আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার বাল্যকাল ২

আমি আমার নিজেকেই খুঁজে বেড়াই, আমার মাঝে, তোমার মাঝে, আমাদের মাঝে :) সেই স্মৃতি বিজড়িত আমার গ্রামের প্রাইমারি স্কুল ছেড়ে একদিন আমার মেজ মামার হাত ধরে চললাম নানির বাড়ি। কারন ওইগ্রামে একটা ভাল স্কুল আসে যেখানে ভাল শিক্ষাদান করা হয়। অগত্য কি আর করা ???????? < বিরস বদনে মামার বাইসাইকেল এর পেছনে চড়ে ছেড়ে গেলাম আমার প্রিয় ঘর, বাড়ি, গ্রাম, খেলনা গুলো (তখনো আমার ছোট ভাইটা পৃথিবীর আলো দেখেনি তাই রবি ঠাকুরের “ছুটি” গল্পের মত হস্তান্তর করে যেতে পারিনি ) সেই সাইকেলের পেছনে বসে ফ্ল্যাশ ব্যাক এর মত সব স্মৃতিগুলো ভেসে উঠল । সেই আনন্দের দিন, বাঁধন হারা পাখির মত ছুটে বেড়ানো সেই দিন গুলো পিছু ডাকছিলো কিন্তু কিছুই করার ছিল না। যাই হোক সেই দুরন্ত দিন গুলির কথা বলব আজকে ।

আমার বাল্যকাল ১ এ বলেছিলাম স্কুলের ঘটনা আর আজকে বলব স্কুলের বাইরের ঘটনা । আমরা যারা গ্রামে বেড়ে উঠেছি আমদের সবার জীবনে অনেক মজার ঘটনা আসে যেগুলো আজকে হয়ত বড়দের কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে কিন্তু আমরা তখন সীমাহীন আনন্দ পেতাম । যেমন – বর্ষাকালে বৃষ্টি পড়া শুরু হলে আমাদের ঘরে আঁটকে রাখে কার সাধ্য ????? দৌড় দিতাম মাঠ বরাবর, উদ্দেশ্য একটাই – মাঠে জমা হওয়া হাটু পানিতে ইচ্ছেমত দাপাদাপি করা । আমি একা না, কিছুক্ষনের মাঝেই জুটে যেত আমার সাঙ্গপাঙ্গরা । বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত কাদামাটিতে হুটোপুটি করে শেষে দুরুদুরু বুকে ফিরতাম বাড়ি ।

বাসায় ঢুকা মাত্রই আমার দাদু তাঁর ট্রেডমার্ক গালি (খারাপ কোন গালি নয় কিন্তু) দিয়ে বলতেন “ ঊড়বং টা আইসছে, সামসুন (আমার মা এর নাম) এক লিয়া যায়া আরেকদফা পুখরে (পুকুর) এ চুবায়া লিয়া আইসো তো !!!!” আম্মু এসে আমাকে নিয়ে গিয়ে সাবান দিয়ে ডলে ডলে গোসল করিয়ে দিতেন । শধু ভয় পেতাম আব্বুকে । এমনও হয়েছে আমি বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়েছি এর মাঝেই আব্বু বাসায় চলে এসেছে , দাদু মারফত খবর পেয়ে বৃষ্টি থামার পরও ২-৩ ঘন্টা বাসায় ঢুকিনি । এই ভয়ে যদি আব্বু মারে  :S আব্বুর ‘মার’ কে আমি আসলেই অনেক ভয় করতাম, আমাদের বাসায় একটা বেতের লাঠি ছিল । অনেকদিন আমার পিঠ এর সাথে সেই লাঠির মোলাকাত হয়েছে ।

আম্মু আমাকে বাঁচাতে আসার সাহস পেতেন না । আমাকে আব্বুর কাছে থেকে নিয়ে যেতেন আমার বুবু (দাদি) , আপনারা হয়ত আমার আব্বুকে ভীষন রাগি ভাবছেন, পাষন্ড ভাবছেন । ভাবলে ভুল ভাবছেন । কারন আমার আব্বু হল নারকেল এর মত । যখন একটু বড় হলাম তখন বুঝলাম ।

