আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রবীন্দ্রনাথের যত গান-৩

ঠিক দুক্কুর বেলা ভূতে মারে ঠেলা। দুপুর বেলা ভূতে ঠেলা মারে ২১ অনেক দিনের আমার যে গান আমার কাছে ফিরে আসে তারে আমি শুধাই, তুমি ঘুরে বেড়াও কোন্‌ বাতাসে ॥ যে ফুল গেছে সকল ফেলে গন্ধ তাহার কোথায় পেলে, যার আশা আজ শূন্য হল কী সুর জাগাও তাহার আশে ॥ সকল গৃহ হারালো যার তোমার তানে তারি বাসা, যার বিরহের নাই অবসান তার মিলনের আনে ভাষা । শুকালো যেই নয়নবারি তোমার সুরে কাঁদন তারি, ভোলা দিনের বাহন তুমি স্বপন ভাসাও দূর আকাশে ২২ পাখি আমার নীড়ের পাখি অধীর হল কেন জানি– আকাশ-কোণে যায় শোনা কি ভোরের আলোর কানাকানি ॥ ডাক উঠেছে মেঘে মেঘে, অলস পাখা উঠল জেগে– লাগল তারে উদাসী ওই নীল গগনের পরশখানি ॥ আমার নীড়ের পাখি এবার উধাও হল আকাশ-মাঝে । যায় নি কারো সন্ধানে সে, যায় নি যে সে কোনো কাজে । গানের ভরা উঠল ভরে, চায় দিতে তাই উজাড় করে– নীরব গানের সাগর-মাঝে আপন প্রাণের সকল বাণী ॥ ২৩ ছুটির বাঁশি বাজল যে ওই নীল গগনে, আমি কেন একলা বসে এই বিজনে ॥ বাঁধন টুটে উঠবে ফুটে শিউলিগুলি, তাই তো কুঁড়ি কানন জুড়ি উঠছে দুলি, শিশির-ধোওয়া হাওয়ার ছোঁওয়া লাগল বনে– সুর খুঁজে তাই শূন্যে তাকাই আপন-মনে ॥ বনের পথে কী মায়াজাল হয় যে বোনা, সেইখানেতে আলোছায়ার চেনাশোনা ।

ঝরে-পড়া মালতী তার গন্ধশ্বাসে কান্না-আভাস দেয় মেলে ওই ঘাসে ঘাসে, আকাশ হাসে শুভ্র কাশের আন্দোলনে– সুর খুঁজে তাই শূন্যে তাকাই আপন-মনে ॥ ২৪ বাঁশি আমি বাজাই নি কি পথের ধারে ধারে । গান গাওয়া কি হয় নি সারা তোমার বাহির-দ্বারে ॥ ওই-যে দ্বারের যবনিকা নানা বর্ণে চিত্রে লিখা নানা সুরের অর্ঘ্য হোথায় দিলেম বারে বারে । আজ যেন কোন্‌ শেষের বাণী শুনি জল স্থলে– ‘পথের বাঁধন ঘুচিয়ে ফেলো’ এই কথা সে বলে । মিলন-ছোঁওয়া বিচ্ছেদেরই অন্তবিহীন ফেরাফেরি কাটিয়ে দিয়ে যাও গো নিয়ে আনাগোনার পারে ॥ ২৫ তোমার শেষের গানের রেশ নিয়ে কানে চলে এসেছি । কেউ কি তা জানে ॥ তোমার আছে গানে গানে গাওয়া, আমার কেবল চোখে চোখে চাওয়া– মনে মনে মনের কথাখানি বলে এসেছি কেউ কি তা জানে॥ ওদের নেশা তখন ধরে নাই, রঙিন রসে প্যালা ভরে নাই ॥ তখনো তো কতই আনাগোনা, নতুন লোকের নতুন চেনাশোনা– ফিরে ফিরে ফিরে-আসার আশা দলে এসেছি কেউ কি তা জানে ॥ ২৬ আমার শেষ রাগিণীর প্রথম ধুয়ো ধরলি রে কে তুই ।

