কবি সুফিয়া কামাল শুধু নারীর জন্যই ভাবেননি, ভেবেছেন মানুষের জন্য। তিনি কখনো খণ্ডিত কোন কাজে যুক্ত হননি। সুফিয়া কামাল জীবন-সংস্কৃতি ও কর্ষিত-সংস্কৃতি দুটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। কেননা সংস্কৃতিই জীবন। মানুষকে ভালোবেসে, সংস্কৃতিকে প্রেরণা হিসাবে মেনে আর জীবনে বেগম সুফিয়া কামালের প্রেরণাকে লালন করার আহ্বানের মধ্য দিয়ে গতকাল পালিত হলো কবির মৃত্যুবার্ষিকী।
গতকাল রবিবার ছিল ‘জননী সাহসিকা’র জন্মশতবর্ষ। আর তাঁর কবরে পুষ্পার্ঘ্য প্রদান ও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেছেন তার ভক্ত-অনুরাগী এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
নগরীর বিভিন্ন সংগঠন আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা সুফিয়া কামালের অবদান স্মরণ করে বলেন, আজ এ সময়ে বেগম সুফিয়া কামালের বুদ্ধিদীপ্ত দিক-নির্দেশনা বড় প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তিনি আমাদের মাঝে না থাকলেও তাঁর আদর্শকে সঙ্গী করে আমরা এগিয়ে যাব। তিনি একাধারে ১৬টি সংগঠনের সভাপতিত্ব করেছেন।
পরে সেসব সংগঠন থেকে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়েছে। ‘সুফিয়া কামালের আদর্শের প্রেরণাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে শক্তি যোগাবে’
সুফিয়া কামালের আদর্শের প্রেরণাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে শক্তি জোগাবে। কোন কুচক্রী মহল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার রোধ করতে পারবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এ দেশের মাটিতে হবেই হবে। গতকাল রবিবার কবি সুফিয়া কামালের দ্বাদশ মৃত্যুবার্ষিকীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় কবি কন্যা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এডভোকেট সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠান শুরু হয় ইফ্ফাত আরা দেওয়ানের কণ্ঠে কবিগুরুর ‘কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ জালো’ গানের মধ্য দিয়ে। আলোচনাসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক মমতাজ বেগম, নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী, স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার, কর্মজীবী নারী’র নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া রফিক বেবি প্রমুখ।
সভাপতির ভাষণে মহিলা পরিষদের পরিচালক আয়শা খানম বলেন, বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট টিম আজ আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে এগিয়ে গেছে। তা সম্ভব হয়েছে বেগম রোকেয়া, বেগম সুফিয়া কামালের মত নারী নেত্রীদের জন্য। এই মহিয়সী নারীদের স্বপ্ন আজ বাস্তবায়িত হচ্ছে।
অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ফতোয়ার বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদ প্রতিদিনই আমাকে উজ্জীবিত করে। আলোচনা সভায় নারীর প্রতি সহিংসতা ও নারী নির্যাতন রোধ, নারীর ক্ষমতায়ন, সংসদে নারীর আসন বৃদ্ধি, কর্মক্ষেত্রে নারী বান্ধবকরণ ও বৈষম্য দূরীকরণ প্রভৃতি সংযুক্ত করে ১৯টি প্রস্তাবাবলী উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে ‘স্টেপ’ নির্মিত সুফিয়া কামালের কর্মজীবনের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
ছায়ানটে গানে গানে স্মরণ অঞ্জলি
ছায়ানট তাদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবি সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণ করলো গানে গানে। কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ সেন ও রজনীকান্ত সেনের গান গেয়ে শিল্পীরা শ্রদ্ধা অর্পণ করলেন কবির স্মৃতির উদ্দেশ্যে।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধন-ধান্য-পুষ্প-ভরা, আমাদেরই বসুন্ধরা’ গানটি সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন করেন ছায়ানটের শিল্পীরা। এরপর কবি সুফিয়া কামালের জীবনাদর্শ ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন ছায়ানটের সহ-সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী। নিলুফার জাহান ও তানিয়া মান্নান পরিবেশন করেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান। তাদের কণ্ঠে গীত হয় ‘আজি তোমার কাছে ভাসিয়া’ ও ‘আমরা এমনি এসে ভেসে যাই’ গান দুইটি। এরপর ছিল অতুলপ্রসাদের গান।
মাহ্মুদুল হাসান ‘মুরলি কাঁদে রাধে রাধে বলে’, মহুয়া মঞ্জরী সুনন্দা ‘আমি অকৃতি অধম’, এটিএম জাহাঙ্গীর ‘আমি বাঁধিনু তোমার তীরে’, সাদাত জামান চৌধুরী ‘কে আবার বাজায় বাঁশি’, সত্যম কুমার দেবনাথ ‘তুমি দাও গো দাও মোরে’ ও পার্থ সারথী সিকদার পরিবেশন করেন ‘কে তুমি ঘুম ভাঙালে’। সম্মেলক কণ্ঠে গীত হয় ‘দেখ্ মা এবার দুয়ার খুলে’। রজনীকান্তের ‘যদি পার হতে তোর’ গানটি পরিবেশিত হয় সম্মেলক কণ্ঠে। শর্মিষ্ঠা খন্দকার ‘ধীরে ধীরে মোরে’, মিতুল দত্ত ‘প্রেমে জল হ’য়ে যাও গলে’, সেঁজুতি বড়ুয়া ‘জাগাও পথিকে ও সে ঘুমে অচেতন’, মৃত্তিকা সহিতা ‘যদি মরমে লুকায়ে রবে’ ও তানজিনা পারভীন পরিবেশন করেন রজনীকান্তের ‘আর কতকাল থাকবো বসে’। সম্মেলক কণ্ঠে জাতীয়সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ আয়োজন।
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের আলোচনা সভা
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় কমিটি গতকাল সকালে আজিমপুর কবরস্থানে কবি সুফিয়া কামালের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। সকালে সংগঠনের গুলশানের কার্যালয়ে জোটের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট তারানা হালিম এমপি’র সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও কবিতা পাঠের আসরের আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, অভিনেত্রী ফাল্গুনী হামিদ, চিত্রনায়ক ফারুক, কবি রনীন্দ্র গোপ, কবি হালিম আজাদ, অভিনেতা খায়রুল আলম সবুজ, অভিনেতা ড. ইনামুল হক, অরুন সরকার রানা, অভিনেত্রী দিলারা ইয়াসমিন, অভিনেতা মানস বন্দ্যোপাধ্যায়, নাসিমা আক্তার লাবু, আনোয়ার হোসেন মজনু, সাদিয়া শারমিন টুকু, অভিনেতা মিজু আহমেদ, রফিকুল ইসলাম মৃধা প্রমুখ নেতা।
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।