আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘুড্ডির পাইলট বলছি ৯ নং সেক্টরের সাব সেক্টর থেকে - পর্ব ২

আমি কিন্তু আমার গল্পের চাইতেও বদ ! ঘাড়া ঘাড়ির অভ্যাস ছোটকাল থিকা। ক্যাচালের ধান্দায় কেউ আমার ব্লগে প্রবেশ করলে , তারে খুইজা বাইর কইরা ঘাড়ানি দিতে বেশি টাইম নিমুনা। মনে রাখবেন সামুর সবচাইতে বদ মানুষের ব্লগে আপ্নি প্রবেশ করেছেন। ভেঙ্গে যাওয়া মন কখনো চুরি হয় না ! আর ভেঙ্গে যাওয়া মন কাউকে দিতে ইচ্ছা হয় না ! ঘটনার শুরু ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সারাদেশ তখন সোচ্চার যুদ্ধাপরাধীর শাস্তির দাবীতে ! তখন আমার অবস্থান ছিলো ৯ নং সেক্টরের সাব সেক্টরে (আমার গ্রামের বাড়িতে )। হ্যা আমি এই পরিচয় দিতেই গর্ববোধ করি ! বাংলাদেশ ১১ টি সেক্টরের বিভক্ত হয়ে যে যুদ্ধ শুরু করেছিলো , আমি মনে করি এদেশ এখনও সেই যুদ্ধ শেষ করতে পারেনি , আর আমি আপনাদের বলছি ৯ নং সেক্টরের সেই ৪২ বছর আগের শুরু হওয়া একটি যুদ্ধের ঘটনা যা আজও চলমান, লড়াই চলছে প্রতিটি মিনিটে, প্রতিটি সেকেন্ডে , লোকচক্ষুর আড়ালে মনের খুব গভীরে ।

যুদ্ধাপরাধীর সুষ্ঠ বিচারের দাবীতে , আমরা একটি গণস্বাক্ষরতা কার্জক্রম পরিচালনা করি । এখানেই মুক্তি যোদ্ধা রবমিয়া এসেছিলেন স্বাক্ষর দিতে ! আফসোস্ ! স্বাক্ষর দেবার মতো সম্বল হাত দুখানা ছিলো না তার ! মুক্তি যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর হাতে হারিয়েছেন তার দুটো হাত । কিন্তু যখন তিনি শুনলেন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবীতে স্বাক্ষর দিতে হবে তখন ছুটে চলে এসেছিলেন স্বাক্ষর দিতে , আবেগে ভুলে গিয়েছিলেন স্বাক্ষর করার মতো হাত তার নেই ! আমি এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বলেছিলাম , ৯ নং সেক্টরের সকল হাত এখন আপনার ! আপনি দুটি হাত হারিয়েছেন , এখন শহস্রাধীক হাত আপনার হয়ে কাজ করবে । দুই হাত হারানো মুক্তিযোদ্ধা যখন আবেগে কাঁদছিলেন তখন তার চোখের পানি মুছার ক্ষমতা তার ছিলো না , টপ টপ করে ঝরে পড়া প্রতিটি ফোটা সিক্ত করছিলো বাংলার মাটিকে । ( ওনার কাছ থেকে শোনা ঘটনাটি আমি ঠিক ওনার মতো করেই বর্ননা করছি আমার ভাষায়।

) সময় সেপ্টেম্বর ১০ / ১৯৭১ সাল একটি সুন্দর জীবন গ্রামের নাম পাথর ঘাটা , বর্তমানে বরগুনা জেলার একটি থানা । কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত হতে মাত্র কয়েকঘন্টার পথ । এই গ্রামের হাডুডু খেলার ব্যাপক স্বনামধন্য খেলোয়ার রব মিয়া, অত্যান্ত দুরন্ত প্রকৃতির এই হাডুডু খেলোয়ারের ছিলো গ্রামজুড়ে সুনাম , একই গ্রামের শেফালির প্রতি ছিলো তার অগাধ ভালোবাসা ! প্রতিবার খেলা শেষে জয়লাভ করে লুকিয়ে শেফালির সাথে দেখা করতে আসতো আর শেফালি তাকে নিজ হাতে গাথা বকুল ফুলের মালা গলায় পরিয়ে দিতো , এ পুরস্কার বিতরণ হতো নির্জনে ! সেখানে হতোনা কোন করতালি,হতোনা বিজয়ীর জন্য কোন প্রশংসা বক্তব্য, তবুও রব মিয়ার কাছে এই পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানটাই বেশি প্রিয় ছিলো । ঘটনার শুরু সাগর ও নদী কাছে হওয়ার কারনে এখানে শত্রুপক্ষ সবসময় গানবোট নিয়ে টহল দিতো ( গানবোট = অস্র সজ্জিত বড় আকারের স্পিডবোট , নদীর ট্যাংক বলতে পারেন ) । ওদের তুলনায় আমরা ছিলাম অত্যন্ত দুর্বল, কারন আমাদের হাতে তেমন ভারী অস্ত্র ছিলো না ।

