আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফোটোগ্রাফি -২

আমার কখনও বিখ্যাত মানূষদের ছবি তুলতে ইচ্ছা করে না । আমার শুধু খুব ইচ্ছা হয় একবার যদি তসলিমা নাসরিনের ছবি তুলতে পারতাম ! তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে কিভাবে যোগাযোগ করা যায় ? প্রধানমন্ত্রীর ছবি তোলার আগে অনেক ধরনের নিয়ম পালন করতে হয় । হা হা হা....! আমার কখনও কারো ছবি তুলতে হলে তাকে বলি- আপনি আমার কথা ভুলে যান, ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আপনি আপনার খুব প্রিয় একজন মানুষের দিকে তাকিয়ে আছে, এটা ভাবেন । এই কথাটা বললেই সবাই একটু মিষ্টি করে হাসেন । ওই হাসির মধ্যেই আমি আমার কাজ শেষ করে এই।

মানূষের ছবির চেয়ে গাছ পালা, নদী, পাহাড়, জঙ্গল, পশু পাখি এদের ছবি তোলা অনেক সহজ । পোট্রের্ট অসহ্য । তারপরও আমি আমার মতো করে অনেক ছবি তুলি । জানি সেসব ছবি কোনোদিন কাজে লাগবে না । তবে কিছু কিছু ছবি তুলে খুব আনন্দ পাই ।

বিশেষ করে বাচ্চাদের ছবি । বাচ্চারা ছবি তোলার সময় বুক ফুলিয়ে দাঁড়ায় । কিছু কিছু ছবি আমাকে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয় । প্রতিটা ছবি আমি বিশ্লেষন করার চেষ্টা করি । এক্সপেরিমেন্টেশন করি ।

একটা ছবি তোলার আগে মনের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করি । নিজের সীমাবদ্ধতা বার বার আমাকে কষ্ট দেয় । আমি একজন ভালো আলোকচিত্রী হতে চাই । ইচ্ছা থাকলেও অনেক ভালো ভালো কাজ করতে পারি না । একজন ফোটোগ্রাফার যেমন চাইলেই এক বস্তিতে গিয়ে ছবি তুলতে পারে খুব সহজেই ।

কিন্তু ধানমন্ডিতে এক বাড়িতে কিন্তু ইচ্ছে করলেই ঢুকে ছবি তুলতে পারে না । আমি একবার একটা অনুষ্ঠানে ছবি তুলতে গিয়েছিলাম । আমাকে নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছিল । আমার ক্যামেরার ব্যাগ তন্ন তন্ন করে সার্চ করা হলো । আমার উপরও তল্লাশি চালানো হলো ।

সেই অনুষ্ঠানে হঠাৎ সবাই চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিলো । আমি বুঝতে পারলাম না, সমস্যা টা কোথায় ! একটু পরে জানতে পারি, প্রধান অতিথির চেয়ারে আমি বসে পড়েছিলাম । একটা ফ্যাশন শো তে দেখে ছিলাম- দশজন মেয়ে বোরকা পড়ে নানান রকম অঙ্গভঙ্গি করছে, ক্যাট ওয়াক করছে । ছবি তুলতে গেলে যেটা করি যেকোনো রাস্তার অলি-গলি দিয়ে হাঁটি, মিসির আলীর চোখ দিয়ে সব কিছু দেখার চেষ্টা করি । নিজের মতো করে ঘোরা-ফিরা করি ।

এই কাজ করতে গিয়ে অনেকের সাথে পরিচয় হয়, নানা্ন রকম অভিজ্ঞতা হয় । ভোরবেলা ছবি তোলা দারুন মজার ব্যাপার । যে কোনো প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল ফোটোগ্রাফার হয়ে ছবি তোলা অনেক আনন্দের । অনেক প্রাধান্য পাওয়া যায়। অন্য ফোটোগ্রাফারদের সাথে ধাক্কাধাক্কি করতে হয় না ।

নিজের সাফল্যর জন্য অনেক সময়- লোকজনদের বোঝাতে হয় যে ভাই আমি গুরুত্বপূর্ণ । আমাকে একটা সুযোগ দেওয়া দরকার । অনেকের ইচ্ছা থাকে আহ ! আমার যদি টাইম- পত্রিকায় ছবি ছাপাতো অথবা লন্ডনের টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ! এই রকম আমার কখনোই মনে হয় নাই । ইংল্যান্ডে রসায়নবিদ্যায় PHD করেও আলোকচিত্রীর জীবন বেছে নিয়েছে এমন উদাহরণও আছে । যে ছবি আমি তুলতে চাই, সেই ছবি কি তুলতে পেরেছি ? যা, তুলি যা কি আসলে ছবি ? ছবি আসলে কী ? নানান ভাবনায় অস্থির জীবন ।

আমার সবচেয়ে আনন্দময় সময় হলো ক্যামেরা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়া । কর্মাশিয়াল কাজ, বিখ্যাতদের ছবি আমাকে টানে না । যে চিন্তাকে আমরা ধারন করতে পারি না, তার ছবি তুলতে চাই । ( চলবে.... ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।