আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রবীন্দ্রনাথের কোন বিকল্প নাই -৮



সাল ১৭৮৪। বৈষ্ণব শেঠ নীলমনিকে বললেন,সামনেই শান্তিরাম সিংহের বাগানের পাশে (আজ যা সিংহীবাগান নামে খ্যাত)এখানে আমার কিছু জায়গা জমি আছে। বৈষ্ণব শেঠ এই জমি নীলমনি ঠাকুরের লক্ষ্মীজনার্দনের নামে দান করলেন। সেই জমিতে সামান্য একটি ঘর করে বসবাস শুরু করলেন রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষ নীলমনি ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথের জন্মের ঠিক ৭৭ বছর আগে।

বলা যেতে পারে সেই শুরু জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির। রবীন্দ্রনাথের হাবভাব আদবকায়দা জীবন ও চরিত্র বুঝতে ঠাকুর বাড়ির নেপথ্য গল্পটা জানা জরুরী। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির পূর্বপুরুষরা পাঁচশো বছর আগে ছিলেন কুলীন ব্রাহ্মণ। এবং তাদেরই একটি শাখা পরবর্তীকালে পরিচিতি-নিন্দিত হলেন পিরালি ব্রাহ্মণ নামে। রবীন্দ্রের জন্ম পিরালি শাখায়।

ঠাকুরবাড়ির মেয়ে বিয়ে করাই মানে তো নিজের বাড়ির দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়া। রবীন্দ্রনাথ ব্যাপারটার সঙ্গে বেশ অভ্যস্থ ছিলেন। তাই তার 'চিরকুমার সভা' নাটকের অক্ষয় এক অতীব দ্বিধাহীন সাবলীল আমুদে ঘরজামাই। রবীন্দ্রনাথ 'চোখের বালি' উপন্যাসে একটি তরুনী বিধবার সুখ-দুঃখের কথা লিখেছিলেন। চোখের বালি'র বিনোদিনী গত শতাব্দীর মেয়ে,সে একক,নিঃসঙ্গ।

এই সময়েও অনেক একাকী মহিলা আছেন। বিনোদিনী পুরুষের চিওবিভ্রমকারী নায়িকা,সে যদি এ যুগে বর্তমান থাকত তাহলে শুধু অন্তঃপুরেই নয়,পারিবারিক সীমার বাইরে,আরও বহু পুরুষকে সে আকৃষ্ট করত নিশ্চয়ই। চারটি নারী-পুরুষের মানসিক টানাপোড়ন যেভাবে 'চোখের বালি'তে রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছেন,এক কথায় অসাধারন। রবীন্দ্রনাথের মত বিরল স্রস্টার শিল্পকর্ম নিয়ে নাড়াচাড়া করা ঝুঁকিবহুল। তা হোক,খুব বড়জোর এই ঝুঁকি নেওয়ার ফলে আমার লেখাটি অসার্থক হবে,আর তো কিছু নয়।

কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে পরীক্ষামূলক ভাবে সময় কাটাতে কাটাতে যে আনন্দ আমি পেয়েছি তার মূল্য কোটি কোটি ডলারের চেয়েও অনেক বেশি,কত বেশি হিসেব করে বলতে পারব না। রবীন্দ্রনাথ নিজের লেখার প্রুফ নিজেই দেখতেন। জগন্নাথ কুশারী-ই জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির আদিপুরুষ,রবীন্দ্রনাথের ঊর্ধ্বতন ত্রয়োদশ পুরুষ। জগন্নাথের জীবনকাল কেটেছিল ষোলো শতকের গোড়ার দিকে। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিদিন পিতৃপুরুষের বন্দনা করতেন।