ওরা শুধু দুটো জিনিসই ভয় পেতো আর তা হচ্ছে আমাদের সাহস আর গানবোট বিদ্ধংসী ওয়াটার মাইন । একটি চমৎকার পরিকল্পনা ! পাথরঘাটার জেলে ঘাট নামক একটা জায়গায় নদীর পাড়ে শত্রুপক্ষের একটি নতুন গানবোট নোঙ্গর করেছে ! গুপ্তচর মারফত খবর পেয়ে আমাদের ছোট দলটির প্রধান ( বীর যোদ্ধা আনসার মাস্টার ) একটা গোপন বৈঠকের ডাক দিলেন । পুরো প্লানটি ছিলো এমন যে , স্থানীয় একদল জেলে আমাদের নৌকায় করে গানবোট হতে আধা কিলো বা তার কম পরিমান দুরত্বে নদীতে নামিয়ে দেবে । আর আমাদেরই কোন একজন যোদ্ধাকে নদীতে ভেসে গিয়ে ওয়াটার মাইন দিয়ে গানবোট টিকে ধ্বংস করতে হবে । কিন্তু আমরা এটা জানতাম না কে হবে সেই ঝুকি গ্রহনকারি যোদ্ধা ? আর কারা সেই জেলের দল ।

আনসার স্যারের পরিকল্পনা গুলোই হয় এমন ! সব কিছু পরিকল্পনায় থাকলেও সাহায্যকারি দল গুলোর পরিচয় আগে থেকে বলে না ! আক্রমনের তারিখ নির্ধারন হয় ১৬ই সেপ্টেম্বর । একজন রহস্যময় যোদ্ধা সেই সময় নুরু মিয়া নামক একজন মুক্তিযোদ্ধার খুব নামডাক ছিলো ! তার হাতের নিশানা ছিলো অব্যর্থ, অন্ধকারেও সে সুনিপুণ দক্ষতায় শত্রুর উপর সফল আক্রমন চালাতো সিঙ্গেল শূটার দিয়ে ! সেই সময় তাদের দলটি বরগুনা শহর ও আমতলিতে ( কুয়াকাটার একদম কাছের গ্রাম ) হানাদার বাহিনিকে ব্যাপক নাস্তাবুদ করছিলো । নুরু মিয়া ছিলো সেই দলটির প্রধান । তার এমবুশ প্লান ছিলো অত্যন্ত ভয়ংকর ! সবসময় দ্বিতীয় আরেকটি প্লান তার মাথায় থাকতো । প্রথম প্লান বিফল হলে দ্বিতীয় প্লানের জন্য নির্দেশ প্রদান করতো ।

