আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেবলি দেরি হয়ে যায়

নিজ ভাবনাটা আজ আমি হারিয়ে দেই...স্বপ্নটা আজ নীল আকাশ ছুঁই... ১. বেশ কিছুদিন হল আমার অভ্যাস হয়েছে মাথায় কোনো ভাবনা আসলেই ওটা সামাজিক যোগাযোগ এর সাইট গুলোতে (মূলত ফেসবুক-এ) স্ট্যাটাস হিসেবে পোস্ট দেই। একান্তই নিজস্ব ভাবনা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলাম, ক্ষতি কি? এইতো, গতকালকেই প্রিন্টেড ভার্সনে একটা দৈনিক পত্রিকা পড়ছিলাম। হঠাৎ করেই পত্রিকার শেষ পাতায় একটা বিজ্ঞাপনে চোখ আটকে গেল- “বিদ্যুৎ বার্তা”। অনুমিত ভাবে সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ থেকেই এই বিজ্ঞাপনটি প্রজ্ঞাপন আকারে আসে। বিজ্ঞাপনটিতে বেশ কিছু তথ্য দেয়া ছিল।

যেমন- ৬ জানুয়ারী ২০০৯ এ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩২৬৭.৫ মেগাওয়াট, সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৯ অগাস্ট ২০১১ তে হয়েছিল ৫২৪৪ মেগাওয়াট, ১৪ই নভেম্বর ২০১১ তে ৫০১৬.৫ মেগাওয়াট। ৬ই জানুয়ারী, ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৪০৬ মেগাওয়াট। সবচাইতে আশাব্যাঞ্জক পরিসংখ্যান হল গত ১৩ এবং ১৪ নভেম্বর দেশে কোনো লোডশেডিং হয়নি, যেখানে গত বছর এই দিনে ৮৯৯ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছিল!!! আবার এই মাসেই জাতীয় গ্রিডে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে আরো ১২৩ মেগাওয়াট যুক্ত হবে, সামনের মাসে আরো ১০০!! বেশ উৎসাহব্যাঞ্জক পরিসংখ্যান। আমি ভেবেছিলাম এই যে গত দুই দিন দেশে কোনো লোডশেডিং হচ্ছে না- এটা নিয়ে ফেসবুকে একটা পোস্ট দেই। অলসতার জন্য আর দিয়ে উঠা হয়নি।

আজ যখন স্ট্যাটাস দিতে যাব, তখনি হুট করে কারেন্ট চলে গেল!! আমার মনে হল- স্ট্যাটাস দিতে একটু দেরি করে ফেললাম! কাব্যিকতা চলে আসল মনে- “কেবলি দেরি হয়ে যায়”!! এর পরেও লোডশেদিং হয়েছে। সারা দিনে ৩ বার! অবশ্য কখনই খুব বেশি সময়ের জন্য না। বিদ্যুত পরিস্থিতির উন্নতি অবশ্য-ই লক্ষ্যনীয়। ২. কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে আপাত কিছু সাফল্য আসছে আবার নিন্দুকেরা তীর্যক মন্তব্য ও জুড়ে দিচ্ছে। তাদের ভাষ্যমতে- সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এবং তাদের আত্নীয়স্বজনরাই এই সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন পাচ্ছে।

একদম ভেতরের খবর জানা নেই বলে এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য ও নেই। ৩. এখন পর্যন্ত আমাদের জাতীয় গ্রিডে যতটুকু বিদ্যুৎ যুক্ত হয়েছে তার বেশিরভাগ-ই কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে। আমিতো এই বিষয়ে অভিজ্ঞ না আবার অর্থনীতির মারপ্যাচও অতো ভালো বুঝিনা, তবে ইদানিং পত্রিকার কলাম আর টিভি'র টকশো থেকে যতটুকু শুনছি ও জানছি- কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আসলে কোনো দীর্ঘমেয়াদি সামাধান না। যন্ত্রপাতিগুলোর বলে নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল থাকে। এখন যেসব কেন্দ্র পুরোনো যন্ত্রপাতি দিয়ে চালানো হচ্ছে আগামি ৩-৪ বছরের মধ্যে বলে সেগুলো অকেজো হয়ে পড়বে।

এছাড়াও এই কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য সরকারকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে বিশাল পরিমান ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। যার বোঝা শেষ পর্যন্ত জনগনের উপরেই পড়ছে এবং ভোগান্তি জনগনকেই পোহাতে হচ্ছে। এ যেন 'নুন আনতে পান্তা ফুরানো'-র মত অবস্থা! আমরা দ্রুতই বিদ্যুৎ চাইব, সরকারের পরীক্ষাও নিব আবার কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে যখন সরকার বিদ্যুৎ এর স্বল্পমেয়াদি সমাধান করছে, দীর্ঘমেয়াদি সামাধান হাতে নিচ্ছে তখনো আমরা প্রশ্ন তুলব?! ৪. শিরোনামের ভেতর কোনো উপ-শিরোনাম দিতে চাইনি। যদি দিতাম, আমার উপশিরোনামটি হতো "ঘর পোড়া গরু সিদুঁরে মেঘ দেখলে ডরায়”!- কেন?? সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি। আজকে টিভি তে একটা সংবাদ দেখলাম- “তারেক রহমান এর আইনজীবিদের আদালত বর্জন”।

তখন আমার মনে হল। কোন মামলা এটি? বিষয়টি কি? একটু দেখিতো! banglanews24.com থেকে মামলাটি সম্পর্কে একটি ধারনা পেলাম। "টঙ্গীর বিসিক শিল্প এলাকায় একটি ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হলে গিয়াসউদ্দিন আল মামুন তার ঘনিষ্ট বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার তারেক রহমানের মাধ্যমে কার্যাদেশ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে নির্মাণ কনস্ট্রাকশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে ১ জানুয়ারি ২০০৩ থেকে ৩১ মে ২০০৭ পর্যন্ত সময়ে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা নিয়ে তা বিদেশে পাচার করে। ” শেষ পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে গিয়েছিল কিনা সেই তথ্য আমি পাইনি। যাই হোক।

এই একটি মাত্র সংবাদ পড়েই অজানা আশঙ্কায় আমার বুক কেঁপে উঠেছিল.... ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে যদি ২০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠে, তাহলে সরকার বদল হলে তো দুদক এর চেহারা বদলে যাবে, দুদক এর আইনজীবি ও বদলে যাবে... তখন না জানি ২৪০৬ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনে কতশত নাকি হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠে! ঘর পোড়া গরু সিদুঁরে মেঘ দেখলেই যে ডরায়! [এবার আমার আশার জায়গা থেকে কথা বলি। আমাদের দেশে রাজনৈতিক সহিষ্ণুতার সংস্কৃতি চালু হবে। কোনো মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে দায়ের হবে না এবং কোনো মামলাই রাজনৈতিক বিবেচনায় খারিজ হবে না। স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন সকল দুর্নীতিবাজকেই, (তার রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক) আইন এর আওতায় নিয়ে আসবে এবং স্বাধীন বিচারবিভাগ উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিবে। ] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।