যে মন্ত্রটি উচ্চারণ করে তাঁর এই পিতৃপুরুষ বন্দনা তার আদিতে আছে পুরষোওমের নাম। মহেশ্বরের ছেলে পঞ্চানন,রবীন্দ্রনাথের ঊর্ধ্বতন সপ্তম পুরুষ। সেই সময়ে কলকাতা ক্রমশই সমৃদ্বির পথে। পর্তুগিজ ও ওলন্দাজ প্রভৃতি বিদেশি বনিক আগমনে তখন রমরম করছে কলকাতা। ইংরেজের উচ্চারণে 'ঠাকুর' প্রথমে হলো Taguore.পরে ক্রমশ Taguore থেকে Tagore.ছোটখাটো স্টিভেডের হয়ে গেলেন পঞ্চানন টেগোর বা ঠাকুর।

যেই হাতে বেশ কিছু টাকা এলো তার,কিনে ফেললেন অনেকটা জমি,আদিগঙ্গার পাড়ে আজ যেখানে ফোর্ট উইলিয়ম। তৈরী করলেন সেখানে কলকাতার প্রথম 'ঠাকুরবাড়ি'গোলপাতার ঘর। কলকাতায় ঠাকুর পরিবারের প্রথম বাড়ি এটাই। রবীন্দ্রনাথের ঊর্ধ্বতন ষষ্ঠপুরুষ,জয়রাম কুশারী। কাদম্বরীর মৃত্যুর সাথে সাথেই 'জোড়াসাঁকো' থেকে বের হওয়া পত্রিকা 'ভারতী' বন্ধ হয়ে যায়।

(পরে হয়ত স্বর্নকুমারী এই পত্রিকার দায়িত্ব নেন। )কাদম্বরীর শরীর রবীন্দ্রনাথ শ্মশানে পুড়তে দেখেছেন। যে নারীকে ঘিরে ছিল রবি'র কত শত কবিতা,গান। কাদম্বরীর মৃত্যুর ঠিক সাত দিন পরেই রবি'র বই বের হয়েছিল। 'প্রকৃতির প্রতিশোধ' ছাপার কাজ সব আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল।

উৎসর্গপত্রে লেখা ছিল শুধু 'তোমাকে দিলাম'। কিন্তু সেই বই নতুন বউঠানের হাতে তুলে দিতে পারেননি। কাদম্বরীর আত্মহত্যার কিছুদিন পরেই দেবেন্দ্রনাথের আর একটি কৃতি সন্তান হেমেন্দ্রনাথ মারা যান। মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে তার আকস্কিক মৃত্যুতে সবাই হতবাক। হেমেন্দ্রনাথের তিনটি পুত্র ও আটটি কন্যা।

তার মৃত্যু শোকে কাদম্বরীর কথা চাপা পড়ে যায়। তাছাড়া কাদম্বরীর আত্মহত্যার ঘটনাটা গোপন করা হয়েছে বলেই তার কথা আর কেউ প্রকাশ্যে আলোচনা করে না। নীলমনি ঠাকুরই ঠাকুরবংশের জোড়াসাঁকো ধারার উৎস। আর পাথুরিয়াঘাটা পরিবারের আদিপুরুষ দর্পনারায়ন। ত্যাজ্যপুত্র আণন্দীরাম বাসা বাঁধলেন জোড়াবাগানে।

নীলমনি ঠাকুর (? - ১৭৯১)দ্বারকানাথ ঠাকুরের ঠাকুর্দা,জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা। বাংলা-বিহাড়-উড়িশষ্যার নতুন নবাব সিরাজউদ্দৌলার হঠাৎ আক্রমনে ইংরেজের গজিয়ে ওঠা বসতি বেশ বিপর্যস্ত। লড়াইয়ে হেরে ইংরেজ সাময়িকভাবে পালাল কলকতায়। পালাবার আগে ইংরেজ কন্যারা তাদের গয়নাগাঁটি গচ্ছিত রেখে গেল জয়রামের পরিবারের কাছে। ।

পলাশির যুদ্ধের পরে মিরজাফরের দেওয়া ক্ষতিপূরনের টাকা থেকেও নীলমনি,দর্পনারায়ন পেলেন ১৩০০০ টাকা। এবং সেই টাকা থেকে তারা বাড়ি করলেন পাথুরিয়াঘাটায়। (চলবে....)


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।