সেই সময় তার অব্যর্থ নিশানা আর এমবুশ প্লানের জন্য আমাদের কাছে তিনি ছিলেন একজন হিরো ! তাকে কখনো কেউ দেখতো না , একটা ঘটনা ঘটিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করতো, সবাই শুধু তার যুদ্ধের ফলাফল দেখতে পেতো , কিন্তু তাকে কেউ দেখতো পেতো না ! সকলের কাছে সে ছিলো একজন রহস্যময় ব্যাক্তি ! একটি বিদায় ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ প্লান পরিবর্তন করে আজকে এমবুশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় । রাতের অন্ধকারে শেফালির বাড়ির পিছনে ঘনঝোপের আড়ালে দাড়িয়ে আছি আমি ঝোপের অপর পাশে শেফালি ! শেফালি বার বার চোখ মুছছে ! দলের বাইরে একমাত্র সেই জানে গানবোট ধংস করার দায়ীত্ব আমাকে পালন করতে হবে ! হাডুডু খেলার শক্তি , আর প্রচুর দমের কারনে এই ধরনের ঝুকি পুর্ন কাজের জন্য মাস্টার আমাকে নির্বাচন করেছে । ( অবশ্য আমি এর জন্য প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ছিলাম ) শেফালির হাতে কোন একটা ফুলের মালা ছিলো, (ফুলের নামটা মনে নাই) ! শেফালি বলেছিলো : - বন্দুক অলা লঞ্চখান ডুবাইয়া আসো , হেরপর মালা দিমু এহন দিমুনা বলেই শেফালি চলে যায় আঁচলে মুখ চেপে চোখ মুছতে মুছতে ! আমার আরও কিছু বলার ছিলো শেফালিকে, কিন্তু বলতে পারিনি । একটি সফল এমবুশ এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো , ওয়াটার মাইন দিয়ে গানবোট ধ্বংস করাটা ছিলো অনেক ঝূকিপুর্ন ! গানবোটের অবস্থান হতে প্রায় আধা কিলো বা কম দূর হতে নদীতে মাইন সহ সাঁতরে যেতে হতো , নদীর স্রোত এর তোরে ভেসে ভেসে গানবোট পর্যন্ত পৌছাতে হতো । গানবোটের কাছে পৌছে গেলে মাইনটি গানবোটের সাথে সংযুক্ত করে ডুব দিয়ে নদীর স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে হতো , পুরো কাজটি ছিলো নিখুঁত সময় মেনে চলার কাজ ।

একটি নির্দিষ্ট সময়ে মাইনটি বিষ্ফোরিত হতো ! এবং আমাদের যোদ্ধারা পানিতে ঝাপ দিয়ে পরা শত্রুদের আক্রমন করতো । পরিকল্পনা মোতাবেক নির্দিস্ট স্থান হতে জেলেদের নৌকায় উঠলাম । তিনজন জেলে আর আমার সাথে দুজন সহযোদ্ধা মোট ছয়জন । টার্গেট প্লেস এ পৌছানোর পরে দেখলাম গানবোটের পাশে একটা ছোট স্পিড বোট গানবোটটিকে একটু পর পর রাউন্ড করে চক্কর দিচ্ছে ! এই স্পিড বোটটির থাকার কথা ছিলো না ! এমুবশ প্লেস এর পরিবেশ যেমন হবে বলে ধরে নিয়েছিলাম তেমন হলো না ! বিষয়টা অনেক কঠিন হয়ে গেলো আমার জন্য ! কিছুটা হতাশায় পরে গেলাম ! আমাদের সাহায্য কারি জেলেদের একজন দেখলাম আমাকে ইশারায় কাছে ডাকলো ! তার হাতে একটা ঘড়ি । এধরনের ঘড়ি জেলেদের হাতে থাকার কথা নয় ! ভাবলাম দেশের পরিস্থিতি ভালো না হয়তো কোনও ভাবে সংগ্রহ করেছে বা চুরি টুরি করেছে ! সে তার ঘড়িটিকে ইশারা করে দেখালো , বুঝলাম সে আসলে আমাকে বোঝাতে চাইছে ঠিক কতো মিনিট পর পর স্পিডবোটটি চক্কর দিচ্ছে ।

