তরুণরা একটা দেশের কাঁচামাল স্বরূপ। কাঁচামাল দিয়ে মিল-কারখানায় যে রকম নতুন জিনিস তৈরী করা হয় সে রকম তরুণদের দিয়ে গঠিত হয় একটা দেশের মূল কাঠামো আর ভিত্তি। যুগে যুগে কালে কালে তাই প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের দেশে সেই পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে বাংলাদেশ গঠন পর্যন্ত তরুণদের বিশেষ ভূমিকা ছিল। আমরা সকলেই জানি যে, ৪৭ এর দেশ বিভাগ, ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬৯ গণ অভুত্থান, ৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তাদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা সকলের নজর কেড়েছে।
কিন্তু বর্তমানে তরুণদের অবস্থা বড়ই সোচনীয় যে, তারা আজ অবক্ষয়ের শিকারও বটে। বর্তমানে তরুণরা শক্তিহীন, কর্মহীন, দায়িত্বজ্ঞানহীন জীবন-যাপন করছে। যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়িয়ে, আড্ডা দিয়ে, নেশা করে, সময় অতিবাহিত করছে। ঘুরে বেড়ানো, আড্ডা দেয়া দোষের কিছু না। তবে সে আড্ডা হতে হবে শালিন সে ঘোরাঘুরি হতে হবে শিক্ষনীয়।
কিন্তু আমাদের স্কুল কলেজের তরুণদেরকে দেখা যায় গার্লফ্রেন্ড নিয়ে লেকের ধারে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করছে। শুধু সময় পার করলে তো কোন কথা ছিল না; তাদেরকে সেখানে প্রকাশ্যে জেনা করতেও দেখা যায়। তাদের অনেককেই ভাল ঘরের ছেলে মেয়ে বলে মনে হয়; অনেককেই নিচু ঘরের বলে মনে হয়। অশিক্ষিত আর বংশ মর্যাদাহীন কোন ছেলে-মেয়ের এমন কাজ করা স্বাভাবিক হতে পারে তবে ভাল বংশের কোন মেয়ে -ছেলের এমন কান্ডজ্ঞানহীন কাজ কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। তাদেরকে অনেক সময় কুকুরের মত যত্রতত্র যৌন কর্মে লিপ্ত হতে দেখা যায়।
আমি এ কথা ভেবে আশ্চর্য হই যে, তাদের মা-বাবাই বা কেমন যে রাত আটটার পরও ছেলে-মেয়ে কোথায়? কি করছে? তার খবর নিচ্ছেন না। একজন সচেতন অভিভাবকের এটা অবশ্যই কর্তব্য যে সন্তান কি করছে, কার সাথে মিশছে, মিথ্যা কথা বলে বয়ফ্রেন্ড কিংবা গার্লফ্রেন্ডের সাথে অবৈধ মেলামেশা করছে কিনা। আমার মতে আমাদের সমাজে অধিকাংশছেলে-মেয়ে বখে যাওয়ার কারণ তাদের মা-বাবার দায়িত্বজ্ঞানহীন অসচেতনতা।
আর বর্তমানে আমাদের সমাজে বা দেশে তরুণদের খারাপ হওয়ার হাজারো উপকরণ বিদ্ধমান। যেমন: তাদেরকে রাস্তার পাশ থেকে খারাপ ছবির সিডি কিনতে দেখা যায়।
শুধু তরুনরা যে কিনছে তা কিন্তু নয়; অনেক স্কুল পড়–য়া তরুণীকেও সে দোকানগুলো থেকে খারাপ ছবির সিডি কিনে ঘরে কিংবা ফ্ল্যাট বাড়িতে রুমের দরজা বন্ধ করে ছবি দেখে তিলে তিলে নিজেদের পবিত্র যৌবনকে ক্ষয় করতে দেখা যায়। এমতাবস্থায় মা-বাবার অচিত তাদের ছেলে-মেয়েরা কি করছে কি পড়ছে কি দেখছে সে দিকে একটু লক্ষ্য রাখা।
আমাদের তরুনদের বর্তমান অবস্থা দেখলে চোখ দিয়ে রক্ত আসতে চায়। কোথায় নজরুলের সেই ‘যৌবনের গান’, প্রমথ চৌধুরীর ‘যৌবনে দাও রাজটীকা’ সবই কি আজ ব্যর্থ। শুধু পড়ে কি আমাদের তরুন-তরুণীরা সব ভুলতে বসেছে।
এখন কথা হচ্ছে এর থেকে কি উত্তরণের কোনই উপায় নেই। বের হওয়ার কোনই রাস্তা খোলা নেই। মুক্তির কোন বাণী কি নেই আমাদের তরুণদের সামনে? অবশ্যই খোলা আছে তার জন্য নিচের কিছু বিষয় অনুসরণ করা যেতে পারে।
১. মা-বাবাদের এটা অবশ্যই কর্তব্য যে, সন্তানদেরকে শুধু জন্ম দিয়ে আর পেটে ধারণ করেই দায়িত ¡শেষ করবেন না, আপনার শিশুটি কোন পরিবেশে বেড়ে উঠছে তার দিকে তীক্ষè নজর রাখা।
২. শিশুদেরকে ছোটবেলা থেকে স্ব-স্ব ধর্মীয় নৈতিক জ্ঞান শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা।
এতে আপনার শিশু ভাল-মন্দা, পাপ-পূণ্য পার্থক্য করতে শিখবে।
৩. যতটা সম্ভব ছেলে-মেয়েদেরকে সাহচর্য দেয়া প্রয়োজন।
৪. নির্দিষ্ট একটা সময় পার না হওয়া পর্যন্ত ছেলে-মেয়ে যাতে অবাধে মোবাইল কিংবা কম্পিউটার ব্যবহার করার সুযোগ না পায়। তবে বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহার করতে দেয়া যেতে পারে।
৫. দেশ প্রেমের শিক্ষা দেয়া।
কারণ, যে শিশু বা তরুণ-তরুণী দেশকে ভালবাসতে শিখবে সে কোনদিন কোন অন্যায় কাজে নিজেকে জড়িত করতে পারে না।
আমাদের দেশের তরুণরা মেধা, নৈতিকতার শক্তি দিয়ে নিজেদেরকে গড়ে তুলবে, তার সাথে তারা গড়ে তুলবে আমাদের এই প্রিয় দেশকে। জয় হোক তারুণ্যের, জয় হোক যৌবনের।
লেখক: সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক
মাস্টর্স অধ্যয়নরত, ঢাকা কলেজ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
সম্পাদক: ঢেঁকি (মাসিক সাহিত্য পত্রিকা)
৩/এ পূর্বতেজতুরী বাজার, ফার্মগেট,তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫
ংঁৎবফধশনধৎ@মসধরষ.পড়স
০১৮২০১৪৭৬৫৪
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।