ভালবাসি
৩৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হওয়ায় মেধাবী পরীক্ষার্থীদের খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু তাঁরা খুশি হতে পারেননি পাবলিক সার্ভিস কমিশন তথা পিএসসির একটি অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে। আগে বিসিএস পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি থাকলেও তা বিবেচনা করা হতো প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে।
সেখানেও বৈষম্য ছিল। একজন সাধারণ পরীক্ষার্থী ৮০ পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও কোটাধারী পরীক্ষার্থী ৭৫ পেয়েও উত্তীর্ণ হতেন।
কিন্তু এবারে পিএসসির তুঘলকি সিদ্ধান্তের কারণে মেধাবীরা দারুণভাবে বঞ্চিত হলেন। যেখানে ৮০ পেয়েও একজন সাধারণ পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে পারেননি, সেখানে ৫০ পেয়েও আরেকজন কোটাধারী অনায়াসে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
পিএসসি যদি এই কাণ্ডই করবে, তাহলে পরীক্ষা নেওয়ার কী দরকার ছিল? তারা সোজা বলে দিতে পারত, পরীক্ষা-টরিক্ষার দরকার নেই। আমরা যাদের যোগ্য মনে করব, তারাই পাস করবে এবং চাকরি পাবে।
দেশের জনপ্রশাসনে যে যোগ্যতা ও মেধার দুর্ভিক্ষ চলছে, তার জন্য পিএসসির কোটা পদ্ধতিও কম দায়ী নয়।
একটা বিশেষ সময়ে বিশেষ জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা থাকতে পারে। তাই বলে অনন্তকাল চলতে পারে না। আর কোন কোটা ন্যায্য, কোনটি অন্যায্য—তাও খতিয়ে দেখার সময় এসেছে।
আর পিএসসির মহামহিম কর্তাব্যক্তিরা পদে থাকতে টুঁ শব্দ করেন না। চেয়ার ছেড়ে দেওয়ার পর কোটা নিয়ে বিবেকি বয়ান দিয়ে থাকেন।
এই আত্মপ্রতারণাই দেশটির সর্বনাশের মূলে।
৩৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর উত্তীর্ণ হতে না-পারা মেধাবী তরুণেরা শাহবাগে দুই দিন ধরে আন্দোলন করছেন। পিএসসি পরীক্ষার ফল স্থগিত ঘোষণা করার পরও তাঁরা রাস্তা ছাড়েননি। তাঁরা চাইছেন মেধার ভিত্তিতেই সব নিয়োগ হোক। কোটা প্রথার অবসান হোক।
নিচের দুটি চিঠি পড়লেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে—কোটা পদ্ধতি কীভাবে আমাদের মেধাবী তরুণদের অগ্রাহ্য ও অপমান করছে। কীভাবে রাষ্ট্র তাঁদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কুমার সাহা নামে একজন অনলাইনে লিখেছেন, ‘অতি দুঃখ ভারাক্রান্ত হূদয়ে লিখছি। আমি সুনীতি কুমার সাহা। আমি ৩১তম বিসিএস পরীক্ষায় লিখিত (সাধারণ ও কারিগরি) ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি।
আমার রেজি: নম্বর ০২২৫২৭। আমার প্রথম পছন্দ ছিল কৃষি ক্যাডার। কিন্তু পদ স্বল্পতার কারণে আমাকে পিএসসি কর্তৃক কোনো পদে সুপারিশ করা হয়নি (উল্লেখ্য, কোটা প্রার্থী না থাকায় পিএসসি ৭০টি পদ খালি রাখে)। গত ২৭ ডিসেম্বর, ২০১২ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কৃষি ক্যাডারে ২২০টি পদের বিপরীতে ১৩৬ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, পিএসসি কর্তৃক ১৫০ জনকে সুপারিশ করা হয়েছিল।
যে ১৪ জন বাদ পড়েছেন, হয়তো তাঁদের কেউ কেউ স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হননি বা পুলিশ প্রত্যয়ন পাননি বা ৩১তম বিসিএসের আগে অন্য কোনো ভালো পদে কর্মরত আছেন। আমার দুঃখ, এই জায়গায় ৮৪ পদ খালি থাকা সত্ত্বেও আমার চাকরি পাইনি। আমার সমস্ত পরিশ্রমের ফলাফল কোটা সংরক্ষণজনিত নিয়মের কারণে শূন্য। যাঁরা এসব নিয়ম তৈরি করেন, তাঁরা কি একবারও ভেবে দেখেছেন আগামী ১০-২০ বছর পর আমাদের দেশের প্রসাশনের কী অবস্থা হবে?’
পার্থ নামে আরেকজন লিখেছেন: ‘আমি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। গতকাল প্রকাশিত বিসিএস ৩৪তম প্রিলিমিনারির ফল বের হয়েছে।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে ৭৫+ পেয়েও সাধারণ পরীক্ষার্থী চান্স পায়নি অথচ কোটার কারণে ৫৯+ পেয়েও অনেকে চান্স পেয়েছে। মেধার বিচারে ৫৯=৭৫ হতে পারে না। ফলে প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হয়ে চরম হতাশ ও বিপথগামী হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশ একসময় মেধাশূন্য হয়ে যেতে পারে।
সদ্য প্রকাশিত বিসিএস রেজাল্ট, ৩২তম স্পেশাল বিসিএস এবং সাম্প্রতিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে (সোনালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, আইসিবি ইত্যাদি) শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটাধারীদের আবেদন করার যোগ্যতা কি সাধারণ প্রার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক নয়? কোটা কি শিক্ষিত বেকার বৃদ্ধির জন্য দায়ী নয়?’
দুই তরুণের আবেগ ও বেদনায় ভরা চিঠি দুটি পড়লে যেকোনা পাঠকের চোখে জল আসবে।
কিন্তু পিএসসির পণ্ডিতদের বোধোদয় হবে কী? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।