এর পর আমার কানে কানে বললো ঠিক ৮ মিনিট সময় পাবা ! স্রোত এর সাথে যদি নিশ্বব্দে সাতরে যেতে পারো তবে তুমি সফল হবে, স্পিড বোটের কথা ভুলে যাও ! আমি জানি তুমি পারবা ! তোমাকে আরও সামনে এগিয়ে নৌকা থেকে নামায়ে দেয়া হবে । ৫টি সফল এমবুশে অংশগ্রহন করে এখনও একটাও আঁচর না লাগা আমাকে এভাবে উৎসাহমুলক কথা বলা এই গেঁও জেলেটার দিকে চেয়ে রইলাম অবাক হয়ে ! যাই হোক তার পরামর্শটা আমার কাছে ভালো লেগেছিলো । মাইন সেট করা হয়ে গেছে ! এবং যথা সময়ে সেটা বিরাট গর্জনে বিষ্ফোরন হলো আর চারিদিক বাড়ুদের আগুনের ঝলকানিতে আলোকিত হয়ে গেলো ! আমি সাঁতরে চলেছি দ্রুত , আর মনে মনে হাসছি , শেফালির মালাটির কথা খুব মনে পরছে ,কিন্তু আমার হাসি টিকে থাকতে পারলো না ! চারিদিকে যখন আলোর ঝলকানি উঠেছিলো ঠিক তখন স্পিড বোট থেকে শত্রু পক্ষ আমাকে লোকেট করে ফেলেছে ! আর বৃষ্টির মতো গুলি ছুরছে ! ঠিক তখন বুঝতে পারিনি আমি আসলে শরীরের কোন অংশে হিট হয়েছি ! আমার দুটো হাত কাজ করছিলো না , চোখে অন্ধকার দেখছিলাম , শুধু এটুকু মনে আছে, আমাকে যে করেই হোক সাঁতরে কোন একটা নিরাপদ স্থানে পৌছাতে হবে ! আমাকে বাঁচতে হবে ! শেফালি মালা নিয়ে অপেক্ষা করছে ! একটি রহস্যময় উদ্ধার কার্য্য কতখন পানিতে ভেসে ছিলাম জানি না , তবে যখন কিছুটা সম্বিত ফিরে পাই তখন চোখে ধোঁয়া ধোঁয়া দেখছিলাম আর কিছু একটা আমাকে পানির মধ্যে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো , এবং একসময় আমাকে একটা নৌকার উপরে ঠেলে তুলে দিচ্ছিলো । আমাকে নৌকার যাত্রিরা টেনে নৌকায় তুল্লো । আমাকে তারা বার বার আমার নাম ধরে নিচু স্বরে ডাকছিলো , এর মধ্যে একটা যান্ত্রিক জলযানের গর্জন শুনতে পেলাম ! এবং কোথাও হতে গুলি হচ্ছে বুঝলাম ।

অপ্সষ্টভাবে ঘোলা চোখে দেখলাম সবাই নৌকার পাটাতনের উপর শুয়ে পরলো , আমি শুধু দেখছি চোখ মেলে কিন্তু শরীরে কোন শক্তি পাচ্ছি না ! দেখলাম নৌকার একজন যাত্রী হাঁটু গেরে একটা রাইফেল তুলে নিয়ে খুব ধীর গতিতে একের পর এক শ্যুট করে যাচ্ছে ! তার আশে পাশে গুলির বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু সে সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে খুব যত্ন সহকারে একের পর এক সিঙ্গেল শ্যুট করে যাচ্ছে । একটা সময়ে মনে হলো অপরদিক হতে কোন গুলি আসছে না , নৌকার সেই শ্যুটার সেই একই অবস্থায় বসে আছে তবে তার রাইফেলটি নামানো আর ঠোঁটে মনে হয় বিড়ি ধরানো ! পাশ থেকে কেউ হয়তো চাপা স্বরে বলছে নুরুদা এই দিকে দেখেন এই দিকে দেখেন ! মানে ????? !!!!!!! নুরুদাটা কে ? এই লোকটা কে ?তার নামটা চেনা চেনা লাগছে ! মাথা কাজ করছে না আমি আবার জ্ঞান হারালাম । অত:পর জ্ঞ্যান ফিরে এলো যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমাদের সিক্রেট বেইজে শুয়ে আছি । মাস্টার আমার মাথার কাছে বসে আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছেন । সব ঘটনা শুনলাম তার কাছ হতে ।