আমার শেষ পেয়ালা চোখের জলে ভরলি রে কে তুই ॥ দূরে পশ্চিমে ওই দিনের পারে অস্তরবির পথের ধারে রক্তরাগের ঘোমটা মাথায় পরলি রে কে তুই ॥ সন্ধ্যাতারার শেষ চাওয়া তোর রইলো কি ওই-যে । তোর হঠাৎ-খসা প্রাণের মালা ভরল আমার শূন্য ডালা– মরণপথের সাথি আমায় করলি রে কে তুই ॥ ২৭ পাছে সুর ভুলি এই ভয় হয়– পাছে ছিন্ন তারের জয় হয় ॥ পাছে উৎসবক্ষণ তন্দ্রালসে হয় নিমগন, পুণ্য লগন হেলায় হেলায় ক্ষয় হয়– পাছে বিনা গানেই মিলনবেলা ক্ষয় হয় ॥ যখন তাণ্ডবে মোর ডাক পড়ে পাছে তার তালে মোর তাল না মেলে সেই ঝড়ে । যখন মরণ এসে ডাকবে শেষে বরণ-গানে, পাছে প্রাণে মোর বাণী সব লয় হয়– পাছে বিনা গানেই বিদায়বেলা লয় হয় ॥ ২৮ বিরস দিন, বিরল কাজ, প্রবল বিদ্রোহে এসেছ প্রেম, এসেছ আজ কী মহা সমারোহে ॥ একেলা রই অলসমন, নীরব এই ভবনকোণ, ভাঙিলে দ্বার কোন্‌ সে ক্ষণ অপরাজিত ওহে ॥ কানন-’পর ছায়া বুলায়, ঘনায় ঘনঘটা । গঙ্গা যেন হেসে দুলায় ধূর্জটির জটা । যেথা যে রয় ছাড়িল পথ, ছুটালে ওই বিজয়রথ, আঁখি তোমার তড়িতবৎ ঘনঘুমের মোহে ॥ ২৯ বাজিল কাহার বীণা মধুর স্বরে আমার নিভৃত নব জীবন-’পরে ।

প্রভাতকমলসম ফুটিল হৃদয় মম কার দুটি নিরুপম চরণ-তরে ॥ জেগে উঠে সব শোভা, সব মাধুরী, পলকে পলকে হিয়া পুলকে পূরি । কোথা হতে সমীরণ আনে নব জাগরণ, পরানের আবরণ মোচন করে ॥ লাগে বুকে সুখে দুখে কত যে ব্যথা, কেমনে বুঝায়ে কব না জানি কথা । আমার বাসনা আজি ত্রিভুবনে উঠে বাজি, কাঁপে নদী বনরাজি বেদনাভরে ॥ ৩০ সবার সাথে চলতেছিল অজানা এই পথের অন্ধকারে, কোন্‌ সকালের হঠাৎ আলোয় পাশে আমার দেখতে পেলেম তারে ॥ এক নিমেষেই রাত্রি হল ভোর, চিরদিনের ধন যেন সে মোর পরিচয়ের অন্ত যেন কোনোখানেই নাইকো একেবারে– চেনা কুসুম ফুটে আছে না-চেনা এই গহন বনের ধারে অজানা এই পথের অন্ধকারে ॥ জানি আমি দিনের শেষে সন্ধ্যাতিমির নামবে পথের মাঝে– আবার কখন পড়বে আড়াল, দেখাশোনার বাঁধন রবে না যে । তখন আমি পাব মনে মনে পরিচয়ের পরশ ক্ষণে ক্ষণে ; জানব চিরদিনের পথে আঁধার আলোয় চলছি সারে সারে– হৃদয়-মাঝে দেখব খুঁজে একটি মিলন সব-হারানোর পারে অজানা এই পথের অন্ধকারে ॥রবীন্দ্রনাথের যত গান-১ রবীন্দ্রনাথের যত গান-২ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।