ঠিক দুক্কুর বেলা ভূতে মারে ঠেলা। দুপুর বেলা ভূতে ঠেলা মারে ১১
তোমায় গান শোনাব তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখ
ওগো ঘুম-ভাঙানিয়া ।
বুকে চমক দিয়ে তাই তো ডাক’
ওগো দুখজাগানিয়া ॥
এল আঁধার ঘিরে, পাখি এল নীড়ে,
তরী এল তীরে–
শুধু আমার হিয়া বিরাম পায় নাকো
ওগো দুখজাগানিয়া ॥
আমার কাজের মাঝে মাঝে
কান্নাধারার দোলা তুমি থামতে দিলে না যে ।
আমায় পরশ ক’রে প্রাণ সুধায় ভ’রে
তুমি যাও যে সরে–
বুঝি আমার ব্যথার আড়ালেতে দাঁড়িয়ে থাক
ওগো দুখজাগানিয়া ॥
১২
গানের ডালি ভরে দে গো ঊষার কোলে–
আয় গো তোরা, আয় গো তোরা, আয় গো চলে ॥
চাঁপার কলি চাঁপার গাছে সুরের আশায় চেয়ে আছে,
কান পেতেছে নতুন পাতা গাইবি ব’লে ॥
কমলবরণ গগন-মাঝে
কমলচরণ ওই বিরাজে ।
ওইখানে তোর সুর ভেসে যাক, নবীন প্রাণের ওই দেশে যাক,
ওই যেখানে সোনার আলোয় দুয়ার খোলে ॥
১৩
ওরে আমার হৃদয় আমার, কখন তোরে প্রভাতকালে
দীপের মতো গানের স্রোতে কে ভাসালে ॥
যেন রে তুই হঠাৎ বেঁকে শুকনো ডাঙায় যাস নে ঠেকে,
জড়াস নে শৈবালের জালে ॥
তীর যে হোথায় স্থির রয়েছে, ঘরের প্রদীপ সেই জ্বালালো–
অচল রহে তাহার আলো ।
গানের প্রদীপ তুই যে গানে চলবি ছুটে অকূল-পানে
চপল ঢেউয়ের আকুল তালে ॥
১৪
কাল রাতের বেলা গান এলো মোর মনে,
তখন তুমি ছিলে না মোর সনে ॥
যে কথাটি বলব তোমায় ব’লে কাটল জীবন নীরব চোখের জলে
সেই কথাটি সুরের হোমানলে উঠল জ্বলে একটি আঁধার ক্ষণে–
তখন তুমি ছিলেনা মোর সনে ॥
ভেবেছিলেম আজকে সকাল হলে
সেই কথাটি তোমায় যাব বলে ।
ফুলের উদাস সুবাস বেড়ায় ঘুরে, পাখির গানে আকাশ গেল পূরে,
সেই কথাটি লাগল না সেই সুরে যতই প্রয়াস করি পরানপণে–
যখন তুমি আছ আমার সনে ॥
১৫
মনে রবে কি না রবে আমারে সে আমার মনে নাই ।
ক্ষণে ক্ষণে আসি তব দুয়ারে, অকারণে গান গাই ॥
চলে যায় দিন, যতখন আছি পথে যেতে যদি আসি কাছাকাছি
তোমার মুখের চকিত সুখের হাসি দেখিতে যে চাই–
তাই অকারণে গান গাই ॥
ফাগুনের ফুল যায় ঝরিয়া ফাগুনের অবসানে–
ক্ষণিকের মুঠি দেয় ভরিয়া, আর কিছু নাহি জানে ।
ফুরাইবে দিন, আলো হবে ক্ষীণ, গান সারা হবে, থেমে যাবে বীন,
যতখন থাকি ভরে দিবে না কি এ খেলারই ভেলাটাই–
তাই অকারণে গান গাই ॥
১৬
আকাশে আজ কোন্ চরণের আসা-যাওয়া ।
বাতাসে আজ কোন্ পরশের লাগে হাওয়া ॥
অনেক দিনের বিদায়বেলার ব্যাকুল বাণী
আজ উদাসীর বাঁশির সুরে কে দেয় আনি–
বনের ছায়ায় তরুণ চোখের করুণ চাওয়া ॥
কোন্ ফাগুনে যে ফুল ফোটা হল সারা
মৌমাছিদের পাখায় পাখায় কাঁদে তারা ।
বকুলতলায় কাজ-ভোলা সেই কোন্ দুপুরে
যে-সব কথা ভাসিয়ে দিলেম গানের সুরে
ব্যথায় ভরে ফিরে আসে সে গান-গাওয়া ॥
১৭
নিদ্রাহারা রাতের এ গান বাঁধব আমি কেমন সুরে ।
কোন্ রজনীগন্ধা হতে আনব সে তান কন্ঠে পূরে ॥
সুরের কাঙাল আমার ব্যথা ছায়ার কাঙাল রৌদ্র যথা
সাঁঝ-সকালে বনের পথে উদাস হয়ে বেড়ায় ঘুরে ॥
ওগো, সে কোন্ বিহান বেলায় এই পথে কার পায়ের তলে
নাম-না-জানা তৃণকুসুম শিউরেছিল শিশিরজলে ।
অলকে তার একটি গুছি করবীফুল রক্তরুচি,
নয়ন করে কী ফুল চয়ন নীল গগনে দূরে দূরে ॥
১৮
আমার কন্ঠ হতে গান কে নিল ভুলায়ে,
সে যে বাসা বাঁধে নীরব মনের কুলায়ে ॥
মেঘের দিনে শ্রাবণমাসে যূথীবনের দীর্ঘশ্বাসে
আমার প্রাণে সে দেয় পাখার ছায়া বুলায়ে ॥
যখন শরৎ কাঁপে শিউলিফুলের হরষে
নয়ন ভরে যে সেই গোপন গানের পরশে ।
গভীর রাতে কী সুর লাগায় আধো-ঘুমে আধো-জাগায়,
আমার স্বপন-মাঝে দেয় যে কী দোল দুলায়ে ॥
১৯
যায় নিয়ে যায় আমায় আপন গানের টানে
ঘর-ছাড়া কোন্ পথের পানে ॥
নিত্যকালের গোপন কথা বিশ্বপ্রাণের ব্যাকুলতা
আমার বাঁশি দেয় এনে দেয় আমার কানে ॥
মনে যে হয় আমার হৃদয় কুসুম হয়ে ফোটে,
আমার হিয়া উচ্ছলিয়া সাগরে ঢেউ ওঠে ।
পরান আমার বাঁধন হারায় নিশীথরাতের তারায় তারায়,
আকাশ আমায় কয় কী-যে কয় কেই বা জানে ॥
২০
দিয়ে গেনু বসন্তের এই গানখানি–
বরষ ফুরায়ে যাবে, ভুলে যাবে জানি ॥
তবু তো ফাল্গুনরাতে এ গানের বেদনাতে
আঁখি তব ছলোছলো, এই বহু মানি ॥
চাহি না রহিতে বসে ফুরাইলে বেলা,
তখনি চলিয়া যাব শেষ হলে খেলা ।
আসিবে ফাল্গুন পুন, তখন আবার শুনো
নব পথিকেরই গানে নূতনের বাণী ॥
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।