আব্বুকে যে আমি যমের মত ভয় পেতাম । আর তাঁকে ভয় পেয়ে কি করতাম তার আরেকটা উদাহরন দিচ্ছি । আমদের বাসায় ধান মাড়াই করা মেশিন ছিল যেটা পা দিয়ে চালাতে হত । আপনারা দেখেছেন কিনা জানিনা সেই মেশিনে দুইটা দাঁত ওয়ালা চাকা ছিল। আমি একদিন সেখানে খেলছিলাম ।

হঠাত মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চাপল, মেশিন চালাতে লাগলাম। বাসার সবাই তখন ঘরে গল্প করছিল । হঠাত ছোট চাকাতে কি যেন দেখে তা সরাতে গেলাম, চাকা ঘুরছিল, আস্তে করে আমার বাম হাতের শাহাদাত আঙ্গুল চলে গেল দুই চাকার মাঝে । ফলাফল যা হবার তাই হল, আঙ্গুল এর মাথা থেঁতলে গেল । আব্বু বকা দেবে এই ভয়ে কাওকে না বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম ।

এদিকে রক্ত পড়ছে বিরামহিন। কিছুক্ষন পর যন্ত্রনা শুরু হল । আমি তখন হাত ঘুরাতে লাগলাম লম্বালম্বি ভাবে (বোকার মত কাজ ছিল ) , কিছুটা আরাম পাচ্ছিলাম । গিয়ে উঠলাম এক চাচার বাসায়, চাচা আমার হাতের অবস্থা দেখে প্রায় কোলে করে নিয়ে বাসায় দিয়ে গিয়েছিল । পরে অবশ্য আব্বু কিছু বলেননি ।

বুঝতে পেরেছিলেন বোধহয় যে তার ভয়েই আমি এই কাজটি করেছিলাম । অনেকেই হয়ত বিরক্ত হচ্ছেন আমার এই লেখা পড়ে কিন্তু আমি একথা ১০০% নিশ্চয়তার সাথে বলতে পারি যে বাল্যকালের স্মৃতিচারন করতে সবারই ভাল লাগে। তা হোক না সে যতই ক্ষুদ্র । আমার ছোটবেলায় একটা T শার্ট পরতাম । কেন জানি আজো মনে আছে সেই শার্ট এর বুকে কি লেখা ছিল ।

“ I love my country ” এই লাইন টা লেখা ছিল । সেই যে বুকে ধারন করেছি লাইন টা আজো লালন করে যাচ্ছি । দোয়া করবেন যেন আমৃত্যূ পর্যন্ত যেন পারি । একবার মার্বেল খেলতে গিয়ে ৪০ টা মার্বেল জিতে এসেছিলাম ( আমি ছিলাম গ্রামের সবচেয়ে খারাপ খেলোয়াড়, কেন জানিনা, সেদিন সবকটি দান আমি জিতছিলাম ), সেকি আনন্দ !!! সেইদিন ছিল শুক্রবার, আমার জন্য ঈদের দিনের মত ছিল। এছাড়াও আর কিছু দিন ছিল যেগুলো আমার কাছে ঈদ এর দিন এর মত মনে হত।

আমি ছোটবেলায় (এখনো) তরমুজ খেতে খুব ভালবাসতাম এবং অনেক খেতেও পারতাম। যেদিন আব্বু বাজার থেকে তরমুজ, বাদাম, গাজর, ঝুরি, পিয়াজু ইত্যাদি আনতো সেদিন আমাকে আর পায় কে !!!! আব্বু বাজার থেকে এসে ব্যাগ বারান্দায় রেখে ঘরে ঢোকা মাত্রই আমার কাজ ছিল ব্যাগ খুঁজে খাবার জিনিস বের করা। পরেরটুকু আন্দাজ করতে মনে হয় অসুবিধা হবেনা আপনাদের। :p মামার সাইকেলের পেছনে বসে বসে এইগুলোই চিন্তা করছিলাম। আর কি হবে মার্বেল খেলা ? আর কি হবে বৃষ্টির পানিতে দাপাদাপি ? আর কি হবে আব্বুর বাজার এর ব্যাগ খোঁজা ???????? কিন্তু এটা ভেবে আনন্দ হচ্ছিল যে আব্বুর বকা আর মাইর খাইতে হবেনা কিন্তু তখন বুঝিনি কোন পরিবেশে যাচ্ছি ।

বুঝেছিলাম কিছুদিন পরে । কেন ??????????????????? আরেকদিন বলি ??????????????? ভাল থাকবেন সবাই । Happy blogging ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।