আমাদের যোদ্ধারা যখন বিদ্ধস্ত গানবোটের যাত্রি শত্রু সেনাদের আক্রমন করে তখন প্সিডবোটটি আমাকে তাঁড়া করে , বিষ্ফোরনের ঝলকানিতে তারা আমাকে লোকেট করে ফেলেছিলো , হালকা মেশিনগান দিয়ে তারা আমার উপর গুলি বৃষ্টি শুরু করে , দ্রুত সাঁতরাতে আমি হাত বার বার পানির উপর উঠাচ্ছিলাম তাই আমার দুইহাতই গুলিবিদ্ধ হয় । আমাদের সহযোগিতায় সেই তিনজন জেলের একজন ছিলো বীর যোদ্ধা কমান্ডার নুরু মিয়া । তিনিই ছিলেন সেই ঘড়ি হাতের ব্যাক্তিটি ! আর তিনিই আমাকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে উদ্ধার করেন ! আর হাঁটু গেরে একের পর এক সিঙ্গেল শ্যুট করে শত্রু পক্ষের স্পিড বোটের ড্রাইভারকে হিট করলে স্পীড বোটটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে দূরে একটা চরার সাথে আটকে যায় ! খুব ভালো লাগছিলো আমার , আমাদের মতো যুবকদের সেই সময়ের হিরো যাকে দেখার খুব ইচ্ছা ছিলো , সেই আমার প্রান বাচালো অথচ পরিচয় দিলো না ! ধন্যবাদ দিতে পারলাম না , মনে হচ্ছিলো এই বীরত্বপুর্ন ঘটনাটি আনসার মাস্টার যদি শেফালির সামনে বলতো তবে আরও ভালো হতো ! যুদ্ধ চলছে অবিরাম ! আমার অবস্থার ক্রমশ অবনতি হচ্ছে ! সবসময় প্রচুর জ্বর থাকে , আর প্রলাপ বকতে থাকি ! হাতের অবস্থা ভালো না ! আমাকে ঝালকাঠির কাছা কাছি একটা যায়গা নাম শেখের হাট , এখানের একটা বাড়িতে স্থানান্তর করা হলো , এটা একজন ডাক্তারের বাড়ি সেখানেই শুরু হলো আমার চিকিৎসা ! এর পর অনেক ঘটনা অনেক সময় পার হয়ে যায়। স্বপ্নের দেশ হানাদার মুক্ত হয় । আমি ফিরে আসলাম আমার চিরচেনা পাথরঘাটা গ্রামে , আমার কাপর এর ছোট ব্যাগটি বহন করছিলো আমারই এক সহযোদ্ধা আমজাদ ! ব্যাগটি ছোট হলেও সেটা আমার পক্ষে বহন করা আর সম্ভব ছিলো না ! বাড়ি ফিরে এসে কারও কাছে শেফালির কথা জিজ্ঞেস করিনি ।

নিজেই ওদের বাড়িতে গেলাম , সেখানে শেফালির সাথে দেখা হলো, ও খুব ভালো আছে , পরিচয় করিয়ে দিলো তার নতুন বিয়ে হওয়া জামাই এর সাথে ! শেফালির বাবা বুদ্ধিমান মানুষ , এলাকার অবস্থা ভালো না , বিবাহ যোগ্য কন্যা ঘরে রাখা ঠিক না ! তার উপর শেফালির বাবা নিশ্চই একজন দুইহাত বিহীন মানুষকে নিজের মেয়ের জামাতা হিসাবে মেনে নেবেন না । চলে আসছিলাম , পেছন থেকে শেফালি ডাক দিলো দাঁড়াতে বললো , বলেই দৌড় দিয়ে ঘরে চলে গেলো , হয়তো কিছু আনতে গিয়েছে , আমি চলে আসলাম শেফালির জন্য অপেক্ষা না করে , আমি জানি সে কি দিতে চেয়েছিলো ! সেই রাতে দেখানো সেই ফুলের মালাটি ! মালা না নিয়েই চলে আসলাম ! এমনিতেই বরাবরের মতো মালা গ্রহন করার দুটি হাত আমার নেই ! পরবর্তিতে আর বিয়ে করিনি , কারন ভেংগে যাওয়া মন কখনো চুরি হয় না !.................................. ------প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে, আমি ঘু্ড্ডির পাইলট বিদায় জানালাম রণক্ষেত্রের আপোসহীন এক বীর যোদ্ধা রবমিয়াকে , দূরে পশ্চিম আকাশে সুর্য্যটা ডুবে যেতে শুরু করেছে , রব মিয়া রাস্তায় হেটে চলেছে , দূর থেকে তাকে সুর্য্যের মাঝখানে একটা জ্বল জ্বল করা বিন্দুর মতো মনে হচ্ছে ! ভাবছিলাম কোনটা বেশি উজ্জ্বল লাগছে ? সুর্য্যটা নাকি রব মিয়াকে ? কোনটার গভীরতা বেশি, সুর্য্যটার ? নাকি রব মিয়ার জিতে গিয়েও হেরে যাওয়ার বেদনার ! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.