢঙের পাড়, ব্লাউজে রকমারি লেস।

নিজেরা ক্রশের কাজ করে বসানো। সবাইকে দেখিয়ে বেড়ানোর আনন্দ। সালোয়ার কামিজ ওড়নার চল তারা দীর্ঘদিন ধরে রাখলো। তারপর কলেজে যাওয়ার সময় গায়ে চড়ালো শাড়ি। সে সময়েও শাড়ির ফ্যাশনই দাপট খাটিয়ে চলছিল।

শাড়ির কাজ দেখে বান্ধবীরা মুগ্ধ হয়ে গেলো। সারা কলেজের মেয়েরা সুই সুতা নিয়ে হাজির। চটপট শেখা হয়ে গেলো কাজটা। আর ছেলেদের-? কবে থেকে সে ঢোলা পায়জামা, টাইট পায়জামা, ঢোলা ফুলপ্যান্ট, চাপা ফুলপ্যান্ট আসা-যাওয়া করছে তার ঠিক নেই। এটা যাচ্ছে তো ওটা আসছে! ওটা আসছে তো এটা যাচ্ছে।

চুলের কায়দা একবার এই গায়ক তো একবার ঐ নায়ক। একবার ঐ নায়ক তো একবার এই গায়ক। কিন্তু এখন? চোখের সামনে পালের হাওয়া উল্টোদিকে বইতে শুরু করলো। শাড়ি এখন ঝামেলা। সালোয়ার কামিজ? ওহ ভেরি নটি! তাহলে, ভাবনা নেই।

আছে শার্ট-প্যান্ট। শুধু এটাই নয়। গেঞ্জি শর্টস আছে। ল্যাগিং আছে, টাইটস আছে। টিউনিক, মিনি স্কার্ট আরো যে আগডুম বাগডুম কত কী! টিনএজ মেয়েদের এখন এসবই প্রিয় পোশাক।

পোশাকের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করলাম বাণিজ্য মেলায় এসেছিল নাজিয়া। গেঞ্জি আর শর্টস পরে। হঠাৎ দেখলে ভুল হয়-আমাদের দেশী তো? ইংলিশ স্টাইলে বাংলা বলা শুনেই বুঝলাম ও আমাদেরই। কেন ও এই ধরনের পোশাকগুলো পছন্দ করে জিজ্ঞেস করতেই নাজিয়া হেসে উত্তর দিলো-‘আমি তো মনে করি না আমার ড্রেসটা অশালীন। আফটার অল লজ্জা নিবারণ হচ্ছে।

তাছাড়া ফ্রগট্রগ এখন আর ভালো লাগে না। হাবিজাবি মনে হয়। কারণ সিম্পল ফ্রগ পরা যায় না। তাতে একগাদা জিনিস লাগিয়ে ডিজাইন করতে হয়। ওর হাতে গলায় অক্সিডাইজ এবং আরো নানা রকমের ধাতুর চুড়ি আংটি মালার দিকে ইঙ্গিত করে জিজ্ঞেস করলাম-এসব কি হাবিজাবি নয়? ও বললো-অফকোর্স নট।

এটা ফ্যাশন। যে পরে তার ভালো লাগলেই হলো। ধামমন্ডির ‘পিজা ইন' থেকে বের হলো এক দল টিনএজ মেয়ে। সবার-পরনে ঐ-টাইটস, গেঞ্জি, শর্টস, শার্ট প্যান্ট, লংস্কার্ট, মিনি স্কার্ট, স্কার্ফ। শুধু একজন বেমানান ওদের সঙ্গে।

পরনে ধবধবে সাদা ফুরফুরে সালোয়ার কামিজ ওড়না। সাজে চলনে বলনে একেবারে অন্যরকম। ওদের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করতেই সবাই সমস্বরে বলে উঠলো-শিওর শিওর। একজন সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো-লুনা, লিমা, শাওন, জয়া, নিপা, টিটু, লিটা, শিতল, রিপা। সবাই একের কেউ কেউ দুই আঙুল তুলে নাচালো।

মনে হলো বিষাক্ত বাতাসে এক ঝাঁপ পায়রা ডানা ঝাপটাচ্ছে। প্রাণবন্ত কিন্তু ভালোভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না বলে ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম-তোমাদের এই ধরনের পোশাক কি খুব পছন্দের? কেন? লিটা জানালো-‘আসলে আমি যে এসব ড্রেস বিশেষ কোনো কারণে কিংবা বিশেষ কোনো পছন্দ দিয়ে পারি তা নয়। সবাই পরে। আমার খারাপ লাগে না।

আমি কিন্তু সাধারণ ফ্রগ, জামা, স্কার্ট, সালোয়ার কামিজও পরি। বাসা থেকে এসব ব্যাপারে কোনো বাধ্য-বাধকতা নেই। সে কারণে পরি। অ্যাম আই লুকিং অড?' আমি বললাম না, অত নয়। কিন্তু এতে করে কি মনে হয় না আমরা আমাদের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি? মনে হয় না কী আমাদের গায়ে এখন, পাশ্চাত্যের হাওয়া? লুনা উত্তরে বলে-‘এটা ঠিক যে, এগুলো পরলে কেমন বাইরের মনে হয়।

কিন্তু আমরা তো অতো সংস্কৃতি-ট্রিতি বুঝি না। পরতে ভালো লাগে তাই পরি। যেদিন থেকে শাড়ি কিংবা সালোয়ার কামিজ পড়তে ইচ্ছে হবে সেদিন থেকে ওগুলোই পরবো। আমাদের বয়সও তো এমন বেশি কিছু নয়। ওসব পরার এখনো অনেক সময় আছে।

এমন সময় শাওন প্রশ্ন করে বসলো তাহলে এরকম ড্রেস বাজারে আসে কেন? আমাদের বয়স খুব কম। আমরা সংস্কৃতি বুঝি না। ওসব মার্কেটে পাওয়া না গেলেই আমরা কিনতামও না, পরতেও পারতাম না। দোষটা আমাদের নয়। যারা বানায় বা বিক্রি করে তাদের দোষ।

বাবা-মায়েদেরও দোষ আছে। তারা আমাদের পরায়। ‘শিতল বলল, ‘দোষটা যে কাদের বুঝতে পারছি না। দোষ আমাদেরও কিছুটা। কারণ দোকানে ঝুলানো থাকলেই আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি।

ওটাই কিনতে হবে। এক ফ্রেন্ডের গায়ে দেখলে বাসায় গিয়ে ওটার জন্য বায়না ধরি। অন্ততঃ আমি এরকমই করি। স্বীকার করতে আপত্তি নেই। কেন? আমাদের এরকম ইচ্ছে হবে কেন? কেন যে হয় তাও জানি না।

মূল লেখকঃ আখতার হামিদ খান  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।